গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ’-এর হুঁশিয়ারি যুক্তরাজ্য, কানাডা ও ফ্রান্সের

ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্সের নেতারা সোমবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে 'সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ' নেওয়ার হুমকি দিয়েছন। তারা বলেন, গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া সামরিক অভিযান বন্ধ না করলে এবং মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর উপর নিষেধাজ্ঞা না তুললে এসব পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এটি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী শুক্রবার একটি নতুন অভিযানের ঘোষণা করেছে।এর আগে, সোমবার প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, গাজার পুরো অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরায়েল।আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা এ ঘটনার ফল হিসেবে সম্ভাব্য দুর্ভিক্ষের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করছেন।
ব্রিটিশ সরকারের প্রকাশিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় ,'ইসরায়েল সরকার বেসামরিক জনগণের জন্য জরুরি মানবিক সহায়তা অস্বীকার করছে । এমন আচরণ অগ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন।'
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'আমরা পশ্চিম তীরে এলাকা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ইজরায়েলের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করি… প্রয়োজনে নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ওপর লক্ষ্যভিত্তিক নিষেধাজ্ঞাসহ আরও পদক্ষেপ নিতে আমরা পিছপা হব না।'
এমন মন্তব্যের জবাবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু বলেন, 'লন্ডন, অটোয়া ও প্যারিসের নেতারা ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে চালানো গণহত্যার জন্য যেন এক বিশাল পুরস্কার দিচ্ছেন । এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে আরও নৃশংস হামলা উসকে দেয়া হচ্ছে।'
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল ন্যায়সংগত উপায়ে আত্মরক্ষা করবে এবং 'সম্পূর্ণ বিজয়' অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে।যুদ্ধ শেষ করার শর্ত হিসেবে নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্তি ও গাজা উপত্যকার বেসামরিকীকরণ নিশ্চিত করার বিষয়গুলো উল্লেখ করেন।
মার্চ মাসের শুরু থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানিসহ জরুরি সরঞ্জাম প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল।তাদের দাবি, এর মাধ্যমে তারা হামাসকে চাপ দিতে চায়, যাতে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলার সময় অপহৃত জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হয়।
যৌথ বিবৃতিতে ব্রিটেন, কানাডা ও ফ্রান্সের নেতারা বলেন, 'আমরা সবসময় ইসরায়েলের নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন করেছি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যে মাত্রায় হামলা চালানো হচ্ছে, তা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক ও মাত্রাতিরিক্ত।'
তারা আরও বলেন, নেতানিয়াহুর সরকার এমন 'চরমপন্থী পদক্ষেপ' চালিয়ে যেতে থাকলে তারা নিরব দর্শকের ভূমিকায় থাকবেন না।এছাড়াও, গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের নেতৃত্বে নেওয়া উদ্যোগের প্রতি তারা সমর্থন জানান। দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের অংশ হিসেবে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও পুনর্ব্যক্ত করেন নেতারা।
হামাস এই যৌথ বিবৃতিকে স্বাগত জানায় এবং একে আন্তর্জাতিক আইনের নীতিমালায় ফিরে যাওয়ার পথে 'একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি' বলে মন্তব্য করে।
ইসরায়েলের স্থল ও বিমান হামলায় গাজা ধ্বংসস্তুপ প্রায়।। গাজা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫৩ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
এই যুদ্ধটি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নেতৃত্বে ইজরায়েলের উপর চালানো হামলার মধ্য দিয়ে। ওই হামলায় প্রায় ১২ শ মানুষ নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক। ইসরায়েলের হিসাব অনুযায়ী সেসসময়ে ২৫১ জন ইজরালেয়ের নাগরিককে জিম্মি করা হয়েছে।
অনুবাদ: নাফিসা ইসলাম মেঘা