রং চলিষ্ণু, রঙ্গিলা প্রেমিক...

সহসা আসিয়া ত্বরা রাঙায়ে দিয়েছে ধরা
আচ্ছা, পূবের বৈধব্যের রঙ কেন শাদা আর পশ্চিমে বিবাহ-পরিচ্ছদের রঙ শাদা? একদা পাগলা-গারদে বা লুনাটিক অ্যাসাইলামে (এই দুটি নামই রদ করা হয়েছে এখন, ভাগ্যিস) দেয়ালে নাকি হলুদ রঙ ব্যবহৃত হতো না? কেন একটি শূন্য ঘরে সমান দূরত্বে থাকা নীল চেয়ার আর লাল চেয়ারের ভেতর লালটিকে সন্নিকটে মনে হয়, নীলকে মনে হয় দূরের? কেন পশ্চিমে উৎসবের রঙ কমপ্লিমেন্টারি কালারস- এই যেমন ক্রিসমাসের রঙ লাল-সবুজ, হ্যালোইনের রঙ নীল-কমলা? কেন শয়তানের রঙ হিসেবে নরকের লেলিহান আগুনের শিখার রঙকে ধরা হতো (লাল, কালো, কমলা)?
ঠিক ধরেছেন। আজ কথা বলবো রঙের ব্যষ্টি আর সমষ্টি নিয়ে, রঙের ইতিবৃত্ত নিয়ে। পরিসর যদিও স্বল্প।
বর্ণচক্র বা কালার-হুইল
আধুনিক বর্ণবিজ্ঞানের জনক আইজ্যাক নিউটন দ্য লন্ডন রয়্যাল সায়েন্সেস সোসাইটির সমীপে ১৬৭১ এ পাঁচখানা মূল রঙ পেশ করেন, লাল, হলুদ, সবুজ, নীল আর বেগুনী। পরে এতে আরো দুটি রঙ যোগ হয়- কমলা আর ইন্ডিগো। অর্থাৎ বে-নি-আ-স-হ-ক-লা সম্পূর্ণ হয়। স্থাপত্যের পড়ালেখাতে দেখতাম, কালার হুইল খুব প্রস্তুতি নিয়ে পড়ানো হয়, তারপর চর্চার বেলায় ঠেলে দেয়া হয় নিরাপদ মনোক্রোমের অন্ধকার বিদিশার নিশা-তে।
তিনটে রঙ- লাল নীল আর হলুদ প্রাথমিক বা প্রাইমারি রঙ। এদের মিশ্রণে সেকেন্ডারি বা মিশ্র রঙ তিনটি- বেগুনী, সবুজ আর কমলা। এরপর প্রাইমারি আর সেকেন্ডারি আরো মেশালে- বেগুনী দুই ধরণের- লালচে আর নীলচে, সবুজ দুই রকম- হলদেটে সবুজ আর নীলচে সবুজ, কমলাও দুই পদের- লালচে কমলা আর হলুদাভ কমলা। এই হলো কালার হুইলের মোদ্দা কথা। কালার হুইল নিয়ে সবচেয়ে চমৎকার আলোচনা শুনেছিলাম সম্ভবত আনা সান্তোসের মুখে। রঙের হিউ আর টিন্ট নিয়ে এত বিশদ আলাপ আমি আগে কোথাও শুনিনি। মিশ্র রঙের ভিতর কেমন করে প্রকট থাকে আরেকটি রঙ, অন্যান্য রঙের সঙ্গে কম্বিনেশনের বেলায় ঐ প্রকট রঙটি কেন কার্যকরী হয়। একটি রঙ কম্বিনেশনের কারণে অভাবনীয় উচ্চতায় উঠে যেতে পারে কিংবা তলিয়ে যেতে পারে। হাত দিয়ে কালার হুইলটার একপাশ ঢেকে দিলে দেখা যায়, একদিকে শুধুই উজ্জ্বল রোদে ভরা রঙ আর আরেকদিকে গাঢ় অস্বচ্ছ রঙ।

ভাষা নেই, ভাষা নেই
