এস আলমের বেনামি ঋণ ও শেয়ারের প্রকৃত মালিকানা রাজসাক্ষীর মাধ্যমে প্রমাণ করা হবে: গভর্নর

এস আলম গ্রুপ প্রক্সির মাধ্যমে বা বেনামে যেসব ঋণ ও শেয়ার গ্রহণ করেছে— সেগুলোর প্রকৃত মালিকানা প্রমাণ করতে আদালতে রাজসাক্ষীদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করা হবে। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। এই সাক্ষাৎকারে তিনি পাচার হওয়া এবং লুকানো অর্থ উদ্ধারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চলমান উদ্যোগগুলোর বিষয়েও আলোকপাত করেছেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন টিবিএসের বিশেষ প্রতিবেদক জেবুন নেসা আলো এবং স্টাফ করেসপন্ডেন্ট সাখাওয়াত প্রিন্স। তিন পর্বের এই সাক্ষাৎকারের এটি দ্বিতীয় পর্ব।
প্রশ্ন: এস আলমের প্রক্সি বা বেনামে নেওয়া শেয়ার ও ঋণের প্রকৃত মালিকানা আদালতে কীভাবে প্রমাণ করবেন?
আহসান এইচ মনসুর: কাগজে হয়তো অনেকের নাম নেই। কিন্তু, ব্যাংকগুলোয় ফরেনসিক ইনভেস্টিগেশন ইতিমধ্যেই করা হয়েছে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, এসব অর্থ বিভিন্নভাবে ঘুরেফিরে আলটিমেট বেনিফিশিয়ারি সেই এক পরিবারের কাছে যাচ্ছে।
কিছুক্ষেত্রে আমরা "রাজসাক্ষী" ধরনের সাক্ষ্যও পাবো – এমন ব্যক্তিদের যারা এসব লেনদেনে জড়িত ছিলেন এবং সাক্ষ্য দেবেন যে তারা এই প্রক্রিয়ায় সহায়তা করেছেন বা অংশীদার ছিলেন।
সাধারণত সাজা ও জরিমানা কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এধরনের সাক্ষীদের পাওয়া যায়– আমাদের বিশ্বাস এভাবে এটি প্রমাণ করা সম্ভব হবে।
প্রশ্ন: বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে অনেকেই হতাশ। আপনি মনে করেন কত শতাংশ টাকা পুনরুদ্ধার করা সম্ভব?
গভর্নর: আমি এখনই কোনো পরিমাণ বলতে চাই না। কারণ এখনো অনেকটাই "বার্ড ইন দ্য বুশ"—মানে, খাঁচার বাইরে পাখি। যেটা খাঁচায় আছে, সেটা নিয়ে কিছু করা সম্ভব।
আমাদের প্রথম লক্ষ্য—অ্যাসেট ফ্রিজ করে আটকে ফেলা, এরপর আইনগত প্রক্রিয়ায় টাকা ফেরত আনা। এই পুরো প্রক্রিয়ায় ৪–৫ বছর সময় লাগবে—এটাই আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ড।
আমরা দু'ধরনের পথ বিবেচনায় রেখেছি। প্রথমত লিগ্যাল প্রসেস – যেটা অনেক দীর্ঘ। অন্যটা হচ্ছে নেগোশিয়েশন প্রসেস – যেখানে আমরা আলোচনার মাধ্যমে কিছু অর্থ ফেরত আনার চেষ্টা করছি।
(অর্থ পাচারকারীদের) অনেকে দেশেই আছেন, কিন্তু তাদের কিছু অর্থ বিদেশে আছে। আমরা চাচ্ছি, দুষ্টচক্র ভেঙে, গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে টাকাটা ফেরত আনতে।
প্রশ্ন: বর্তমানে অর্থ পাচার সংক্রান্ত যেসব মামলা আছে, বিশেষ করে দুদকের মামলা হলে সেটি কিভাবে দেখা হবে?
গভর্নর: যদি দুদক মামলা করে, তখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ কোনো স্কোপ (সুযোগ) থাকে না। সিভিল কেস হবে না, তখন সেটা হয়ে যাবে ক্রিমিনাল কেস। তাই আমাদের শুরুতেই ডিসিশন নিতে হবে—কোন কেস কিভাবে হ্যান্ডেল করা হবে। এটাকে আমরা বলি "ডিকনফ্লিক্টিং।"
এজন্য আমরা একটি প্যানেল নিয়োগ করতে যাচ্ছি। এই প্যানেলের দায়িত্ব হবে মামলাগুলো পর্যালোচনা করে বলা—কোনটি সিভিল, কোনটি ক্রিমিনাল। তারপর আমরা সেই অনুযায়ী আগাম ব্যবস্থা নেব। এই প্রক্রিয়াটি এখন চলমান।
প্রশ্ন: অনেক ব্যবসায়ীর অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হচ্ছে, গ্রেফতারের ভয় আছে। এতে কি ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হবে?
