উৎপাদন খরচ বাড়লেও বড় গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা

পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে থাকলেও ভারি বৃষ্টির কারণে এখনো জমে ওঠেনি কুরবানির হাট। এর মধ্যে বড় আকারের গরু বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন খামারিরা। তারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় উৎপাদন খরচ ১০–১৭ শতাংশ বেড়েছে, তবে গরুর দাম বাড়েনি। এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং বাজারে বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় লোকসানের আশঙ্কা করছেন তারা।
চট্টগ্রামের ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও হোমল্যান্ড ডেইরির স্বত্বাধিকারী ওমর বলেন, 'এবার গরুর সরবরাহ অনেক। কিন্তু মানুষের মধ্যে আগের মতো উন্মাদনা নেই। হয়তো হাতে টাকা কম। আবার রাজনৈতিক কারণে অনেকে পলাতক, যারা একাধিক পশু কোরবানি দিতেন, বড় গরু কিনতেন। এ ছাড়া গত বছর বড় গরু-ছাগল নিয়ে বিপর্যয় হয়েছিল। অনেকের প্রতারণার খবর মিডিয়াতে এসেছে, সেটাও প্রভাব ফেলেছে।'
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এবারের কোরবানির জন্য ১ কোটি ২৪ লাখ গবাদি পশু প্রস্তুত রয়েছে, যার মধ্যে ৫৬ লাখ গরু-মহিষ ও ৬৮ লাখ ছাগল-ভেড়া রয়েছে। যা চাহিদার তুলনায় সাড়ে ২০ লাখ বেশি। যদিও গত বছর কোরবানিযোগ্য পশু ছিল ১ কোটি ২৯ লাখ।
ঢাকার ভাটারায় অবস্থিত নর্থ বেঙ্গল ডেইরি ফার্মের মালিক ইঞ্জিনিয়ার মো. মকবুল হোসেন জানান, 'খাদ্য ও শ্রমিক খরচ বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ ১৭ শতাংশ বেড়েছে। কিন্তু গরুর দাম বাড়েনি। গত বছর লাইভ ওয়েটে ৫৫০ টাকা কেজি দরে গরু বিক্রি করেছি, এবার ৫৬০ টাকা দরে বিক্রি করছি।'
ভোলার দক্ষিণ দিঘলদী গ্রামের খামারি কামরুল হাসান খোকন জানান, এবার ৩৮টি গরু কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। তবে বাজারে চাহিদা না থাকায় কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। '৮ মণের গরু ২ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি, অথচ মাংস হিসাব করলে অন্তত আড়াই লাখ টাকা দাম হওয়ার কথা,' বলেন তিনি।
গবাদি পশু উৎপাদনের শীর্ষ জেলাগুলোর একটি বগুড়া। বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার খামারগুলোতে দেশি জাতের গরু ছাড়াও বিদেশি জাতের শাহিওয়াল, গির, হলেস্টেইন ফ্রিজিয়ান ও ব্রাহামা জাতের গুরু পালেন খামারিরা।
বগুড়ার খামারিরাও একই ধরনের সমস্যার মুখে। ভান্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্মের স্বত্বাধিকারী তৌহিদ পারভেজ বিপ্লব বলেন, 'আগেই বুঝেছিলাম বাজার খারাপ হবে। তাই আগে গরু বিক্রি করেছি। এখন লালন-পালনে লোকসান হচ্ছে। খাবার ও মজুরি বাড়লেও গরুর দাম বাড়েনি।'
নওগাঁর খামারি গোলাম মোস্তফা জানান, 'বড় গরু নিয়ে শঙ্কা ছিল। তাই দশ দিন আগেই ৩০ হাজার টাকা কমে দুটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি।'
লক্ষ্মীপুরের খামারিরাও জানিয়েছেন, এ বছর পশুর দাম তুলনামূলকভাবে কম। ব্যবসায়ী মাহবুব জানান, 'গত বছর প্রতি মণ (৪০ কেজি) মাংসের দাম ছিল ৩০–৩৫ হাজার টাকা। এবার তা ২৫ হাজার টাকার বেশি হচ্ছে না। প্রতিটি বড় গরুতে ৩০–৫০ হাজার টাকা কম পাচ্ছি।'
তোরাবগঞ্জ বাজারের খামারি ইউছুপ জানান, 'গত বছর বন্যার কারণে চার মাস পশুর খাদ্য উচ্চমূল্যে কিনতে হয়েছে। ফলে প্রতিটি পশুতে ৫০ শতাংশ বেশি খরচ হয়েছে। অথচ এখন পশুর দাম উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম।'
সার্বিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, 'এবার পশুর সরবরাহ বেশি। প্রায় ৩ হাজার ৫০০ হাটে কেনাবেচা শুরু হয়েছে। আবহাওয়ার কারণে হাট এখনো জমে না উঠলেও আমরা আশাবাদী।'