'মিস-কনসেপশন দূর হয়েছে': এনবিআর-এর বিভক্তি বজায় রাখার কথা জানালেন অর্থ উপদেষ্টা

অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যেভাবে দুই বিভাগে ভাগ করা হয়েছে সেরকমই থাকবে। এ নিয়ে যে মিস-কনসেপশন [ভুল ধারণা] হয়েছিল, সেটি দূর হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে এনবিআরের কর, কাস্টমস ক্যাডারদের সাথে বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এনবিআরের কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে, বাস্তবতা অনুযায়ী দেশের স্বার্থে, দশের স্বার্থে ও ব্যবসার স্বার্থে যেটা করা হয়েছে (দুই ভাগ) সেটা থাকবে। এনবিআর পৃথকের বিষয়টি বাস্তবায়নের পর্যায়ে অনেক কাজ আছে ৷ সে সময় আমরা দেখবো কতটুকু তাদের দাবি নেওয়া যায়।
তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তারা যেসব দাবি করছেন, সেগুলো যখন নতুন দুটি বিভাগের বিষয়ে বিধি প্রণয়ন করা হবে, তখন যতটা সম্ভব রাখার চেষ্টা করা হবে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আর কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হবে না। এ বিষয়ে একটি অ্যাডভাইজরি কমিটি আছে, সেই কমিটির সাথে আলোচনা করবেন এনবিআর কর্মকর্তারা।
আজকের বৈঠক ফলপ্রসূ কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আজকের বৈঠক ফলপ্রসূ৷
এনবিআরের আলাদা বিভাগ দুটির কাজ শুরু হবে কবে- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আগে গেজেট করতে হবে৷ গেজেটের আগেও অনেক কাজ আছে৷
এ কাজ শেষ করতে কতদিন লাগবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেওয়া যায়৷ এটা বাজেটের আগে না পরে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেট তো ২ জুনে দেব৷ এর আগে কীভাবে করবো?
এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অর্থ উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টারা কর্মকর্তাদের বক্তব্য শুনেছেন। এখন এনিয়ে কিছু কাজ করবে মন্ত্রণালয়।
আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এনবিআর এ নিয়ে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেবে।
বৈঠকে জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ মে রাতে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআরকে দুইভাগে বিভক্ত করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ বানানো হয়। এ নিয়ে যে অধ্যাদেশ জারি করা সেখানে কর ও কাস্টমস ক্যাডারের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এ অভিযোগে তারা গত কয়েকদিন কলম বিরতি কর্মসূচিও পালন করেছেন।
এর আগে গতকাল সোমবার (১৯ মে) নিজের দপ্তরে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা (এনবিআর) প্রস্তাবিত বিভক্তি ও সচিব নিয়োগের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাদের চলমান প্রতিবাদের পরিপ্রেক্ষিতে স্পষ্ট করে জানিয়ে দেন—এক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না।
তিনি বলেন, 'এনবিআরে আন্দোলন হচ্ছে, কর্মবিরতি হচ্ছে। কিন্তু আমরা এ বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ [আপস] করব না। ২০০৮ সালেও এনবিআর কর্মকর্তারা এমন চেষ্টা করেছিলেন। তখন কাস্টমস অফিসিয়ালরা অটোমেশন হতে দেয়নি। অথচ তখন যদি অটোমেশন ও ব্যবস্থাপনা আলাদা করা হতো, তাহলে এতদিনে রাজস্ব আহরণ পরিস্থিতি অনেক ভালো হতো।'
তিনি আশা প্রকাশ করেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ পুনর্গঠন সম্পন্ন হবে। তবে অর্গানোগ্রাম চূড়ান্তে কিছুটা সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। নীতি বিভাগটি অবশ্যই সুগঠিত হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
সচিবদের এনবিআরের নিজস্ব ক্যাডার থেকেই নিতে হবে—এনবিআর কর্মকর্তাদের এমন দাবিকে নাকচ করে দিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'ভেটিংয়ের সময় আইন মন্ত্রণালয় বলেছে, সচিব পদের জন্য ক্যাডার নির্দিষ্ট করে দিলে খসড়া ভেটিংয়ে পাস করা যাবে না। এনবিআরে অধিকাংশ সচিব সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন ক্যাডার) থেকে হয়েছেন। এর আগে কয়জন সচিব কাস্টমস, ভ্যাট ও আয়করের কর্মকর্তা ছিলেন?'
তিনি আরও বলেন, 'এনবিআর কর্মকর্তারা দুই বিভাগের সচিবই তাদের ক্যাডার থেকে চাচ্ছেন—এটা তো সম্ভব নয়।'