গভর্নর: আমি স্পষ্ট করে বলছি—বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আমরা কোনো ব্যবসাকে ইন্টিমিডিয়েট (ভয়ভীতি প্রদর্শণ) করিনি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যেন চালু থাকে। আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে চাই না।
অন্য এজেন্সি এধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকলে, তাদের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না। আমাদের লক্ষ্য অর্থনীতি সচল রাখা। ব্যবসায়ীরা সচল থাকলে অর্থনীতি সচল থাকবে।
প্রশ্ন: দুদক বা অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?
গভর্নর: আমি পিওর অ্যান্ড সিম্পল বলব—যদি দুদক কিছু করতে চায়, তারা করতে পারে। আমি সেখানে ইন্টারফেয়ার করব না। তাদের নিজস্ব তথ্য থাকতে পারে, যেটা আমি জানি না। আমাদের দায়িত্ব হলো—ডিজার্ভিং ব্যবসাগুলোকে সাপোর্ট দেওয়া। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্ব হলো আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। আমরা এই দুই বিষয় মিশিয়ে ফেলতে চাই না।
প্রশ্ন: তাহলে নেগোসিয়েশন কি কোনো পর্যায়ে সম্ভব?
গভর্নর: বিষয়টি সত্যিই কমপ্লেক্স (জটিল)। এখানে গভার্নমেন্ট, দুদক, এবং অন্যান্য এজেন্সির কো-অর্ডিনেশন দরকার। বাস্তবে সেটি কতটা সম্ভব, তা নিয়ে আমরা এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাইনি। তাই আমি প্রপোজ করেছি—একটি নিরপেক্ষ লিগ্যাল বডি গঠন করা হোক, যা এই সেপারেশন করবে—কোন কেস সিভিল, কোনটি ক্রিমিনাল।
প্রশ্ন: এক বছর আগে ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছিল, রিজার্ভ কমে যাচ্ছিল, অথচ এখন মার্কেট থেকে বাড়তি ডলার কিনতে হচ্ছে। এই নাটকীয় পরিবর্তন কীভাবে সম্ভব?
গভর্নর: আমি প্রথম দিন থেকেই এক কথা বলে আসছি—আমাদের লক্ষ্য এক্সচেঞ্জ রেটের স্ট্যাবিলিটি, কিন্তু সেটা ফিক্সড নয়, বরং বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আমি শুরু থেকে বলতাম, মূল্যস্ফীতি যদি কমাতে হয়, বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখতেই হবে। এটা ছিল আমার কাছে প্রথম অর্ডার অফ বিজনেস।
আমি আসার পর রিজার্ভ থেকে এক ডলার বিক্রি করিনি। এখন পর্যন্ত বিদেশি যেসব ওভারডিউ পেমেন্ট করেছে তার পুরোটা মার্কেট থেকে বিভিন্ন ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করে দিয়েছি।
আমরা কয়েক মাস আগে ফ্লেক্সিবল এক্সচেঞ্জ রেটে গিয়েছি। অনেকে তখন বলেছিল মুদ্রার বিনিময় হার ১৫০ -১৭০ টাকা হয়ে যাবে—পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কায় যেটা হয়েছিল।
প্রশ্ন: সেই সময় আন্তর্জাতিক চাপ কতটা ছিল?
গভর্নর: আমাদের ওপর চাপ ছিল, আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে বলা হচ্ছিল বাজারভিত্তিক রেট করলেই— তারা আমাদের ঋণের টাকা ছেড়ে দেবে। কিন্তু আমি বলেছিলাম, আগে আমরা বাজারকে পর্যবেক্ষণ করি, বুঝি। স্থিতিশীলতা আনি। তারপরই আমরা ফ্লোটে(ভাসমান বিনিময় হারে) যাব।
পত্রিকাতেও লেখা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংক কী করছে কেউ জানে না। কিন্তু আমি বলেছিলাম, আমি না বুঝে আগুনে ঝাঁপ দেব না। আমার নীতি ছিল—আগে বাজারকে বুঝি, তারপর সিদ্ধান্ত নেই।
আমরা পাঁচ-ছয় মাস পরে দেখলাম বাজার মোটামুটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থিতিশীল হচ্ছে। সাপ্লাই-ডিমান্ডে বড় কোনো মিসম্যাচ নেই। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম বাজারভিত্তিক ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেটে যাওয়া যায়। সৌভাগ্যক্রমে, এটি খুব ভালোভাবে কাজ করেছে।
বাজারে এখন এক ধরনের এক্সেস লিকুইডিটি দেখা দিয়েছে। ডলার অতিরিক্ত হয়ে গেছে, ফলে আমরা ১২১ টাকার রেটে ডলার কিনতে শুরু করেছি। এতে রিজার্ভও বাড়ছে, আর বাজারও সঠিকভাবে চলছে। ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে আরও কিনব।
প্রশ্ন: রিজার্ভ বাড়ছে, অনেকেই বলেছে এটি হয়েছে ব্যবসা ও আমদানি কমে যাওয়ার কারণে, এ বিষয়ে কী বলবেন?
