সরকারের মধ্যে ‘কুম্ভকর্ণ সিনড্রোম’ দেখা যাচ্ছে: হোসেন জিল্লুর রহমান

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেছেন, সরকারের প্রতি রেগে যাওয়ার সময় এসেছে। তবে সেটি 'অযৌক্তিক নয়', বরং 'সমাজ পরিবর্তনের জন্য পবিত্র রাগ' হওয়া উচিত।
তিনি বলেন, 'এই সরকারের মধ্যে একধরনের অদ্ভুত মানসিকতা দেখতে পাচ্ছি, যেটাকে বলা যায় 'নিউ ফর্ম অব কুম্ভকর্ণ সিনড্রোম'—শোনা হচ্ছে, কিন্তু প্রতিক্রিয়া নেই। যদিও এসব বলায় সরকার রাগ করতে পারে।'
রোববার (২২ জুন) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত 'বাজেট ডায়লগ ২০২৫–২৬'-এ বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হোসেন জিল্লুর বলেন, 'সংস্কারের সম্পূর্ণ অগ্রাধিকার এখন কিছু সাংবিধানিক বিষয়ে সীমাবদ্ধ। অথচ আমরা যে সংস্কারের কথা বলেছিলাম, তা ছিল বিচারব্যবস্থার দৈনন্দিন বাস্তবতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং প্রতিষ্ঠানভিত্তিক সংস্কার নিয়ে। কিন্তু এগুলো এখন পুরোপুরি দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে। আমি মনে করি, আমাদের এখন রেগে যাওয়ার সময় হয়েছে। এটি যুক্তিহীন রাগ নয়, পবিত্র রাগ—যার মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনা যায়।'
২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেট প্রসঙ্গে হোসেন জিল্লুর বলেন, 'এটি একটি 'ট্রাডিশনাল, প্রুডেন্ট' বাজেট হলেও 'ইমপ্যাক্টফুল' নয়। বাজেটে প্রাইভেট সেক্টর, শ্রমিক খাত এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ কিছু নেই; রয়েছে বৈষম্য। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা উন্নয়নেও তেমন কিছু দেখা যায়নি।'
তার মতে, আগামী ডিসেম্বরেই বাজেটের একটি মিডটার্ম রিভিউ হওয়া উচিত। তিনি বলেন, 'অনেকে বলেন, উপদেষ্টা পরিষদে চারজন অর্থনীতিবিদ রয়েছেন। কিন্তু সবাই অর্থনীতিবিদ হলেও কাঠামোর বাইরে যেতে হলে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। শুধু টেকনিক্যাল দক্ষতা যথেষ্ট নয়।'
অর্থনীতিতে 'নন-ট্যাক্স রেভিনিউ'-তে আরও গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা বলার পাশাপাশি তিনি বলেন, 'এক ধরনের উচ্চাভিলাষ বাদ দিয়ে বাজেটে আরেক ধরনের উচ্চাভিলাষ দেখা যাচ্ছে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বাজেট বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এটি অবকাঠামোগত বাজেট। কিন্তু সক্ষমতার ঘাটতি দূর করার বিষয়ে তেমন কিছু নেই।'
দেশের অর্থনীতিতে সামনে পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে উল্লেখ করেন হোসেন জিল্লুর। এর মধ্যে অন্যতম 'স্পিড চ্যালেঞ্জ'—অর্থনীতি কী গতিতে এগোবে, তা নিশ্চিত করা। 'প্রতি বছর ২২ লাখ মানুষ শ্রমবাজারে প্রবেশ করছে। আগের থেকেই অনেক বেকার বসে আছে। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শিক্ষার মান উন্নয়ন জরুরি। শিক্ষা হচ্ছে, কিন্তু মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে না। এটি ঠিক না হলে বাংলাদেশ গতি পাবে না।'
দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিনিয়োগ বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, 'পরশু চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ী জানালেন, তিনি ১৭০ জন আসামির একটি মামলার ৯৫ নম্বর আসামি। এই 'গায়েবি মামলা'র সংস্কৃতি ব্যবসায়ী সমাজে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করছে।' বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটাতে হলে অর্থ মন্ত্রণালয় একা নয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ পুরো সরকারকে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তরুণদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার পাশাপাশি নতুন 'গ্রোথ ড্রাইভার' খুঁজে বের করার ওপরও জোর দেন হোসেন জিল্লুর। তিনি বলেন, 'আগামী দিনের প্রধান প্রবৃদ্ধির চালক হবে কৃষি। ফার্মাসিউটিক্যালস ও আইসিটিতে সম্ভাবনা থাকলেও কৃষিই হবে মূল চালক। সেজন্য এখনই প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। একইসঙ্গে দুর্নীতি কমাতেও এখনই পদক্ষেপ জরুরি। চিন্তার উত্তরণের সময় এসেছে।'