রঙগুলোকে নাম অনুযায়ী দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যাদের নাম নিগূঢ়, নীল, কালো, লাল বা হলুদ, আর যাদের নামের সঙ্গে অন্য জিনিসের রঙের তুলনা রয়েছে, যেমন কমলা, লাইম গ্রিন/ইয়েলো, লাইল্যাক, ক্রিম, ভায়োলেট, জাফরানি, বেগুনী। নাইজেরীয় ইগবো ভাষায় যেমন শাদা আর কালো এই দুটি রঙের নাম আছে, বাকি সব রঙের নাম তুল্য নাম, যেমন সবুজের নাম পাতা (হিন্দিতে বা বাঙলায় যেমন 'ধানী' মানে সবুজ) লালের নাম রক্ত (আমরা যেমন বলি- রক্তিম), ধূসরের নাম ছাই (আমরাও তো লিখি- ছাইরঙা)। রূপের বিবরণ দিতে আমরা যেমন উপমান কর্মধারয় সমাস লিখি- সজলকৃষ্ণ, পলাশলাল, শঙ্খশুভ্র, অরুণরাঙা। পানসে নীল ইগবো ভাষায় সবুজ, কমলার নাম হলুদ, গাঢ় নীলের নাম কালো (আমরাও তো বলি- ফিঙেনীল)। আমাদের ভাষায় 'রাগ' আর 'রঙ' সমার্থক, আবার 'রঙ' এবং 'রঙ্গ' সমার্থক (কেউ তামাশা করতে থাকলে বলে বসি- "রঙ করিস না আর!")। ভাবা যায়! হিন্দি-উর্দুতে রঙ্গিলা শব্দের মানে খুশিয়াল-উচ্ছল-আমুদে প্রেমিকপ্রবর।
রঙের কি যুতসই বিবরণ হয়? ১৮৯৪ সনে ভ্রাতুষ্পুত্রী ইন্দিরা দেবীকে শিলাইদহে সূর্যাস্ত দেখার অভিজ্ঞতা লিখছেন রবীন্দ্রনাথ- "কত রকমেরই যে রং চতুর্দিকে ফুটে উঠেছিল সে আমার মত সুবিখ্যাত রঙকানা লোকের পক্ষে বর্ণনা করতে বসা ধৃষ্টতা মাত্র।" রানী চন্দ, রম্যা রোলা, স্টেলা ক্রামরিশ এবং কেতকী কুশারি ডাইসন রবীন্দ্রনাথের বর্ণান্ধতা আর তাঁর চিত্রকলায় এই বর্ণান্ধতার প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত মন্তব্য করেছেন- কেন রবীন্দ্রনাথের ছবিতে লাল প্রায় অনুপস্থিত। আমার মনে পড়ে গল্পগুচ্ছে রবীন্দ্রনাথের রঙ এবং রঙের কম্বিনেশন দেখবার প্রতিভার বেশ কিছু চকিত নমুনা রয়েছে, যেমন 'ল্যাবরেটরি'তে, "তাকে পরিয়েছে নীলচে সবুজ বেনারসী শাড়ি, ভিতর থেকে দেখা যায় বসন্তী রঙের কাঁচুলি। কপালে তার কুঙ্কুমের ফোঁটা, সূক্ষ্ম একটু কাজলের রেখা চোখে, কাঁধের কাছে ঝুলে পড়া গুচ্ছ করা খোঁপা, পায়ে কালো চামড়ার পরে লাল মখমলের কাজ-করা স্যাণ্ডেল।"

