আমার হাঁটুর ক্ষত ও কাটা দাগ—আমার বন্য, অসম্পূর্ণ, পিতৃহীন জীবনের চিহ্ন: অরুন্ধতী রায়

শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ছিল মায়ের আজীবনের ইচ্ছে। সেই যোগ্যতাও ছিল তার। কিন্তু আসামে এক দূরবর্তী চা-বাগানে সহকারী ম্যানেজার পদে কর্মরত আমাদের বাবার সঙ্গে সংসার করার সময় সেই স্বপ্ন ধীরে ধীরে নিভে যায়। যেকোনো পেশাগত জীবনের আকাঙ্ক্ষাই স্তব্ধ হয়ে যায়। পরে যখন তিনি বুঝতে পারেন, নিঃস্বঙ্গ চা-বাগানে কর্মরত অনেক তরুণের মতোই তার স্বামীও মদে আসক্ত, তখন সেই স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়।
১৯৬২ সালের অক্টোবরে ভারত-চীন যুদ্ধ শুরু হলে সীমান্ত এলাকার নারী-শিশুদের সরিয়ে নেওয়া হয়। আমরাও চলে আসি কলকাতায়। সেখানে পৌঁছে মা স্থির করলেন, আর আসামে ফিরবেন না। কলকাতা থেকে আমরা পাড়ি জমাই দেশের দক্ষিণে, তামিলনাড়ুর পাহাড়ি শহর উটাকামুন্ডে (উটি)। তখন আমার ভাই ললিত কুমার ক্রিস্টোফার রায় (এলকেসি) সাড়ে চার বছরের, আর আমি তিন বছরের। এরপর বিশ বছর বয়স না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের বাবাকে আর দেখিনি কিংবা কখনো শুনিনি।
উটিতে আমরা থাকতাম একটি 'হলিডে' কটেজের অর্ধেক অংশে। এটি ছিল আমাদের নানার সম্পত্তি। তিনি ব্রিটিশ শাসনামলে দিল্লিতে কর্মরত এক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা, পদবি ছিল ইমপেরিয়াল এনটোমোলজিস্ট [ব্রিটিশ সরকারের উচ্চপদস্থ কীটতত্ত্ববিদ]। নানা ও নানির মধ্যে বহু আগে সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল, সন্তানদের সঙ্গেও সম্পর্ক ছিল না। আমি জন্মানোর বছরেই তার মৃত্যু হয়।
ওই কুটিরে আমাদের কীভাবে উঠেছিলাম, তা আমি ঠিক জানি না। হয়তো পাশের অর্ধেক ঘরে থাকা ভাড়াটিয়া চাবি দিয়েছিলেন, আবার হয়তো আমরা ভেঙেই ঢুকেছিলাম। ভেতরের পরিবেশ ছিল স্যাঁতসেঁতে ও অন্ধকার। ঠান্ডা মেঝে, ফাটল ধরা সিমেন্টের স্তর, আর মাথার ওপরে অ্যাসবেস্টসের ছাদ। একখণ্ড পাতলা প্লাইউডের পার্টিশন আমাদের অংশটিকে আলাদা করেছিল অন্য ভাড়াটিয়ার কক্ষ থেকে।
সেই ভাড়াটিয়া ছিলেন এক বৃদ্ধ ইংরেজ মহিলা, নাম মিসেস প্যাটমোর। তার মাথার চুল উঁচু করে ফোলানো থাকত, যা দেখে আমার আর আমার ভাইয়ের মনে হতো ভেতরে কিছু লুকানো আছে। আমরা মজা করে ভাবতাম, সেগুলো হয়তো বোলতা।
রাত হলে তিনি দুঃস্বপ্ন দেখে চিৎকার করতেন, কখনো গোঙাতেন। তিনি আসলেই কোনো ভাড়া দিতেন কি না, তা নিয়েও আমাদের সন্দেহ ছিল। হয়তো তিনি জানতেনই না, কাকে ভাড়া দেওয়া উচিত। আমরা অবশ্যই কোনো ভাড়া দিতাম না। আমরা ভাড়াটিয়া ছিলাম না, ছিলাম অবৈধ দখলদার—একেবারে অনধিকার প্রবেশকারী। আমাদের জীবন কেটে যাচ্ছিল যেন পলাতকদের মতো। চারপাশে ছড়িয়ে ছিল বিশাল কাঠের ট্রাঙ্ক, যেগুলো ভর্তি ছিল মৃত ইম্পেরিয়াল এন্টোমোলজিস্টের জাঁকজমকপূর্ণ পোশাকে—সিল্কের টাই, ড্রেস শার্ট, আর তিনটি স্যুট।
