অস্ট্রেলিয়া থেকে ইউরোপ: সোশ্যাল মিডিয়ায় শিশুদের প্রবেশাধিকার কমাতে বিভিন্ন দেশের উদ্যোগ
অস্ট্রেলিয়া বুধবার থেকে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে—যার ফলে টিকটক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুকসহ প্ল্যাটফর্মগুলোতে তাদের প্রবেশ বন্ধ হয়ে যাবে।
এই নিষেধাজ্ঞা এখন বিশ্বজুড়ে নজর কাড়ছে, কারণ বহু দেশই শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ায় একই ধরনের বয়সভিত্তিক ব্যবস্থা বিবেচনা করছে।
বিভিন্ন দেশ ও প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো কীভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশাধিকারের নিয়ম কঠোর করছে তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হলো এখানে:
অস্ট্রেলিয়া
২০২৪ সালের নভেম্বরে পাস হওয়া ঐতিহাসিক আইনটি অনুযায়ী বুধবার থেকে ১৬ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রবেশ বন্ধ করতে বাধ্য থাকবে বড় প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্মগুলো। এটি বিশ্বে সবচেয়ে কঠোর নিয়ন্ত্রণগুলোর একটি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইন ভঙ্গ করলে কোম্পানিগুলোকে সর্বোচ্চ ৪৯.৫ মিলিয়ন অস্ট্রেলীয় ডলার (৩২.৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পর্যন্ত জরিমানার মুখে পড়তে হবে।
ব্রিটেন
ব্রিটেনের অনলাইন সেফটি অ্যাক্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর জন্য কঠোর মানদণ্ড নির্ধারণ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে নাবালকদের রক্ষা করতে বয়সভিত্তিক নিয়ন্ত্রণ।
আইনটি ২০২৩ সালে পাস হয় এবং এই বছর থেকে কার্যকর হয়েছে। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়নি।
চীন
চীনের সাইবারস্পেস নিয়ন্ত্রক একটি "মাইনর মোড" কার্যকর করেছে, যেখানে ডিভাইস-স্তরের সীমাবদ্ধতা এবং অ্যাপভিত্তিক নিয়মের মাধ্যমে বয়স অনুসারে স্ক্রিন টাইম কমানো হয়।
ডেনমার্ক
ডেনমার্ক গত নভেম্বরে ঘোষণা করেছে যে তারা ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করবে। তবে ১৩ বছর পর্যন্ত বয়সী কিশোরদের ক্ষেত্রে অভিভাবকরা বিশেষ অনুমতি দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
দেশটির পার্লামেন্টের বেশিরভাগ দল আনুষ্ঠানিক ভোটাভুটির আগেই এ পরিকল্পনার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে।
ফ্রান্স
২০২৩ সালে ফরাসি সরকার এমন আইন পাস করে যাতে ১৫ বছরের কম বয়সীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে অভিভাবকের অনুমতি লাগবে। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়, প্রযুক্তিগত জটিলতার কারণে আইনটির বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জার্মানি
জার্মানিতে ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সী নাবালকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে হলে অভিভাবকের অনুমতি প্রয়োজন। তবে শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, বর্তমান নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট নয়।
ইতালি
ইতালিতে ১৪ বছরের কম বয়সীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খুলতে অভিভাবকের সম্মতি প্রয়োজন। ১৪ বছর পার হলেই সম্মতি ছাড়াই ব্যবহার করা যায়।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়া গত নভেম্বরে জানিয়েছে যে তারা আগামী বছর থেকে ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করবে।
নরওয়ে
নরওয়ে সরকার ২০২৪ সালের অক্টোবরে প্রস্তাব করেছে যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের জন্য শিশুদের সম্মতি প্রদানের ন্যূনতম বয়স ১৩ থেকে বাড়িয়ে ১৫ বছর করা হবে। তবে বয়সসীমার নিচে হলে অভিভাবকের অনুমতি দেওয়ার সুযোগ থাকবে।
সরকার ১৫ বছরকে পূর্ণাঙ্গ ন্যূনতম বয়সসীমা হিসেবে নির্ধারণ করতে নতুন আইন প্রণয়নের কাজও শুরু করেছে।
যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের চিলড্রেনস অনলাইন প্রাইভেসি প্রোটেকশন অ্যাক্ট অনুযায়ী, অভিভাবকের সম্মতি ছাড়া ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের তথ্য কোম্পানিগুলো সংগ্রহ করতে পারে না।
কয়েকটি অঙ্গরাজ্য নাবালকদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অভিভাবকের অনুমতি বাধ্যতামূলক করার আইন পাস করেছে। তবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্নে এসব আইন আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
ইইউ আইন
ইউরোপীয় পার্লামেন্ট গত নভেম্বরে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করেছে—যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের ন্যূনতম বয়স ১৬ বছর করার আহ্বান জানানো হয়েছে—যাতে "বয়স উপযোগী অনলাইন সম্পৃক্ততা" নিশ্চিত হয়।
একইসঙ্গে ইইউজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ডিজিটাল বয়সসীমা ১৩ এবং ভিডিও-শেয়ারিং প্ল্যাটফর্ম ও "এআই কম্প্যানিয়ন"-এর জন্যও ন্যূনতম বয়স ১৩ নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।
যদিও এ প্রস্তাবটি আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি করে না।
প্রযুক্তি কোম্পানির নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ
টিকটক, ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট–সহ বেশিরভাগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্মের ন্যূনতম বয়সসীমা ১৩ বছর।
তবে শিশু অধিকারকর্মীরা বলছেন, এসব নিয়ন্ত্রণ যথেষ্ট নয়—ইউরোপের অনেক দেশে সরকারি তথ্যই দেখাচ্ছে যে বিপুল সংখ্যক ১৩ বছরের কম বয়সী শিশু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করছে।
