অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এনবিআর-কর্মকর্তাদের বহুল প্রত্যাশিত সভা ভেস্তে গেল যে কারণে

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তির অধ্যাদেশ ঘিরে চলমান আন্দোলন, অচলাবস্থা ও রাজস্ব ক্ষতির প্রেক্ষাপটে সমস্যা সমাধানে গতকাল মঙ্গলবার (২০ মে) এক বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
এতে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদসহ উপদেষ্টা পরিষদের আরও দুজন সদস্য, এনবিআরের আন্দোলনরত কর্মকর্তা ও রাজস্ব সংস্কার কমিটির সদস্যরা অংশ নেন।
তবে বৈঠকের শুরুতেই অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমি মিটিং দীর্ঘ করব না… আমি ৬–৭ মিনিটের বেশি সময় দেব না।'
তিনি আরও বলেন, 'ক্যাবিনেট সচিব ও জনপ্রশাসন সচিবের সঙ্গে আরেকটি মিটিং আছে, আমি তাদের বসিয়ে রাখতে পারব না।'
অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে এনবিআরের কর্মকর্তাদের বৈঠকের বিষয়বস্তু বুধবার (২১ মে) সাংবাদিকদের কাছে এভাবেই তুলে ধরেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
উপদেষ্টার এমন বক্তব্যের বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, অর্থ উপদেষ্টার এ বক্তব্য শুনে উপস্থিত এনবিআরের কর্মকর্তাসহ রাজস্ব সংস্কার কমিটির সদস্যরা হতবাক হয়ে পড়েন।
রাজস্ব সংস্কার কমিটির সদস্য আমিনুর রহমান খন্দকার টিবিএসকে বলেন, "আমরা সভাকক্ষে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের অপেক্ষায় ছিলাম। এমন সময় জনপ্রশাসন সচিব তার দল নিয়ে ঢুকেই বললেন, 'আমাদের সঙ্গেও একই সময়ে মিটিং আছে।'"
ফলে বৈঠকটি সংক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। সভায় এনবিআরের কর্মকর্তারা ছাড়াও রাজস্ব সংস্কার কমিটির সদস্যরা বলেন, তাদের প্রতিবেদনে যেভাবে সংস্কারের রূপরেখা তুলে ধরা হয়েছে, তা জারিকৃত অধ্যাদেশে প্রতিফলিত হয়নি।
তাদের মতে, প্রতিবেদন অনুযায়ী সংস্কার কার্যকর হলে তা জাতীয় স্বার্থে উপকারী হবে। তারা দুটি বিভাগের (রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা) নেতৃত্ব এনবিআরের মধ্য থেকেই নির্ধারণের পক্ষে অবস্থান জানান।
তবে এসব আলোচনার বাইরে গিয়ে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'এনবিআর বিষয়ে যে মিস-কনসেপশন [ভুল–বোঝাবুঝি] ছিল, তা দূর হয়েছে। এনবিআরকে যে দুই বিভাগে ভাগ করা হয়েছে, তা-ই থাকবে।'

এনবিআর কর্মকর্তারা বৈঠকে সন্তুষ্ট কি না এবং তারা আন্দোলন শেষ করবেন কি না—এমন প্রশ্নে ড. সালেহউদ্দিন বলেন, 'আমরা তাদের আন্দোলন প্রত্যাহার করতে বলেছি। তারা করবে কি না তা আমার চিন্তার বিষয় নয়।'
ওই বৈঠকে উপস্থিত এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে টিবিএসকে বলেন, 'অর্থ উপদেষ্টা এনবিআরের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দিয়েছিলেন একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিতে—যাতে বলা হবে আন্দোলনকারীদের কথা শোনা হয়েছে এবং পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'
তবে একজন কর্মকর্তা তখন বলেন, 'স্যার, আমাদের কথা বলার সুযোগই দেওয়া হয়নি।' এর জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমি এত সময় কাউকে দিই না। তোমাদের কথা অনেক শুনেছি। আমি যখন সহকারী কমিশনার ছিলাম, তখন সচিবের রুমে তো ঢুকতেই দিত না।'
তিনি আরও বলেন, 'তোমরা আন্দোলন করছ, আইনজীবী সমিতিকে নামিয়েছ, টিআইবি, সিপিডিকে নামিয়েছ, রিট করিয়েছ। আমি এগুলো নিয়ে কেয়ার করি না।'
এমন সময় একজন কর্মকর্তা কিছু বলতে চাইলে তাকেও থামিয়ে দেন উপদেষ্টা—এমন অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।
বৈঠক শেষে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, 'জারিকৃত অধ্যাদেশ বিষয়ে কর্মকর্তাদের বিভিন্ন উদ্বেগ, পরামর্শ এবং মতামত গুরুত্বসহকারে শোনা হয়। উত্থাপিত বিষয়সমূহ যথাযথভাবে বিবেচনা করা হবে মর্মে অর্থ উপদেষ্টা মহোদয় আশ্বাস প্রদান করেন।'
তবে ওই রাতেই এনবিআরের আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের সংগঠন 'এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ' এক বিবৃতিতে জানায়, উপদেষ্টার সঙ্গে 'আলোচনা ফলপ্রসূ হয়নি'।
আজ বুধবার (২১ মে) তারা ঘোষণা দেন, কর্মবিরতি আরও জোরদার করা হবে এবং অসহযোগ আন্দোলন চলবে পুরোদমে। এর ফলে আগামী কয়েকদিনে দেশের রাজস্ব খাতে আরও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টার বক্তব্য জানতে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলেও ফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তার কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।