কিছু ব্যাংক ডিজিটালাইজেশন করেনি বোর্ডের দোহাই দিয়ে, অথচ ব্যাংকের ভল্ট খুলে দিয়েছে: ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি
বাংলাদেশ ব্যাংক যখন ব্যাংকগুলোর এমডিদের নিয়ে বৈঠকে ব্যাংক খাতে ডিজিটালাইজেশনে আরও জোর দেওয়ার কথা বলতো, তখন কিছু ব্যাংকের এমডি বোর্ডের দোহাই দিয়ে অসহায়ত্ব প্রকাশ করতেন। অথচ এই ব্যাংকগুলোর কিছু ব্যক্তির জন্য ব্যাংকের ভল্ট খুলে দিয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি আরফান আলী।
তিনি বলেন, 'যেসব ব্যাংক ডিজিটালাইজেশনে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিল, আজ সেই ব্যাংকগুলোই খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এসব ব্যাংক থেকে দুই থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকা নানা অনিয়মে বের করে নেওয়া হয়েছে।'
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত 'ইকোনমিক রিফর্ম সামিট ২০২৫' অনুষ্ঠানে ' ক্যাশলেস ইকোনমি অ্যান্ড ফিনান্সিয়াল ইনক্লুশন' বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি ও জয়তুন বিজনেস সলিউশনস-এর চেয়ারম্যান আরফান আলী।
প্যানেল আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন ট্যালিখাতার চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পেমেন্ট সিস্টেমস ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত পরিচালক মোহাম্মদ রাশেদ।
আরফান আলী বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের মিটিংয়ে আমি নিজে দেখেছি, অনেক সময় বোর্ড ডিজিটালাইজেশনের প্রস্তাবে রাজি হয় না। তারা মনে করে, তাদের দায়িত্ব কেবল চাকরি বা প্রফিট মেইনটেইন করা।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রাইভেট কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু দেখেছি, তারা ইনক্লুশন নিয়ে আগ্রহী নয়। ২০ হাজার টাকার নিচে ব্যালেন্স না থাকলে তারা অ্যাকাউন্ট খুলতে চায় না, ১০ হাজার টাকা না হলে চেকবই দেয় না। অথচ আমরা বলেছিলাম, ৫ হাজার টাকার নিচে ব্যালেন্স রাখলে কোনো চার্জ নেওয়া যাবে না। পরে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি সার্কুলারে বাধ্যতামূলক করে।'
'তবু প্রশ্ন রয়ে যায়, যে ব্যাংকগুলো বছরে হাজার কোটি টাকার বেশি মুনাফা ঘোষণা করে, তারা কি তাদের মুনাফার একাংশ ইনক্লুশন বা নিম্ন-আয় গ্রুপের সেবা উন্নয়নে ব্যয় করতে পারে না?'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে প্রায় ১৩ কোটি ৩৪ লাখ সেভিংস অ্যাকাউন্ট আছে। প্রায় ১২ কোটি মানুষ এখন ব্যাংকিং সেবার আওতায়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই অ্যাকাউন্টগুলোর বড় অংশই নিষ্ক্রিয়। অনেকেই জানেনই না যে তাদের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে। কখনও ১০ টাকার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল, কিন্তু পরে আর ব্যবহার হয়নি।'
'অথচ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নিজে জনগণের কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই 'প্রধানমন্ত্রী জন ধন যোজনা' উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এই উদ্যোগের মাধ্যমে একজন ভারতীয় নাগরিক কোনো টাকা জমা না দিয়েই কেবল কিছু নথিপত্র জমা দিয়ে ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন।'
'জন ধন যোজনা প্রোগ্রামের মাধ্যমে ছয় কোটির বেশি অ্যাকাউন্ট খোলা হয়। আজ সেখানে ৮০ শতাংশ অ্যাকাউন্ট কার্যকরভাবে ব্যবহার হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশে তা মাত্র ৪৩ শতাংশের মতো।'
সবশেষে তিনি বলেন, 'ডিজিটাল ফাইন্যান্স, এমএফএস, পিএসপি; সবাই মিলে কাজ করলেই ক্যাশলেস ইকোনমি বাস্তবায়ন সম্ভব। শুধু ব্যাংক বা শুধু টেলিকম দিয়ে তা হবে না। আমাদের দরকার একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে প্রযুক্তি, আস্থা ও নীতিমালা একসাথে কাজ করবে।'
