কোকা-কোলার পর এবার ড. পেপারের কাছেও ‘সোডা যুদ্ধে' হার পেপসির, সংকটে ভবিষ্যৎ

কোকা-কোলার কাছে দীর্ঘদিন ধরেই 'সোডা যুদ্ধ' হেরে আসছে পেপসিকো। তবে সম্প্রতি ড. পেপারের কাছেও পিছিয়ে গিয়ে তৃতীয় স্থানে নেমে যাওয়ায় কোম্পানিটির 'বড় ধরনের পরিবর্তনের' দাবি তুলেছে প্রভাবশালী বিনিয়োগকারী সংস্থা এলিয়ট ম্যানেজমেন্ট।
গত সপ্তাহের মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এলিয়ট জানায়, তারা পেপসিকোতে ৪ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার কিনেছে। কোম্পানিটির ব্যবসায়িক সংকট মোকাবিলায় কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা।
পেপসিকোর পরিচালনা পর্ষদকে লেখা এক চিঠিতে এলিয়ট ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্ট বলেছে, 'পেপসিকো এখন এক সংকটময় সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। কোম্পানিটির আর্থিক কর্মক্ষমতা উন্নত করা এবং শিল্পের শীর্ষস্থান ফিরে পাওয়ার এখনই সুযোগ, যদিও কিছু বাধ্যবাধকতাও আছে।'
লেইস, ডরিটোস, চিটোস, গেটোরেড, পেপসি, মাউন্টেন ডিউ ও কোয়েকারের মতো ব্র্যান্ডের মালিক পেপসিকো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্বল পারফরম্যান্স দেখাচ্ছে। গত এক বছরে কোম্পানির শেয়ারের দাম কমেছে ১৫ শতাংশ।
তবে এ পরিস্থিতিতে এলিয়টের সম্পৃক্ততাকে স্বাগত জানিয়েছে পেপসিকো কর্তৃপক্ষ।
পেপসিকো এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, 'আমরা আমাদের শেয়ারহোল্ডারদের সাথে সক্রিয় ও ফলপ্রসূ সংলাপ বজায় রাখি এবং দীর্ঘমেয়াদী শেয়ারহোল্ডার মূল্য বৃদ্ধিতে গঠনমূলক ইনপুটকে গুরুত্ব দেই।'
খাদ্য ও পানীয় শিল্পে অস্থির পরিস্থিতির মাঝে কোম্পানিগুলো এখন মুদ্রাস্ফীতির কারণে ক্রয়ক্ষমতা হারানো ক্রেতাদের খরচ কমানো বা জেনেরিক পণ্যের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। জিএলপি-১ ওষুধের উত্থানও এক্ষেত্রে একটি কারণ।। এছাড়াও, আমেরিকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সেক্রেটারি রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়রের উদ্যোগে কৃত্রিম স্বাদ ও অন্যান্য সংযোজনীয় উপাদান সরিয়ে ফেলার চাপও রয়েছে।
২০২৪ সালে ড. পেপার পেপসিকে ছাড়িয়ে দ্বিতীয় বৃহত্তম সোডা ব্র্যান্ড হিসেবে জায়গা করে নেয়। বিস্তৃত বিপণন ও স্ট্রবেরি-ক্রিমের মতো নতুন স্বাদ নিয়ে এসে তারা সোডা পানকারীদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়ে।
এলিয়ট ম্যানেজমেন্টের দাবি, পেপসিকোর সোডা ব্যবসায় এই ক্ষতি 'স্বেচ্ছায় সৃষ্ট' এবং তাদের ব্র্যান্ডের সংখ্যা অনেক বেশি।
দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিটো-লে পেপসিকোর বৃদ্ধির প্রধান চালিকা শক্তি হলেও কোম্পানির স্ন্যাকস বিভাগও হোঁচট খাচ্ছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক ভোক্তা দোকান থেকে কম চিপস ও ক্র্যাকার কিনছেন।
এলিয়ট ম্যানেজমেন্ট পেপসিকোর কাছে বেশ কিছু পরিবর্তনের সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে একটি হলো কোকা-কোলার মতো পেপসিকোর স্বাধীন বোতলজাতকরণ নেটওয়ার্ক পুনরায় ফ্র্যাঞ্চাইজ করা, যা কোম্পানির ব্র্যান্ড ও সিরাপ কিনে থাকে। তাদের মতে, পেপসিকোর কিছু পানীয় এবং খাবারের ব্র্যান্ড বিক্রি করে দেওয়াও বিবেচনা করা যেতে পারে।
সালিভান অ্যান্ড ক্রোমওয়েলের অংশীদার লরেন্স এলবাম বলেন, 'ভোক্তাদের রুচি পরিবর্তনের কারণে পেপসিকোর মতো ভোক্তা-মুখী কোম্পানিগুলো ক্রমবর্ধমান হারে অ্যাক্টিভিস্ট বিনিয়োগকারীদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে।'
এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় কোম্পানিগুলো একীভূতকরণ, অধিগ্রহণ এবং স্পিনঅফের পথ অবলম্বন করছে।
গত জুলাই মাসে নুটেলা প্রস্তুতকারক ফেরেরো গ্রুপ সিরিয়াল জায়ান্ট ডব্লিউকে কেলগ কো-কে ৩ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের চুক্তিতে কিনে নিয়েছে, যার মালিকানাধীন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্রুট লুপস এবং ফ্রস্টেড ফ্লেক্স। গত বছর মার্সও ৩০ বিলিয়ন ডলারে কেলানোভা অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিল।