মুসলিম নাগরিকদের অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে ভারত

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় সুরাট শহরে থাকতেন হাসান শাহ। গত এপ্রিলের এক সকালে তাকে ঘুম থেকে টেনে হিঁচড়ে তুলে নিয়ে যায় ভারতীয় পুলিশ। হাসান জানান, এরপর পুলিশ তার হাত রশি দিয়ে বেঁধে, চোখে কাপড় বেঁধে তাকে একটি নৌকায় তোলে, যেটার গন্তব্য ছিল বাংলাদেশ।
তিন দিন ধরে সমুদ্রপথে ভাসানোর পর পুলিশ তাকে লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে নৌকার কিনারায় দাঁড় করায়। চোখের বাঁধন খুলে দিয়ে বন্দুক ঠেকিয়ে বলে, 'লাফ দাও পানিতে। পেছনে তাকালে গুলি করব।'
তিনি পানিতে ঝাঁপ দেন এবং কিছুক্ষণ সাঁতরে শুকনো মাটিতে ওঠেন। সেখান থেকে বাংলাদেশ কোস্টগার্ড তাকে উদ্ধার করে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাতক্ষীরা শহরে নিয়ে যায়—এই তথ্য কোস্টগার্ডও নিশ্চিত করেছে।
শাহ বলেন, ভারতীয় পুলিশ তাকে গুজরাটের সুরাট শহরে আটক করার সময় তার নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র ছিনিয়ে নেয়। বর্তমানে তিনি বিদেশের মাটিতে কার্যত রাষ্ট্রহীন অবস্থায় আটকে আছেন। তার স্ত্রী ও চার সন্তানের সাথে যোগাযোগ নেই, যারা তার স্বল্প আয়ের ওপর নির্ভর করে।
শাহ এমন কয়েক হাজার মানুষের একজন—যাদের বেশিরভাগই মুসলমান—এবং যাদের জীবন পুরোপুরি ওলটপালট করে দিয়েছে ভারত সরকার। এপ্রিল মাসে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পাহাড়ি পর্যটন শহর পেহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি ঘোষণা দেন, 'প্রতিটি অনুপ্রবেশকারীকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেওয়া হবে।'
এরপরই মুসলিম শ্রমিক অধ্যুষিত বস্তিগুলোতে ব্যাপক অভিযান শুরু হয়। আটককৃতদের অধিকাংশকেই বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে আসা অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে বলা হয়, তারা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। যদিও কিছুজনের বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও, অনেকেই প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক এবং কেউ কেউ দীর্ঘ দশক ধরে বৈধভাবে ভারতে বসবাস করে আসছিলেন বলে দাবি করেছে তাদের পরিবার।

শাহ জানান, তার জন্ম গুজরাটেই এবং তার পরিবার বাংলাদেশের নয়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বাসিন্দা। শাহের মা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-কে তার ছেলের দুইটি জাতীয় পরিচয়পত্র, একটি ভোটার নিবন্ধন সনদ ও বিবাহ নিবন্ধনের অনুলিপি দেখিয়েছেন। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট যাচাই করে নিশ্চিত হয়েছে যে শাহ ভারতের ভোটার তালিকায় নিবন্ধিত। শাহ আরও বলেন, তার পরিচয়পত্র যাচাইয়ে প্রয়োজনীয় মোবাইল ফোনটিও পুলিশ আটকে রেখেছে।
ভারতের মুসলিম সংখ্যালঘুদের লক্ষ্য করে পরিচালিত এই নির্বাসন অভিযানে দেখা গেছে ব্যাপকভাবে বাড়িঘর ভাঙচুর, বিচার ছাড়াই আটক, মারধরের অভিযোগ এবং ন্যূনতম আইনি প্রক্রিয়ার অভাব। বাংলাদেশি কর্মকর্তাসহ অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত ৫০ জনেরও বেশি মানুষের সাক্ষাৎকার এবং সরকারি তথ্য, আদালতের নথি ও ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা করে এসব তথ্য উঠে এসেছে দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদনে।
এই দমন অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ, সমর্থন করেছে স্থানীয় নেতারা এবং বৈধতা দিয়েছে আদালত। সবচেয়ে তীব্রভাবে এ অভিযান চালানো হয়েছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আসাম ও পশ্চিমাঞ্চলের গুজরাটে—দুই রাজ্যই শাসিত হচ্ছে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতাদের দ্বারা।
