‘বাবা, আমার জন্য টেনশন কোরো না, আমি সুস্থ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ’—৪ দিন লড়াইয়ের পর না ফেরার দেশে মাহতাব

'বাবা, আমার জন্য টেনশন কোরো না, আমি সুস্থ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ'—জীবনের শেষ মুহূর্তে বাবাকে এভাবেই সান্ত্বনা দিয়েছিল ১৫ বছরের মাহতাব রহমান ভূঁইয়া। কিন্তু বাবার চোখের সামনে সব আশা ভেঙে দিয়ে অবশেষে না-ফেরার দেশে চলে গেল সে।
দুর্ঘটনার সময় ঝলসে যাওয়া এক কিশোরকে দৌড়াতে দেখা যায়—সে দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ভিডিওতে দেখা সেই কিশোরই ছিল মাহতাব।
গত চারদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছিল সে। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ঢাকার জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে মাহতাবের মরদেহ ঢাকা থেকে তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার চুলাশে পৌঁছায়। রাত পৌনে ১০টায় রাজামেহার ইউনিয়নের চুলাশ-উখারী বাজার ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। দাফন করা হয় তার বড় দাদার (দাদার বাবা) কবরের পাশেই। জানাজায় দেবীদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল হাসনাত খান উপস্থিত ছিলেন। নামাজে ইমামতি করেন স্থানীয় মসজিদের ইমাম লোকমান হোসেন।
মাহতাবের বাবা মিনহাজুর রহমার ভূঁইয়া বলেন, 'মৃত্যুর আগে আমার সোনা মানিক আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছিল, "বাবা আমার জন্য টেনশন কোরো না, আমি সুস্থ হয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।" কিন্তু আল্লাহ তাকে নিয়ে গেল।'
গত ২১ জুলাই এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় আহত হয়েছিল মাহতাব। সেদিন বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের স্কুল ভবনে বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় মাহতাবসহ আরও অনেকে। দুর্ঘটনার পর আহতদের উদ্ধারে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এগিয়ে আসেন। মাহতাবকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। তার শরীরের প্রায় ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছিল।
মাইলস্টোন স্কুলের ইংলিশ ভার্সনে সপ্তম শ্রেণিতে পড়ত মাহতাব। তার শিক্ষার্থী কোড নম্বর ছিল ১০১৪। প্রতিদিন বাবা নিজেই তাকে স্কুলে আনা-নেওয়া করতেন। দুর্ঘটনার সময়ও বাবা স্কুলের কাছেই ছিলেন।
মাহতাব ছিল তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয়। তার বড় বোন নাবিলা মাইলস্টোন স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী এবং ছোট বোন নাইসার বয়স মাত্র ৩ বছর। পরিবারটি ঢাকার উত্তরায় বসবাস করত।