সীমান্তে থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার প্রাণঘাতী লড়াইয়ের কারণ কী?
বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনা সীমান্তে রূপ নেয় প্রাণঘাতী সংঘর্ষে। খবর বিবিসি'র।
থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অন্তত ১২ জন থাই নাগরিক নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক।
কম্বোডিয়ায় কেউ নিহত হয়েছে কি না, সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত কোনো তথ্য মেলেনি।
উভয় পক্ষই সংঘাতের জন্য একে অপরকে দায়ী করছে। বলা হচ্ছে, এই উত্তেজনার সূচনা সীমান্তে গুলি ছোড়া থেকে।
থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া প্রথমে রকেট হামলা চালায়, যার জবাবে ব্যাংকক কম্বোডিয়ার সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায়।
উত্তেজনার পেছনে কারণ কী?
এটি নতুন কোনো বিরোধ নয়। আসলে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এই বিবাদের সূচনা এক শতাব্দীরও বেশি আগে, ফরাসি উপনিবেশ-পরবর্তী সময়ে, যখন দুই দেশের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা হয়।
২০০৮ সালে এ বিরোধ নতুন করে শুরু হয়, যখন কম্বোডিয়া বিরোধপূর্ণ এলাকার একটি ১১ শতকের মন্দিরকে ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে নিবন্ধনের উদ্যোগ নেয়। থাইল্যান্ড সে পদক্ষেপের তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
এর পর থেকে টুকরো টুকরো সংঘর্ষ চলেছে, যাতে দুই পক্ষেরই সেনা ও বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
চলতি বছরের মে মাসে একটি সংঘর্ষে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হলে পরিস্থিতি আরও জটিল আকার নেয়। এতে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছে।
গত দুই মাসে উভয় দেশ একে অপরের ওপর সীমান্ত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কম্বোডিয়া থাইল্যান্ড থেকে ফলমূলসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি বন্ধ করেছে। এমনকি বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট পরিষেবাও আমদানি বন্ধ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দুই দেশই সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে।
বৃহস্পতিবার ঠিক কী ঘটেছিল?
ঘটনাটি নিয়ে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া ভিন্নমত পোষণ করছে।
থাইল্যান্ডের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টা ৩০ মিনিটের কিছু পরকম্বোডিয়ান সেনাবাহিনী থাই সেনাদের নজরদারির জন্য সীমান্ত এলাকায় ড্রোন পাঠায়।
এর কিছুক্ষণ পর রকেটচালিত গ্রেনেডসহ কম্বোডিয়ান সেনারা সীমান্ত এলাকায় জড়ো হয়। থাই সেনারা চিৎকার করে আলোচনার চেষ্টা করলেও তা ব্যর্থ হয়। এনএসসি মুখপাত্র জানান, সকাল ৮টা ২০ মিনিটের দিকে কম্বোডিয়ান সেনারা গুলি ছোড়ে, ফলে থাই সেনারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়।
আরও পড়ুন: সীমান্তে তীব্র হয়েছে যুদ্ধ; কম্বোডিয়ায় থাইল্যান্ডের বিমান হামলা
থাইল্যান্ড আরও অভিযোগ করেছে, কম্বোডিয়া ভারী অস্ত্র—যেমন বিএম-২১ রকেট লঞ্চার ও কামান ব্যবহার করেছে। এতে থাই সীমান্তবর্তী বসতবাড়ি, একটি হাসপাতাল ও একটি পেট্রোল পাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে কম্বোডিয়ার দাবি, সংঘর্ষের সূচনা করে থাইল্যান্ড। স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৩০ মিনিটের দিকে থাই সেনারা এক পূর্বচুক্তি লঙ্ঘন করে সীমান্তঘেঁষা একটি খেমার-হিন্দু মন্দিরে প্রবেশ করে এবং মন্দির ঘিরে কাঁটাতার বসায়।
কম্বোডিয়ার জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মালি সোচেতা জানান, এরপর সকাল ৭টার কিছু পর থাই সেনারা ড্রোন পাঠায় এবং সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে 'আকাশের দিকে গুলি' ছোড়ে।
পনম পেন পোস্ট পত্রিকা সোচেতার উদ্ধৃতি দিয়ে জানায়, সকাল ৮টা ৪৬ মিনিটে থাই সেনারা 'আগেভাগে' গুলি চালায়, ফলে আত্মরক্ষার জন্য কম্বোডিয়ান সেনারা পাল্টা জবাব দিতে বাধ্য হয়।
সোচেতা আরও অভিযোগ করেন, থাইল্যান্ড অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছে, ভারী অস্ত্র ব্যবহার করেছে এবং কম্বোডিয়ার ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালিয়েছে।
এই সংঘাত কি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে গড়াতে পারে?
থাইল্যান্ডের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী ফুমথাম ভেচায়াচাই বলেন, কম্বোডিয়ার সঙ্গে বিরোধ 'সংবেদনশীল' এবং এটি আন্তর্জাতিক আইন মেনে, সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেন, তার দেশ বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়। তবে 'সশস্ত্র আগ্রাসনের জবাবে সশস্ত্র প্রতিরোধ ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই'।
অতীতেও এই অঞ্চলে বড় ধরনের গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, তবে সেগুলো দ্রুতই নিয়ন্ত্রণে এসেছে—এমনটি মনে করেন বিবিসির সংবাদদাতা জোনাথন হেড।
তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, বর্তমানে দুই দেশেই এমন নেতৃত্বের অভাব রয়েছে, যারা এই সংঘাত থেকে সরে আসার মতো দৃঢ়তা ও আত্মবিশ্বাস দেখাতে পারে।
