ফার্মগেটে বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারী নিহত, মেট্রোরেল চলাচল আংশিক বন্ধ
রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় মেট্রোরেলের একটি পিলারের বেয়ারিং প্যাড খুলে মাথায় পড়ে আবুল কালাম (৩৫) নামে এক পথচারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ (২৬ অক্টোবর) দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফার্মগেট মেট্রোস্টেশন-সংলগ্ন বাংলাদেশ কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের সামনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতের বাড়ি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়।
এই ঘটনার পর দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে দুপুর ২টা নাগাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান জানান, পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত শুধু দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু থাকবে।
উপদেষ্টার কথামতো, ঘটনার আড়াই ঘণ্টা পর বিকেল ৩টায় মেট্রো চলাচল আবার আংশিক চালু হয়। সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)-এর এক ফেসবুক পোস্টে উল্লেখ করা হয়, মতিঝিল হতে শাহবাগ পর্যন্ত মেট্রোরেল সেবা ৭.১৫ মিনিটে চালু হয়েছে।
এর আগে, বাকি অংশ কখন চালু হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে দুপুরে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এমডি ফারুক হোসেন বলেন, 'বাকি অংশ চেষ্টা করা হবে আজকে চালু করার। তবে এই কাজ শেষ হতে একটু সময় লাগবে।'
উপদেষ্টা আরও জানিয়েছেন, এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং নিহতের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। এছাড়া, তার পরিবারের কোনো কর্মক্ষম সদস্য থাকলে তাকে মেট্রোরেলে চাকরির ব্যবস্থা করা হবে বলেও আশ্বাস দেন তিনি।
তিনি বলেন, 'সেতু বিভাগের সচিব আবদুর রউফকে আহ্বায়ক করে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করেছি৷ তারা আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন। তারা আগের ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট পর্যালোচনা করবেন এবং কেন এই ঘটনা ঘটছে সেটা খুঁজে বের করবেন।'
সরেজমিনে দেখা গেছে, ৪৩৩ নম্বর পিলারের যে অংশ থেকে বেয়ারিং প্যাডটি খুলে পড়েছে, সেই জায়গার ডায়ার একপাশে কিছুটা দেবে গেছে। তবে বিকেল ৩টার দিকে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষের একটি কারিগরি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে মেরামতের কাজ শুরু করেছে।
কারিগরি দল পৌঁছালে জানা যায়, মেট্রোরেলের ঐ অংশ থেকে দুটি প্যাডই খসে পড়েছে। একটি নিচে ছিটকে পড়লেও বাকিটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
পর্যবেক্ষণে আসা এক ইঞ্জিনিয়ার টিবিএসকে বলেন, 'আমরা উপরে গিয়ে দেখেছি যে সেখানে দুটি স্প্রিং প্যাডই মিসিং। সেটি উপরেও খুঁজেছি আমরা কিন্তু সেখানেও পাওয়া যায়নি। প্যাড পড়ে যাওয়ায় উপরের ডায়া নিচের কলামের সাথে আটকে আছে।
বাংলাদেশী ২ জন ইঞ্জিনিয়ার উপরে উঠে ডায়ার ভেতরের পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলেন। পর্যবেক্ষণ শেষে একজন ইঞ্জিনিয়ার জানান, সেখানে স্প্রিং প্যাড বসানো ব্যতীত মেট্রোরেল চলাচল সম্ভব হবে না।
এর আগে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন জানান, '১২টা ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের সময় পথচারী আবুল কালাম রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন, এসময় উপর থেকে বিয়ারিং প্যাড পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।'
দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু হওয়ায় নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে এবং এ ঘটনায় মামলা দায়ের হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'এটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এটা কেন হলো সেটা তো বলতে পারব না, এটার টেকনিক্যাল জ্ঞান আমার নেই—এটা কেন খুলে পড়ল। এটা যারা টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেন তারা বলতে পারবেন'।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা সোয়া ১২টার দিকে বিরাট আকারের বেয়ারিং প্যাডটি ছিটকে পড়ে। এ সময় ফুটপাত দিয়ে ওই তরুণ ব্যাগ কাঁধে হেঁটে যাচ্ছিলেন। প্যাডটি তার মাথায় আঘাত করে পাশের একটি চাপ-শিঙাড়ার দোকানে আঘাত করে। এতে ওই দোকানের সামনের কাঁচ ভেঙে দুইজন আহত হন। আর মাথায় আঘাত লাগা ওই তরুণ ঘটনাস্থলেই তাৎক্ষণিক মারা যান।
নিচে পড়া স্প্রিংটির ওজন ৪০-৫০ কেজি হবে বলে উল্লেখ করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
বেয়ারিং প্যাড বিশেষ ধরনের রাবার দিয়ে তৈরি উপাদান। এটি পিয়ার ও ভায়াডাক্টের সংযোগস্থলে বসানো হয়। এসবের একেকটির ওজন ১৪০ থেকে ১৫০ কেজি। এসব বিয়ারিং প্যাড ছাড়া ট্রেন চালালে উড়াল পথ দেবে যাওয়া কিংবা স্থানচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর ফার্মগেট ও বিজয় সরণির একটি অংশে একটি বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে। ওই ঘটনায় বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ তৈরি হয়। এর মধ্যেই দ্বিতীয়বার বেয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটল।
