ত্রাণ সহায়তা না পেলে গাজায় ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে: জাতিসংঘ

গাজায় আরও ত্রাণ সহায়তা না পৌঁছালে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার শিশুর মৃত্যু হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা প্রধান টম ফ্লেচার। খবর বিবিসি'র।
সোমবার (১৯ মে) গাজায় মাত্র পাঁচটি ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করেছে। ১১ সপ্তাহ অবরোধের পর এটিকে 'সমুদ্রে এক বিন্দু পানি' বলে মন্তব্য করেন ফ্লেচার।
তবে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো সীমান্ত পার হয়ে গাজায় প্রবেশ করলেও এখনও সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের কাছে পৌঁছায়নি।
এদিকে সোমবার ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্সের নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে এবং ত্রাণ প্রবেশে বিধিনিষেধ তুলে না নিলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। এতে করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ওপর চাপ আরও বেড়েছে।
গাজায় চলমান সংঘর্ষে ইসরায়েলি সরকারের মানবিক সহায়তা অবরোধকে অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের নেতারা। এক যৌথ বিবৃতিতে তারা বলেছেন, 'বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা অস্বীকার করা অগ্রহণযোগ্য এবং এটি আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করছে।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, 'ওয়েস্ট ব্যাংকে বসতি সম্প্রসারণের যেকোনো উদ্যোগের আমরা বিরোধিতা করি… আমরা প্রয়োজনে লক্ষ্যমাত্রাভিত্তিক নিষেধাজ্ঞাসহ আরও পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করব না।'
তিন পশ্চিমা নেতার ভাষ্য, 'আমরা সবসময় সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে ছিলাম। কিন্তু বর্তমান উত্তেজনা সম্পূর্ণভাবে অসামঞ্জস্যপূর্ণ। নেতানিয়াহুর সরকার যেসব চরম পদক্ষেপ নিচ্ছে, আমরা তা চুপচাপ মেনে নেব না।'
তারা যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়েছেন এবং দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের অংশ হিসেবে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্বীকৃতির প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
এই যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানিয়ে হামাস একে 'আন্তর্জাতিক আইনের নীতিগুলোর পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ' বলে উল্লেখ করেছে।
এদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় বলেন, 'লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যামূলক হামলার জন্য এক বিশাল পুরস্কার দিচ্ছেন এবং এর ফলে আরও সন্ত্রাসী হামলার আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।'
তিনি বলেন, ইসরায়েল ন্যায়সঙ্গত উপায়ে লড়াই চালিয়ে যাবে যতক্ষণ না পূর্ণ বিজয় অর্জিত হয়। তিনি যুদ্ধ থামানোর শর্ত হিসেবে গাজা উপত্যকার নিরস্ত্রীকরণ ও অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তির দাবি পুনরায় জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার একটি নতুন সামরিক অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। সোমবার নেতানিয়াহু জানান, ইসরায়েল পুরো গাজা দখলে নেবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
চলতি বছরের মার্চ মাসের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল, যাতে হামাসকে জিম্মিদের মুক্তি দিতে চাপ দেওয়া যায়। হামাস ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি এলাকায় হামলা চালিয়ে ১২০০ জনকে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।
গাজায় ইসরায়েলের স্থল ও বিমান হামলা অঞ্চলটির প্রায় পুরো জনসংখ্যাকে বাস্তুচ্যুত করেছে এবং গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।