জাতীয় নির্বাচনে সংবাদ সংগ্রহ: ৮৯ শতাংশ সাংবাদিকই শারীরিক হামলার আশঙ্কা করছেন
২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকালীন সংবাদ সংগ্রহ করার সময় প্রতি ১০ জন সাংবাদিকের মধ্যে প্রায় ৯ জনই শারীরিক হামলার শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন। আর তিন-চতুর্থাংশের বেশি সাংবাদিক মৌখিকভাবে হেনস্তা ও ভয়ভীতির মুখে পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শনিবার (৬ ডিসেম্বর) ঢাকায় 'ডিজিটালি রাইট'-এর এক সমীক্ষায় এসব উদ্বেগজনক তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় শারীরিক ও অনলাইন—উভয় ধরনের হুমকি বাড়ার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। বিশেষ করে নারী সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে এ ঝুঁকি অনেক বেশি বলে উল্লেখ করা হয়।
শনিবারের অনুষ্ঠানে 'উচ্চ ঝুঁকি, স্বল্প প্রস্তুতি: ২০২৬ সালের নির্বাচনে সাংবাদিকদের নিরাপত্তা' শীর্ষক এ সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরেন ডিজিটালি রাইট-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী।
দেশের ১৯টি জেলার ২০১ জন সাংবাদিকের ওপর এই জরিপ চালানো হয় এবং ১০ জনের বিশদ সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। ফলাফলে দেখা গেছে, উত্তরদাতাদের ৮৯ শতাংশই নির্বাচন সংক্রান্ত সংবাদ সংগ্রহের সময় শারীরিক হামলা বা মারধরের ভয় পাচ্ছেন। এছাড়া ৭৬ শতাংশ সাংবাদিক মৌখিকভাবে হেনস্তা এবং ৭১ শতাংশ ভয়ভীতি প্রদর্শনকে বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখছেন।
নারী সাংবাদিকদের জন্য এ হুমকি আরও ভয়াবহ। তাদের ৫০ শতাংশ যৌন হয়রানি এবং ৪০ শতাংশ যৌন নির্যাতনের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
শারীরিক হামলার পাশাপাশি ৭৫ শতাংশ সাংবাদিক মনে করেন, তাদের বা তাদের গণমাধ্যমকে লক্ষ্য করে অপপ্রচার চালানো হতে পারে। ৬৫ শতাংশ সাংবাদিক হ্যাকিংয়ের আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। নারী সাংবাদিকরা অনলাইন হেনস্তা ও নজরদারির বিষয়ে বেশি উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। অর্ধেকেরও বেশি উত্তরদাতা আশঙ্কা করছেন, তাদের কাজের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করতে এবং পেশাগত সুনাম ক্ষুণ্ন করতে সংঘবদ্ধ অপপ্রচার চালানো হতে পারে।
সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, অধিকাংশ গণমাধ্যম এসব ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত না। মাত্র ২৪ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, তারা নিয়োগকর্তার কাছ থেকে নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন।
এদিকে, ৭৭ শতাংশ সাংবাদিক জানিয়েছেন, তাদের প্রতিষ্ঠানে ডিজিটাল নিরাপত্তার বিষয়ে কোনো স্পষ্ট নীতিমালা নেই। ৯০ শতাংশেরও বেশি সাংবাদিক শারীরিক হুমকির প্রধান উৎস হিসেবে চিহ্নিত করেছেন রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মীদের। নারী ও মফস্বল সাংবাদিকরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকেও ঝুঁকির কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
সাংবাদিকদের মতে, রাজনৈতিক ট্যাগিং বা দলীয় তকমা দেওয়া, গণমাধ্যমের প্রতি জনআস্থার সংকট, উগ্রবাদ, গণপিটুনি, দুর্বল আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে অপপ্রচার চালানো—আগামী নির্বাচনে ঝুঁকি বাড়ার অন্যতম কারণ।
প্রতিবেদনে সাংবাদিকদের সুরক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক ও ডিজিটাল নিরাপত্তা প্রশিক্ষণ, নিউজরুমে স্পষ্ট নিরাপত্তা প্রটোকল, জেন্ডার-সংবেদনশীল সুরক্ষা ব্যবস্থা এবং জরুরি ও আইনি সহায়তা প্রাপ্তির সুযোগ বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ঢাকা ট্রিবিউনের সম্পাদক রিয়াজ আহমেদ বলেন, ঝুঁকি জানা সত্ত্বেও গণমাধ্যম মালিকরা সংবাদকর্মীদের শারীরিক নিরাপত্তার বিষয়ে উদাসীন। ফলে পেশাদার সাংবাদিকদের প্রায়ই নিজেদের নিরাপত্তা নিজেদেরই নিশ্চিত করতে হয়।
অনুষ্ঠানে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, টাইমস অব বাংলাদেশ, এএফপি, নিউ এজ, সমকাল, যমুনা টিভি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, আরটিভি এবং একাত্তর টেলিভিশনের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া 'ফয়ো' মিডিয়া ইনস্টিটিউটের এশিয়া প্রজেক্ট কোঅর্ডিনেটর মারিয়া পিটারসন ভার্চুয়ালি আলোচনায় যুক্ত হন।
