প্রধান লক্ষ্য থাকবে মেয়াদ শেষেই আরেকটা ডাকসু নির্বাচন আয়োজন করা: মেঘমল্লার বসু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট সমর্থিত 'প্রতিরোধ পর্ষদ' প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী মেঘমল্লার বসু। নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. তাহমিদুল আলম জায়িফ।
আগামীকাল ডাকসু নির্বাচন। পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত কেমন দেখছেন?
আমাদের প্রচারণা ভালোই হয়েছে। মাঝখানে আমি প্রায় সপ্তাহখানেক বিরতি দিয়েছিলাম। গতকাল আবার প্রচারণায় নামার পর দেখলাম রেসপন্স অনেক বেশি। একই সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, সব ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও বেড়েছে।
নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা বা কারচুপির আশঙ্কা দেখছেন?
আমার মনে হয় না ভোটগণনা নিয়ে তেমন কোনো চিন্তার কারণ আছে। তবে শঙ্কা রয়েছে ধীর গতির লাইন বা নানাভাবে ভোটের 'ইঞ্জিনিয়ারিং' নিয়ে। আগামীকাল যদি অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা ব্যাপকভাবে ভোট দিতে না আসেন, তাহলে ভোটে নানা ধরনের 'ম্যানিপুলেশন' বা 'ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের' চেষ্টা হতে পারে। এটা নিয়ে একটা শঙ্কার জায়গা থাকে।
আপনাদের প্যানেলের শক্তির জায়গা কী?
শিক্ষার্থীরা দেখছেন, নির্বাচনে একদিকে অতীতে গণরুম-গেস্টরুমের পক্ষে থাকা একটি গোষ্ঠী আছে, অন্যদিকে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, আবার অন্যদিকে মোরাল পুলিশিং বা মব জাস্টিসের পক্ষে থাকা একটি গোষ্ঠী আছে। এর বাইরে কেবল আমরাই আছি যারা প্রকৃত অর্থে গণতান্ত্রিক শক্তি হিসেবে রাজনৈতিক অবস্থান দেখাচ্ছি। বাকি যারা আছে তারা বলছে তারা নিরপেক্ষ, রাজনীতির পক্ষে নয়।
আমার মনে হয়, গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বড় সংখ্যক শিক্ষার্থী যা দেখেছেন, তাতে তারা ক্ষুব্ধ। তবে এর মানে এই নয় যে তারা হাসিনার আমলে ফিরে যেতে চান। বরং আমরা আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেলের মাধ্যমে তাদের রাজনৈতিকভাবে একটা পথ দেখাতে পেরেছি আমরা। আমাদের প্যানেলে নারী প্রার্থী, আদিবাসী প্রার্থী, মানবাধিকারকর্মী রয়েছেন। এটা 'আনইন্টেনশনাল ডাইভার্সিটি'। লোক দেখানোর জন্য ডাইভার্সিটি এরকম না। এই ডাইভার্সিটির রাজনীতিটা আমরা তৈরি করতে পেরেছি, যা সামনের দিনে বাংলাদেশকে পথ দেখাতে পারে।
শিক্ষার্থীরা আপনাদের কাছে কী প্রত্যাশা করছে?
শিক্ষার্থীরা জানতে চাইছে, বর্তমান কাঠামো রেখে আমরা যে ইশতেহার দিয়েছি তা আদৌ বাস্তবায়ন করতে পারব কি না। তাদের প্রত্যাশা, তারা যদি আমাদের নির্বাচিত করেন, আমরা যেন হাওয়া না হয়ে যাই, তাদের সাথেই যেন থাকি, তাদের সংগ্রামগুলোতে পাশে থাকি।।
নির্বাচিত হলে আপনার প্রধান লক্ষ্য কী থাকবে?
আমার প্রধান লক্ষ্যই থাকবে ১ বছর ৩ মাস পর আরেকটি ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা। পাশাপাশি অন্যতম উদ্দেশ্য হলো গঠনতন্ত্র পরিবর্তন। আমরা যে সব প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সেগুলো বাস্তবায়নে বড় বাজেট প্রয়োজন, যা বর্তমান ডাকসু বাজেটে সম্ভব নয়। এজন্য গঠনতন্ত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে। উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে ডাকসুর কাঠামোর বাইরে রাখতে হবে। লক্ষ্য থাকবে গঠনতন্ত্র পরিবর্তনের দিকে অগ্রসর হওয়া। কারণ এর মাধ্যমেই ডাকসুর প্রকৃত সক্ষমতা ফিরবে, যার ফলে আবাসন সংকট ও গবেষণা সমস্যার মতো ইস্যুগুলো সমাধান সম্ভব হবে।
নারী শিক্ষার্থীদের অনলাইনে হয়রানির বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। নির্বাচিত হলে এ নিয়ে আপনার পদক্ষেপ কী হবে?
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন হ্যারাসমেন্ট সেল আছে, কিন্তু প্রশাসনই জানে না এটিকে কার্যকরভাবে চালাতে হয় কিভাবে। আমাদের লক্ষ্য হবে এই সেলকে চালু রাখা এবং কার্যকর করা, যাতে নারী নিপীড়ন বন্ধ করা যায়।
জয়ের ব্যাপারে কতটা আশাবাদী?
যদি ভোটার উপস্থিতি বেশি হয়, তবে আমরা জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। উদাহরণ হিসেবে বলি, ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে যদি ৩০ বা ৩৫ হাজার ভোট দেয়, তাহলে একটা বড় অংশে আমরা জিতে আসব। তবে ভোটার উপস্থিতি আসলেই এত বেশি হবে কি না—শেষ মুহূর্তে কী সমীকরণ বা ষড়যন্ত্র দাঁড়াবে—তা আমরা জানি না।
তবে ফলাফল যাই হোক, আমরা ইতিমধ্যে উজ্জীবিত। কারণ আমরা টানা ১৩ দিন ধরে মাঠে টিকে থেকে প্রচারণা চালিয়ে যেতে পেরেছি, যেখানে বিশাল রাজনৈতিক শক্তি ও অর্থনৈতিক সামর্থ্যসম্পন্ন পক্ষগুলোও ছিল। এটা সারা দেশে অসংখ্য মানুষকে উদ্বুদ্ধ করেছে।