গাজীপুরে ১২ অক্টোবর থেকে টাইফয়েড টিকাদান শুরু: লক্ষ্য পূরণ নিয়ে শঙ্কা

সারাদেশের মতো গাজীপুর মহানগর ও জেলা এলাকায় আগামী ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে টাইফয়েডের টিকাদান কর্মসূচি। তবে রেজিস্ট্রেশন জটিলতা, গুজব ও অভিভাবকদের অনাগ্রহের কারণে নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জন নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) পর্যন্ত অর্ধেকেরও বেশি শিশুর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন না হওয়ায় শেষ মুহূর্তে লক্ষ্য অর্জন কঠিন হয়ে পড়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী সকল শিশুকে বিনামূল্যে টাইফয়েড টিকা দেওয়া হবে। সরকারের এই উদ্যোগের লক্ষ্য- ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ ও রোগমুক্ত রাখা। তবে জন্মনিবন্ধন নম্বর ও বিদ্যালয়ে ভর্তি সংক্রান্ত বাধ্যবাধকতার কারণে অনেক শিশুর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, মহানগর ও জেলা মিলিয়ে টিকাদান-উপযোগী শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৬ লাখ ৭৯ হাজার ৭৩২ জন। এর মধ্যে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৪৮ শতাংশ এবং জেলা এলাকায় মাত্র ৩১ শতাংশ শিশুর রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। ফলে এখনো অর্ধেকের বেশি শিশুর তথ্য সিস্টেমে যুক্ত হয়নি।
বিষয়টি স্বীকার করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ ও সিভিল সার্জন জানিয়েছেন, যে কোনো উপায়েই হোক, শতভাগ টিকাদান কর্মসূচি সফল করা হবে।
টিকাদান কার্যক্রম সফল করতে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও সিভিল সার্জনের কার্যালয় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। মহানগর এলাকাকে ৮টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ৫৭টি ওয়ার্ড ও ১ হাজার ৭০০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এছাড়া বিদ্যালয়ে না যাওয়া শিশুদেরও টিকার আওতায় আনার জন্য প্রচারণা ও ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে।
মহানগর এলাকায় ৯৭৫টি কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রথম ১০ দিন বিদ্যালয়ভিত্তিক টিকাদান কার্যক্রম চলবে- যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা সরাসরি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা শিশুদের টিকা দেবেন। যারা রেজিস্ট্রেশন করেনি, তারাও সেখানেই নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবে। পরে বাদ পড়া শিশুদের জন্য আরও আট কর্মদিবস টিকাদান কার্যক্রম চলবে।
বৃহস্পতিবার সকালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সম্মেলন কক্ষে টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে এক প্রেস ব্রিফিং হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সিটি কর্পোরেশনের সচিব আমিন আল পারভেজ, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ইলিশায়া রিছিল, স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রহমতউল্লাহ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডা. মাহবুবা সুলতানা এবং ইউনিসেফের প্রতিনিধি ডা. লি শান্তা মন্ডল।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০২১ সালে দেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে ৮ হাজার জনের মৃত্যু ঘটে। আক্রান্তদের ৬৮ শতাংশই শিশু। বিশেষজ্ঞদের মতে, ৯ মাস থেকে ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের এক ডোজ টাইফয়েড টিকা রোগ প্রতিরোধে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।