চা ফোটানোর সময় পানি থেকে ভারী ধাতু অপসারিত হয়

একটি নতুন গবেষণায় নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, চা ফোটানোর প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ভারী ধাতু যেমন সীসা এবং ক্যাডমিয়াম শোষণ করে পানীয় থেকে বিপজ্জনক দূষণকারী উপাদানগুলো কার্যকরভাবে ফিলটার করে। ভারী ধাতব আয়ন চা পাতার পৃষ্ঠে আটকে যায় এবং সেখানেই আটকে থাকে।
গবেষণাটি গতকাল (২৪ ফেব্রুয়ারি) 'এসিএস ফুড সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি' জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক এবং নর্থওয়েস্টার্নের ভিনায়ক পি. দ্রাবিড় বলেন, "আমরা এটা বলছি না যে সবাই চা পাতাকে পানি ফিল্টারের জন্য ব্যবহার করা শুরু করুক। বাস্তবে আমরা প্রায়ই মডেল পরীক্ষা ব্যবহার করি এবং বিভিন্ন মাপকাঠি পরিবর্তন করে বৈজ্ঞানিক নীতি ও দূষণকারী উপাদানের শোষণ/মুক্তির চক্রের সাথে সম্পর্কিত ঘটনার গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি।"
তিনি বলেন, "এই গবেষণায় আমাদের লক্ষ্য ছিল চায়ের ভারী ধাতু শোষণের ক্ষমতা পরিমাপ করা। এই প্রভাব পরিমাপের মাধ্যমে আমাদের কাজ চা সেবনের অচেনা সম্ভাবনাকে তুলে ধরছে, যা বিশ্বজুড়ে জনগণের মধ্যে ভারী ধাতুর সংস্পর্শ কমাতে নিষ্ক্রিয়ভাবে সহায়ক হতে পারে।"
গবেষণার প্রথম লেখক বেঞ্জামিন শিনডেল বলেন, "আমি নিশ্চিত না যে চা পাতার মধ্যে কিছু বিশেষ বা অসাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। এদের একটি বড় সক্রিয় পৃষ্ঠ এলাকা রয়েছে, যা শোষক উপাদানের জন্য একটি উপকারী গুণ এবং যা চা পাতাকে দ্রুত পানি থেকে স্বাদযুক্ত রসায়ন মুক্ত করতে সহায়তা করে।"
তিনি বলেন, "তবে বিশেষ বিষয় হলো, চা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পানীয়। আপনি বিভিন্ন উপাদান চূর্ণ করে একই ধাতু নিরসনের প্রভাব পেতে পারেন। কিন্তু সেটা কার্যকর বা বাস্তবসম্মত হবে না। চা দিয়ে মানুষকে কিছু বাড়তি কাজ করতে হয় না। শুধু পাতাগুলো পানিতে দিন এবং ভিজিয়ে রাখুন। সেগুলো স্বাভাবিকভাবেই ধাতু অপসারণ করবে।"
এই গবেষণা পরিচালনার জন্য নর্থওয়েস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের দল বিভিন্ন ধরনের চা, টি ব্যাগ এবং প্রস্তুতির পদ্ধতি কীভাবে ভারী ধাতুর শোষণে প্রভাব ফেলে তা পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত ছিল– "সত্যিকারের" চা যেমন ব্ল্যাক, গ্রিন, উলং এবং হোয়াইট, ক্যামোমাইল এবং রুইবোস চা। তারা লুজ-লিফ চা এবং বাণিজ্যিকভাবে প্রস্তুতকৃত টি ব্যাগের মধ্যে পার্থক্যও পর্যালোচনা করেছেন।
