অস্ত্র মামলায় 'ক্যাসিনো' সম্রাটের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন ট্রাইব্যুনাল।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মো. ইব্রাহিম মিয়া এই রায় ঘোষণা করেন।
সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এপিপি) মো. আব্দুর রহিম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রায় ঘোষণার সময় আসামি পলাতক থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
বিচারক তার রায়ের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেন, অভিযুক্ত মো. ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদে জনগণের শান্তি, অগ্রগতি এবং জনস্বার্থ রক্ষাকারী একজন নেতা হিসেবে তার পরিচিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সম্রাট নিজেকে ক্ষমতার অপব্যবহারের এক প্রতীকী চালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তার কাছ থেকে বৈদ্যুতিক শক মেশিন, বিশেষ ধরনের লাঠি এবং ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে, যা তিনি একটি গোপন কক্ষে মানুষকে নির্যাতন করার জন্য ব্যবহার করতেন। সম্রাট তার 'রাজ্যের' জন্য হুমকি মনে করে কতজনকে নির্যাতন করেছেন, সে সম্পর্কে রাষ্ট্রপক্ষ নিশ্চিত নয়।
রায়ে আরও বলা হয়, মামলার এজাহারে তাকে 'ক্যাসিনো সম্রাট' হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ক্যাসিনো ব্যবসার জন্য প্রতিষ্ঠিত প্রায় ১০টি ক্লাবের সাথে তার সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। সম্রাট সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাওয়ার জন্য একটি শক্তিশালী ক্যাডার বাহিনী তৈরি করেছিলেন এবং তার 'পাপের সাম্রাজ্যকে' নির্বিঘ্নে টিকিয়ে রাখতে তাদের ব্যবহার করতেন। আসামি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের কাছ থেকে একটি অত্যাধুনিক ৭.৬৫ পিস্তল এবং পাঁচ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার হওয়ায়, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ব্যতীত অন্য কোনো শাস্তি আইনের উদ্দেশ্য পূরণে যথেষ্ট হবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম থেকে সম্রাটকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাকে নিয়ে তার কাকরাইলের কার্যালয়ে অভিযান চালানো হয়। এ সময় সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, একটি পিস্তল এবং একটি বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণীর চামড়া উদ্ধার করা হয়। বন্যপ্রাণীর চামড়া রাখার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেন। পরদিন, ৭ অক্টোবর, র্যাব-১-এর ডিএডি আব্দুল খালেক বাদী হয়ে রমনা থানায় মাদক ও অস্ত্র আইনে পৃথক মামলা দায়ের করেন।
২০২০ সালের ৬ নভেম্বর তদন্ত শেষে র্যাব-১-এর উপ-পরিদর্শক (এসআই) শেখর চন্দ্র মল্লিক আদালতে অস্ত্র মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শুরু হয়। সেদিন আদালতে উপস্থিত না থাকায় তার জামিন বাতিল করে পুনরায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
বিচার চলাকালীন, আদালত ১৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন। গত ৭ অক্টোবর উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে আদালত রায়ের জন্য ২৮ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
