গোপালগঞ্জ সহিংসতা: ৭৫ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ৫০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা; গ্রেপ্তার ৪৫

১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) "মার্চ টু গোপালগঞ্জ"-এর আগে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লাঞ্চনার ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
মামলাটি গতকাল রাতে (১৭ জুলাই) দায়ের করা হয়। এতে ৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে, যার মধ্যে নিষিদ্ধ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নিউটন মোল্লা এবং সাধারণ সম্পাদক আতাউর পিয়ালের নাম রয়েছে। এছাড়া ৪৫০ থেকে ৫০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকেও আসামি করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান।
এ পর্যন্ত এই ঘটনায় ৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
এদিকে গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে দফায়-দফায় সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় দিনের মতো আজও কারফিউ চলছে। বেলা ১১ টা থেকে ৩ ঘন্টার বিরতি দিয়ে দুপুর ২ টা থেকে ফের জেলায় অনিদ্দিষ্ট কালের কারফিউ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
সকাল থেকে শহরের দোকারপাট বন্ধ রয়েছে। শহরের অলিগলি ফাঁকা। জরুরী পরিসেবা চালু রয়েছে। প্রধান সড়কে সীমিত আকারে যান বাহন চলাচল করছে। তবে কা্রফিউ ঘিরে সকালের দিকে শহরে আইন শৃখলা বাহিনীর তৎপরতা দেখা যায়নি ।
ঘটনাটি শুরু হয়েছিল ১৬ জুলাই, যখন নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কিছু সদস্য ও সমর্থকরা এনসিপির "মার্চ টু গোপালগঞ্জ"-এ ভাঙচুর চালায় এবং পুলিশ ও সমর্থকদের ওপর হামলা চালায়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আসামিরা একটি পুলিশের গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে মারধর করে।
পরবর্তীতে, সমাবেশ শেষে ফেরার পথে এনসিপি সদস্যদের ওপরও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কিছু সদস্য আক্রমণ করে, যার ফলে দীর্ঘস্থায়ী সংঘর্ষ শুরু হয় এবং শহরটি যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নেয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।
অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনী হামলাকারীদের ওপর গুলি চালায়।
এই সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন, নিষিদ্ধ যুবলীগ সদস্য দীপ্ত সাহা (২৫), থানাপাড়া এলাকার রমজান কাজী (২৪), সদর উপজেলার আড়পাড়ার ইমন তালুকদার (১৮), এবং টুঙ্গিপাড়া এলাকার ইদ্রিস মোল্লার ছেলে সোহেল মোল্লা।
পরে কর্মকর্তারা নিশ্চিত করেছেন, সহিংসতায় চারজন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে একজন ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ শুক্রবার (১৮ জুলাই) ভোররাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। তার শরীরে গুলির ক্ষত ছিল।
অন্তর্বর্তী সরকার এই সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য বলেছে এবং দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, 'দেশে সহিংসতার কোনো স্থান নেই। ন্যায়বিচার অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত হবে।'
সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, গোপালগঞ্জে এনসিপির শান্তিপূর্ণ সমাবেশে বাধা ও হামলা 'অগ্রহণযোগ্য' বলে মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার।