হলগুলোকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও গবেষণা চর্চার কেন্দ্রে রূপান্তর করব: তানভীর বারী হামীম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম। নির্বাচনের নানা দিক নিয়ে তিনি কথা বলেছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. তাহমিদুল আলম জায়িফ।
নির্বাচনের আর একদিন বাকি। এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি কেমন দেখছেন?
নির্বাচনের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো মনে হচ্ছে। তবে কিছু শঙ্কা আছে। যেহেতু নির্বাচন একদিন পরই, তাই শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন করার মতো কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমি চাই শিক্ষার্থীরা উৎসবমুখর ও আনন্দময় পরিবেশে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক।
প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভোট থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে—অনেক প্রার্থীর এমন অভিযোগ আছে। আপনার কী মনে হয়?
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে হলে আইডি কার্ড রিনিউ করা, সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি—এমন নানা বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। এতে অনেকে ভোট দিতে আসবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত ছিল সবার ভোটকে সহজ করা। বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চার কোটি তরুণ গত ১৭ বছরে ভোট দিতে পারেনি, যার একটি বড় অংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাই ভোটাধিকার প্রয়োগের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করা উচিত।
আপনাদের প্যানেলের শক্তির জায়গা কোথায়?
আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল দিয়েছি। ৫ আগস্টের পূর্বে আমাদের দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। আর ৫ আগস্টের পর থেকে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিবাচক ধারার রাজনীতি ধরে রেখেছি।
শিক্ষার্থীরা আপনাদের কাছে কী প্রত্যাশা করছে?
শিক্ষার্থীরা আর পুরোনো ধারার রাজনীতিতে ফিরতে চায় না। তারা মৌলিক পাঁচটি অধিকার ফিরে পেতে চায়, যেগুলো থেকে তারা দীর্ঘদিন বঞ্চিত। তারা স্বাভাবিক পড়াশোনার পরিবেশ, ক্রেডিট ট্রান্সফারের সুবিধা, ই-লাইব্রেরি অ্যাক্সেস, আবাসন সংকটের সমাধান ও পুষ্টিকর খাবারের নিশ্চয়তা চায়। মূলত এসব মৌলিক সংকট থেকে মুক্তিই শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি।
নির্বাচিত হলে আপনার প্রধান লক্ষ্য কী থাকবে?
নির্বাচিত হলে প্রথম ১০০ দিনের পরিকল্পনা আমি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করেছি। এর মধ্যে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু থাকবে, যার মাধ্যমে গ্রাফিক্স ডিজাইন ও কম্পিউটার লিটারেসিসহ বিভিন্ন দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা বিনামূল্যে দেওয়া হবে। পাশাপাশি শিক্ষক মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করব। একইসাথে আবাসন সংকট নিরসন ও খাবারের মান উন্নয়নে কাজ করব।
অতীতে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে গেস্টরুম-গণরুম ও চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল। শিক্ষার্থীদের সেই শঙ্কা কতটা দূর করতে পেরেছেন?
৫ আগস্টের পর আমরা গণরুম-গেস্টরুম সংস্কৃতি বিলুপ্ত করতে ভূমিকা রেখেছি। ইতিবাচক রাজনীতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করেছি। এখন হলে গিয়ে ভোট চাইতে গেলে দেখি, কেউ ছবি আঁকছে, কেউ ভাস্কর্য বানাচ্ছে, কেউ গান গাইছে বা সাহিত্যচর্চা করছে। অথচ একসময় এই হলগুলোতে অত্যাচার-নির্যাতন হতো। ৫ আগস্টের পর থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাচ্ছে। তাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য হবে হলগুলোকে জ্ঞান-বিজ্ঞান, সংস্কৃতি ও গবেষণার চর্চার কেন্দ্রে পরিণত করা। আর গণরুম-গেস্টরুমের সংস্কৃতি কখনোই ফিরিয়ে আনা যাবে না।
নারী শিক্ষার্থীদের অনলাইনে হয়রানির বিষয়টি এখন আলোচনায় আছে। এ নিয়ে আপনার অবস্থান কী?
শুধু নারী নয়, পুরুষ শিক্ষার্থীরাও প্রচুর সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছে। বট আইডি ও ভুয়া আইডি দিয়ে বিপুল পরিমাণ প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠী ব্যক্তিগত চরিত্রহননের পথ বেছে নিয়েছে। তবে এর দায় শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়; রাষ্ট্রকেও এখানে দায়িত্ব নিতে হবে।
জয় নিয়ে কতটা আশাবাদী?
জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ঐক্যবদ্ধ আছে। আমাদের প্যানেলে সবচেয়ে জনপ্রিয় শিক্ষার্থীরাই আছে। শিক্ষার্থীদের কাছে গিয়ে বুঝতে পেরেছি, তারা আমাকে গ্রহণ করছে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গঠনে ছাত্রদলের শ্রম ও আত্মত্যাগ রয়েছে। তাই আমি বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা আমাদের কথা চিন্তা করবে। জয় নিয়ে আমি আশাবাদী।