আমি এবং আমার ভাইয়ের বয়স বাড়ার পর মা আমাদের সেই মানুষটির (নানা) কিংবদন্তিসদৃশ পারিবারিক গল্প শোনাতেন। মা শোনাতেন, কীভাবে নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকতেন তিনি—হলিউডের এক ফটো স্টুডিওতে নিজের প্রতিকৃতি তুলেছিলেন; আবার ছিলেন হিংস্র—সন্তানদের বেত্রাঘাত করতেন, ঘর থেকে তাড়িয়ে দিতেন, এমনকি একবার পিতলের ফুলদানি দিয়ে আঘাত করে নানির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছিলেন। মায়ের ভাষায়, সেই মানুষটির হাত থেকে বাঁচতেই তিনি প্রথম যে পুরুষ তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তাকেই বিয়ে করেছিলেন।
আমরা উটিতে পৌঁছনোর কিছুদিনের মধ্যেই মা স্থানীয় একটি স্কুল 'ব্রিকস'-এ শিক্ষকতা শুরু করেন। তখন উটি ছিল স্কুলে ভরা, যেগুলোর অনেকগুলোই স্বাধীনতার পর ভারতে থেকে যাওয়া ব্রিটিশ মিশনারিরা চালাতেন। মা তাদের মধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে বন্ধুত্ব করেন। তারা শুধু ইউরোপীয়দের জন্য তৈরি করা স্কুল 'লাশিংটন'-এ শিক্ষকতা করতেন। স্কুলটি মূলত ভারতে কর্মরত ব্রিটিশ মিশনারিদের সন্তানদের জন্য ছিল। মা তাদের কাছে অনুরোধ করে ছুটির সময়ে ক্লাসে বসার অনুমতি পান। তিনি আগ্রহভরে তাদের নতুন শিক্ষণপদ্ধতি শিখতে থাকেন। যদিও একই সঙ্গে ভারত ও ভারতীয়দের প্রতি তাদের আন্তরিক, কিন্তু তাচ্ছিল্যভরা দৃষ্টিভঙ্গি অনুভব করতেন।

কয়েক মাস পর, আমাদের এই পালিয়ে বেড়ানো জীবনে হাজির হন নানি—অর্থাৎ প্রয়াত কীটতত্ত্ববিদের স্ত্রী—এবং তার বড় ছেলে, মায়ের ভাই জি আইজ্যাক। তারা আসেন কেরালা থেকে। আমি তাদের আগে কখনও দেখিনি। এসে তারা মাকে জানালেন, ত্রাভাঙ্কোর খ্রিষ্টান উত্তরাধিকার আইনে কন্যাদের পিতার সম্পত্তিতে কোনো অধিকার নেই। সেই সঙ্গে জানিয়ে দিলেন, আমাদের অবিলম্বে এই বাড়ি ছেড়ে দিতে হবে।
আমাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকার বিষয়টি তাদের জন্য কোনো অর্থ বহন করছিল না। নানি বেশি কথা বলতেন না, তবে তিনি ভীতিকর ছিলেন। তার শঙ্কুর মতো কর্নিয়া ছিল এবং তিনি ধূসর চশমা পড়তেন। আমার মনে পড়ে, তখন আমি, মা ও ভাই হাত ধরে শহরের মধ্যে দৌড়াচ্ছিলাম আতঙ্কিত হয়ে, কোনো আইনজীবী খুঁজতে। আমার স্মৃতিতে তখন রাত এবং রাস্তাগুলো অন্ধকারে ঢাকা ছিল; কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা একজন আইনজীবী খুঁজে পেলাম। তিনি বলেন, 'ত্রাভাঙ্কোর আইন কেবল কেরল রাজ্যে প্রযোজ্য, তামিলনাড়ুতে নয়, এবং অবৈধ অধিবাসীদেরও অধিকার আছে। কেউ যদি আপনাদের উচ্ছেদ করতে চায়, পুলিশকে ডাকা যাবে।' আমরা কেঁপে ওঠা সত্ত্বেও বিজয়ীর বেশে কটেজে ফিরে যাই।
আমাদের মামা জি.আইজ্যাক তখন কল্পনাও করতে পারতেন না যে, ছোট বোনকে বাবার কটেজ থেকে উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে তিনি নিজের ধ্বংসের পথ তৈরি করছেন। কয়েক বছর পরে মা ত্রাভাঙ্কোর খ্রিষ্টান উত্তরাধিকারের আইনের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম হন এবং কেরালায় বাবার সম্পত্তিতে সমান অংশ দাবি করেন। তার আগে পর্যন্ত, তিনি এই অপমানের স্মৃতিকে সংরক্ষণ ও রক্ষা করেছিলেন, যেন এটি একটি মূল্যবান পারিবারিক সম্পদ।
