‘মার্চ টু যমুনা’: বকেয়া বেতনের দাবিতে কাকরাইলে পোশাক শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ

গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের আটটি প্রতিষ্ঠানের অন্তত ৫০০ শ্রমিক রাজধানীর কাকরাইল মসজিদ মোড় অবরোধ করে বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনার দাবিতে অবস্থান নিয়েছেন।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা এখনও অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন। এ বিষয়ে রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ট্রাফিক) শফিকুল ইসলাম রাত ৯টা ১০ মিনিটে টিবিএসকে বলেন, টিএনজেড শ্রমিকদের আন্দোলনের কারনে কাকরাইল থেকে মৎসভবন যাওয়ার পথ এখনো বন্ধ রয়েছে।'
আজ (২০ মে) বিকেল ৩টার দিকে 'মার্চ টু যমুনা' কর্মসূচির অংশ হিসেবে শ্রম ভবন এলাকা থেকে প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন 'যমুনা'র দিকে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ মিছিলটি আটকে দেয়।
রমনা বিভাগের সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, ওই এলাকায় জনসমাবেশ নিষিদ্ধ থাকায় তাদের মিছিল থামানো হয়েছে। তিনি বলেন, 'আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছি, তাদের বোঝানোর চেষ্টা করছি।'
এ বিষয়ে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন (বিজিএমইএ)-এর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'সংকট সমাধানের জন্য টিএনজেড গ্রুপ, বিজিএমইএ এবং শ্রম মন্ত্রণালয়ের শ্রমিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক চলছে।'
তিনি বলেন, 'মালিকরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর আমরা অত্যন্ত জটিল পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করছি। শ্রমিকদের প্রায় ৫৪ কোটি টাকা পাওয়া রয়েছে এবং শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের জন্য মালিকদের বাড়ি এবং ওয়াশিং প্ল্যান্ট বিক্রি করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।'
গত ১১ মে থেকে শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বেতন, ঈদ বোনাস, সার্ভিস বেনিফিটসহ সব বকেয়া পরিশোধের দাবিতে আন্দোলন করছেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা।
শ্রমিক নাসিমা আকতার বলেন, তিনি গত চার বছর টিএনজেড গ্রুপের একটি কারখানায় অপারেটর হিসেবে কাজ করেছেন। তিন মাসের বেতন এখনো বাকি।
শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, 'আমরা টানা ৯ দিন শ্রম ভবনের সামনে অবস্থান করছি। উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে কথা বলেছি। আশ্বাস পেলেও বেতন পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে যমুনার দিকে রওনা দিয়েছি। পাওনা না পাওয়া পর্যন্ত আমরা রাস্তায়ই থাকব।'

শ্রমিকদের দাবি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির কাছে এখনও প্রায় ৫৪ কোটি টাকা পান তারা। ঈদুল ফিতরের আগে ৩ কোটি টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে মাত্র ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, তখন প্রত্যেক শ্রমিককে গড়ে ৯ হাজার ১০০ টাকা করে দেওয়া হয়। বাকি টাকা এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও এখনো তারা তা পাননি।
ঈদের আগেই শুরু হয়েছিল আন্দোলন
ঈদুল ফিতরের আগে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা তাদের পূর্ণ পাওনা এবং ঈদ বোনাসের দাবিতে আন্দোলনে নামে। মার্চের শেষদিকে তারা প্রতিষ্ঠানের ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ১৭ কোটি টাকার সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধের দাবি জানায়।
সেসময়ও শ্রম ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন একদল শ্রমিক। টিএনজেড গ্রুপের তিনটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ৩ হাজার এর বেশি শ্রমিকের পাওনা রয়েছে ১৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা।
এর আগে গত নভেম্বর মাসে সরকার শ্রমিকদের পূর্ববর্তী বকেয়া পরিশোধে ১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।
শ্রমসচিব শফিকুজ্জামান জানান, টিএনজেড গ্রুপ, স্টাইল ক্রাফট গ্রুপ, মাহমুদ গ্রুপ, রোর ফ্যাশন, বেসিক, এবং সাইন অ্যাপারেলসসহ প্রায় ১২টি তৈরি পোশাক কারখানা শ্রমিকদের বেতন ও ঈদ বোনাস দিতে সমস্যায় পড়েছে।
তিনি বলেন, সরকারের প্রচেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিজিএমইএ'র সহযোগিতায় বেশিরভাগ সমস্যাগ্রস্ত কারখানাই বেতন-বোনাস পরিশোধ করেছে।
'টানা প্রচেষ্টার ফলে বেশিরভাগ কারখানার জন্য অর্থ সংগ্রহ করা গেছে,' বলেন তিনি।
তবে টিএনজেড গ্রুপ এখনো ব্যতিক্রম রয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক বিদেশে অবস্থান করছেন এবং শীর্ষ ব্যবস্থাপনা অর্থ সংগ্রহে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানটি ৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে এখন যন্ত্রপাতি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।
খাতটির চাপ কমাতে সরকার চলতি বছর রফতানিকারকদের নগদ সহায়তার দাবি থেকে ২ হাজার ২৫০ কোটি টাকা ছাড় করেছে, যা গত বছরের ৭০০ কোটি টাকার তুলনায় অনেক বেশি।
এদিকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ জানিয়েছে, দেশের চারটি প্রধান ব্যবসায়ী সংগঠনের আওতাধীন প্রায় সব কারখানা শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করেছে।
তবে টিএনজেড গ্রুপ, মাহমুদ গ্রুপ ও স্টাইল ক্রাফট গ্রুপের মতো কয়েকটি কারখানা এখনো সমস্যায় রয়েছে, যার সমাধানে মন্ত্রণালয় এবং ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো কাজ করে যাচ্ছে।