“আমি এখানে আর থাকবো না, আমাকে নিয়ে চলো” বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে আয়ানের চিৎকার

রাজধানী ঢাকার উত্তরায় অবস্থিত মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়ানের শরীরের ৪৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। বর্তমানে তিনি বার্ন ইনস্টিটিউটের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন আছেন।
তার পরিবার জানিয়েছে, ৪৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া শরীর নিয়ে আয়ান হাসপাতালে থাকতে চাচ্ছে না। সে বলছে, সে আর থাকবে না সেখানে, তাকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করে।
তার খালাতো ভাই রাহিব দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মঙ্গলবার দুপুর ২ টার দিকে বলেন, "আয়ানের ৪৫ শতাংশ বার্ন হয়েছে। বিশেষ করে ওর শ্বাসনালি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখন কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাসে চলছে। ১৪ নম্বর আইসিইউ বেডে আছে আয়ান। গতকাল রাত ১০ টার দিকে তাকে আমরা আইসিইউ তে নিয়ে আসি। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান আয়ান।"
রাহিব আরও বলেন, "ওর মা ব্যাংকার। দুপুরে যখন খাবার খেতে ক্যান্টিনে যান এমন সময় ফোন আসে, যে তার ছেলেকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তখন সে পাগলের মতো হয়ে বাসায় আমাদের ফোন দেয়।"
রাহিব বলেন, "সকালে আমি গেলাম আয়ানের কাছে, পরে জিজ্ঞেস করে আম্মু কোথায়। আর সে বারবার অরেঞ্জ জুস খেতে চাচ্ছে, কিন্তু ডাক্তার খেতে দিচ্ছে না।
রাহিবের গলা তখন ভারী হয়ে আসছিলো, তিনি আয়ানের চিৎকারের কথা উল্লেখ করে বলে, "আয়ান আমাকে বারবার বলছিলো আমি এখানে আর থাকবো না, আমাকে নিয়ে চলো।"
বার্ন ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি ৭ম শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী জারিফ ফারহানের শরীরের ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে।
তার বাবা টিবিএসকে বলেন, "আমার বাবার পুড়ে যাওয়া শরীর আমি দেখতে পারছি না। গতকাল ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি ছিল, পরে রাতে আইসিইউ তে আনা হয়। ওর এখন খুব শ্বাসকষ্ট হচ্ছে। সাধারণত ১ টায় ছুটি হয়, আর ২ টার মধ্যে ও বাসায় আসে। কিন্তু যখন দুর্ঘটনা ঘটে তার কিছুক্ষণ পরেই আমরা খবর পাই। এই দুর্ঘটনার কথা শুনে আমরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ি।"
৭ম শ্রেণির আরও একজন শিক্ষার্থী মাহতাবের শরীরে ৮৫ শতাংশ পুড়ে গেছে, আছেন আইসিইউ এর ১১ নং কেবিনে। মাহতাবের মা আছেন আইসিইউ এর সামনেই, সে কিছুক্ষণ পর পরই কান্না করছেন আর জ্ঞান হারাচ্ছেন।
মাহতাবের মা নাজরিন আক্তার লিপি টিবিএসকে বলেন, "আমরা প্রথমে ফেসবুকে দেখি, এরপর আমরা সিএমএইচ এ খোঁজ নিই কিন্তু সেখানে পাইনি। পরে জানতে পারি সে বার্ন ইনস্টিটিউটে আছে। আমি আমার বাবার পোড়া মুখ দেখতে পারছি না। স্কুল কর্তৃপক্ষ গতকাল কোচিং না করালে আমার বাবা বাঁচত। আমি ওর কান্না শুনতে পারছি না।"
জানা যায়, ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ছুটির পরে তাদের কোচিং চলছিলো। দুপুর ১ টায় ক্লাস শেষ হয়ে যায় তাদের।
তাদের মতো আইসিইউ এর সামনে অর্ধশতাধিক আহতদের স্বজনেরা অপেক্ষা করছেন আহতদের খবর জানতে। যখনই কোনো ডাক্তার বের হচ্ছেন তখনই স্বজনেরা দৌড়ে যাচ্ছেন তার সন্তান কিংবা আহত স্বজনের অবস্থা জানতে।