দ্য পোস্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সরকারি তথ্যের সূত্র দিয়ে জানায়, ৭ মে থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে ১ হাজার ৮৮০ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। অন্য এক নথিতে দেখা গেছে, ৭ মে থেকে ১৭ জুনের মধ্যে বাংলাদেশ সীমান্ত কর্তৃপক্ষ ১১০ জনকে ভারতের নাগরিক হিসেবে চিহ্নিত করে আবার ভারতেই ফেরত পাঠিয়েছে। তবে কতজন প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক কিংবা বৈধ বাসিন্দা ছিলেন কিন্তু প্রমাণপত্র না থাকার কারণে ফেরত পাঠানো হয়েছে—তা স্পষ্ট নয়।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ১১ জন জানান, ভারতীয় পুলিশ কোনো ধরনের আইনগত পরিচয় বা নাগরিকত্বের প্রমাণ দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই তাদের আটক করে। অনেকেই জানান, অভিযান চলাকালে তাদের আসল পরিচয়পত্র জব্দ করা হয় এবং পরে তারা যে কাগজপত্রের কপি জমা দেন, সেগুলো কর্মকর্তারা জাল বলে বাতিল করে দেন।


দ্য পোস্ট-এর হাতে আসা একটি ভিডিও ফুটেজ এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণ এসব অভিযানের প্রকৃতি স্পষ্ট করে তোলে। একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ভারতের সীমান্ত থেকে উত্তরাঞ্চলীয় একটি বাংলাদেশি সীমান্ত ফাঁড়িতে এক বৃদ্ধা নারীকে ফেলে রেখে আসা হয়। তিনি কান্নাকাটি করে ভারতে ফেরার জন্য অনুনয় করছেন। পরে তাকে ভারত ফিরিয়ে নিলেও, পরিবার জানায়—এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ।
ভারতের সাম্প্রতিক এসব নির্বাসন ইস্যুতে বাংলাদেশ একাধিক কূটনৈতিক বার্তা পাঠিয়েছে এবং আলোচনাও চলমান রয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতে বাংলাদেশ হাইকমিশন।
তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এ বিষয়ে দ্য পোস্ট-এর কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
এই নির্বাসন অভিযান সম্পর্কে লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ এবং আইন বিষয়ক অধ্যাপক মোহসিন আলম ভাট বলেন, 'এটা শুধু নাগরিক অধিকার লঙ্ঘন নয়, এটা আন্তর্জাতিক আইনকেও সরাসরি লঙ্ঘন করে।'
'মুসলমানদের শৃঙ্খলায় রাখা'—ভারতে বারবার লক্ষ্যে পরিণত সংখ্যালঘুরা
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর থেকেই ভারতে মুসলমানরা নানাভাবে নিপীড়ন, বৈষম্য ও বিদ্বেষের শিকার হয়ে আসছে। বর্তমানে দেশটির মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ১৫ শতাংশ মুসলমান। অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার সময় প্রায়ই ডানপন্থী হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকরা তাদের 'অনুপ্রবেশকারী' হিসেবে চিহ্নিত করে কুৎসা রটনা করে এবং গ্রেপ্তার, ঘরবাড়ি ধ্বংস ও পুলিশের সহিংসতার মুখে ফেলে।
গুজরাট—যেখানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাজনৈতিক উত্থান শুরু—সেই রাজ্যেই কাশ্মীরের হামলার পর রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাংভি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় নিরাপত্তা সভার নির্দেশ অনুযায়ী পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে 'কোনো দেশ থেকে আসা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী কেউ আমাদের রাজ্যে বাস না করে।'

এ প্রেক্ষিতে এপ্রিলের শেষ দিকে মুসলমান অধ্যুষিত আহমেদাবাদের চাঁদোলা লেক এলাকায় পরিচালিত এক অভিযানে ৮৯০ জনকে আটক করা হয়—যার মধ্যে ২১৯ জন নারী ও ২১৪ জন শিশু ছিল বলে জানায় ভারতের মানবাধিকার সংগঠন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)।
ভিডিও ও সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে, আটক ব্যক্তিদের প্রচণ্ড গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে থানায় যেতে বাধ্য করা হয়, আর সেই দৃশ্য টেলিভিশন ক্যামেরায় ধারণ করে প্রচার করা হয়। যদিও অধিকাংশকে পরে মুক্তি দেওয়া হয়, কতজনকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে—তা স্পষ্ট নয়। সাংভি অবশ্য এই অভিযানকে 'ঐতিহাসিক অভিযান' হিসেবে পুলিশের প্রশংসা করে উল্লেখ করেন।
