৫০০ শয্যার হচ্ছে জাতীয় চক্ষু হাসপাতাল

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইওএইচ) শয্যা ২৫০ থেকে ৫০০ শয্যায় সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এতে ব্যয় হবে ৪২০ কোটি ২০ লাখ টাকা। হাসপাতালটির ভবন এখন ৬ তলা, সেটি বাড়িয়ে ১০ তলা করা হবে। পরিসর বাড়লে অধিক সংখ্যক রোগী হাসপাতালটিতে সেবা নিতে পারবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য একটি খসড়া প্রস্তাব প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রস্তাবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য সময় ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৮ সালের ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ধরা হয়েছে। এ প্রকল্পের সম্পূর্ণ ব্যয় সরকার দেবে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী ডা. সাঈদুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এই হাসপাতালের পরিসর বাড়লে আরো অধিক সংখ্যক রোগী সেবা নিতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, "আমরা এখন ঢাকার বাইরে ফোকাস করবো, ঢাকার বাইরে ভালো ভালো হাসপাতাল হলে ঢাকায় রোগীদের আসতে হবেনা, এতে তাদের ভোগান্তি ও খরচও কমবে।"
এনআইওএইচ-এর পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, হাসপাতালটি দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নত চক্ষু চিকিৎসার জন্য একটি রেফারেল সেন্টার হিসেবে কাজ করে। পাশাপাশি চিকিৎসকদের চক্ষু বিষয়ে সাব-স্পেশালিটি ডিগ্রি এবং চক্ষু রোগের উপর প্রশিক্ষিত জনবল সৃষ্টি করে জনসাধারণকে উন্নত সেবা প্রদান কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
২০০৭ সালে যাত্রা শুরু করে হাসপাতালটি। তখন প্রতিদিন ১৫০-২০০ জন রোগী ভর্তির পাশাপাশি দৈনিক আউটডোরে রোগী হত ৪৫০-৫০০জন। চিকিৎসক সংখ্যা ছিল ১৪০ জন ও নার্স ২৪০জন।
খায়ের আহমেদ বলেন, "বর্তমানে দৈনিক রোগী ২২০-২৫০ জনের ভর্তি থাকার পাশাপাশি বহির্বিভাগে প্রতিদিন তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। কিন্তু চিকিৎসক-নার্সের সংখ্যা একই আছে।"
তিনি জানান, শয্যা সংখ্যা কম হওয়ায় প্রতিদিন ৬০-৮০ জনকে ভর্তি না করেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
হাসপাতালকে ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা গেলে ও চিকিৎসক-নার্সদের পদ বাড়ানো গেলে আরও অধিক সংখ্যক রোগীদের সেবা দেওয়া যাবে বলে জানান খায়ের।
এছাড়া শিক্ষার বিষয়ে তিনি বলেন, অ্যাকাডেমিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেহেতু এই প্রতিষ্ঠানের আর একটি প্রধান কাজ হচ্ছে চিকিৎসকদের উচ্চশিক্ষা /প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ এবং যোগ্য চক্ষু চিকিৎসক তৈরি করা, এই দিকটায়ও সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে হাসপাতালটির তিনটি ভবন রয়েছে। ভবন তিনটি এ, বি ও সি ব্লক নামে পরিচিত। নিচতলায় প্রবেশপথেই জরুরি বিভাগ রয়েছে। আউটডোরে রুম আছে আটটি।
অটিস্টিক কর্নারের পাশাপাশি রয়েছে বয়স্ক নাগরিকদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। সবার সঙ্গে এসব রোগীকে দীর্ঘসময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার ভোগান্তি নেই।
এ হাসপাতালের ৯টি বিভাগ চালু রয়েছে। এগুলো হচ্ছে—ক্যাটারাক্ট, কর্নিয়া, গ্লুকোমা, রেটিনা, অকুলোপ্লাস্টিক, পেডিয়াট্রিক অপথোমোলজি, নিউরো অপথোমোলজি, কমিউনিটি অপথোমোলজি ও লোভিশন। ১৩টি অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার আছে।
ছানিসহ সব ধরনের অস্ত্রোপচার হাসপাতালটিতে বিনামূল্যে করা হয়। ছানির অস্ত্রোপচারের জন্য রোগীকে লেন্সও বিনামূল্যে দেয়া হয়। তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা ফি সরকার নির্ধারিত হারেই নেয়া হয়।
জুলাই অভ্যুত্থানেরও হাসপাতালটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এখন পর্যন্ত চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ১ হাজার ৭৪ জন রোগী চিকিৎসাধীন নিয়েছেন। চোখে আঘাতপ্রাপ্ত প্রায় ৬৫০ জনের অপারেশন করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় ধাপে ৩০০টির বেশি রেটিনা সার্জারি হয়েছে।