নীলচে সবুজের আড়ালে বাসন্তী, সঙ্গে কুঙ্কুমের সামান্য মেটে লাল, আর মখমলি লাল, সঙ্গে লেদারের দুই এক আঁচড় কালো...একেবারে ফ্যাশন ডিজাইনারের কম্বিনেশন নয়? এত আধুনিক, এত অভিনব! বর্ণান্ধ এমন কম্বিনেশন ভাবলেন কি করে! কিংবা, 'চোরাই ধন'-এ, "বরফ দেয়া ফলসার শরবতের পাশেই রুপার থালায় গোড়ে মালা/ আইসক্রিমের যন্ত্রে জমানো তালশাঁসের পাশে পিরিচে একটি মস্ত সূর্যমুখী!" কিংবা, 'ক্ষুধিত পাষাণ'-এ মৌরীঝোপের কালচে সবুজের পাশে ফেনিল শাদা শুস্তা নদী, জাফরান রঙের পাশেই মখমলী গোলাপি, জরির পাশেই মদিরার সোনালি, তার পাশেই স্ফটিকের নীল আভা... একেবারে ওরিয়েন্টালিস্ট আর্টিস্টদের ক্যানভাস থেকে তুলে নেয়া জিনিস।
বুদ্ধদেব বসু এরিওলার রঙ লিখেছিলেন- তালের কালোর ভিতর থেকে তাকিয়ে থাকা গোলাপির মতো। তাঁর 'তিথিডোর'-এর মেয়েরা জামের রসের মতো বেগুনী বাটিক পরেছিল।
স্মার্টি মোবাইলের অ্যাডে সেদিন দেখলাম একজন খদ্দের জিজ্ঞেস করছেন, "শাদা পেইন্ট আছে?" দোকানের কর্মচারী জিজ্ঞেস করলেন, "কেমন শাদা? প্রাণবন্ত শাদা নাকি নাক-সিঁটকানো শাদা? আমাদের আছে নিরক্ত-চাঁদ টাইপের শাদা, চাঁছা-ফুলকপি টাইপের শাদা, জলে পোচ করা ভস্ম শাদা, স্নোম্যানের হাড় শাদা…কোনটা চাও?"
এমন আরেকটা অ্যাড বহুকাল আগে ইন্ডিয়ান কোনো পেইন্টের অ্যাডে দেখেছিলাম, নাম ভুলে গেছি। সিনেমার গাঙ্গুবাঈ জিজ্ঞেস করেন, "কোন সফেদ? চাঁদের মতো শাদা নাকি বাদলমেঘের মতো শাদা? কাগজের মতো শাদা নাকি শাদা গোলাপের মতো শাদা? বরফের মতো শাদা, নিমকের মতো শাদা, দুধের মতো শাদা নাকি শাঁখের মতো শাদা?"

রঙকে কি আসলেই ভাষায় প্রকাশ করা যায়? সাত দিন ধরে ল্যুভ মিউজিয়াম দেখেছিলাম, একেবারে কাঙালি ভোজ! শেষের দিকে 'মোনালিসা' দেখতে গেলাম, দেখি লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির 'মোনালিসা'র আশপাশে আর পিছে কেমন হিম হিম আমেজ, ব্লু-গ্রে-গ্রীনের সেই আমেজ আর রঙ নেই- কুহকে পরিণত হয়েছে, ফ্লোরেন্সের শিল্পী জোত্তোর নীল-বিষয়ক বাণীকে অমর করেছে, সোনালি নয়- নীল ঈশ্বরের আত্মার রঙ। চাক্ষুষ করবার পর বুঝেছিলাম, কোনো পোস্টার- কোনো প্রিন্ট আসল মোনালিসার সুদূরপিয়াসী রূপকে পরিপূর্ণভাবে তুলে ধরতে পারেনি, পারা অসম্ভব। মনে মনে সূর্যোদয়ের ঠিক আগের পাড়াগেঁয়ে নিশির কথা ভাবুন, শেষ হিম-জড়ানো নিহর-বিন্দু বাঁধাকপিপাতার সবুজাভ নীলে মিশে যে অনন্ত ক্লান্ত শোভা তৈরি করতে পারে—মোনালিসাতে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি সেটা যাদুবলে তুলে এনেছেন। ডাকিনীবিদ্যা ছাড়া অমন অসম্ভব!