পরবর্তী প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আহমেদাবাদ সিটি করপোরেশনের কর্মীরা চাঁদোলা লেক এলাকায় প্রায় ১২ হাজার ৫০০টি ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়—ফলে হাজার হাজার পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ে। গুজরাটের কর্মকর্তারা রাজ্যের হাইকোর্টে যুক্তি দেন, 'অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের দখলে থাকা' এলাকাগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা জরুরি 'জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার স্বার্থে'—এই মর্মে একটি সিল করা আদালতীয় নথি দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পেয়েছে। হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্টের পুরোনো রায় দেখিয়ে এসব ঘরবাড়ি ভাঙার অনুমতি দেয়।
ইউনুস খান পাঠান, একজন মুসলমান দিনমজুর। এপ্রিলের অভিযানে পুলিশ তাকেও আটক করে। তিনি জানান, পুলিশ তাকে এত দীর্ঘ সময় হাঁটিয়ে থানায় নিতে বাধ্য করে যে তার পায়ের তলা পুড়ে যায়। পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হলেও তার চাঁদোলা লেকের বাড়ি আর খুঁজে পাননি—বুলডোজারে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ইউনুস জানান, তিনি আহমেদাবাদেই জন্মেছেন এবং সেখানেই বড় হয়েছেন। দ্য পোস্ট তার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি অনুলিপি যাচাই করে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।
পাঠান বলেন, 'প্রমাণ করো আমি সন্ত্রাসী। আমার একটাই পরিচয়—আমি মুসলমান।'
আসলে ঠিক কতজন মানুষ অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ছিলেন, তা এখনও পরিষ্কার নয়। মানবাধিকারকর্মীদের ধারণা, সংখ্যাটি প্রায় ৫০ জনের মতো। তবে অধিকাংশ মানুষ প্রকাশ্যে কিছু বলতে সাহস করেননি, কারণ 'জাতি বিরোধী' তকমা পাওয়ার ভয় ছিল, বলেন পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজের গুজরাট শাখার সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদ নাফিস।
তিনি বলেন, 'মানুষের মধ্যে একটা ধারণা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে—ওরা মুসলমানদের শৃঙ্খলায় রাখছে।'
আহমেদাবাদ শহরের পুলিশ ও গুজরাট রাজ্য পুলিশের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে দ্য পোস্ট-এর কোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়া হয়নি।
'ওরা আমাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে'
আবদুর রহমান, বয়স ২০। তিনি জানান, ২৬ এপ্রিল ভোররাত চারটার দিকে আহমেদাবাদের চাঁদোলা লেক এলাকায় তার বাসা থেকে তাকে তুলে নেয় পুলিশ। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখানো হয়নি, কারণও জানানো হয়নি।
রহমান বলেন, জেলে কাটানো ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিদিনই পুলিশ তাকে চামড়ার বেল্ট দিয়ে পেটাত। জোর করে বলানো হয়—সে নাকি বাংলাদেশ থেকে এসেছে। শুরুতে তিনি তা অস্বীকার করেন, কিন্তু নির্যাতনের যন্ত্রণায় একপর্যায়ে তাকে মিথ্যে স্বীকার করতে বাধ্য করা হয়।
পরে তার চোখ বেঁধে একটি বিমানে তোলা হয়—যে গন্তব্য তার জানা নেই। সেখান থেকে আবার তুলে দেওয়া হয় একটি জাহাজে, যেটি ছিল নোংরা পানির দুর্গন্ধে ভরা। ওই জাহাজেই টানা তিন দিন তার ওপর হামলা চলে। নিরাপত্তা বাহিনী তাকে লোহার পাইপ ও তার দিয়ে পেটায়। তার শরীরের ওপর অংশে এখনও সেই নির্যাতনের গভীর বেগুনি দাগ রয়ে গেছে, যা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট-এর প্রতিবেদককে তিনি দেখিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'ওরা আমাকে নির্মমভাবে পিটিয়েছে। মনে হচ্ছিল, আমরা কেউ বাঁচব না।'
রহমান জানান, শাহের মতো তাকেও একটি লাইফ জ্যাকেট পরিয়ে জোর করে নৌকা থেকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দেওয়া হয়। দুইজনই বলেন, তারা প্রায় ১০ মিনিট ধরে সাঁতরে পৌঁছান একটি উপকূলীয় এলাকায়, যা সুন্দরবনের অংশ—এই ম্যানগ্রোভ বন ছড়িয়ে আছে ভারতের পূর্বাঞ্চল এবং বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল জুড়ে।