গবেষকরা পরিচিত পরিমাণে সীসা ও অন্যান্য ধাতু (ক্রোমিয়াম, তামা, দস্তা এবং ক্যাডমিয়াম) মেশানো পানি প্রস্তুত করেন। তারপর সল্যুশনগুলো প্রায় ফুটন্ত তাপমাত্রার কাছাকাছি গরম করেন। এরপর তারা চা পাতা যোগ করেন, যা বিভিন্ন সময়ের জন্য যেমন, কয়েক সেকেন্ড থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত রাখা হয়।
পরবর্তীতে কতটুকু ধাতু পানিতে রয়ে গেছে তা গবেষকরা পরীক্ষা করেন। চা পাতা যোগ করার আগে এবং পরে ধাতুর মাত্রা তুলনা করে তারা হিসাব করতে সক্ষম হন, কতটুকু ধাতু কার্যকরভাবে অপসারণ হয়েছে।
দ্রাবিড়, শিনডেল এবং তাদের দল বেশ কিছু প্রবণতা চিহ্নিত করেছেন। আশ্চর্যজনক না হলেও তারা দেখতে পান, এতে টি ব্যাগের প্রভাব আছে। চা ছাড়া বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ পরীক্ষা করার পর গবেষকরা দেখেন, তুলা ও নাইলন ব্যাগ শুধু সামান্য পরিমাণে দূষিত পদার্থ শোষণ করেছে। তবে সেলুলোজ ব্যাগ দারুণ কাজ করেছে।
একটি সফল শোষক উপাদানের মূল হলো, হাই সারফেস এরিয়া (উচ্চ পৃষ্ঠীয় এলাকা)। ঠিক যেমন একটি চুম্বক ফ্রিজের দরজায় আটকে থাকে, তেমনি ধাতব আয়নগুলো কোনো উপাদানের পৃষ্ঠে লেগে থাকে। তাই, যত বেশি এলাকা, তত ভালো।
শিনডেল ধারণা করছেন, সেলুলোজ [জৈবিক প্রাকৃতিক উপাদান এবং কাঠের কাঁচামাল থেকে তৈরি] এর পৃষ্ঠের এলাকা বেশি। তাই, চিকন কৃত্রিম উপাদানের তুলনায় এটির কাছে ধাতু আটকে থাকার জন্য আরও বেশি জায়গা থাকে।
শিনডেল বলেন, "তুলা ও নাইলন ব্যাগ পানি থেকে প্রায় কোনো ভারী ধাতু অপসারণ করে না। নাইলন চা ব্যাগ ইতোমধ্যেই ক্ষতিকর কারণ তা মাইক্রোপ্লাস্টিক ছাড়ে। তবে, আজকাল ব্যবহৃত অধিকাংশ চা ব্যাগ প্রাকৃতিক উপাদান যেমন সেলুলোজ দিয়ে তৈরি। এগুলো সেলুলোজের মাইক্রো-অণু ছেড়ে দিতে পারে। কিন্তু এটা শুধুই ফাইবার, যা আমাদের শরীর সামলাতে পারে।"
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, চায়ের ধরন এবং সেটা প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রভাব কিছুটা ছিল। সূক্ষ্মভাবে গুঁড়া করা চা পাতা, বিশেষ করে ব্ল্যাক টি সম্পূর্ণ চা পাতা থেকে কিছুটা বেশি ধাতব আয়ন শোষণ করেছে, কারণ প্রক্রিয়াজাতকরণের ফলে এর পৃষ্ঠের এলাকা বাড়ে এবং ছিদ্র তৈরি হয়।
তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল, চা ফোটানোর সময়। দীর্ঘ সময় ফোটালে ধাতু শোষণ বেশি হয়, আর রাতভর ফোটানো সবচেয়ে কার্যকরী ছিল। যদিও মাত্র কয়েক সেকেন্ড ফোটানো চা খুবই অল্প দূষিত পদার্থ অপসারণ করে, দীর্ঘ সময় ফোটানো চা, যেমন আইসড টি পানির ধাতব উপাদান অনেকটা কমিয়ে বা প্রায় পুরোপুরি নির্মূল করতে পারে।