আদিম কালের চাঁদিম হিম
আমরা জানি, গুহামানবদের মনেও ছিল চিত্রশিল্পীর উদ্যম আর কল্পনা। চৌষট্টি হাজার বছর আগের নিয়ানডার্থালদের আঁকা গুহাচিত্র আছে স্পেনের মালত্রাভিয়েসোতে। স্পেনে, ফ্রান্সে, রুমানিয়ায়, লিবিয়ায়, নামিবিয়ায়, অস্ট্রেলিয়ায়, ইন্দোনেশিয়ায় গুহার গায়ে মানুষ এঁকে গেছে হাতের ছাপ, বাইসন- রেইনডিয়ার- ঘোড়া- শুয়োর শিকারের ছবি। আদিম প্যালেট মূলতঃ বাইক্রোম- লাল আর কালো। এরপর ধীরে ধীরে রেড অকার বা হিমাটাইট, ইয়েলো অকার বা লিমোনাইট, ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইড ও চারকোল যোগ হয়েছে, কেওলিন ক্লে, শামুকপোড়া চুন আর চকখড়ি এসেছে।
প্রাচীন সভ্যতাগুলোর সূচনালগ্নে ম্যাসিডোনিয়ায় আর আন্দালুসিয়ায় এসেছে সিনাবার বা ভারমিলিয়ন (মার্কারির আকরিক থেকে)। এসিরীয়রা দেবতা আর রাজাদের গায়ে জড়িয়েছে পার্পল, এসকাইলাসের মতে প্রাচীনকালের সবচেয়ে দামী রঙ। এরিস্টটল দুইরকমের রঙের কথা উল্লেখ করেছিলেন- ফিনিসীয় লালচে বেগুনী আর গাঢ় বেগুনী। এই পার্পল তৈরি হতো গাদা গাদা ফিনিশীয় সামুদ্রিক ঝিনুক পুড়িয়ে।
লিমোনাইট ছাড়াও আরেক রকম হলুদ হতো- মাটি থেকে। সিয়েনা তার নাম। প্রাচীন মিশরীয়রা সবুজ হিসেবে মালাকাইট ব্যবহার করতো। তামার সঙ্গে গরম সিরকা- মদ এবং মূত্র মিশিয়ে রোমকরা একরকম সবুজ রঙ বানাতো- তার নাম ভার্ডিগ্রি। চমৎকার সবুজ, পারস্যের মিনিয়েচার শিল্পীরা ব্যবহার করতেন, কিন্তু অত্যধিক ক্ষার-ধর্মিতার কারণে কাগজ বা পার্চমেন্ট ফুটো হয়ে যেত। লেড হোয়াইট বানানো হতো ভার্ডিগ্রি বানাবার পন্থাতেই, তামার বদলে মেশানো হতো দস্তা।
ফিকে নীল আসতো অ্যাজুরাইট থেকে, প্রগাঢ় নীল আল্ট্রামেরিন আসতো পার্সিয়ার ল্যাপিস লাজুলি থেকে। মিশরীয়রা একপর্যায়ে চার রকমের অক্সাইড মিলিয়ে এই ল্যাপিসের বিকল্প নীল তৈরি করে ফেললো, ইজিপসিয়ান ব্লু। গ্রীকরা হাড়পোড়া বা হাতির দাঁত পোড়া কার্বন দিয়ে চমৎকার কালো রঙ বানাতো, ভালো কালো পাউডারের জন্য পোড়াতো পীচফলের আঁটি আর কাগজিবাদামের খোসা। পম্পেইয়ের দেয়ালের ফ্রেস্কোতে টেম্পেরার ব্যবহার দেখা যায়, বাইন্ডার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে ডিমের শাদা আর গাম অ্যারাবিক। মধ্যযুগে টিন আর গন্ধককে পারদের উপস্থিতিতে মিশিয়ে তৈরি হতো সোনালি রঙ।

