এবার কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর এবার কানাডার কয়েকটি বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
দেশটির টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ কানাডার অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিবির স্থাপন করেছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দাবি, 'ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আর্থিক সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। তা গাজায় যুদ্ধ চালাতে ইসরায়েলকে সাহায্য করছে।'
এদিকে কুইবেকের প্রিমিয়ার ফ্রাঁসোয়া লেগল্ট বৃহস্পতিবার বলেছেন, 'মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরটি ভেঙে ফেলা উচিত। কারণ কানাডার কয়েকটি বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনপন্থি শিবির তৈরি করা হয়েছে।'
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্পাস থেকে পুলিশ শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করেছে এবং গাজায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
ম্যাকগিল পুলিশের হস্তক্ষেপের অনুরোধ জানালেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে পুলিশ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।
লেগাল্টের একজন মুখপাত্র বলেছেন, 'আমরা চাই ক্যাম্পটি উচ্ছেদ করা হোক। পুলিশের ওপর আমাদের ভরসা আছে। তাদের কাজ তাদেরই করতে দিন।'
অন্যদিকে, বৃহস্পতিবার মন্ট্রিযলে ইসরায়েলপন্থিরা পাল্টা বিক্ষোভ করেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা স্কুলের ডাউনটাউন ক্যাম্পাসে একটি শিবির স্থাপন করে। সেখানে প্রায় ১০০জন বিক্ষোভকারী কয়েক ডজন তাঁবু নিয়ে জড়ো হন।
আয়োজকদের একটি বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় তার বিনিয়োগ, 'ইসরায়েলি বর্ণবাদ, দখলদারিত্ব এবং ফিলিস্তিনের অবৈধ বসতি স্থাপন' থেকে নিজেদের বিচ্ছিন্ন করা এবং কিছু ইসরায়েলি অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাদের অংশীদারিত্ব শেষ না করা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পিং অব্যাহত থাকবে।
ইসরায়েল বলেছে, তারা বর্ণবাদে অংশ নেয় না। এমনকি গাজায় তাদের চালানো হামলাও কোনো গণহত্যা না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, 'বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংলাপ করছিল' কর্তৃপক্ষ এবং মধ্যাহ্ন পর্যন্ত 'বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি করেনি' ক্যাম্পটি।
টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকের শিক্ষার্থী এবং ক্যাম্পের মুখপাত্র সারা রাসিখ রয়টার্সকে বলেছেন, 'দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পে থাকবেন তারা।'
তিনি বলেন, 'জনজীবনে বাধা সৃষ্টি করাই যদি আমাদের কণ্ঠস্বর শোনানোর একমাত্র উপায় হয়,তবে আমরা তা-ই করতে ইচ্ছুক।'
কিছু ইহুদি দলের অভিযোগ, বিক্ষোভকারীরা ইহুদিবিরোধী।
তবে তাদের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আয়োজকরা।
তারা জানিয়েছেন, তাদের সঙ্গে যোগ দেওয়া বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কিছু ইহুদিও রয়েছেন।
ক্যাম্প সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর কার্যালয় তার দেওয়া মঙ্গলবারের একটি বিবৃতিকে ইঙ্গিত করে।
ওই বিবৃতিতে ট্রুডো বলেছিলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার জায়গা, মত প্রকাশের স্বাধীনতার জায়গা…তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা কেবল নিরাপদবোধ করলেই এটি কাজ করে। এই মুহূর্তে…ইহুদি শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিরাপদ বোধ করছে না।'
৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের হামলায় দক্ষিণ ইসরায়েলের ১ হাজার ২০০ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ওইদিনই গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে,ইসরায়েলের শুরু করা নির্বিচার এই হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত ৩৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ভাবানুবাদ: তাবাসসুম সুইটি