ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করলেন ট্রাম্প

ইউক্রেনে সব ধরনের সামরিক সহায়তা স্থগিত করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ইউক্রেনের জন্য পাঠানো অস্ত্র এবং পোল্যান্ডে অবস্থানরত অস্ত্রও এ স্থগিতাদেশের আওতায় পড়বে। ইউক্রেনীয় নেতারা যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের প্রতি আরও কৃতজ্ঞতা ও শান্তির প্রতি দৃঢ় প্রতিশ্রুতি না দেখানো পর্যন্ত এই সহায়তা বন্ধ থাকবে বলে ফক্স নিউজ জানিয়েছে।
রুশ-ইউক্রেন সংঘাত নিরসনের উপায় নিয়ে হোয়াইট হাউজে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে উত্তপ্ত বৈঠকের কয়েকদিন পর এই সিদ্ধান্ত এসেছে।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা ফক্স নিউজকে বলেছেন, 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্ট করেছেন যে তিনি শান্তির ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছেন। আমাদের অংশীদারদেরও সেই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে। আমরা আমাদের সহায়তা স্থগিত ও পর্যালোচনা করছি যাতে নিশ্চিত করা যায় যে এটি সমস্যার সমাধানে অবদান রাখছে।'
ট্রাম্প প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ফক্স নিউজকে আরও বলেছেন, ইউক্রেনীয় নেতারা আন্তরিকভাবে শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি না দেওয়া পর্যন্ত সামরিক সহায়তা স্থগিত থাকবে।
ওই কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, 'এটি সহায়তা স্থায়ীভাবে বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়, এটি একটি সাময়িক বিরতি। এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশ ইতোমধ্যেই দেওয়া হয়েছে।'
তিনি জানিয়েছেন, সোমবারের এই পদক্ষেপটি গত সপ্তাহে জেলেনস্কির আচরণের প্রতিক্রিয়ায় নেওয়া হয়েছে।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সঙ্গে জেলেনস্কির বৈঠকটি উত্তপ্ত বাক-বিতণ্ডায় রূপ নেয়, যা বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের চূড়ান্ত শান্তি আলোচনার কথা জানার পর জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে।
প্রেস ইভেন্টের আগে ট্রাম্প প্রশাসন জেলেনস্কিকে 'খনিজ সম্পদের বিনিময়ে নিরাপত্তা' চুক্তির প্রস্তাব দেয়। তবে এই চুক্তিতে ইউক্রেনকে আরেকটি রুশ আক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য কোনো নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছিল না।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের প্রথম প্রশ্নের কয়েক মিনিট পরই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে এক উত্তপ্ত বাদানুবাদ শুরু হয়।
একজন ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ফক্স নিউজকে বলেন, 'কোনো বাস্তব নিরাপত্তা নিশ্চয়তা ছাড়া আমরা কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করতে পারি না। এভাবে কিছু হবে না। এতে শুধু আগ্রাসনকারীই পুরস্কৃত হবে।'
জেলেনস্কির চুক্তি স্বাক্ষরে অস্বীকৃতি স্পষ্টতই ট্রাম্প এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ক্ষোভের একটি কারণ হয়ে ওঠে। ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেন, ২০১৪ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত রাশিয়া কখনোই ইউক্রেনে হামলা বন্ধ করেনি, যার মধ্যে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদের চার বছর অন্তর্ভুক্ত।
জেলেনস্কি বলেন, 'কেউ তাকে থামায়নি, জানেন তো।' তিনি আরও বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বারবার দ্বিপাক্ষিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছেন।
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে পুতিনের সঙ্গে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করার পর ট্রাম্প অভিযোগ করেন, জেলেনস্কি 'তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি নিচ্ছেন'।
উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডার পর ফক্স নিউজের প্রধান রাজনৈতিক উপস্থাপক ব্রেট বেয়ার জেলেনস্কিকে ক্ষমা চাইতে বললে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন।
বেয়ার জেলেনস্কিকে প্রশ্ন করেন, 'মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আপনি কি মনে করেন আজকের ঘটনার পর আপনার এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সম্পর্ক পুনরুদ্ধার সম্ভব?'
জেলেনস্কি শুক্রবার ফক্স নিউজের 'স্পেশাল রিপোর্ট'-এ এক একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, 'হ্যাঁ, অবশ্যই, কারণ এটি শুধু দুই প্রেসিডেন্টের সম্পর্ক নয়। এটি আমাদের জনগণের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক, শক্তিশালী সম্পর্ক।' অবশ্যই, প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসের প্রতি কৃতজ্ঞ, তবে প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ। আপনাদের জনগণ আমাদের জনগণকে রক্ষায় সহায়তা করেছে… আমরা এই দৃঢ় সম্পর্কটি বজায় রাখতে চাই এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে তা বজায় থাকবে।'
বাইডেন প্রশাসন মস্কোর আক্রমণের পর তিন বছরের যুদ্ধ চলাকালে রুশ বাহিনীকে প্রতিহত করতে ইউক্রেনকে বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে।
সোমবার বিরল খনিজ চুক্তির বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, মঙ্গলবার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বার্ষিক স্টেট অব দ্য ইউনিয়নের মতো বক্তৃতায় তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।
তিনি আরও বলেন, যুদ্ধ চলাকালে ইউক্রেনের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য জেলেনস্কির আরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা উচিত, যাতে শান্তি আলোচনাগুলো পুনরুজ্জীবিত হয়।
ট্রাম্প বলেন, 'আমি মনে করি তিনি আরও কৃতজ্ঞ হতে পারতেন, কারণ এই দেশ তার সঙ্গে সকল পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েছে। আমরা ইউরোপের চেয়ে অনেক বেশি সহায়তা দিয়েছি। অথচ ইউরোপেরই আরও বেশি সহায়তা দেওয়া উচিত ছিল, কারণ ওখানেই সীমান্ত।'