ঈদযাত্রা: ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজট থাকলেও নেই চট্টগ্রাম মহাসড়কে

বেলা বাড়ার সাথে সাথে ঈদ যাত্রায় গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। এ কারণে স্টেশন এলাকাগুলোতে থেমে থেমে যানবাহন চলছে। তবে এখনো মহাসড়কের কোথাও কোনো তীব্র যানজট তৈরি হয়নি।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ মে) গাজীপুরের অবশিষ্ট ৫০ ভাগ পোশাক কারখানার ছুটি হওয়ার কথা রয়েছে। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে, বিকেলে যানবাহন ও যাত্রীদের এই চাপ আরও বাড়বে।
এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লায় গাড়ির চাপ থাকলেও নেই যানজট। যার কারণে সময় লাগলেও নিশ্চিন্তে গন্তব্য পার হচ্ছেন যাত্রীরা। তাছাড়া মহাসড়কে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল জোরদার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাইসহ কোনোধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।

সরেজমিনে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা এবং ঢাকা থেকে কুমিল্লামুখী বাসগুলো যাত্রীতে ভরা থাকলেও কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রাম ও ঢাকামুখী বাসগুলোতে যাত্রীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। কুমিল্লা শহর থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃজেলা বাসগুলোতে ভিড় ছিল। কুমিল্লামুখী আন্তঃজেলা বাসে যাত্রীর চাপ দেখা যায়নি।
চট্টগ্রামের অলংকার মোড় থেকে তিশা প্লাটিনামে করে কুমিল্লায় আসা যাত্রী জাকির হোসেন জানান, গতকাল আমাদের অফিস শেষ হয়। সকালে চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লার উদ্দেশে রওয়ানা দিই। শুরুতে বাস পেতে কষ্ট হয়েছিল। বাসে ওঠার পর মহাসড়কে কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়নি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশাপাশি গাজীপুরের মহাসড়কগুলোতেও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে কাজ করছেন চার হাজার পুলিশ সদস্য। এছাড়াও কাজ করছে, গাজীপুর সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যরাও।
গাজীপুরের ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা দিয়ে ঈদে বাড়ি যাচ্ছে উত্তরাঞ্চলের কর্মজীবী মানুষ।

গত রাত থেকেই যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গি এলাকা ও ভোগড়া বাইপাস থেকে সালনা তিন কিলোমিটার, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের চন্দ্রা ও এর আশপাশের ৫ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের ধীরগতি লক্ষ করা যায়।
আজ সকালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও স্টেশন এলাকাগুলোতে যাত্রী বাড়তে থাকা ও যানবাহনের ধীরগতির কারণে যাত্রীরা ভোগান্তি পোহাচ্ছেন।
শিল্প পুলিশ সূত্র জানায়, এবার তিন পর্বে পোশাক কারখানায় ঈদের ছুটি হচ্ছে। গেল মঙ্গলবার ১০ ভাগ, গতকাল বুধবার ৪০ ভাগ এবং আজ বৃহস্পতিবার ৫০ ভাগ কারখানায় ঈদের ছুটি হচ্ছে। বেশিরভাগ কারখানাতেই শ্রমিকরা বাড়ি যাওয়ার জন্য আগে থেকেই নিজেদের পরিবহণ ব্যবস্থা রেখেছে। যারা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারেননি, তারা স্টেশনগুলোতে দীর্ঘসময় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করে পর্যাপ্ত যানবাহন না পেয়ে খোলা ট্রাক, বাসের ছাদ, পিকাপ বা অন্য ছোট যানবাহনে করেই ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন।
সালনা হাইওয়ে পুলিশের ওসি সওগাতুল আলম বলেন, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মহাসড়কে পুলিশ সদস্য ছাড়াও সেনা ও বিজিবি সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে, ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কে গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় দূরপাল্লার বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ টহলরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত সর্তক করে দেন৷ পরে ১৫০০ টাকার ভাড়া ৫০০ টাকা কমিয়ে ১ হাজার করে যাত্রী উঠানো হয়৷ এসময় প্রতিটি কাউন্টারে অভিযান চালানো হয়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে সতর্ক করা হয়।

গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো: যাবের সাদেক জানান, এবারের ঈদ যাত্রায় গাজীপুর জেলা পুলিশ মহাসড়কের তাদের অংশে প্রায় ৮০০ পুলিশ সদস্য নিয়ে যানজট নিরসন ও যাত্রী চালকদের সেবায় কাজ করছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর চন্দ্রা এলাকায় ৫৯৭ জন পুলিশ সদস্য এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা এলাকায় ২০০ পুলিশ সদস্য কাজ শুরু করেছে।
ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ৪০০ পুলিশ সদস্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অধীনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এবং ঢাকা- টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী পর্যন্ত দুটি মহাসড়কের যানজট নিরসন ও ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ।
তিনি আরও জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ কাজে ভ্রাম্যমাণ আদালত যুক্ত রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এবারে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করা। যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, তারা যাতে নিরাপদে গাড়িতে উঠতে পারেন এবং বাসে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে, সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।