গভর্নর: আমদানি করা ব্যবসায়ীদের দায়িত্ব। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ নয় জোর করে আমদানি করানো। বর্তমানে কোনো আমদানির বিধিনিষেধ নেই— মার্জিন নেই, শর্ত নেই। কেউ চাইলে বিনিয়োগ করুক—সেটা তো বিনিয়োগকারীর সিদ্ধান্ত। সরকারের কাজ হবে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।
অনেকে বলছেন, আমদানি কমে গেছে। কিন্তু বাজারে কি কোনো পণ্যের ঘাটতি আছে? কেউ কি বলতে পারবে—কোনো জিনিস পাওয়া যাচ্ছে না? বাজারে সবই আছে। তাহলে আমি কেন জোর করে আমদানি করাব? বাজারকে তার নিজের গতিতে চলতে দিন।
প্রশ্ন: বিশেষত যখন অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে, আমদানি বাড়বে, তখন কি আমাদের ক্যাপাসিটি আছে তা সামলানোর?
গভর্নর: ফ্লোটিং এক্সচেঞ্জ রেটের উদ্দেশ্যই হলো বাজারকে ভারসাম্যে রাখা। যদি ডলারের চাহিদা বেড়ে যায়, সরবরাহ কম থাকে— তখন বাজারের নিয়মেই রেট সামান্য অবনমন করবে। সেটাই স্বাভাবিক। আমি ধরেই রেখেছি, বাজারে এই ওঠানামা হবে।
আমি বলি, ধরে রাখার নীতি (রিজিড ফিক্সিং) ঠিক নয়। সেটা দুধের ওপর শক্ত ঢাকনার মতো—চাপ তৈরি হলে ফেটে যাবে।
ভারতের উদাহরণ দেখুন, তারা (বিনিময় হারে) ৪৫ রুপি থেকে ধীরে ধীরে ৮৬ রুপিতে গেছে। সমস্যা হয়নি। বাংলাদেশেও ডলার বাজার-নির্ভর থাকবে।
প্রশ্ন: আপনি কি মনে করছেন সামনে মূল্যস্ফীতি আরও কমবে?
গভর্নর: আমাদের লক্ষ্য আগামী মার্চের মধ্যে ইনফ্লেশন ৫ শতাংশের এর নিচে আনা। মূল্যস্ফীতি কেন নামবে না? যদি পলিসি সঠিক থাকে, ইনফ্লেশন কমবেই। হ্যাঁ, কিছু সাপ্লাই সাইড ইস্যু আছে—রাজনৈতিক অস্থিরতা হলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। কিন্তু ধরে নিচ্ছি, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব হলো ডলার সরবরাহ নিশ্চিত করা, যাতে সার, তেল, গ্যাস, ফার্মাসিউটিক্যালস—এসব গুরুত্বপূর্ণ পণ্য যেন দেশে আসে। আমরা কৃষকের জন্য ফার্টিলাইজার পৌঁছে দেব, কিন্তু চাষাবাদ করব না। কারখানা চালানোর জন্য জ্বালানি নিশ্চিত করব, কিন্তু ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট আমাদের কাজ নয়।
আমি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেই, তখন প্রতিদিন ফোন আসত, বিদেশি পেমেন্টর ১০০-২০০ মিলিয়ন ডলার দিতে হবে নইলে জাহাজ ছাড়বে না। অনেকে বলেছে বোরো মৌসুমে সার না এলে দুর্ভিক্ষ হবে। তখন আমাদের রিজার্ভও কম, কিন্তু আমরা ডলার ম্যানেজ করেছি। এখন সেই চাপ নেই, কেউ ফোনও করছে না। বাজার স্বাভাবিকভাবে চলছে।
বাজারে ডলার সরবরাহ ঠিক রাখা এবং অর্থনীতিকে সচল রাখা—এটাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্ব।
প্রশ্ন: বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান নিয়ে আপনার অবস্থান কী?
