শুল্কারোপের ডেডলাইনের আগে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তি সই অনিশ্চিত

আগামী ১ আগস্ট থেকেই কার্যকর হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত পাল্টা শুল্ক। তার আগে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশই– যুক্তরাষ্ট্রে তাদের রপ্তানির ওপর শুল্কের হার কমিয়ে আনতে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছনোর চেষ্টা করছে। কিন্তু, নির্ধারিত ওই ডেডলাইনের আগে, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি অন্তর্বর্তী বাণিজ্য চুক্তির সম্ভাবনা অনেকটাই কমে গেছে। ভারতের দুটি সরকারি সূত্রের বরাতে একথা জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানায়, ভারতের বাজারে মার্কিন কৃষি ও দুগ্ধজাত পণ্যে শুল্ক হ্রাস নিয়ে আলোচনা এখনও অচলাবস্থায় রয়েছে।
এপ্রিল মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতীয় আমদানির উপর ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন, কিন্তু আলোচনার সুযোগ দিতে এটি কার্যকর করা স্থগিত রাখেন। এই স্থগিতাদেশ ১ আগস্ট শেষ হচ্ছে, যদিও ভারত এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুল্ক আরোপের চিঠি পায়নি, যা ইতোমধ্যে বাংলাদেশসহ ২০টিরও বেশি দেশ পেয়েছে।
ভারতের প্রধান মধ্যস্থতাকারী রাজেশ আগরওয়ালের নেতৃত্বে একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল ওয়াশিংটন থেকে পঞ্চমবারের মতো আলোচনা শেষে কোনো অগ্রগতি ছাড়াই ফিরে এসেছেন।
ভারতের একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, "১ আগস্টের আগে একটি অন্তর্বর্তী চুক্তি কঠিন মনে হচ্ছে, যদিও এখনো ভার্চুয়াল আলোচনা চলছে।" তিনি আরও জানান, আলোচনার জন্য শীঘ্রই একটি মার্কিন প্রতিনিধি দলের দিল্লি আসার কথা রয়েছে।
আলোচনা থেমে আছে কারণ নয়াদিল্লি তাদের রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল কৃষি ও দুগ্ধ খাত মার্কিন পণ্যের জন্য উন্মুক্ত করতে রাজি হচ্ছে না। অন্যদিকে ওয়াশিংটন ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম এবং গাড়ির উপর উচ্চ শুল্ক থেকে ভারতকে অব্যাহতি দিতে নারাজ। দ্বিতীয় একজন ভারতীয় কর্মকর্তা জানান, কর্মকর্তারা এখন এই বিষয়গুলো একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির পর স্থগিত রাখা যায় কিনা, তা খতিয়ে দেখছেন।
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনের মহাপরিচালক অজয় সাহাই সতর্ক করে বলেছেন, যদি ২৬ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে রত্ন ও গহনার মতো খাতগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি অবশ্য বলেন, "এটি সাময়িক হতে পারে, কারণ উভয় দেশই সময়মতো চুক্তি স্বাক্ষর করতে চায়।"
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট গতকাল সোমবার সিএনবিবিকে জানিয়েছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসন বাণিজ্য চুক্তির সময়সীমার চেয়ে এর গুণগত মান নিয়ে বেশি আগ্রহী। চুক্তিতে থাকা দেশগুলোর জন্য সময়সীমা বাড়ানো হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটি ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।
ভারতীয় কর্মকর্তারা অবশ্য সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যে একটি বৃহত্তর চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী, যে ব্যাপারে ফেব্রুয়ারি মাসে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে ঐক্যমত হয়েছিল । অপর আরেক কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেন, "(উভয় দেশের মধ্যে) পাঁচ দফা আলোচনা হয়েছে এবং আরেকটি মার্কিন প্রতিনিধি দলের আসার কথা রয়েছে, তাই আমরা একটি বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী।"
আলোচনা প্রকাশ্য না হওয়ায় কর্মকর্তারা নাম প্রকাশের শর্তে এসব কথা জানান। এবিষয়ে আরোও জানতে চেয়ে, রয়টার্স ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে ইমেইলে পাঠিয়ে মন্তব্যের অনুরোধ করলেও, তারা এতে সাড়া দেয়নি।