ওস্তাদের কারসাজি
আদিতে রঙ বানাতেন ওস্তাদদের শিষ্যরা। দীর্ঘ সময় ধরে রঙের আকরিক ধুতেন, জ্বাল দিতেন, হামান-দিস্তায় পিষতেন, বাইন্ডারের (পাতিত পানি, তিসির তেল অথবা আখরোটের তেল, ডিমের কুসুম, মোম, রেজিন) সঙ্গে মেশাতেন, শুয়োরের মূত্রাশয়ে বা কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করতেন। আঠেরো এবং উনিশ শতকে টিউবে ভরা রঙ আসবার আগ অব্দি এসব চলেছে। এমনকি উনিশ শতকের প্রথমার্ধ অব্দি রঙের নানান বাহানা সয়ে শিল্পীকে ছবি আঁকতে হতো। প্রতিটা রঙের আলাদা চরিত্র ছিল, কোনোটা তেলে মিশ খেতো না, কোনোটা অন্য একাধিক রঙের সঙ্গে না মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতো না, কোনোটা কেবল স্বচ্ছ প্রলেপের জন্য উপযোগী- কোনোটা কেবলই অনচ্ছ। একেকটা একেক সময়ে শুকাতো। আলোর সাক্ষাতে কখনো রঙ ফিকে হতো বা গাঢ় হতো, ক্ষয়কারী হতো, একই রকম থাকতো না জনমভর। রঙ চলিষ্ণু। রঙ্গিলা প্রেমিক।
শিল্পী ভারমীরের কাজ লক্ষ্য করলে দেখবেন, ওতে দুই থেকে তিনটে আলাদা পিগমেন্টের ব্যবহার কেবল, টোন আলাদা। হালকা রঙের বাইন্ডিং মিডিয়াম হিসেবে ভারমীর ব্যবহার করতেন আখরোট বা পপির তেল, গাঢ় রঙের বেলায় তিসির তেল বা লিনসিড অয়েল। ইতালীয়রা নানান পদের রঙ বানানোর আলকেমিতে ওস্তাদ ছিল, ব্যবসার কারণে এমন সব উপাদান তাদের কাছে সুলভ ছিল যা ইউরোপের অন্যত্র পাওয়া যেত না। জোত্তো বা ভ্যান আইক তাঁদের রঙ নিয়ে এক্সপেরিমেন্টের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। রেমব্রাঁ ব্যবহার করতেন নানান পদের গ্লেইজ। রসায়ন জ্ঞানের তুরীয় পর্যায়ে পৌঁছতেন আলকেমিস্টরা, শিল্পীরা।
ষোড়শ শতকের মাঝামাঝি রেমব্রাঁ মুঘল বাদশাহ শাহজাহানের দরবারের পেন্টিং-এর আদলে সিরিজ আঁকলেন। পেন্টিং শেষ করবার পর অ্যাগেট পাথর দিয়ে সেসব ছবি বার্নিশ করা হতো, সেই ঘর্ষণে জৌলুস বাড়তো পেন্টিং-এর রঙের আর ঘনত্বের। পারদ-গন্ধকের মিশ্রণের সিনাবার দিয়ে তৈরি সিঁদুরে লাল রঙ ব্যবহার করতেন মুঘল পেন্টাররা, আফগান খনি থেকে আমদানি করা ল্যাপিস লাজুলি দিয়ে আল্ট্রামেরিন ব্লু, আর্সেনিক মিশ্রিত রঙ অর্পিমেন্ট দিয়ে তৈরি হতো উজ্জ্বল হলুদ। ভার্ডিগ্রির সঙ্গে আল্ট্রামেরিন ব্লু আর অর্পিমেন্ট মিশিয়ে নানান রকম সবুজ বানাতেন ওঁরা। লাক্ষারস থেকে বেগুনী।

