ডাকসু নির্বাচন: প্রথম ৩ ঘণ্টায় বেশিরভাগ কেন্দ্রে পড়েছে ৩৫ শতাংশের বেশি ভোট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল আটটার কিছু পরে একযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত আটটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। শুরুর প্রথম কয়েক ঘণ্টাতেই কেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।
সকাল ১১টা পর্যন্ত বেশিরভাগ ভোটকেন্দ্রে আনুমানিক ৩৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
এর আগে সকাল সাড়ে ৭ টায় গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ব্যালট বাক্স প্রদর্শন করে সিলগালা করা হয়।
বিভিন্ন হলের বুথে রিটার্নিং অফিসার ও প্রাধ্যক্ষরা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিচ্ছেন এবং নির্ধারিত সময়ে সুষ্ঠুভাবেই ভোটগ্রহণ চলছে।
বিজয় একাত্তর হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ জানান, তার কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টায় প্রায় ৪০০ ভোট পড়েছে।

একই হলের আরেক রিটার্নিং কর্মকর্তা শেখ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, 'শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ভালো। এখানে মোট ২ হাজার ৪৩ জন ভোটার। সবাই ভোট দিতেও চাইলে সুযোগ থাকবে। বুথ রয়েছে ৪০টি, আর টেবিল ৭টি।'
হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের বুথে দায়িত্ব পালন করা অধ্যাপক আইনুল ইসলাম জানান, এ পর্যন্ত তার হলে ৩০০ ভোট 'কাস্ট' হয়েছে।
স্যার এ এফ রহমান হলে এখন পর্যন্ত ৪০০ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন হলের প্রাধ্যক্ষ মাহফুজুল হক সুপণ।
শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে তিনটি হলের মধ্যে জগন্নাথ হলে আনুমানিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে, প্রায় ১ হাজার ভোটার ভোট দিয়েছেন। এই হলে মোট ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ২২৫।
সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রায় ৩০ শতাংশ ভোট পড়েছে, প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী ভোট দিয়েছেন। সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে প্রায় ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে, প্রায় ৮০০ ভোট।

টিএসসি কেন্দ্রে রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দিচ্ছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা জানিয়েছেন, বেলা ১১টা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। এই হলে মোট ভোটার সংখ্যা ৫,৬০০। কেন্দ্রে এখনও দীর্ঘ সারি দেখা যাচ্ছে।
উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল কেন্দ্রে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ৬ হাজার ভোটারের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক এস এম শামীম রেজা।
সেখানে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, শেখ মুজিবুর রহমান হল, মাস্টার দা সূর্যসেন হল ও কবি জসীম উদদীন হলের ভোটগ্রহণ চলছে।
এর মধ্যে কবি জসিমউদদীন হলে ১,৩০০ ভোটারের মধ্যে ৭৬০ ভোট (৫৮%); জিয়াউর রহমান হলে ১,৭৫৩ ভোটারের মধ্যে ৮৮৪ ভোট (৫০.৪%); শেখ মুজিবুর রহমান হলে ১,৬০৯ ভোটারের মধ্যে ৯৭০ ভোট (৬০%) এবং সূর্যসেন হলে ১,৪৯৫ ভোটারের মধ্যে ৮৮০ ভোট (৫৩%) পড়েছে।
ভূতত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্রে কবি সুফিয়া কামাল হলে মোট ৪,৪৪৩ জন ভোটার রয়েছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী মারুফুল ইসলাম জানিয়েছেন, বেলা ১২টা পর্যন্ত আনুমানিক ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে। এখনও শিক্ষার্থীদের ভোট দিতে দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
কার্জন হলে অমর একুশে হলে মোট ভোটার সংখ্যা ১,৩০০। রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মহিউদ্দিন জানিয়েছেন, বেলা ১২টা পর্যন্ত আনুমানিক ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
কেন্দ্রে কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি, ভোট দিয়ে উচ্ছ্বাস শিক্ষার্থীদের
দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনে ভোট দিতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোটকেন্দ্রে আসতে থাকেন সবাই।সকালের দিকে কেন্দ্রগুলোতে আবাসিক শিক্ষার্থীদের ভিড় থাকলেও, বেলা বাড়ার সাথে সাথে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরাও ভোট দিতে আসতে শুরু করেন।
সকাল ৮টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত চারটি কেন্দ্র—নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক কেন্দ্র, টিএসসি কেন্দ্র এবং ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্র ঘুরে প্রতিটিতে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখতে পাওয়া গেছে। চারটি কেন্দ্রের কোনোটিতেই এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অভিযোগের কথা শোনা যায়নি।

