গাজীপুর কারাগারে ‘আয়নাবাজির’ ঘটনায় মামলা, আইনজীবীকে শোকজ
বন বিভাগের একটি মামলায় আদালত থেকে সাত্তার মিয়া নামে একজনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। কিন্তু তিনি আদালতে আত্মসমর্পণ না করে তার বদলে আদালতে যান সাইফুল ইসলাম নামের এক যুবক। পরে আদালত তার জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। মাত্র ১৫ হাজার টাকার বিনিময়ে নকল আসামি হয়ে আদালতে হাজিরা দিয়ে জেলে যান সাইফুল।
গাজীপুর জেলা কারাগারে ঘটে যাওয়া 'আয়নাবাজি'র মতো চাঞ্চল্যকর টাকার বিনিময়ে অন্যের হয়ে জেল খাটার ঘটনায় আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার, বন আদালতের বেঞ্চ সহকারী রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে গাজীপুর চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন।
এ ছাড়া প্রকৃত আসামির পরিবর্তে অন্য ব্যক্তিকে আদালতে হাজির করানোর অভিযোগে সংশ্লিষ্ট আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দেওয়া হয়েছে।
মামলার আসামিরা হলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মোথাজুরী তালচালা গ্রামের বাসিন্দা আলফাজ উদ্দিনের ছেলে ও বন মামলার প্রকৃত আসামি মো. সাত্তার মিয়া (৪৫)। এবং তাঁর পরিবর্তে কারাগারে বদলি জেল খাটা সাইফুল ইসলাম (৩০)। তিনিও একই গ্রামের বাসিন্দা রহিম বাদশার ছেলে।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়িয়া রেঞ্জের কাচিঘাটা বিট। গত ৯ সেপ্টেম্বর সরকারি গাছ কাটার সময় বন কর্মকর্তারা কয়েকজনকে হাতেনাতে আটক করেন। দেশীয় অস্ত্রের মুখে পড়ে তারা পিছু হটলেও পরে কালিয়াকৈর উপজেলার কাচিঘাটা রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা আবু শরীফ উর রহমান খান চৌধুরী বাদী হয়ে ছাত্তার মিয়া, বাবুল হোসেন, মো. ছামাদ ও মো. হানিফের বিরুদ্ধে বন আইনে একটি মামলা করেন। আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
এই ঘটনার প্রায় তিন মাস পর, গত ৭ ডিসেম্বর গাজীপুর জজ আদালতের আইনজীবী শ্যামল সরকার আসামি ছাত্তার মিয়ার পক্ষে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। আদালত আসামির জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
প্রকৃত আসামির বদলে নকল আসামি সাইফুল ইসলাম কারাগারে রয়েছে—ঘটনাটি জানতে পেরে কারা কর্তৃপক্ষ পরের দিন, গত ৮ ডিসেম্বর গাজীপুর জেলা কারাগারে আসামির বায়োমেট্রিক (আঙুলের ছাপ ও চোখের আইরিস) পরীক্ষা করে। পরীক্ষায় দেখা যায়, কারাগারে যাওয়া আসামি ছাত্তার মিয়ার নয়। তার প্রকৃত নাম জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী সাইফুল ইসলাম।
দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকৃত আসামির নাম ও পরিচয় গোপন করায় অভিযুক্ত ছাত্তার মিয়া, সাইফুল ইসলামসহ অজ্ঞাতনামা অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পেনাল কোডের ১৯৬/২০৫/৪১৭/৪২০/৪৬৬/৪৬৮ ধারায় অপরাধ করেছেন।
এ ছাড়া আসামি ছাত্তার মিয়ার পক্ষে নিয়োজিত আইনজীবী শ্যামল সরকারকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
গাজীপুর বন আদালতের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) জুয়েল রানা বলেন, আদালতে মামলা করা হলে বিচারক সংশ্লিষ্ট থানায় এআইআর করার নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আইনজীবীকে সাত দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের বলেন, গত ৭ ডিসেম্বর আসামি এন্ট্রি করার সময় আসামি তার নাম সাত্তার বলেছে। আদালতের কাগজেও একই নাম থাকায় কোনো সন্দেহ হয়নি। পরবর্তীতে বিষয়টি জানার পর নিশ্চিত হয়ে আসামির বায়োমেট্রিক পরীক্ষা করা হয়। তখন জানতে পারি কারাগারে যে আছে আসলে মো. সাত্তার মিয়া না, সাইফুল ইসলাম। বিষয়টি আমরা গত ৮ ডিসেম্বর কারা মহাপরিদর্শক ও গাজীপুর বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২ এর বিচারককে চিঠি দিয়ে অবগতি করেছি।
উল্লেখ্য, এই ঘটনাটি নিয়ে গত মঙ্গলবার বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডে 'গাজীপুরে ১৫ হাজার টাকায় "আয়নাবাজি": প্রকৃত আসামি বাইরে, জেলে বদলি খাটছেন যুবক' শিরোনামে খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
