সিলেটে ভাঙচুর থেকে রেহাই পায়নি বিএনপি নেতাদের হোটেলও, সব মিলিয়ে ক্ষতি প্রায় ৫০ কোটি টাকা

গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রতিবাদে সোমবার সিলেটে আয়োজিত বিক্ষোভ থেকে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয় শহরের একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। এমনকি রেহাই পায়নি বিএনপি নেতাদের মালিকানাধীন হোটেলও।
নগরীর মিরবক্সটুলায় নবনির্মিত 'হোটেল রয়েল মার্ক'-এ ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এতে হোটেলের প্রায় ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
রয়েল হোমস লিমিটেডের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান হোটেল রয়েল মার্কের মালিকানায় রয়েছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির নেতা ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে ধানের শিষের প্রার্থী ফয়সল আহমদ চৌধুরীসহ দলের কয়েকজন নেতা।
হোটেলের অন্যতম স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান অভিযোগ করেন, "এটি পরিকল্পিত হামলা ও লুটপাট। আমাদের হোটেলের চারটি তলা একেবারে তছনছ করে দেওয়া হয়েছে। রিসেপশন, রেস্টুরেন্ট, বেনকুয়েট হল ভাঙচুর ও ক্যাশ বাক্স লুট করা হয়েছে।"
তিনি জানান, ভবনের দ্বিতীয় তলায় কেএফসি-এর শাখা ছিল, যেখানে প্রথমে হামলা হয়। পরে একাধিক মিছিল এসে হোটেলের বিভিন্ন কক্ষ, রেস্টুরেন্ট, কফি বার ও বেনকুয়েট হলে ভাঙচুর চালায়। ছয়তলা পর্যন্ত জানালার কাচ, ল্যাপটপ ও কম্পিউটারও ভাঙচুর করা হয়।
তিনি আরও বলেন, "দুর্বৃত্তরা পানির লাইন ছেড়ে দেওয়ায় লিফট, জেনারেটর ও সাবস্টেশন নষ্ট হয়ে গেছে। সবমিলিয়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা নিজেরাও গাজায় হামলার প্রতিবাদ করেছি, হোটেলের সামনে ফিলিস্তিনের পতাকা ও প্রতিবাদ ব্যানার দিয়েছিলাম। কিন্তু এটা প্রতিবাদ নয়, এটি পরিকল্পিত লুটপাট।"
হোটেলটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার কোতোয়ালি থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (উত্তর) মো. শাহরিয়ার আলম জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাদের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ভিডিও ফুটেজ দেখে অন্যদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
মামলার বাদী ও হোটেলের অপারেশন ম্যানেজার আবদুল মতিন সরকার বলেন, "হামলাকারীরা মুখ ঢেকে গুলতি, হাতুড়ি ও শাবল নিয়ে হামলা চালায়। ষষ্ঠ তলা পর্যন্ত কাচ ভেঙেছে। হামলায় সাত–আটজন কর্মচারী আহত হয়েছেন।"
তিনি জানান, হামলাকারীদের ভিডিও ও ছবি পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দেখে শনাক্ত করা সম্ভব।
সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মুজিবুর রহমান মিন্টু বলেন, "সোমবারের ঘটনায় প্রায় ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এত বড় আকারে ভাঙচুর ও লুটপাট ৫ আগস্টের পর আর দেখা যায়নি। এটি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।"
প্রসঙ্গত, সোমবার দুপুরে বিক্ষোভ থেকে নগরীর কেএফসি, ডমিনোস পিজ্জা, হোটেল রয়েল মার্ক, সফুরা রেস্টুরেন্ট, আলপাইন রেস্টুরেন্ট, ইউনিমার্ট, বাটার শো-রুম, ফুলকলি, বনফুলসহ বেশ কিছু সুপার শপেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালানো হয়।