গভর্নর: কোনো অর্থনীতির জন্য বৈদেশিক মুদ্রার সংস্থান মাস্ট। এটা না থাকলে অর্থনৈতিক সংকট আসবেই। আমরা সেটি ওভারকাম করেছি। যদি সঠিকভাবে সামষ্টিক অর্থনীতির ম্যানেজমেন্ট করতে পারি, রাজনীতি স্থিতিশীল থাকে, এবং নির্বিঘ্নে নির্বাচন হয়ে সরকারের ট্রানজিট হয়, তাহলে আমরা এই অগ্রগতি ধরে রাখতে পারব।
আমার লক্ষ্য, বর্তমানে আমাদের গ্রোস রিজার্ভ ৩০ বিলিয়নে আছে। এটা ৪০ বিলিয়ন হবে, ইনশাআল্লাহ আমরা পারবো। আমরা চাই রিজার্ভ ছয় মাসের আমদানি ব্যয়ের সমতুল্য হোক। এখন আমরা পাঁচ মাসের সামান্য নিচে আছি। ছয় মাসের সমতুল্য পেতে আমাদের বিপিএম-৬ অনুযায়ী ৩০ বিলিয়ন দরকার।
এর জন্য স্পষ্ট সময় বলব না। তবে আমরা সঠিকভাবে এগোতে পারলে, আশা করি শিগগিরই হবে।
প্রশ্ন: সামনে নতুন মুদ্রানীতি আসছে। বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ কম, ইন্টারেস্ট রেট পলিসি নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
গভর্নর: আমার অবস্থান খুব স্পষ্ট। পলিসি রেট (নীতি সুদহার) এবং ইনফ্লেশনের মধ্যে অন্তত ৩ শতাংশ পার্থক্য রাখতে হবে। অর্থাৎ পলিসি রেট মূল্যস্ফীতির চেয়ে ৩ শতাংশ বেশি থাকবে। যদি আমরা ইনফ্লেশন ৩ শতাংশ বা ৪শতাংশে নামাতে পারি, তখন পলিসি রেটও ৬-৭শতাংশে নামবে। ফলে ইন্টারেস্ট রেট ৮-৯ শতাংশ হবে। সেটাই আমাদের টার্গেট। তবে এজন্য কিছু প্রি-কন্ডিশন পূরণ করতে হবে।
প্রশ্ন: অর্থনীতির শ্বেতপত্র নিয়ে অনেক বিতর্ক। তাদের ও আপনাদের হিসেবে গড়মিল কেন?
গভর্নর: এই দুইটি সংখ্যা পরস্পরবিরোধী নয়। আমি যে ১৭-২০ বিলিয়ন বলছি, সেটা ব্যাংকিং খাত থেকে পাচারের হিসাব। এটা ব্যাংকিং খাতের নন-পারফর্মিং লোনের প্রায় ৫০ শতাংশ।
আর হোয়াইট পেপারের ২৩৪ বিলিয়ন একটি আলাদা বিষয়। ওখানে দুর্নীতি ও অন্যান্য উপায়ে উপার্জিত অর্থের হিসাবও ধরা হয়েছে—যা হয়তো ব্যাংকিং খাতের নয়। যেমন ভূমি মন্ত্রী বা রাজনৈতিক ব্যক্তিরা বিদেশে যে বিপুল সম্পদ গড়েছেন, সেটা ব্যাংকের টাকা নয়, দুর্নীতির অর্থ।
প্রশ্ন: আমাদের দেশে একেক বাহিনীর একেক ব্যাংক, এর প্রয়োজন আছে?
গভর্নর: সত্যি বলতে এগুলো রাজনৈতিক সৃষ্টির ফল। বাহিনী ব্যাংক, অফিসার্স ব্যাংক—এভাবে তো এখন শোনা যাচ্ছে কাস্টমসেরও ব্যাংক হবে। এরপর হয়তো বলা হবে, প্রতিটি জেলার ব্যাংক দরকার!
আসলে এগুলো যদি সাধারণ ব্যাংকের মতোই কাজ করে, তাহলে আলাদা করে থাকার মানে কী? আমাদের দরকার শক্তিশালী ব্যাংক, যা আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন হবে। অথচ এখানে একটিও ব্যাংক নেই যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পেতে পারে।
প্রশ্ন: প্রায় বিশটির মতো এনবিএফআই প্রতিষ্ঠান রেড লিস্টে, আমানতকারীরা টাকা ফেরত পাচ্ছে না। এগুলো নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
গভর্নর: দেশে এনবিএফআই (নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান) আছে ৩৫-৩৬টা, এর মধ্যে সফল কয়টা? চার-পাচটি প্রতিষ্ঠান ভালো রয়েছে। আমরা এখন প্রক্রিয়ায় যাচ্ছি।
১৫-২০টি এনবিএফআই লিকুইডেট (অবসায়ন) করা হবে। ডিপোজিটরদের আংশিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়েও ভাবছি। যদিও সরকারের কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতা নেই। এগুলো অবসায়ন করা হলে ১০-১২ হাজার কোটি টাকা লাগবে।
আমরা নতুন করে ভাবছি, যাতে নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বিমা কাভারেজের মধ্যে আসে। এর ফলে ভবিষ্যতে আমানতকারীরা অন্তত আংশিক নিরাপত্তা পাবে।