হান্নান মাসউদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিল এনসিপি

ধানমন্ডি থানার একটি ঘটনায় আটক তিনজনকে মুচলেকা দিয়ে ছাড়িয়ে আনার ঘটনায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসউদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে তার দল। আগামী তিন দিনের মধ্যে তাকে লিখিত ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে কেন তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না।
বুধবার (২১ মে) এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব (দপ্তর) সালেহ উদ্দিন সিফাত স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
নোটিশে বলা হয়, মঙ্গলবার ধানমণ্ডি থানার একটি আবাসিক এলাকায় 'সমন্বয়ক' পরিচয়ে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এদের মধ্যে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের (বৈবিছাআ) মোহাম্মদপুর থানার আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বি, যিনি নৈতিকতা স্খলনের কারণে কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্তে ইতোমধ্যেই অব্যাহতি পেয়েছেন। এমন অবস্থায় হান্নান মাসউদ ওই তিনজনের জামিনের জন্য থানায় গিয়ে মুচলেকা দেন, যা দলীয় নীতিমালার পরিপন্থী বলে মনে করা হচ্ছে।
নোটিশে আরও বলা হয়, এ বিষয়ে ব্যাখ্যা এবং নিজের অবস্থান আগামী তিন দিনের মধ্যে লিখিতভাবে শৃঙ্খলা কমিটির প্রধানের কাছে উপস্থাপন করতে হবে।
এদিকে মঙ্গলবার (২০ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে হান্নান মাসউদ ঘটনার ব্যাখ্যা দেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, 'মোহাম্মদপুর থানা বৈবিছাআ'র আহ্বায়কসহ তিনজনকে আটক করা হয় মবসৃষ্টির চেষ্টাকালে, যার ফলে বৈবিছাআ'র পরিচয়ে স্টুডেন্টরা ধানমন্ডি থানায় গিয়ে ঝামেলা সৃষ্টি করছিল।'
তিনি আরও বলেন, 'এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনারের অনুরোধে আমি সেখানে যাই। সেখানে গেলে প্রশাসনের অনুরোধে বিষয়টির মধ্যস্থতা করি। যেহেতু প্রশাসন ওদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ রুজু করেননি এবং করতেও চাচ্ছিল না।'
স্ট্যাটাসে হান্নান মাসউদ জানান, তিনি ডিএমপিকে এ বিষয়ে আগেই অবহিত করেছিলেন।
উল্লেখ্য, এর আগের রাতেই ধানমন্ডিতে এক প্রকাশকের বাসার সামনে তাকে 'স্বৈরাচারের দোসর' বলে অভিহিত করে মিছিল ও স্লোগানের মাধ্যমে মব তৈরি করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন সমন্বয়ক। এতে পুলিশের সঙ্গে তাদের তর্ক ও ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ তাদের আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
পুলিশ জানিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয়ে তিন ব্যক্তি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করলে তাদের হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে মঙ্গলবার বিকেলে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
পুলিশ হেফাজতে নেওয়া তিনজন হলেন মোহাম্মদপুর থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম রাব্বী, ঢাকা মহানগর শাখার সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব ফারহান সরকার দিনার এবং পদবিহীন সদস্য মো. উল্লাহ জিসান।
এসি তারিকুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সোমবার (১৯ মে) রাতে ধানমন্ডির ৪ নম্বর সড়কে একজন প্রকাশককে 'ফ্যাসিবাদের দোসর' আখ্যা দিয়ে কয়েকজন ব্যক্তি তার বাসায় ঢোকার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে ওই ব্যক্তিরা নিজেদের বৈবিছাআ নেতা পরিচয় দিয়ে ওই প্রকাশককে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। তবে তার [প্রকাশকের] বিরুদ্ধে কোনো মামলা না থাকায় পুলিশ গ্রেপ্তারে অপারগতা প্রকাশ করে।
এর জের ধরেই পুলিশের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় এবং পরে সিনিয়র কর্মকর্তাদের নির্দেশে তিনজনকে ধানমন্ডি থানায় নেওয়া হয়। দুপুর দুইটা পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি বলে জানান এই কর্মকর্তা।
ধানমন্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ক্যশৈনু জানান, মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় নাগরিক কমিটির সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক হান্নান মাসুদের জিম্মায় তিনজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, 'তাদের একজন সিনিয়র সমন্বয়ক এসেছিলেন। তার জিম্মায় আটকদের ছেড়ে দিয়েছি।'
এই বিষয়ে হান্নান মাসউদ সাংবাদিকদের বলেন, 'এমনি খোঁজ-খবর নিতে এসেছি। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সেটা মীমাংসা করা হলো। এই ঘটনায় বাইরের অনেকেই জড়িত আছে। সেগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি।'