পানিতে উঠার পর তারা মোবাইল টাওয়ারের লাল ঝলমলে আলো লক্ষ্য করে সেদিকেই হাঁটতে থাকেন। পথে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে তাদের দেখা হয়, যারা দ্রুত বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের খবর দেয়। এর পর কয়েকক্ষণ না যেতেই কোস্টগার্ড এসে তাদের উদ্ধার করে সাতক্ষীরায় নিয়ে যায়।
তবে এখন তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো নিজের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রমাণ করা, যদিও তাদের মূল পরিচয়পত্র পুলিশ ধ্বংস করে দিয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন।
রহমানের বাবা তার ছেলের জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি কপি এবং একটি স্কুল সনদ জমা দিয়েছেন, যাতে তার জন্মস্থান হিসেবে আহমেদাবাদ উল্লেখ রয়েছে। দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট যাচাই করে নিশ্চিত করেছে যে রহমানের পরিচয়পত্র ও স্কুল সনদ প্রকৃত।
নির্বাসিত ব্যক্তিরা নাগরিক হোন বা না হন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্বাসন চুক্তি না থাকা এবং ন্যায্য বিচার প্রক্রিয়ার সুযোগ না দিয়ে ভারত কর্তৃক এই নির্বাসন পদ্ধতি আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন, বলেছেন আটলান্টিক কাউন্সিলের ননরেসিডেন্ট সিনিয়র ফেলো ও দক্ষিণ এশিয়ার অভিবাসন বিশেষজ্ঞ রুদাবেহ শাহিদ। তিনি আরও যোগ করেন, এই অভিযানটি সমন্বিত ও পরিকল্পিত—বাড়ি ভাঙা, গ্রেপ্তার, নির্মম মারপিট এবং জোরপূর্বক নির্বাসনের মাধ্যমে একটাই কথা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
শাহিদ বলেন, 'তারা একটি পূর্ণাঙ্গ গোষ্ঠীকে মুছে ফেলতে চায়। আমি এ ছাড়া আর কিছু বলতে পারি না।'
'আমার শুধু একটাই জীবন আছে'
সকল নির্বাসিত ব্যক্তিকেই সমুদ্রপথে নেয়া হয় না।
বাংলাদেশের লালমনিরহাট শহরের সীমান্তরক্ষী লে. কর্নেল মেহেদী ইমাম জানান, যখন ভারত তার উত্তরাঞ্চলীয় বাংলাদেশ সীমান্ত দিয়ে মানুষ ঠেলে দিতে চায়, তখন রাতে ফ্লাডলাইট বন্ধ করে দেয়া হয়।
ইমাম জানান, অন্ধকারের মধ্যে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী আটক ব্যক্তিদের দেশের সীমান্তের দুই পাশে থাকা প্রায় ১৫০ গজ বিশিষ্ট সবুজ 'নো-ম্যান্স ল্যান্ড' পার হতে বলছে। ভারতের সীমান্তরক্ষীরা বাংলাদেশের তুলনায় তিনগুণ বেশি হওয়ায় তাদের এই কার্যকলাপ ধরা পড়া কঠিন হয়, জানান তিনি।


ইমাম আরও বলেন, কাউকে কেবলমাত্র বনেই ফেলে দেওয়া আইনত অবৈধ, কারণ একজন ব্যক্তির জাতীয়তা যাচাইয়ের জন্য ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীদের মধ্যে একটি নির্দিষ্টি প্রক্রিয়া রয়েছে।
ইমাম জানান, ৭২ বছরের মিসমা খাতুনকে ২৮ মে ইমামের সীমান্ত পোস্টের কাছাকাছি ফেলে রাখা হয়।
দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এর হাতে আসা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের কাছে অনুরোধ করছেন যেন তাকে বাংলাদেশে না ফেলে দেয়। নীল শাড়ি পরা অবস্থায় মাটিতে বসে তিনি বলছেন, 'আমার তো একটাই জীবন আছে।'
খাতুন ভারতীয় রক্ষীদের জানিয়েছেন, তিনি আসাম থেকে এসেছেন, সেখানেই তার পুরো জীবন কেটেছে এবং তার পরিচয়পত্র বাড়িতে রয়েছে।
ইমাম জানান, শেষ পর্যন্ত একই দিন ভারত তাকে দেশে পুনরায় ঢোকার অনুমতি দেয়। কিন্তু তারপর থেকে তার পরিবার তার কোনো খবর পায়নি। তার ছেলে আবদুল সুবান বলেন, তিনি প্রতিদিন পুলিশ ও ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের ফোন করেন, কিন্তু তাদের কাছ থেকে তাকে বলা হয়, খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
সুবান বলেন, 'আমি জানি না মা এখনও বেঁচে আছেন কি না। এটা কীভাবে হতে পারে?'
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন