ইউক্রেন নিয়ে ট্রাম্পের ইউ-টার্ন; রাশিয়া বলল, 'যুদ্ধ ছাড়া আর কোনো উপায় নেই'

কয়েক মাস আগেও ইউক্রেন যুদ্ধ যুদ্ধ থামাতে উভয় পক্ষকে ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই তিনিই এখন বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোর সহায়তায় ইউক্রেন এই যুদ্ধ জিততে সক্ষম।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকের পরই ট্রাম্পের এই সুর বদল। মঙ্গলবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম 'ট্রুথ সোশ্যালে' তিনি লিখেন, 'আমার মনে হয়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সমর্থনে ইউক্রেন লড়াই করে তার সবটুকু অঞ্চল আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে এবং জিততে সক্ষম।'
অতীতে ন্যাটোর কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ট্রাম্প এবার এই জোটের প্রশংসাও করেছেন। রাশিয়াকে 'কাগুজে বাঘ' বলে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, 'পুতিন এবং রাশিয়া বড় ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়েছে, আর এটাই ইউক্রেনের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার সময়।'
ট্রাম্পের এই বক্তব্যের জবাবে ক্রেমলিন জানিয়েছে, যুদ্ধ চালানো ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প নেই। বুধবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে রাশিয়া। তিনি বলেন, এটি রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষার জন্য এবং নির্ধারিত লক্ষ্য অর্জনের জন্য জরুরি।
তিনি রাশিয়ার আরবিসি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, 'আমরা এটি করছি আমাদের দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য, বহু প্রজন্মের স্বার্থে। তাই আমাদের কোনো বিকল্প নেই।'
দিমিত্রি পেসকভ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের 'কাগুজে বাঘ' মন্তব্যের জবাবে বলেন, রাশিয়া আসলে 'ভালুক'। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, টানা তিন বছর দ্রুত প্রবৃদ্ধির পর মন্দা আর উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশটির অর্থনীতি চাপে আছে।
পেসকভ বলেন, ইউক্রেন ভূমি পুনরুদ্ধার করতে পারবে—এ ধারণা ভুল। তিনি বলেন, 'ইউক্রেন কিছু পুনর্দখল করতে পারবে—আমাদের দৃষ্টিতে এ ধারণা ভ্রান্ত।'
গত মাসে আলাস্কায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে নিয়ে ট্রাম্পের করা শীর্ষ সম্মেলন নিয়েও তিনি কটাক্ষ করেন। পেসকভের মতে, ওই প্রচেষ্টা থেকে 'প্রায় কিছুই পাওয়া যায়নি।'
একই দিনে রাশিয়ার অর্থ মন্ত্রণালয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তার খরচ মেটাতে মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে। বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস, এ বছর রাশিয়ার প্রবৃদ্ধি কমে প্রায় ১ শতাংশে নেমে আসবে, যেখানে গত বছর তা ছিল ৪.৩ শতাংশ।
ইউরোপে সতর্ক অবস্থা
আলাস্কা সম্মেলন এবং হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর ট্রাম্প জানালেন, তিনি সরাসরি শীর্ষ বৈঠকের আয়োজন করছেন।
কিন্তু পুতিন জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে আগ্রহ দেখাননি। বরং ইউক্রেনে বোমাবর্ষণ আরও বাড়িয়েছে মস্কো, যেখানে আবাসিক এলাকায় বেসামরিকদেরও নিশানা করা হচ্ছে। পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপের আকাশসীমায় ধারাবাহিক উসকানিমূলক অনুপ্রবেশ ঘটাচ্ছে রাশিয়া।
গত সপ্তাহে এস্তোনিয়া অভিযোগ করেছে, রাশিয়ার তিনটি যুদ্ধবিমান তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। এর আগে পোল্যান্ডের আকাশসীমায় ঢুকেছিল রাশিয়ার ২০টি ড্রোন। এতে ইউরোপের ন্যাটো দেশগুলোতে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার ন্যাটো রাশিয়াকে সতর্ক করে বলেছে, জোট প্রতিষ্ঠার চুক্তির অনুচ্ছেদ ৫-এর প্রতি তাদের প্রতিশ্রুতি 'অটল'। এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো এক সদস্য দেশের ওপর হামলা হলে বাকি সবাইকে যৌথভাবে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে হবে।
বুধবার স্পেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্গারিটা রোব্লেসকে বহনকারী একটি সামরিক বিমানের জিপিএস সিগন্যাল বিকল হয়ে যায়। বিমানটি রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ অঞ্চলের কাছ দিয়ে লিথুয়ানিয়ায় যাচ্ছিল।
এ বিষয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য জানানো হয়নি।
গত মাসের শেষ দিকেও একই ঘটনা ঘটেছিল। সে সময় ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেনকে বহনকারী বিমানের জিপিএস ব্যবস্থা বুলগেরিয়ার পথে বিকল হয়ে যায়।
তখন ভন ডার লেন জানিয়েছিলেন, বুলগেরিয়ার কর্তৃপক্ষের সন্দেহ ছিল রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারণেই এ সমস্যা হয়েছিল।