আমাদের আইনি অধিকার নেওয়ার পর আমরা কটেজে স্থান সম্প্রসারণ করি এবং নিজেদের জন্য জায়গা তৈরি করি। মা কীটতত্ত্ববিদের পোশাক ও কাফলিংকগুলো বাজারের কাছের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের ট্যাক্সি চালকদের দিয়ে দেন। কিছুদিনের জন্য উটির ট্যাক্সি চালকরাই বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর পোশাকধারী মানুষ হয়ে ওঠেন।
আমাদের কিছুটা হলেও নিরাপত্তার অনুভূতি থাকা সত্ত্বেও সবকিছু আমাদের মতো হয়নি। উটির ঠান্ডা ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া মায়ের হাঁপানি আরও বাড়িয়ে দেয়। তিনি লোহার উঁচু খাটে ঘন ধাতব-গোলাপি কম্বলের নিচে শুয়ে, গভীর ও ভারী শ্বাস নিতে থাকেন। কয়েকদিন ধরে শয্যাশায়ী থাকেন। আমরা ভেবেছিলাম মা মারা যাচ্ছেন। তিনি আমাদের তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকাটা পছন্দ করতেন না এবং ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বলতেন। তাই আমার ভাই ও আমি অন্য কিছু খুঁজে বের করার জন্য বাইরে যেতাম।
আমরা প্রায়ই ত্রিভুজাকার বাড়ির কোণে ঝুঁকি নিয়ে দরজায় দোল খেতাম। আর উটির বিখ্যাত উদ্যানে হানিমুনে আসা নববিবাহিত দম্পতিদের হাত ধরে হাঁটা দেখতাম। কখনও তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলত, মিষ্টি বা চিংড়ি দিত। একবার একজন আমাদের একটি গুলতি দিয়েছিলেন। আমরা কয়েক দিন ধরে নিশানা ঠিক করা শিখলাম। অচেনা মানুষদের সঙ্গে আমরা বন্ধু হয়ে যেতাম।
একবার একজন আমার হাত ধরে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল। তিনি কঠোরভাবে আমার মাকে বললেন, আমার জলবসন্ত হয়েছে। আমাকে আমার পেটের ফোস্কা দেখাতে বললেন, যা আমি আগেও অন্যদের দেখিয়েছি। আমার মা খুব রেগে গেলেন। তিনি আমাকে গালে চড় মেরেছিলেন এবং বললেন, 'তুমি কখনও তোমার পোশাক উঁচু করে নিজের পেট অচেনা মানুষকে, বিশেষ করে পুরুষ মানুষকে দেখাবে না।'
মায়ের অসুস্থতা বা ওষুধের কারণে, তিনি সম্ভবত খুব খিটখিটে হয়ে যেতেন এবং প্রায়ই আমাদের মারতেন। যখন তিনি মারতেন, আমার ভাই তখন ঘর ছেড়ে পালিয়ে যেত এবং অন্ধকারে ফিরে আসত। সে শান্ত ছেলে ছিল। কখনও কাঁদত না। রাগে সে খাবারের টেবিলে মাথা রেখে ঘুমানোর অভিনয় করত। আর খুশি হলে—যা খুব কম হতো—আমার চারপাশে নাচত, আকাশে ঘুষি মারত এবং বলত সে ক্যাসিয়াস ক্লে। সে কীভাবে জানল কে কাসিয়াস ক্লে, আমি জানি না; সম্ভবত বাবা তাকে বলেছিলেন।
আমি মনে করি, উটির সেই বছরগুলো তার জন্য আমার চেয়ে কঠিন ছিল, কারণ সে সবকিছু মনে রাখত। সে ভালো জীবন, আমাদের বাবা এবং চা বাগানে থাকা বড় বাড়ির কথা মনে রাখত। সে ভালোবাসা পেয়েছিল, তা মনে রাখত। ভাগ্যক্রমে, আমি তা মনে রাখিনি।