পারস্যের এবং মুঘল মিনিয়েচার আর্টিস্টদের রঙ বানাবার গল্প পড়তে গিয়ে চমকে গেছিলাম। হলদে মাটি থেকে তো বটেই, এমনকি আমপাতা খাওয়া কামলারোগগ্রস্ত গোরুর মূত্র থেকে হলুদ রঙ তৈরি করতেন তাঁরা- ওটার নাম ছিল ইন্ডিয়ান ইয়েলো। হরিণের চামড়ার পরতের তলায় ধাতুর পাত রেখে কাঠের মুগুরে পিটিয়ে তৈরি করতেন সোনালি তবক- সেই ফয়েল বসতো ছবির গায়ে- কখনো গহনায় কখনো ব্যাকগ্রাউন্ডে। বাইন্ডার হিসেবে মোষের চামড়ার আঠা বা গাম অ্যারাবিক।
১৯৮৭ সালে দেশ পত্রিকা যামিনী রায় শতবর্ষ সংখ্যা আনলো, বালিকার বিমূঢ় বিস্ময়ে পড়েছিলাম ধূসরের জন্য গঙ্গামাটির ব্যবহার, ইমপ্রেশনিজম থেকে লোকশিল্পের ভঙ্গিমার দিকে তাঁর যাত্রা। বিদেশী প্রভাব বর্জন করে, টিউবে পোরা রঙ না ব্যবহার করে পটুয়াদের মতো তিনি মেটে রঙে ছবি আঁকতেন- পটুয়াদের মতো তাঁর ছবিতে রঙের জৌলুস আর পরিপাটি রেখা। ধোপার নীল আর তেলের বাতির ভুষো ব্যবহার করতেন কালো রঙের পরিবর্তে, চুন দিয়ে শাদা রঙ। উদ্ভিজ্জ রঙ আর ধাতুর গুঁড়ো শিরিষের আঠায় মিশিয়ে রঙ তৈরি করতেন। প্রায়ান্ধ শিল্পী বিনোদবিহারী তুলির ডগার রঙ মুখে আস্বাদ করে বুঝতেন- ওটা কোন রঙ। বাংলাদেশের শিল্পজগতের আকাশে এস এম সুলতান এক কালপুরুষ, তিনিও অল্পবয়সে কাঠকয়লা- পাকা পুঁইমেটুলির রস আর কাঁচা হলুদের ভেষজ রস দিয়ে ছবি আঁকতেন।
বর্ণসংকেত
রঙ মধ্যযুগে প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হতো। উজ্জ্বল লাল ছিল বীরত্ব, ক্ষমতা, যুদ্ধ আর ত্যাগের প্রতীক (বীর, রাজা, পোপ সব্বাই লাল)। নীল ছিল জ্ঞান- শুদ্ধতা- বিশ্বস্ততা আর দেবত্বের নিশানা- যেমন মাতা মেরীর ক্লোক নীল। মনে করে দেখুন- সেলজুক টালিতে সুনীল উজ্জ্বল নীলের ওপর লাল টকটকে পপিফুল, তোপকাপি প্রাসাদের মসজিদের গায়ে ইজনিক টালিতে নীলের ওপর লাল গোলাপ- টিউলিপ আর হায়াসিন্থ। অটোমান সাম্রাজ্যে হারেমের ভেতর শুধু রঙ নয়, নির্দিষ্ট রঙের ফুলও বিশেষ সংকেত বহন করতো- লাল গোলাপ প্রেম- হলদে গোলাপ প্রত্যাখ্যান। হলুদ বা সোনালি অর্থ আর ক্ষমতার চিহ্ন বহন করতো- তবে শঠতার চিহ্নও বইতো হলুদ- যেমন যুদাসের গায়ের জামাটা হতো হলুদ। সবুজ মানে উর্বরতা- নবায়ন আর নিয়তি (কনেরা পরতো সবুজ)। আগেই বলেছি পার্পল বা বেগুনী ক্ষমতা আর প্রতিপত্তির স্মারক। কালো শোক আর ক্ষমতার প্রতীক। শাদা মানে শুদ্ধতা, শান্তি, পবিত্রতা (ধর্মযাজক এবং নাইটরা পরতো)। ব্রাউন আর ধূসর ছিল গরীবদের রঙ, বিনয় আর দারিদ্রের চিহ্ন।
