উত্তরাঞ্চলগামী যাত্রীদের স্বস্তির ঈদযাত্রা শুরু, যান চলাচল স্বাভাবিক

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে উত্তরাঞ্চলগামী ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা আজ বুধবার (৫ জুন) শুরু থেকেই ছিল স্বস্তিদায়ক। যাত্রীদের ভিড় বেড়েছে চোখে পড়ার মতো, তবে গাজীপুর অংশে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ—এই দুই গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক দিয়ে যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক ও স্বস্তিদায়ক।
ঈদের আর মাত্র তিন দিন বাকি। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে গাজীপুরের শিল্প-কারখানাগুলোতে কর্মরত মানুষ কর্মস্থল ছাড়তে শুরু করেছেন। ১০ দিনের ছুটি উপলক্ষ্যে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে কাজ করছে। পুলিশ তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। তাদের লক্ষ্য—মানুষ যাতে যানজট ও অন্যান্য ভোগান্তি ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পারে।
আজ সরেজমিনে দেখা যায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় ঘরমুখো যাত্রীদের ভিড়। দুটি মহাসড়কেই যান চলাচল স্বাভাবিক ছিল। সকাল থেকে হাজারো মানুষ চন্দ্রা ও চান্দনা চৌরাস্তা দিয়ে বাড়ির পথে রওনা হয়েছেন। যাত্রীদের ব্যাগ ও মাথায় মালপত্র ছিল। লম্বা ছুটির সুযোগে অনেকে পরিবার-পরিজনকে আগেভাগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
তবে যাত্রীরা জানান, সাধারণ সময়ের তুলনায় ভাড়া কিছুটা বেশি আদায় করা হচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জগামী একতা পরিবহনের সহকারী আলমগীর বলেন, 'সকাল থেকেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। দুপুরে কারখানাগুলো ছুটি হলে চাপ আরও বাড়বে।'
সিরাজগঞ্জের পোশাক শ্রমিক খোরশেদ আলম বলেন, '১০ দিনের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। নাইট ডিউটি শেষে সকালে রওনা দিয়েছি। সড়কে ভিড় তেমন নেই। মনে হচ্ছে, আরামে যেতে পারব। তবে বিকেলে অবস্থা পাল্টাবে।'

শিল্প পুলিশের তথ্যমতে, গাজীপুরে ২১৭৬টি নিবন্ধিত কারখানার মধ্যে ১১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানা। লক্ষাধিক শ্রমিক এসব কারখানায় কাজ করেন। ঈদের যাত্রা স্বস্তিদায়ক রাখতে তিন দিনে এসব কারখানায় ছুটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। গত মঙ্গলবার ১০ শতাংশ, আজ ৪০ শতাংশ এবং বৃহস্পতিবার বাকি ৫০ শতাংশ কারখানায় ছুটি দেওয়া হবে। ফলে প্রথম দিনের ঈদযাত্রায় মহাসড়কে তেমন চাপ পড়েনি।
আজ সব সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ঈদের আগে শেষ কর্মদিবস। ফলে বিকাল থেকে দুই মহাসড়কে যাত্রীদের চাপ কয়েকগুণ বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তখন একসঙ্গে হাজারো মানুষ রাস্তায় নামলে যানবাহনের সংকট ও যানজট দেখা দিতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সাত জেলার মানুষ রাজধানীতে যাতায়াত করেন। ঈদযাত্রায় লক্ষাধিক মানুষ এ দুটো সড়ক দিয়ে বাড়ি ফিরবেন।

জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান বলেন, 'টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর ও কোনাবাড়ী পর্যন্ত দুটি মহাসড়কে যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের তত্ত্বাবধানে ভ্রাম্যমাণ আদালতও মাঠে আছে। যাত্রীরা যাতে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারে এবং অতিরিক্ত ভাড়া না আদায় হয়, সে লক্ষ্যে আদালত তৎপর।'
গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানান, জেলা পুলিশের আওতাধীন মহাসড়কে যানজট নিরসন ও সেবায় প্রায় ৮০০ পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। কালিয়াকৈর-চন্দ্রা এলাকায় ৫৯৭ এবং মাওনা এলাকায় ২০০ পুলিশ সদস্য কাজ করছেন।
তিনি বলেন, 'আমি নিজে এবং অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তারা মহাসড়কে উপস্থিত থেকে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।'
সালনা হাইওয়ে থানার ওসি শওকাতুল আলম বলেন, 'যানজট এড়াতে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বিকেলে যাত্রীর চাপ আরও বাড়বে।'
পুলিশ সুপার জানান, দুই মহাসড়কের পাশ থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। ফলে ফুটপাত ও সড়কে দোকানপাট না থাকায় যাত্রীরা সহজেই গাড়িতে উঠতে ও নামতে পারছেন, যান চলাচলও স্বাভাবিক রয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক নাফিসা আরেফিন জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন রাখতে জেলা প্রশাসনের ১৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিন শিফটে কাজ করবেন। চন্দ্রা, মাওনাসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালন করবেন।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী জানান, মহাসড়কে যানজট রোধে জলাবদ্ধতা এড়াতে ড্রেন পরিষ্কার ও পানি নিষ্কাশনের জন্য আশপাশের খাল ও নিচু জমিগুলো পরিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ে ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন।