ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে থেমে থেমে ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট

ঈদযাত্রার শেষদিনে শুক্রবার (৬ জুন) ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়কে ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের। যমুনা সেতু থেকে করটিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে জামুর্কি পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় ধীরগতিতে যান চলাচল করছে।
এদিকে, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খোলা ট্রাক ও বাসের ছাদে চড়ে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন অনেক যাত্রী। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগও উঠেছে।
বুধবার (৪ জুন) ভোর ৪টা থেকে অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও সেতুর ওপর গাড়ি বিকলের কারণে আশেকপুর বাইপাস থেকে যমুনা সেতু পর্যন্ত প্রায় ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়, যা সারাদিন ও রাতজুড়ে অব্যাহত ছিল। এতে যানজটের মাত্রা আরও বাড়ে।
পুলিশ, চালক ও যাত্রীদের ভাষ্যমতে, স্বাভাবিক সময়ে ২ ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে এখন লাগছে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা। মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন বিকল হওয়া ও দুর্ঘটনার কারণেই এ ভোগান্তি। যমুনা সেতুর সীমিত ধারণক্ষমতার কারণে স্বাভাবিকভাবে গাড়ি পারাপারও ব্যাহত হচ্ছে। ফলে উত্তরবঙ্গ থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী যানবাহনগুলোকে ভূঞাপুর হয়ে ঘুরিয়ে পাঠানো হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা সেতু দিয়ে ঈদযাত্রায় ছোট-বড় মিলিয়ে ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন পার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ৪ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ৯৫০ টাকা।
গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, 'অতিরিক্ত গাড়ির চাপের কারণে আমার অংশে যান চলাচল ধীরগতিতে চলছে। তবে যানজট নিরসনে আমরা কাজ করছি।'
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, 'যানজট নিরসনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি।'
গাজীপুরের দুই মহাসড়কে ধীরগতি, যাত্রীদের ভোগান্তি
গাজীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে আজ শুক্রবার (৬ জুন) ভোর থেকে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অত্যধিক বেড়েছে। এ কারণে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মহাসড়কের পাশে যাত্রীরা ভিড় করায় থেমে থেমে যানবাহন চলছে। এতে বিভিন্ন এলাকায় থেমে থেমে যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
পুলিশ, যাত্রী ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৫ জুন) শেষ কর্মদিবসে গাজীপুরের ৫০ ভাগ শিল্প কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়েছে। এ কারণে গাজীপুর ও আশপাশের এলাকার উত্তরাঞ্চলগামী কর্মজীবী মানুষ একসাথে সড়কে নেমে এসেছে। হাজার হাজার মানুষ বৃহস্পতিবার রাত থেকে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকা ও আশপাশের সড়কে উত্তরাঞ্চলগামী যানবাহনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়।
তবে, আজ শুক্রবার (৬ জুন) সকালে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও বেলা বাড়ার সাথে সাথে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর ভিড় বাড়তে থাকে। মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় সড়কের উপর গাড়ি দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলায় যানবাহনের গতি কমতে শুরু করে। ফলে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

শুক্রবার সকাল থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী, বোর্ড বাজার, চান্দনা চৌরাস্তা, সালনাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে যাত্রীর চাপ লক্ষ করা যায়। যাত্রী ও যানবাহনের চাপের কারণে সকাল ১০টার পর বোর্ড বাজার থেকে সালনা পর্যন্ত সাত কিলোমিটারে এলাকায় থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। ফলে গাড়ি গতি কমে যায়।
অপরদিকে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুর মহানগরীর কোনাবাড়ী, শফিপুর এবং কলিয়াকৈরের চন্দ্রা এলাকায় যাত্রী ও যানবাহনের অত্যধিক চাপ রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকায় গাড়ির গতি কমার কারণে যানবাহনের গতি কমে গিয়ে চন্দ্রা ও আশপাশের প্রায় ১০ কিলোমিটারে এলাকায় যানজট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এসব কারণে মহাসড়ক দুটিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থেকে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ঈদে ঘরমুখী মানুষ। অনেকে সিট না পেয়ে বাসের ছাদে, ট্রাকে ও পিকআপ ভ্যানে করে গন্তব্যে যাচ্ছে। সুযোগ বুঝে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।
অনেকে দীর্ঘসময় অপেক্ষা করেও যানবাহন না পেয়ে ঝুঁকি নিয়ে বিকল্পভাবে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছেন। কেউ কেউ খোলা ট্রাক, পিকআপ ভাড়া নিয়ে রওয়ানা হয়েছেন। এভাবে অনেক নারী ও শিশুকে যাত্রা করতে দেখা গেছে। এরকম একটি ট্রাকের যাত্রী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'সকাল থেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই বাধ্য হয়ে এভাবে যাচ্ছি।'
সিরাজগঞ্জগামী বিল্লাল হোসেন বলেন, 'শেষ দিনে ছুটি হওয়া গতকাল ভিড় বেশী হবে মনে করে আজ শুক্রবার সকালে রওনা হয়েছি। কিন্তু সড়কে আগের তুলনায় লোকজন বেশী।' তিনি বলেন, 'প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে আছি, গাড়ি পাচ্ছি না। গাড়ি পেলেও সিট নাই। স্ত্রী সন্তান নিয়ে খুব বিপদে আছি।'
চন্দ্রায় বাস চালক আলম মিয়া বলেন, 'আজ সকাল ৬টায় রওনা হয়ে মহাখালী থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা আসতে সময় লেগেছে ৫ ঘণ্টা। বাকী পথ যেতে কতক্ষণ লাগবে জানি না।'
নাওজোর হাইওয়ে পুলিশের ওসি সওগাতুল আলম আজ সকালে বলেন, 'বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিকালের দিকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পুলিশ সদস্যরা রাস্তা সচল রাখতে ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।'