ট্রাম্পের কথামতো যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসছে আখের চিনি দিয়ে তৈরি কোকা-কোলা

কোকা-কোলা জানিয়েছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে আখের চিনি দিয়ে তৈরি নতুন কোক পণ্য চালু করতে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, কোকা-কোলা সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে আসল আখের চিনি ব্যবহার করতে।
এর আগে ট্রাম্পের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র কোকে কর্ন সিরাপ ব্যবহারের স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে লিখে ছিলেন, 'আমি যুক্তরাষ্ট্রে কোকা-কোলায় আসল আখের চিনি ব্যবহারের বিষয়ে কোকা-কোলার সঙ্গে আলোচনা করেছি এবং তারা এতে সম্মত হয়েছে। আমি কোকা-কোলার দায়িত্বশীল সকলকে ধন্যবাদ জানাই।'
এদিকে সম্প্রতি প্রিমিয়াম দামের কোমলপানীয়টির চাহিদা কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে ধনী দেশগুলোতে। এর একটি কারণ হলো, নিম্নআয়ের ভোক্তারা এখন দাম নিয়ে বেশ সতর্ক।
তাই কোকা-কোলা মঙ্গলবার জানিয়েছে, তাদের ত্রৈমাসিক আয় প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে। বিক্রি কিছুটা কমলেও পণ্যের দাম বাড়ানোর ফলে কোম্পানির লাভ বেড়েছে। মূল বাজারগুলো — যেমন মেক্সিকো ও ভারত, এবং যুক্তরাষ্ট্রে কোকা-কোলা ব্র্যান্ডের বিক্রি কমে যাওয়ায় সামগ্রিক বিক্রির পরিমাণ ১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। অথচ আগের দুই প্রান্তিকে এই বিক্রি প্রতি প্রান্তিকে ২ শতাংশ করে বেড়েছিল।
তবে দাম বাড়ানোর কৌশল এই বিক্রির হ্রাসকে পুষিয়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত খরচ বাদ দিয়ে কোম্পানি প্রতি শেয়ারে ৮৭ সেন্ট আয় করেছে, যেখানে বিশ্লেষকেরা ৮৩ সেন্ট প্রত্যাশা করেছিলেন।
কোম্পানির সিইও জেমস কুইনসি মুনাফা সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর এক ফোন কলে বলেন, তারা ভোক্তার চাহিদার ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি উপাদানের সব ধরনের বিকল্প বিবেচনা করতে প্রস্তুত। কোম্পানির মতে, এই নতুন পণ্যটি তাদের বিদ্যমান পণ্যের একটি পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।
প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানি পেপসিকো যারা গত সপ্তাহে তাদের ত্রৈমাসিক আয়ে প্রত্যাশার চেয়েও ভালো ফল করেছে, তারাও বলেছে যে, ভোক্তারা চাইলে তারা প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করবে।
কোকা-কোলা ইতোমধ্যেই আখের চিনি দিয়ে তৈরি কোক মেক্সিকোসহ অন্যান্য বাজারে বিক্রি করছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের কিছু গ্রোসারি দোকানেও কাচের বোতলে 'মেক্সিকান কোক' নামে আখের চিনিযুক্ত কোক পাওয়া যায়।
কলম্বিয়া থ্রেডনিডলের বিশ্লেষক শন কিং জানান, কোকা-কোলা ইতোমধ্যেই তাদের অন্যান্য কিছু ব্র্যান্ডে আখের চিনি ব্যবহার করছে।
আয়-প্রকাশের সময় সিইও জেমস কুইনসি বলেন, কোম্পানিটি ইতিমধ্যে কিছু লেমোনেড, কফি এবং ভিটামিন ওয়াটার ব্র্যান্ডে আখের চিনি ব্যবহার করে।
যদিও আখের চিনি ও কর্ন সিরাপের মধ্যে সামান্য পার্থক্য আছে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন — উভয় উপাদানই অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়।