আমার ভাই আমার আগে স্কুল শুরু করেছিল। সে কয়েক মাস লাশিংটন নামের স্কুলে পড়েছিল, যা ছিল সাদা মানুষদের স্কুল। মনে হয়, এটি মিশনারিদের পক্ষ থেকে মায়ের জন্য কোনো বিশেষ সুবিধা ছিল। কিন্তু যখন সে আমাদের মতো স্থানীয় শিশুদের 'ওই ভারতীয় শিশু' বলে ডাকতে শুরু করল, মা তাকে সেই স্কুল থেকে তুলে নিলেন এবং নিজেই যেখানে পড়াতেন, সেই ব্রিকস স্কুলে ভর্তি করলেন।

যখন মায়ের হাঁপানি খুব খারাপ হতো, তখন তিনি শাকসবজি ও প্রয়োজনীয় জিনিসের একটি তালিকা লিখে আমাদের হাতে দিতেন। আমরা সেই তালিকার জিনিসগুলো নিয়ে শহরে যেতাম। তখন উটি ছিল একটি নিরাপদ, ছোট শহর, যেখানে খুব কম যানবাহন চলত। পুলিশ আমাদের চিনত। দোকানিরা সদয় ছিলেন, কখনও কখনও আমাদের ক্রেডিটও দিতেন। সবচেয়ে সদয় ছিলেন কারুসাম্মাল নামে একজন মহিলা, যিনি নিটিং শপে [সেলাইয়ের দোকান] কাজ করতেন। তিনি আমাদের জন্য দুটি পোলো‑নেক সোয়েটার বুনেছিলেন—ভাইয়ের জন্য গাঢ় সবুজ, আমার জন্য গাঢ় বেগুনি রঙের।
যখন মা সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে কয়েক সপ্তাহ বিছানায় পড়েছিলেন, তখন কারুসাম্মাল আমাদের সঙ্গে বসবাস শুরু করলেন। আমাদের অস্থির জীবন শেষ হয়ে গেল। কারুসাম্মালই আমাদের শেখালেন, ভালোবাসা কী, নির্ভরযোগ্যতা কী এবং আলিঙ্গন কী। তিনি আমাদের জন্য রান্না করতেন এবং উটির কঠিন শীতের মধ্যে বাইরের জায়গায় বড় পাত্রে পানি গরম করে আমাদের গোসল করাতেন। আজও, ভাই আর আমি ঠিকভাবে গোসল করতে চাইলে প্রায় গরম পানি চাই।
গোসলের আগে তিনি আমাদের চুল থেকে উকুন বের করতেন এবং কীভাবে মারতে হয় তা দেখাতেন। আমি উকুন মারতে ভালোবাসতাম। আমাদের নখ দিয়ে চেপে মারার সময় সেগুলো একটি মজার শব্দ করত। দ্রুততম বুননকারী হিসেবে কারুসাম্মাল দক্ষ ছিলেন না, বরং অসাধারণ রন্ধনশিল্পী ছিলেন। খুব সামান্য উপাদান দিয়েও তিনি খাবার বানাতে পারতেন। শুধু সেদ্ধ ভাত, লবণ আর একটি তাজা মরিচ—এগুলোও তার হাতে আমাদের প্লেটে উপাদেয় লাগত। কারুসাম্মালের নাম তামিল, যার অর্থ 'ক্রসের মা'। তার স্বামীর নাম যেসুরত্নম ('যিশুর রত্ন', 'রত্নের মধ্যে রত্ন')। তার ঘাড়ে একটি ফোলা অংশ ছিল, যা তিনি উলের মাফলার দিয়ে ঢেকে রাখতেন। তিনি, আমাদের মতো, সবসময় কাঠের ধোঁয়ার গন্ধে ভরা থাকতেন।
শেষ পর্যন্ত মা এত অসুস্থ হয়ে পড়লেন যে কাজ চালাতে পারলেন না। স্টেরয়েডও কাজে লাগছিল না। আমাদের কাছে টাকা শেষ হয়ে গেল। ভাই ও আমি পুষ্টিহীন হয়ে পড়লাম এবং প্রাথমিক যক্ষ্মায় আক্রান্ত হলাম। আরও কিছু কঠিন মাসের লড়াইয়ের পর, মা হাল ছেড়ে দিলেন। তিনি অহংকার ত্যাগ করে কেরালার আয়মানামে, আমাদের নানির গ্রামে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি আর কোনো বিকল্প দেখেননি।
যখন আমাদের ট্রেন তামিলনাড়ু থেকে কেরালার সীমা অতিক্রম করল, তখন মাটি বাদামি থেকে সবুজে রূপান্তরিত হল। সবকিছু, এমনকি বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা লতাপাতায় আচ্ছাদিত। সবকিছু ঝকঝকে দেখাচ্ছিল। ট্রেনের জানালা দিয়ে যেসব মানুষ অতিক্রম করছিলেন, প্রায় সবাই সাদা পোশাক পরেছিলেন এবং কালো ছাতা বহন করছিলেন।
আমার হৃদয় আনন্দে গান গাইছিল। এবং সঙ্গে সঙ্গে ভেঙে গেল।
