‘ওভারস্টে’ ঠেকাতে দুই দেশের নাগরিকদের ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রের ১৫ হাজার ডলার জামানতের শর্ত

মালাউই ও জাম্বিয়ার নাগরিকদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ বা ব্যবসায়িক ভিসা নিতে হলে এখন থেকে ১৫ হাজার ডলার জামানত দিতে হবে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ১২ মাসের এক পাইলট প্রকল্পের আওতায় এই নিয়ম চালু করা হচ্ছে।
এই পদক্ষেপের লক্ষ্য দীর্ঘমেয়াদি ভিসা থাকার পরও যুক্তরাষ্ট্র না ছাড়ার প্রবণতা (ওভারস্টে) রোধ করা। একইসঙ্গে, যেসব দেশের স্ক্রিনিং ও ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া দুর্বল বলে মনে করা হয়, তাদের জন্যও এই নীতিমালা প্রযোজ্য হতে পারে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মালাউই ও জাম্বিয়া ছাড়াও ভবিষ্যতে অন্য আরও দেশকেও এই ধরনের জামানত প্রদানের আওতায় আনা হতে পারে। যাত্রা শেষে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করলে এই অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে এই সিদ্ধান্ত তার প্রশাসনের অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোর এজেন্ডারই অংশ। প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বার শপথ নেওয়ার দিনই ট্রাম্প এক নির্বাহী আদেশে এই দিকনির্দেশনা দেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মঙ্গলবার প্রকাশিত ঘোষণায় বলা হয়েছে, 'বাণিজ্য বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভিসার (বি-১/বি-২) আবেদনকারী নাগরিকদের ক্ষেত্রে, যদি তারা এমন দেশের নাগরিক হন যাদের ভিসা ওভারস্টে হার বেশি, কিংবা স্ক্রিনিং ও তথ্য যাচাইয়ে ঘাটতি রয়েছে, অথবা যেসব দেশ নাগরিকত্ব বিক্রির বিনিময়ে প্রদান করে (যেমন: কোনও আবাসনের শর্ত ছাড়াই বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব), তাহলে তারা এই পাইলট প্রোগ্রামের আওতাভুক্ত হতে পারেন।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'এসব আবেদনকারীদের ভিসা পেতে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ডলার পর্যন্ত জামানত দিতে হতে পারে। কনস্যুলার কর্মকর্তারা তা নির্ধারণ করবেন।'
মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের ২০২৩ সালের তথ্য অনুযায়ী, মালাউইর প্রায় ১৪ শতাংশ ভিসাধারী যুক্তরাষ্ট্রে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি দিন অবস্থান করেন। জাম্বিয়ার ক্ষেত্রে এই হার ১১ শতাংশ। ওভারস্টে হারের দিক থেকে আরও কয়েকটি দেশের মধ্যে রয়েছে হাইতি (৩১ শতাংশ), মিয়ানমার (২৭ শতাংশ) ও ইয়েমেন (২০ শতাংশ)।
২০২৫ সালের জানুয়ারিতে দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছেন। তিনি কয়েকটি দেশের নাগরিকদের জন্য মানবিক ভিসা সুবিধা বাতিল করেছেন।
এছাড়াও, ট্রাম্প প্রশাসন ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা এবং আরও সাতটি দেশের জন্য আংশিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ভিসা বাতিলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন কলেজ ক্যাম্পাস থেকে শত শত আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে, অনেককে হঠাৎ আটকও করা হয়েছে – কোনো পূর্ব সতর্কতা বা আপিলের সুযোগ ছাড়াই।
পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছে, যারা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করেছে বা সন্দেহভাজন, তাদের টার্গেট করা হচ্ছে।
আইনজীবীরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই প্রো-প্যালেস্টাইন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বা তুচ্ছ অপরাধের অভিযোগের ভিত্তিতেও এই ধরনের ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটছে – যেমন: ট্রাফিক আইনে সামান্য লঙ্ঘন।