তবে আখের চিনিতে রূপান্তর করলে খরচ বেড়ে যাবে, বলে জানিয়েছেন শিল্প বিশ্লেষকরা। এতে সরবরাহ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে হবে, যা উৎপাদন ব্যয় আরও বাড়িয়ে দেবে।
এই খরচ বৃদ্ধির প্রভাব পণ্যের দামে পড়বে, ফলে ভোক্তাদের বাজেটেও চাপ পড়তে পারে। কোকা-কোলা'র সিইও জেমস কুইনসি বলেন, উত্তর আমেরিকায় বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে, কারণ কিছু কিছু সামাজিক-অর্থনৈতিক শ্রেণির ভোক্তারা অনিশ্চয়তা ও আর্থিক চাপে রয়েছেন।
কোকা-কোলা আবারও বলেছে যে, 'গ্লোবাল ট্রেড ডাইনামিক্স'-এর কারণে খরচ কিছুটা বাড়লেও তা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, অর্থাৎ ম্যানেজ করা সম্ভব। উল্লেখযোগ্যভাবে, কোম্পানির ৬১ শতাংশ রাজস্বই আসে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে।
যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প আমদানিকৃত অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন, তখন কোকা-কোলা বলেছিল, তারা প্লাস্টিক বোতলের মতো সাশ্রয়ী প্যাকেজিংয়ের বিকল্প বিবেচনা করবে।
২০২৫ সালের জুন মাস পর্যন্ত, অ্যালুমিনিয়ামের ওপর এই শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে, যা প্যাকেজিং খরচ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
পণ্যের দাম বৃদ্ধি কোকা-কোলাকে বিক্রির পরিমাণ হ্রাসের প্রভাব থেকে রক্ষা করেছে। চলতি বছরের জুন ২৭ তারিখে শেষ হওয়া তিন মাসে, কোম্পানির কম্প্যারেবল রাজস্ব ২.৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২.৬২ বিলিয়ন ডলারে, যেখানে বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ছিল ১২.৫৪ বিলিয়ন ডলার (তথ্যসূত্র: এলএসইজি)।
সিইও জেমস কুইনসি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে বয়কটের কারণে চাহিদায় যেসব প্রভাব পড়েছিল, তা এখন প্রায় কাটিয়ে উঠেছে।
চলতি বছরের প্রথমার্ধে উত্তর আমেরিকায় বিক্রির পরিমাণ কমে যায়, যার প্রধান কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর হিস্পানিক ভোক্তারা কোকা-কোলার পুরোনো ব্র্যান্ডগুলো বয়কট করছিলেন। এটি ঘটে একটি ভাইরাল ভিডিওর পর, যেখানে দেখা যায় কোম্পানিটি লাতিনো কর্মীদের চাকরি থেকে ছাঁটাই করে এবং তাদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) -এ রিপোর্ট করে।
রয়টার্স গত ফেব্রুয়ারিতে জানিয়েছিল, কোকা-কোলা তাদের অভিবাসী কর্মীদের আইসিই-এ রিপোর্ট করেছে—এমন কোনো পাবলিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। অথচ এই অভিযোগের ভিত্তিতেই আগের বয়কট শুরু হয়েছিল।
দ্বিতীয় প্রান্তিকে কোম্পানির পণ্যের দাম গড়ে ৬ শতাংশ বেড়েছে, যার মূল কারণ ছিল উচ্চ মুদ্রাস্ফীতিসংবলিত বাজারগুলোতে দাম বৃদ্ধি।
যুক্তরাষ্ট্রে আখের চিনি-ভিত্তিক কোক চালুর বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে আলোচিত হলেও, ফ্রিডম ক্যাপিটাল মার্কেটসের প্রধান কৌশলবিদ জে উডস বলেন, আসল প্রবৃদ্ধি হয়েছে দাম বৃদ্ধির কারণে, বিক্রির পরিমাণ বৃদ্ধির কারণে নয়।
একটি দুর্বল মার্কিন ডলারের সহায়তায়, কোম্পানিটি আশা করছে বার্ষিক আয় প্রতি শেয়ারে ২ থেকে ৩ শতাংশ বৃদ্ধির লক্ষ্যসীমার শীর্ষ প্রান্তে পৌঁছাবে।
কোকা-কোলা জিরো সুগার ছিল একটি উজ্জ্বল দিক, যার বিক্রির পরিমাণ সব অঞ্চলেই মিলিয়ে ১৪ শতাংশ বেড়েছে।
তবে ভালো আয় প্রতিবেদন সত্ত্বেও, দুপুরের লেনদেনে কোকা-কোলার শেয়ার ০.৬ শতাংশ কমে দাঁড়ায় ৬৯.৬১ ডলারে।