আমরা আয়মানামে পৌঁছলাম অননুমোদিতভাবে এবং স্পষ্টভাবে অপ্রিয় অতিথি হয়ে। আমরা যেই বাড়ির দোরগোড়ায় হাজির হয়েছিলাম, সেটি ছিল নানির বড় বোন মিস কুরিয়েনের। তখন তিনি সম্ভবত ষাটের বেশি ছিলেন। তার সরু, ঢেউতোলা ধূসর চুল একটি 'পেজবয়' শৈলীতে কাটা। তিনি স্টার্চ করা সাদা শাড়ি পরতেন, বড় ও ঢিলে ব্লাউজের সঙ্গে। মিস কুরিয়েন তার সময়ের অধিকাংশ মহিলার চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিলেন। তিনি অবিবাহিত ছিলেন, ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন এবং শ্রীলঙ্কার (সেই সময়ের সিলন) একটি কলেজে পড়াতেন।
আমার মা নিশ্চিত করেছিলেন, আমরা শুধু চাকরি খুঁজে পাওয়ার সময় পর্যন্ত থাকব। মিস কুরিয়েন, যিনি নিজেকে ভালো খ্রিষ্টান মনে করতেন, আমাদের থাকার অনুমতি দিলেন। তবে আমাদের এবং আমাদের পরিস্থিতির প্রতি তার বিরক্তি লুকালেন না। তিনি আমাদের উপেক্ষা করে অন্য আত্মীয়দের শিশুদের প্রতি তার স্নেহ দেখাতেন। তাদের উপহার দিতেন, পিয়ানো বাজাতেন এবং কাঁপতে থাকা কণ্ঠে গান গাইতেন। যদিও তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তিনি আমাদের পছন্দ করেন না (যার কারণে আমরা ওকে পছন্দ করতাম না), তবুও তিনি একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন, যিনি আমাদের সাহায্য করেছিলেন এবং যখন আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল তখন ছাদের নিচে আশ্রয় দিয়েছিলেন।
নানিও তার সঙ্গে থাকতেন। তখন তিনি প্রায় অন্ধ হয়ে গেছেন এবং রাতেও কালো চশমা পরতেন। তার মস্তকের উপর একটি খাঁজ ছিল—পরিচিত ব্রাসের দাগ। মাঝে মাঝে তিনি আমাকে এটি ছুঁয়ে দেখতে দিতেন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি বারান্দায় বসে ভায়োলিন বাজাতেন। তার ইম্পেরিয়াল কীটতত্ত্ববিদ স্বামী ভিয়েনায় থাকাকালীন তিনি সঙ্গীত শিক্ষা নিয়েছিলেন। যখন তার শিক্ষক বললেন যে তার স্ত্রী কনসার্টের বেহালাবাদক হতে পারে, স্বামী ইর্ষায় প্রথমে ভায়োলিনটি ভেঙ্গে ফেলেছিলেন।
আমি তখন খুব ছোট ছিলাম, তাই তার সঙ্গীত কতটা ভালো, তা বোঝার বয়স ছিল না। কিন্তু আয়মানামে যখন আঁধার নামত এবং ঝিঁঝিঁর ডাক বেড়ে যেত, তার সঙ্গীত রাতগুলোকে আরও বিষণ্ণ করে তুলত।
আমার মামা জি আইজ্যাক প্রধান বাড়ির সংলগ্ন একটি সংযোজিত ঘরে থাকতেন। প্রথমে আমি তাকে ভয় পেতাম। আমি তাকে কেবল উটিতে আমাদের বাড়ি থেকে বের করার চেষ্টা করা লম্বা, মোটা, রাগান্বিত মানুষ হিসেবে চিনতাম। তবে আয়মানামে, তিনি আমাকে এবং আমার ভাইকে নদীর ধারে নিয়ে গিয়ে সাঁতার শেখাতে শুরু করলে আমি তাকে ভালোবেসে উঠলাম। জি আইজ্যাক ভারতের প্রথম রোডস বৃত্তিপ্রাপ্তদের একজন ছিলেন। তার বিষয় ছিল গ্রিক ও রোমান পুরাণ। ডাইনিং টেবিলে হঠাৎ তিনি বলতে পারতেন, 'মদ ও উৎফুল্লতার দেবতা থাকা কত চমৎকার!' সবাই হতবুদ্ধি হয়ে তাকাত। তিনি আমাদের ডায়োনিসাস বা তার প্রিয় দেবতার গল্প বলতেন।