নানান সংস্কৃতিতে একই রঙের ব্যবহার বিচিত্র, কখনো বিপরীত। যেমন শাদা কোথাও শুদ্ধতার রঙ, কোথাও মৃত্যুর রঙ, কোথাও কনেবউয়ের রঙ, কোথাও বৈধব্যের রঙ। লাল পশ্চিমে মূলত ভালোবাসার রঙ, পূবে ভয়ানকের রঙ লাল আবার বিয়ের রঙ লাল। চীনদেশে লাল উর্বরতার রঙ, আবার বাংলামুল্লুকে সাধ-অনুষ্ঠানে পুর্নগর্ভার লাল পরা নিষেধ- কেননা লাল সন্তান জন্মদানকালীন মৃত্যুর রঙ, আফ্রিকান সংস্কৃতিতে লাল মানে মৃত্যু- শোক- সহিংসতা।

নীল কোথাও প্রশান্তির প্রতীক, কোথাও বিমর্ষতা ও একাকীত্বের (হুইসলারের ছবিতে ঘুঘুরঙা নীল আর ধূসর যেমন)। পশ্চিমা বিশ্বে পৌরুষের প্রতীক নীল, অথচ চীনে নীল নারীত্বের প্রতীক, মহাপুরুষদের অমরত্বের রঙ নীল (যেমন ভগবান বুদ্ধ, যেমন কৃষ্ণ), তুর্কি-গ্রীক-আলবেনিয়রা নীলকে চেনে অশুভসংহারী রঙ হিসেবে (ইভল আইয়ের চারদিকে বৃত্তাকার নীল)।
ইসলামিক সংস্কৃতিতে সবুজ বেহেশতের রঙ, আবার ফার ইস্টের দেশগুলোতে এই সবুজের আরেক অর্থ বিশ্বাসঘাতকতা। দশম শতকের ফ্রান্সে বিশ্বাসঘাতকদের দরজা হলদে রঙ করা থাকতো, হলুদ মানে সেখানে ঈর্ষা- বিশ্বাসঘাতকতা- দুর্বলতা, প্রাচীন মিশরে হলুদ বা সোনালি পরকালের চিহ্ন।
বর্ণে-গন্ধে-ছন্দে-গীতিতে
আর্টের ইতিহাসে এক পর্যায়ে স্টুডিওর আলো-আঁধারিতে র্যাফায়েল বা রেমব্রাঁর তীক্ষ্ণ তীব্র নির্ঘুম বিনিদ্র আলোর খেলা থেকে ছবি বের হয়ে এলো উদ্দাম মার্তন্ডলোকে- প্রশস্ত দিবালোকে। ছবির দুনিয়ায় গাছ হলো রোদেলা সবুজ, ছায়া হলো বেগুনী, সূর্যের লাল টিপের চারদিকে দেখা দিল ছাই-রঙা ধোঁয়াশা, টার্নারের সমুদ্রের আকাশে লাল লকলকে সূর্য উদিত হলো। আলোয় উদ্ভাসিত হলো মনেয়, পিসারো, রেনোয়া, ভ্যান ঘঘের ক্যানভাস। পরিতোষ সেন লিখেছিলেন-
