প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছুটি কমাতে চায় সরকার, ফিরছে বৃত্তি পরীক্ষাও: গণশিক্ষা উপদেষ্টা

সরকারি-বেসরকারি সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বার্ষিক ছুটির সংখ্যা কমানো এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পুনরায় বৃত্তি পরীক্ষা চালুর বিষয় নিয়ে সরকার কাজ করছে বলে জানা গেছে। তবে, এই বিষয়ে এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। শিক্ষক ও অভিভাবকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবং শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার কমাতে এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ২০২৫ উপলক্ষে আজ রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার এ পরিকল্পনার কথা জানান। সচিবালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলন হয়।
উপদেষ্টা বলেন, 'স্কুলে যদি পড়াশোনা হতে হয় তবে প্রয়োজনীয় একটি শর্ত হচ্ছে কন্ট্রাক্ট আওয়ার, অর্থাৎ একজন শিক্ষক ছাত্রকে কতটুকু সময় দিতে পারছেন। এই কন্ট্রাক্ট আওয়ার প্রথমত নির্ভর করছে কত দিন স্কুল খোলা থাকে। আপনারা ক্যালেন্ডার দেখেন, ৩৬৫ দিনের মধ্যে আমার স্কুল খোলা থাকে মাত্র ১৮০ দিন। খেয়াল করেছেন ব্যাপারটা? পড়াশোনাটা যে হবে, স্কুল কত দিন খোলা পাচ্ছি? এর মানে আমাদের অনেক অপ্রয়োজনীয় ছুটি রয়ে গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি ছুটি যদি কিছু কমিয়ে আনা যায়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে এটা করছি, কারণ বিচ্ছিন্নভাবে করলে হবে না।'
ছুটি কমানোর ক্ষেত্রে সাপ্তাহিক বন্ধ দুদিন থেকে কমিয়ে একদিন করার কোনো চিন্তা আছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, 'আপাতত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ক্যালেন্ডারে ছুটি কিছুটা কমানো। আমরা যদি সাপ্তাহিক ছুটি দুইদিনকে একদিন করতে চাই, সেটা সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেহেতু একই রকম তাই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আলাদাভাবে করা কঠিন। কারণ সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এ বিষয়ে সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি শিক্ষকদের 'নন-ভ্যাকেশন ডিপার্টমেন্ট' হওয়ার দাবিও সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে।'
কোন কোন দিনের ছুটি কমানো হবে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এটা চূড়ান্ত হলে আপনাদের জানিয়ে দেব।'
পুনরায় বৃত্তি চালু ব্যাপারে তিনি বলেন, 'বৃত্তি পরীক্ষার বিষয়টি প্রথমে আমাদের চিন্তায় ছিল না। তবে আমরা লক্ষ্য করেছি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ক্লাস টু থেকেই বৃত্তি পরীক্ষা নেয় ফাইভ পর্যন্ত। তারা এটি নিজেদের প্রচারের মাধ্যম হিসাবেও ব্যবহার করে, দেখাতে যে "আমরা বৃত্তি দিচ্ছি"। ফলে অভিভাবকরা আমাদের কাছে তাদের সন্তানদের জন্য বৃত্তি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।'
'এর ফলে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার বাড়ছিল, যার মূল কারণ অর্থনৈতিক। আমরা লক্ষ্য করেছি, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যারা পড়ে, তাদের বেশিরভাগই অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকে। বৃত্তি প্রদানের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা দিলে শিক্ষার্থীদের উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া অনেকটা সহজ হবে', যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, 'এইসব বিবেচনা থেকে আমরা বৃত্তি পরীক্ষা পুনরায় চালু করতে চাচ্ছি। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরি হবে। এতে করে স্কুলগুলো থেকে কয়েকজন মেধাবী ছাত্রকে নির্বাচন করা সম্ভব হবে। আমাদের পরীক্ষাগুলো শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যেই সীমিত থাকবে এবং আমরা অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করছি না বা অন্তর্ভুক্তির প্রসঙ্গ আনছি না।'
পরীক্ষা ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বিধান রঞ্জন রায় বলেন, 'আদর্শভাবে ছাত্রকে মূল্যায়ন করার পদ্ধতি হচ্ছে ক্লাসের রেগুলার অ্যাসেসমেন্ট। এটা একটি কমুলিটিভ পরীক্ষা নয়। 'দিস ইজ দ্যা আইডিয়েল থিং'। কিন্তু বাস্তবে আমরা আইডিয়ালভাবে স্কুলগুলো চালাতে পারছি না। তাই প্রয়োজন পড়ছে যে আমরা একটি কমুলিটিভ পরীক্ষা নেব। শেষে একটি পরীক্ষা হবে। আমাদের পুরো সিস্টেমটাই এর সাথে অভ্যস্ত। অভিভাবক, শিক্ষক—সবাই অভ্যস্ত।'
তিনি আরও বলেন, 'পূর্বে আমরা পরীক্ষাকে বাদ দিয়েছিলাম, কিন্তু দেখলাম তা আমাদের জন্য বুমেরাং হয়েছে। প্রথমত, কেউ এটি গ্রহণ করেনি। দ্বিতীয়ত, আমরা শুধু সরকারি প্রাইমারী স্কুলে এটি চালু করেছি, অন্যখানে নয়। ফলে অভিভাবকরা তাদের সন্তানকে অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গেছেন। তাই আবারও পরীক্ষা চালু করা হয়েছে এবং পজিটিভ সাড়া পাওয়া গেছে। আশা করি এটি ইতিবাচক ফল দেবে।'
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা-২০২৪) বরাত দিয়ে বলেন, দেশের সাত বছর ও তদূর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে সাক্ষরতার হার ৭৭ দশমিক ৯ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় ২২ দশমিক ১ শতাংশ জনগোষ্ঠী এখনো নিরক্ষর। এই জনগোষ্ঠী মূলত বিদ্যালয় বহির্ভূত বা ঝরে পড়া শিশু এবং শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষ। উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের জন্য তাদেরকে সাক্ষরজ্ঞান ও কর্মমুখী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তরিত করা অত্যন্ত জরুরি। এ লক্ষ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো, শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তরের সঙ্গে কাজ করছে।