কয়েক বছর মাদ্রাজের একটি কলেজে পড়ানোর পর তিনি অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়ে নিজের শিকড়ের দিকে ফিরে আসেন এবং মিস কুরিয়েনের সঙ্গে আচার, জ্যাম এবং মশলা তৈরির একটি কারখানা চালু করেন। এটি মালাবার উপকূলের পণ্য। তারা কোট্টায়ম শহরের কীটতত্ত্ববিদ পরিবারের বাড়ি থেকে পরিচালনা করতেন। (পরে এই বাড়ি মায়ের ত্রাভাঙ্কোর খ্রিষ্টান উত্তরাধিকার আইন চ্যালেঞ্জের সময় বিবাদের কেন্দ্র হয়ে ওঠে)।
জি আইজ্যাক, যিনি উত্তরাধিকার ও ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে আগ্রহী ছিলেন, মার্কসবাদীও ছিলেন। তিনি বলতেন, ছোট শিল্প প্রসার ও স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য তিনি কারখানা শুরু করেছেন। তবে তার সুইডিশ স্ত্রী সিসিলিয়া, যার সাথে তিনি অক্সফোর্ডে পরিচিত হয়েছিলেন, তাকে ছেড়ে তার তিন ছেলেকে সঙ্গে করে সুইডেনে ফিরে যান। এই অদ্ভুত, বহুমুখী ও বিস্ময়কর মানুষগুলো এক সঙ্গে আয়মানামে মিলিত হয়।
সেখানে জীবন ছিল ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের যে কোনো মুহূর্তে বের করে দিতে পারত। রান্নার জন্য কাজ করা কচু মারিয়া পর্যন্ত বলতেন যে আমাদের সেখানে থাকার কোনো অধিকার নেই। তিনি বারবার অভিযোগ করতেন, বাবা নেই এমন শিশুদের 'ভদ্র' মানুষের ছাদের নিচে থাকা লজ্জাজনক। কয়েকদিন অন্তর এই 'বহুরুপী' মানুষরা ঝগড়া করতেন। যখন তারা লড়াই করতেন, পুরো বাড়ি কেঁপে উঠত। থালা ভাঙত; দরজা ভেঙে যেত।
যে সময় গর্জন শুরু হতো, আমি তৎক্ষণাৎ পালিয়ে যেতাম। নদী ছিল আমার আশ্রয়। জীবনযাত্রার সমস্ত কষ্ট ও অসুবিধার প্রতিশোধ নদী আমাকে দিত। আমি নদীর তীরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাতাম। মাছ, কেঁচো, পাখি এবং গাছপালার সঙ্গে এতটা পরিচিত হয়ে যাই যে তাদের নাম ধরে ডাকতাম। গ্রামে অন্য শিশুদের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। আমি দ্রুত মালায়ালম ভাষা শিখতে পারতাম এবং সবার সঙ্গে সহজেই যোগাযোগ করতে পারতাম।
তারা আমার দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। তাদের বেশিরভাগই ধানক্ষেত বা রাবার বাগানে কাজ করত, নারকেল তুলত অথবা বাড়ির কাজে সাহায্য করত। তারা কাদা ও খড়ের ছাদের বাড়িতে বাস করত। অনেককে 'অস্পৃশ্য' মনে করা হতো। আমি সেই বিষয়টা তখন ভালোভাবে জানতাম না। কারণ আয়মানামের বাড়ির সবাই নিজেদের মধ্যে ঝগড়া করত এবং আমাকে শিক্ষাদানে সময় দিত না।
আয়মানেমে থাকা একজন যুবক, যিনি কোট্টায়মের মালাবার কোস্ট প্রোডাক্টস-এ কাজ করতেন, আমার সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠেন। আমরা একসাথে কাটাতাম। তিনি বাঁশের একটি ডগা থেকে আমার জন্য মাছ ধরার লাঠি বানিয়ে দেন এবং দেখান কোথায় সেরা কেঁচো পাওয়া যায়। তিনি আমাকে মাছ ধরতে শেখালেন; ধীর ও শান্ত থাকার শিক্ষাও দিলেন। ছোট মাছগুলো ধরলে, তিনি ভেজে আমাদের সঙ্গে খেতেন, যেন আমরা কোনো ভোজে অংশ নিচ্ছি। তিনি 'দ্য গড অফ স্মল থিংস'-এর আম্মুর প্রেমিক ভেলুথার চরিত্রের অনুপ্রেরণা ছিলেন।

