কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের অনুরোধ মার্কিন দূতাবাসের, পুলিশের আপত্তি

কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে একটি বিশেষায়িত পুলিশ ফোর্স মোতায়েনের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের স্পিয়ার (এসপিইএআর) কর্মসূচির আওতায় এ বিশেষ কুইক রেসপন্স ফোর্স গঠনের দাবি জানানো হয়েছে। এ কর্মসূচির লক্ষ্য, বিশ্বব্যাপী মার্কিন কূটনৈতিক মিশন ও কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা জোরদার করা। এর অধীনে নতুন বাহিনীকে জরুরি অবস্থা ও হুমকির মুখে দ্রুত সাড়া দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।
পুলিশ সদর দপ্তরের কর্মকর্তারা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন, মার্কিন দূতাবাস একজন ডিআইজির নেতৃত্বে ৩০ সদস্যের একটি ফোর্স চেয়েছে, যারা কেবলমাত্র তাদের কূটনীতিকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দূতাবাসের দাবির প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মতামত জানতে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি চিঠিও পাঠানো হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম জানিয়েছেন, তারা এ দাবির পক্ষে নন। তিনি বলেন, 'আমরা ইতোমধ্যেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছি যে মার্কিন দূতাবাসের এ দাবির পক্ষে আমরা নই।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ইতোমধ্যে ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি ডিভিশন রয়েছে—যা ঢাকায় সব দূতাবাস ও তাদের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এমন একটি বিশেষ ইউনিট থাকা সত্ত্বেও শুধু একটি দূতাবাসের জন্য আলাদা ফোর্স গঠন করা সমীচীন হবে না।'
তবে আইজিপি জানিয়েছেন, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে টিবিএস একাধিকবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গণির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি। ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসেও একাধিকবার ইমেইল পাঠানো হলেও কোনো জবাব মেলেনি।
বিশেষ সুবিধা নিয়ে উদ্বেগ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এ অনুরোধে কূটনীতিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাদের মতে, এক দূতাবাসের জন্য আলাদা ফোর্স দিলে অন্য বিদেশি মিশনগুলোতে অসন্তোষ তৈরি হতে পারে।
সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেছেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা উদ্বেগ বিবেচনায় নিতে হবে। তবে একটি মাত্র দূতাবাসকে বিশেষ সুবিধা দিলে অন্যদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
তিনি বিকল্প প্রস্তাব হিসেবে বলেছেন, আলাদা ফোর্স গঠনের বদলে কূটনৈতিক নিরাপত্তা বিভাগে থাকা সব পুলিশ সদস্যের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত ও সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূতরা আগে অতিরিক্ত পুলিশি নিরাপত্তা পেতেন। তবে ২০২৩ সালের মে মাসে এ বাড়তি নিরাপত্তা প্রত্যাহার করা হয়।
সে সময় তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছিলেন, আরও অনেক দেশ বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছিল, যা দেওয়া সম্ভব ছিল না। তাই সরকার সবার জন্য সমান নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নেয়।
স্পিয়ার কর্মসূচি কী?
স্পেশাল প্রোগ্রাম ফর এম্বাসি অ্যান্টি-টেররিজম রেসপন্স (স্পিয়ার) কর্মসূচি পরিচালনা ও অর্থায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের ডিপ্লোম্যাটিক সিকিউরিটি সার্ভিসের অ্যান্টিটেররিজম অ্যাসিস্ট্যান্স (এটিএ) অফিস। ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কর্মসূচির আওতায় এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর চার শতাধিক পুলিশ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
এ কর্মসূচির আওতায় হোস্ট দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে গঠিত হয় কুইক রেসপন্স ফোর্স, যারা মার্কিন দূতাবাস ও কনস্যুলেটকে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা দেয়। প্রশিক্ষণ, সরঞ্জাম ও পরামর্শ প্রদান করে এসব দলকে জরুরি পরিস্থিতিতে কয়েক মিনিটের মধ্যে সাড়া দেওয়ার মতো দক্ষ করে তোলে এটিএ।
মার্কিন দূতাবাসের তথ্য অনুযায়ী, স্পিয়ার টিম বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করেছে, অপরাধ ঠেকিয়েছে এবং জরুরি চিকিৎসা সহায়তা দিয়ে বহু প্রাণ রক্ষা করেছে।
মালি, বেনিন, বুরকিনা ফাসো, মৌরিতানিয়া, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, নাইজার, কেনিয়া, তিউনিসিয়া, ইরাক, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্রী, চাদ ও নাইজেরিয়াসহ বহু দেশে ইতোমধ্যে স্পিয়ার কুইক রেসপন্স টিম সক্রিয় রয়েছে।