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ভোটার মো. সাইফুর রহমান সাফিন টিবিএসকে বলেন, 'পরিবেশ খুব উৎসবমুখর। সবাই রাত জেগে অপেক্ষা করেছিলাম ভোট দেওয়ার জন্য। সকাল আটটায় ক্যাম্পাসে এসেছি। আগে কখনো ভোট দেওয়ার অভিজ্ঞতা হয়নি। প্রথমবার ভোট দিচ্ছি, অনুভূতি অন্যরকম।'
বঙ্গমাতা হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নুসরান জাহিন নোভা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে ভোট দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'জীবনে প্রথম ভোট দিয়েছি। হলের রুমমেটদের নিয়ে এসেছি। বেশ ভালো লাগছে। এখন ভোট দেওয়ার পর বিভিন্ন হলে ঘুরছি।'
ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলে এজিএস পদপ্রার্থী তানভীর আল হাদী মায়েদ সকাল ৯টায় নিজ কেন্দ্র সিনেট ভবনে ভোট দেন। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, 'নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে এখনই মন্তব্য করা কঠিন। এখন শুধু আবাসিক শিক্ষার্থীরাই ভোট দিচ্ছে। এখন পর্যন্ত যে পরিস্থিতি তা ভোট গ্রহণের জন্য অত্যন্ত অনুকূল।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। আবাসিক শিক্ষার্থীরাই এখন পর্যন্ত ভোট দিচ্ছেন, সবাই সবার মধ্যে পরিচিত। তাই সেখানে কোনো শঙ্কা দেখছি না।'
এর আগে, কেন্দ্রটিতে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে গণমাধ্যমকর্মী ও প্রার্থীদের পোলিং এজেন্টদের সামনে কেন্দ্রীয় এবং হল সংসদের দুইটি ফাঁকা ব্যালট বক্স প্রদর্শন করে সিলগালা করে দেন রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী।


দীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর পর ডাকসু নির্বাচনে এবার ৮টি ভোটকেন্দ্রে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় সংসদে ২৮টি ও হল সংসদে ১৩ টিসহ মোট ৪১টি পদে নিজেদের প্রার্থী নির্বাচন করবেন ভোটাররা। এর মধ্য দিয়ে গঠিত হতে যাচ্ছে ৩৮তম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় সংসদ।
ডাকসুতে এবার মোট ভোটার ৩৯ হাজার ৮৭৪ জন। এর মধ্যে পাঁচ ছাত্রী হলে ১৮ হাজার ৯৫৯ ভোটার ও ১৩ ছাত্র হলে এই সংখ্যা ২০ হাজার ৯১৫ জন।

ডাকসু নির্বাচনে এবার মোট ৪৭১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১০টি প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিন শতাধিক প্রার্থী, বাকিরা অংশ নিচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। এর মধ্যে সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে লড়ছেন ৪৫ জন প্রার্থী। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ১৯ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী হয়েছেন ২৫ জন।
এছাড়া হল সংসদ নির্বাচনে মোট ২৩৪ টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ১ হাজার ৩৫ জন প্রার্থী।

ভোটারদের কার কেন্দ্র কোথায়
কার্জন হল কেন্দ্রে ভোট দিবেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হল, অমর একুশে হল ও ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৫ হাজার ৭৭ জন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রে ভোট দেবেন জগন্নাথ হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ভোটাররা। এ কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৫৩ জন।

ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ভোট দেবেন রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা। টিএসসি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ৫ হাজার ৬৬৫ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাব কেন্দ্রে যেতে হবে বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ভোটারদের। এ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৭৫৫ জন।

সিনেট ভবন কেন্দ্রে ভোট দিতে হবে স্যার এ এফ রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থীদের। সিনেট ভবন কেন্দ্রে ভোটারের সংখ্যা ৪ হাজার ৮৩০ জন।
উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কবি জসীম উদদীন হলের ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন। কেন্দ্রটিতে মোট ভোটার ৬ হাজার ১৫৫ জন।

ভূ-তত্ত্ব বিভাগ কেন্দ্রে কবি সুফিয়া কামাল হলের শিক্ষার্থীরা ভোট দেবেন। এ কেন্দ্রে মোট ৪ হাজার ৪৪৩ জন শিক্ষার্থী ভোট দেবেন।
ইউনিভার্সিটি ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ভোট দেবেন শামসুন্নাহার হলের ছাত্রীরা। ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে মোট ভোটার ৪ হাজার ৯৬ জন।