বকেয়া বেতন: মেশিন বিক্রি করে ৩ কোটি টাকা দিতে চায় টিএনজেড, শ্রমিকদের প্রত্যাখান

ঈদের ছুটির আগে ৩ কোটি টাকা বকেয়া পরিশোধ করতে সম্মত হয়েছে টিএনজেড গ্রুপ। তবে শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে তাদের সকল বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়েছেন।
শনিবার (২৯ মার্চ) বিকেলে রাজধানীর শ্রম ভবনে এক বৈঠকের পর শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, টিএনজেড গ্রুপ তাদের কিছু মেশিন বিক্রি করে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধের জন্য ২ কোটি টাকার ব্যবস্থা করতে সম্মত হয়েছে।
বৈঠকে আরও জানানো হয়, কোম্পানির তিন শীর্ষ কর্মকর্তা—গ্রুপ ডিরেক্টর শরিফুল ইসলাম শামিন, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর আলী হোসেন এবং গ্রুপ সিএইচও এনামুল হক—আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হেফাজতে থাকবেন।
শ্রম সচিব বলেন, 'যদি শ্রমিকরা ঈদ উদযাপন করতে না পারে, তাহলে কারখানার কর্মকর্তাদেরও তা করতে দেওয়া হবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'টিএনজেডের মালিক দীর্ঘদিন ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন এবং তিনি দেশে না ফেরা পর্যন্ত তিন কর্মকর্তাকে হেফাজতে রাখা হবে।'
টিএনজেড গ্রুপের শীর্ষ নির্বাহীরা বৈঠকে জানান, তারা কিছু মেশিন বিক্রি করে ২ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে পারবেন। এ বিষয়ে শ্রম সচিব বলেন, ঈদের ছুটির পর ৮ এপ্রিল টিএনজেড গ্রুপের সমস্যা নিয়ে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, 'মে দিবসের আগে আমরা টিএনজেড সমস্যার সমাধান নিশ্চিত করতে চাই।'
বৈঠকের পর টিএনজেড অ্যাপারেলস কাটিং অপারেটর শহীদুল ইসলাম জানান, শ্রমিকরা এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের সমস্ত বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, ঈদের দিনও তারা শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ চালিয়ে যাবে।
শ্রমিক নেতা জলি তালুকদার বলেন, 'আমরা ঈদের আগে কমপক্ষে এক মাসের বেতন এবং ঈদ বোনাস দাবি করছি।'
টিএনজেড গ্রুপের তিনটি ইউনিটের কাছে ৩ হাজারের বেশি শ্রমিকের মোট ১৭ দশমিক ১৩ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর প্রাক্তন সভাপতি ইকবালুর রহমান বলেন, 'আমরা তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি এবং আমাদের প্রতিবাদ অব্যাহত রাখব।'
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের নভেম্বরে সরকার শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল।
শ্রম সচিবের সাথে বৈঠকে টিএনজেড গ্রুপ, স্টাইল ক্রাফট গ্রুপ, মাহমুদ গ্রুপ, রোয়ার ফ্যাশন, বেসিক এবং এশিয়ান অ্যাপারেলস সহ ১২টি কারখানার প্রতিনিধিরা তাদের শ্রমিকদের বেতন এবং ঈদ বোনাস প্রদানে সমস্যার কথা জানায়।
শ্রম সচিব বলেন, তারা বেশিরভাগ কারখানার সমস্যা সমাধান করেছেন।
তিনি আরও বলেন, 'মন্ত্রণালয়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, শিল্প পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং বিজিএমইএ-এর অব্যাহত প্রচেষ্টার পর আমরা তাদের বেশিরভাগের জন্য কিছু তহবিল খুঁজে পেতে সক্ষম হয়েছি।'
তবে, টিএনজেড গ্রুপের মালিক বিদেশে অবস্থান করছেন এবং তাদের শীর্ষ কর্মকর্তারা শ্রমিকদের বেতন দিতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন তাদের যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে হচ্ছে।
সচিব আরও উল্লেখ করেন যে, এই বছর সরকার রপ্তানিকারিদের নগদ প্রণোদনা হিসেবে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা দিয়েছে, যা গত বছর মাত্র ৭০০ কোটি টাকা ছিল।
এদিকে, শিল্প পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে চারটি প্রধান বাণিজ্য সংস্থার অধীনে প্রায় সকল কারখানা মজুরি ও ভাতা পরিশোধ করেছে।
শিল্প পুলিশ আরও জানায় যে টিএনজেড, মাহমুদ বা স্টাইল ক্রাফট সহ কিছু কারখানায় সমস্যা দেখা দিয়েছে এবং মন্ত্রণালয় এবং বাণিজ্য সংস্থাগুলি সেগুলি সমাধানের চেষ্টা করছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) কর্তৃক প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আজ (২৯ মার্চ) সকাল পর্যন্ত মোট ১১টি তৈরি পোশাক কারখানা এখনও ঈদ বোনাস প্রদান করেনি।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে ২ হাজার ১০৭টি চালু কারখানার (ঢাকা অঞ্চলে ১ হাজার ৭৬৯টি এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৩৩৮টি) মধ্যে ২ হাজার ৯৯টি কারখানা ফেব্রুয়ারি মাসের মজুরি পরিশোধ করেছে, ২ হাজার ৭৯টি মার্চ মাসের আংশিক বা সম্পূর্ণ মজুরি পরিশোধ করেছে এবং ২ হাজার ৯৮টি কারখানা ঈদ বোনাস বিতরণ করেছে।