কয়েক মাসের মধ্যে আমি পুরো গ্রাম ও নদীর অংশ হয়ে গিয়েছিলাম—এক প্রাকৃতিক শিশু, যার পায়ের তলা মোটা হয়ে গিয়েছিল। আমি গ্রামের প্রতিটি লুকানো পথ ও নদীর সংযোগকারী শর্টকাট জানতাম। আমি বেশি সময় বাইরে কাটাতাম, বাড়ি যেতাম যতটা কম সম্ভব। আমার ঘনিষ্ঠ সঙ্গী ছিল এক লম্বা ধবধবে দাগযুক্ত কাঠবিড়াল, যা আমার কাঁধে বসত এবং কানে গোপন গল্প ফিসফিস করত। আমরা একে অপরের সঙ্গে গোপন বিষয় শেয়ার করতাম। সে আমার পোষা প্রাণী ছিল না; তার নিজস্ব জীবন ছিল, তবু সে আমার সঙ্গে ভাগ করতে চেয়েছিল। সে প্রায়শই অদৃশ্য হয়ে যেত। খাওয়ার সময়ে ফিরে আসত, আমার প্লেটে বসত এবং খাবার চিবিয়ে খেত। সর্বদা সতর্ক ও সম্ভাব্য বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকত। সে আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে।
আমার মা দৈনন্দিন ঝগড়া ও অসম্মান যা সহ্য করতেন, তা আমার ভাই ও আমার ওপর চাপিয়ে দিতেন। আমরা ছিলাম তার একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়। তার রাগ, যা আগেই খারাপ ছিল, আরও অযৌক্তিক ও নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠত। কখন সে রাগ করবে, কখন খুশি হবে, অনুমান করা যেত না। আমাকে সেই 'মাইনফিল্ড' পার হতে হতো, যা কোনো মানচিত্রে নেই। যখন সে আমার ওপর রেগে যেত, তখন আমার কথা বলার ভঙ্গি নকল করত। সে খুব ভালো নকল করত এবং আমাকে নিজের চোখে হাস্যকর করে তুলত। আমি প্রতিটি ঘটনার স্মৃতি স্পষ্টভাবে মনে রাখি। এমনকি কী পরেছিলাম, তা ও মনে আছে। মনে হতো, যেন সে আমাকে কেটে ফেলেছে—একটি ছবির বই থেকে আমার আকার কেটে টুকরো টুকরো করেছে।
প্রথমবার এটি ঘটেছিল আমরা মাদ্রাজ থেকে ফেরার পথে, যেখানে দুই সপ্তাহ থাকেছিলাম। তার বড় বোন, মিসেস জোসেফ, জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমার মা তার তিন সন্তানের যত্ন নিতে পারবে কি না, যখন তিনি এবং স্বামী ছুটিতে যাচ্ছেন। মা রাজি হয়ে গিয়েছিলেন। অন্তত এই কাজের জন্য তিনি সেখানে থাকার সম্মান পাবেন বলে ভেবেছিলেন।
আয়মানামের কসমোপলিটানস-এর মতো ঝগড়াটে না হয়ে, মিস জোসেফের স্বামী ছিলেন একজন পাইলট। তার সন্তানেরা ঠিকঠাক ছিল, বাড়ি ঠিকঠাক, চাকররাও ঠিকঠাক। মিস জোসেফ জানতেন যে এই সব বিষয়ে তিনি সফল হয়েছেন, যেখানে তার ভাইবোনেরা ব্যর্থ। তিনি সুন্দর ছিলেন, কণ্ঠ উচ্চ ও গর্বিত, শাড়ি ও চুলের সাজ খাপ খাইয়ে নিতেন। মুখে সবসময় ছিল জানাশোনার হাসি। মিস জোসেফের সঙ্গে আমার মায়ের কোনো মিল ছিল না—না শারীরিকভাবে, না স্বভাবগত।
মিস জোসেফ ছুটি শেষ করে ফিরে এলে বোনদের মধ্যে বড় ঝগড়া হয়েছিল। আমরা পরের দিন প্লেনে করে কেরালায় ফিরলাম। মামার পাইলট স্বামীর কাছে কিছু ফ্রি টিকিট ছিল। আমরা আগে কখনো প্লেনে চড়িনি। সিটে বসে, সহযাত্রীদের মতো শান্তভাবে কথা বলার চেষ্টা করতে গিয়ে আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম, 'যদি মিস জোসেফ আপনার আসল বোন হয়, তাহলে তিনি এত চিকন কীভাবে?'
