ট্রাম্পের শুল্কের বিরুদ্ধে শেষ আশ্রয় ‘বাণিজ্যিক বাজুকা’ দাগার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইইউ!

ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্কারোপের হুমকির মুখে— ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) বহুল আলোচিত "অ্যান্টি-কোয়ারশন ইনস্ট্রুমেন্ট" ( বা এসিআই) প্রয়োগের কথা বিবেচনা করছে। এই উপায়কে ইউরোপের একটি অস্ত্র বা 'বাণিজ্যিক বাজুকা' বলে অভিহিত করছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তপ্ত হয়ে ওঠা বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে একে ইউরোপের বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু না করেই বিপরীত অস্ত্র হিসেবে বলা হচ্ছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ফ্রান্স ও জার্মানি সহ বেশ কয়েকটি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র, যদি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে 'অ্যান্টি-কোয়ারশন' ব্যবস্থা ব্যবহারের কথা ভাবছে।
এই পদক্ষেপগুলির মধ্যে ইইউ বাজারে মার্কিন সরবরাহকারীদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা, সরকারি টেন্ডার থেকে তাদের বাদ দেওয়া, পণ্য ও পরিষেবার উপর রপ্তানি ও আমদানি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং অত্র অঞ্চলে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের ওপর সীমা আরোপ করার মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। ট্রাম্পের সঙ্গে ইইউ-এর বাণিজ্য বিরোধ যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে, তখন ইইউ-এর এই 'বাণিজ্যিক বাজুকা' প্রয়োগের সময়ও ঘনিয়ে আসছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, যদি ১ আগস্টের মধ্যে কোনো বাণিজ্য চুক্তি না হয়, তাহলে ইইউ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এই সময়সীমা নির্দিষ্ট, তবে বাণিজ্য আলোচনা এর পরেও চলতে পারে।
এসিআই কী?
যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ-এর মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে— বর্তমানে সর্বনিম্ন পর্যায়ে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বারবার ইইউয়ের বিরুদ্ধেঅন্যায্য বাণিজ্য অনুশীলনের অভিযোগ করেছেন। কারণ, দ্বিপাক্ষিক বানিজ্যের ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের, অন্যদিকে ঘাটতির ভার রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইইউ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১.৬৮ ট্রিলিয়ন ইউরো (১.৯৭ ট্রিলিয়ন ডলার)। যদিও পণ্যে ইইউ-এর বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ছিল, তবে পরিষেবা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের ঘাটতি ছিল। কিন্তু, পণ্য ও পরিষেবা উভয় ধরনের বাণিজ্যে গত বছর ইইউ-এর পক্ষে প্রায় ৫০ বিলিয়ন ইউরো উদ্বৃত্ত ছিল।
এই প্রেক্ষাপটেই বাণিজ্যে নিজেদের ঘাটতি কমানোর জন্য চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।
ট্রাম্পের ৩০ শতাংশ শুল্কের সর্বশেষ হুমকির মুখে, ইইউ পাল্টা -শুল্ক আরোপসহ বিভিন্ন বিকল্প বিবেচনা করছে, এর মধ্যে তাদের সম্ভাব্য শক্তিশালী অ্যান্টি-কোয়ারশন ইনস্ট্রুমেন্ট (এসিআই) অন্যতম। এটি ২০২৩ সালে এই ব্যবস্থা তৈরি করক হলেও— ইইউ এর আগে কখনো তা ব্যবহার করেনি।
এসিআই তৈরি করাই হয়েছে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে যেকোনো ধরনের 'অর্থনৈতিক জবরদস্তি' প্রতিরোধের জন্য, এটি ইইউ অঞ্চলে মার্কিন বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষতিও করতে পারে।