বরিশালের ৫০০ টাকার বাসভাড়া ৮০০ টাকা

বরিশালের যাত্রীদের জন্য ঈদযাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্ভোগের আরেক নাম। রাজধানী থেকে বরিশালগামী বাসগুলো ৫০০ টাকার ভাড়া ৮০০ থেকে ১,০০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে। এছাড়া, ঈদ উপলক্ষ্যে বিমানের ফ্লাইট লিংবা বিআরটিসির জাহাজ না থাকায় যাত্রীরা নির্ভর করছেন ব্যক্তিমালিকানাধীন পরিবহনের ওপর।
বরিশালের নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ডে শ্রমিক ইমদাদুল হক জানান, গুলিস্তান থেকে দুইটি টিকিটের জন্য তাকে গুনতে হয়েছে ১,৫০০ টাকা। 'একটিতে ৮০০, আরেকটিতে ৭০০ টাকা দিতে হয়েছে। আগে যেখানে ৫০০ টাকায় যেতাম, এখন দেড় হাজার নিচ্ছে,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, 'সকাল সাতটার গাড়িতে উঠে দুপুর দেড়টায় নথুল্লাবাদে নেমেছি। ঢাকায় গাড়ি কম, ভাড়া যা খুশি নিচ্ছে।'
ঢাকা থেকে বরিশালে আসা অধিকাংশ যাত্রীই এমন অভিযোগ করেছেন। বাড়তি ভাড়া, যানজট আর দীর্ঘ সময় যাত্রা—সব মিলে এবারের ঈদযাত্রা হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ।
রাবেয়া বেগম নামে এক যাত্রী বলেন, 'ভাড়া বেশি নিলেও সিট অনুযায়ী যাত্রী নিলে কষ্ট কম হতো। অনেককে দাঁড়িয়ে ঝুলে আসতে দেখেছি। ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ছেলে-মেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা খুব কষ্টের। ভাঙ্গা, ভুরঘাটা, গৌরনদী—সবখানে যানজট ছিল। বরিশাল শহরে ঢোকার আগেই কাশিপুর বাজারে দীর্ঘ জট।'
এক পরিবহনের সুপারভাইজার মিলন বলেন, 'বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যাত্রীর চাপ বেশি থাকবে। গাড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় অনেকেই একসাথে আসতে পারছেন না। তবে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলা আমাদের ইচ্ছায় নয়, যাত্রীরাই জোর করে উঠে পড়েন।'
চালক হুমায়ূন কবির বলেন, 'যেসব স্থানে স্ট্যান্ড রয়েছে, সেগুলোর পাশে থ্রি-হুইলার থাকায় যানজট তৈরি হয়। থ্রি-হুইলার সরালে জট কমবে।'
গৌরনদী হাইওয়ে থানার ওসি আমিনুর রহমান বলেন, 'সড়কে শৃঙ্খলা রক্ষায় আমরা কাজ করছি। বৃহস্পতিবার ভোর থেকেই অস্বাভাবিক গাড়ির চাপ দেখা গেছে।'
নৌপথে নেই বিআইডব্লিউটিসির জাহাজ
নদীবহুল বরিশালে নৌযান জনপ্রিয় হলেও বিআইডব্লিউটিসি এবারের ঈদে কোনো জাহাজ নামায়নি। ব্রিটিশ আমলের প্যাডেল স্টিমার পিএস মাসহুদ, পিএস লেপচা, পিএস টার্ন, পিএস অস্ট্রিচ এবং আধুনিক এমভি মধুমতি ও এমভি বাঙালির চলাচল বন্ধ রয়েছে লোকসানের অজুহাতে।
ফলে যাত্রীদের বেসরকারি লঞ্চেই ভরসা করতে হচ্ছে। যার ফলে যাত্রীদের বিভিন্ন হয়রানি হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও বরিশালের নদীবন্দর কর্মকর্তা সেলিম রেজা বলেন, 'পদ্মা সেতু চালুর পর যাত্রী কমেছে। ঈদে তুলনামূলক কিছু যাত্রী হলেও এবার অতিরিক্ত চাপ হবে না মনে হচ্ছে। তবু আমরা ৬টি লঞ্চ প্রস্তুত রেখেছি। ১৪ জুন পর্যন্ত বিশেষ সার্ভিস চলবে।'
তিনি বলেন, 'নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা সবসময়ই গুরুত্ব দিই, এবারও ব্যতিক্রম হবে না।'
সড়কে সীমিত বিআরটিসি সেবা, বিমানেরও নেই বিশেষ ফ্লাইট
বিআরটিসির বরিশাল ডিপোর মোট ৫২টি বাসের মধ্যে ১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এর মধ্যে একটিকে মেরামত করা হচ্ছে। ডিপো ম্যানেজার জামিল হোসেন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো ঈদে সড়কে নামানো হবে। বাড়তি বাস সংযুক্ত করার সক্ষমতা আমাদের নেই।'
বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ ঈদে কোনো বিশেষ ফ্লাইট চালু করেনি। বরিশালের স্টেশন ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সপ্তাহে তিনদিন আমরা নিয়মিত সেবা দিচ্ছি। ঈদের জন্য কোনো অতিরিক্ত ফ্লাইট নেই।'