মা আমার দিকে রেগে তাকালেন। নিজেকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছি মনে হলো, সব শক্তি বের হয়ে যাচ্ছে, অস্তিত্ব ধীরে ধীরে পানি হয়ে বিলীন হচ্ছে। তারপর মা বললেন, 'তোমার বয়স হলে তুমি আমার তিন গুণ হয়ে যাবে।' আমি বুঝতে পারলাম আমি কিছু ভুল বলেছি, কিন্তু ঠিক কী ভুল, জানতাম না। বছর পরে, শান্তভাবে ভাবার সময় বুঝলাম আমার কথাটি মাকে কতটা কষ্ট দিয়েছে।
মা যে স্টেরয়েড নিচ্ছিলেন, তা হঠাৎ ওজন বাড়ানোর কারণ হয়েছিল। তার মুখে কোর্টিসন মুন-ফেস দেখা দিয়েছিল। তার চমৎকার, সূক্ষ্ম মুখ ফোলা গালে ও ডাবল চিনের আড়ালে হারিয়ে গিয়েছিল। তিনি নিশ্চয়ই তার চিক বোনের নিখুঁত বাড়ি দেখে হতাশ ও মন খারাপ করেছিলেন। তার উজ্জ্বল ক্যারিয়ার তখনো সামনে ছিল, কিন্তু তখন কোনো চিহ্ন দেখা যাচ্ছিল না।
আমার মাকে যে আমি তার চিকন বোনের কথা জিজ্ঞেস করেছিলাম, তার জন্য সেটা পোড়া ঘায়ে নুনের ছিটার মতো ছিল। এক ছোট বাচ্চার যত্নহীন কথা। তাই মা আমার সাথে রেগে ছোট বাচ্চার মতো কথা বললেন। আর আমি নিজের প্রতি রেগে গেলাম। আমার ড্রেসের রঙ মনে আছে—আকাশি নীল, ডটসহ। এটি ছিল আমার নিখুঁত কাজিনের জামা। আমার হাঁটুর দাগ ও কাটা দেখলাম—আমার বেপরোয়া, অসম্পূর্ণ, পিতৃহীন, পাইলটহীন জীবনকাহিনীর রেকর্ড।
আমি কল্পনায় আমার নিখুঁত কাজিনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করলাম, যা আমি সহজে জিতলাম। তার পাইলট বাবা ছিল, সুন্দর চুলও ছিল। কিন্তু আমার ছিল সবুজ নদী। নদীতে মাছ, আকাশ, গাছ আর রাতে ভাঙা হলুদ চাঁদ সবকিছুই ছিল। এবং একটি কাঠবিড়ালি। আমি আমার পায়ের দিকে তাকালাম, দেখলাম স্যান্ডেলগুলো পায়ের সাথে মানাচ্ছে না।
প্লেনটি ভয়ংকর মনে হচ্ছিল, মানুষদের ভয়ংকর মনে হচ্ছিল, আকাশও ভয়ংকর মনে হচ্ছিল। আমি চাইছিলাম প্লেনটি পড়ে যাক এবং আমরা সবাই মারা যাই। বিশেষ করে সেই শিশুরা যারা অতিরিক্ত পোষ্য ছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর মা বললেন, 'আমি তোমার মা, আমি বাবা; আর আমি তোমাকে দ্বিগুণ ভালোবাসি।'
তারপর প্লেন ঠিক হয়ে গেল। আকাশ ঠিক হয়ে গেল। কিন্তু আমার পা এখনও স্যান্ডেলের সঙ্গে অপরিচিত ছিল। কিছু বিষয় এখনও সমাধান হয়নি।
যদি আমি তার তিন গুণ হয়ে যাই, আমার বসার জন্য তিনটি সিট লাগবে। তিনটি ফ্রি টিকেট। দ্বিগুণ। তিনগুণ। একটি হিসাবের সমীকরণ। দ্বিগুণ ভালোবাসাকে ভাগ করো আমার তিনগুণ সাইজ দিয়ে, গুণ করো ফ্রি টিকেট দিয়ে, ভাগ করো যত্নহীন কথা দিয়ে—ফলাফল কী হবে? এক ঠান্ডা, লোমশ প্রজাপতি ভয় পাওয়া হৃদয়ের ওপর বসে আছে। সেই প্রজাপতি ছিল আমার স্থায়ী সঙ্গী।
আমি খুব ছোটবেলা থেকেই শিখেছি—যেখানে সবচেয়ে নিরাপদ মনে হয়, সেখানে সবচেয়ে বিপদ থাকতে পারে। আর কখনও যখন তা বিপজ্জনক নয়, আমি নিজেই সেটিকে বিপজ্জনক করে দিই।
অনুবাদ: তাসবিবুল গনি নিলয়