"ভান-গখের ভুবন ছিল প্রচন্ড আলোয় উদ্ভাসিত সেহেতু এবং সে অনুপাতে তাঁর ছবিতেও ছিল বহু উজ্জ্বল রঙের ছড়াছড়ি। তাঁর এ রঙের জোয়ারে ভেলা ভাসিয়ে দিয়েছিলেন মাতিস, ভ্লামেঙ্ক, দের্যাঁ প্রমুখ Fauvist শিল্পীরা এবং জার্মানীর Blau Reiter গোষ্ঠীর শিল্পীরা। চিত্রশিল্পের ইতিহাসে এই প্রথম রঙ পূর্ণ স্বাধীনতা পেল। অর্থাৎ গাছের গুঁড়ির রঙ খয়েরি কিংবা ভুষো-খয়েরি না হয়ে, হয়ে উঠল গাঢ় টকটকে লাল, ঘোড়া-গাধার রঙ হল নীল, আকাশ নীল না হয়ে হয়ে উঠল গন্ধকী হলুদ। অর্থাৎ যে কোনো রঙই যে কোনো বস্তুতেই লাগানো যায় অনুপাত এবং সমন্বয়ের দিকে তীক্ষ্ণ নজর রেখে। এক কথায়, শিল্পী তাঁর চোখে দেখা বর্ণজগতের থেকে সরে গিয়ে ডুব দিলেন কল্পজগতের রঙের সাগরে।"
শিল্পী মনেয় রোয়াঁ ক্যাথেড্রালের সিরিজ আঁকলেন সমস্ত দিনের পরিবর্তনশীল রোদের রঙ আর ছায়াকে ধরে, তিনি বলতেন, "রঙ দিনভর আমার আনন্দ আবেশ, আমার ঘোর, আমার যন্ত্রণা।" বাইরে মহাযুদ্ধে ভেঙে পড়ছে পৃথিবী, তিনি আপনমনে একের পর এক এঁকে চলেছেন নীলচে সবুজ জলে গোলাপি শাপলার ঝাঁক- আলোসোহাগী সহিষ্ণু সবল ফুলের দল- জল যত বাড়বে এর মৃণাল সরসর করে তত বাড়বে যেন ফুলটা ভেসে থাকে, কুশ্রীতা আর বিপর্যয়ের বিপরীতে এ হলো সুস্থ-সুন্দরের জয়গান।

গুস্তাভ ক্লিমট গত শতকের শুরুতে র্যাভেনার ব্যাসিলিকা সান ভিতালেতে গেলেন, মোহিত হলেন ওখানকার বাইজেন্টাইন মোজাইক আর গোল্ডলীফের কাজ দেখে, এই ব্যাসিলিকা তাঁকে পরবর্তী দশ বছর গভীরভাবে প্রভাবিত করে রাখলো। পিকাসোর রঙের জগতকে তো ব্লু পিরিয়ড আর রোজ পিরিয়ডে ভাগই করা যায়- একটি বেদনার, আরেকটি বেদনাবিনাশী সম্ভাবনার।
এমন এক সময় এলো, যখন রঙ আর কোনো ফর্মের তোয়াক্কা করে না, সে নিজেই সাবজেক্ট, সে স্বয়ম্ভু, মার্ক রথকোর ক্যানভাসে একের পর এক রঙের ব্লকের প্রলেপ মনে করে দেখুন, মনে করুন পিয়েৎ মঁড্রিয়াঁর শাদা কালোর সঙ্গে তিনটি প্রাইমারি কালারের ধাঁধা মনে করুন।
পরিতোষ সেন যে ব্লু রাইডার গ্রুপের কথা বলেছেন, কান্দিনস্কি যাঁর সারথি- সেই কান্দিনস্কি ভাবতেন- রঙ মানুষের হৃদয়ের কাছে শিল্পীর আপনহৃদয়ের ভাষ্য উত্থাপনের অস্ত্রবিশেষ, ওটা দিয়ে মানুষকে উদ্বেল করে তোলা যায়। মার্ক শ্যাগালের 'ট্রায়াম্ফ অভ মিউজিক' ম্যুরাল আপাদমস্তক লাল, ছাত্রজীবনে এই শিল্পকর্মটি দেখলেই আমার মনে হতো- সঙ্গীতসৃষ্টির এক পর্যায়ে এভাবেই মিলনায়তনের ছাদ বিস্ফোরিত হয় এক অপার্থিব রক্তিম আকাশে- সেখানে সম্মিলিত হয় শ্রোতা আর শিল্পীর বিশ্লিষ্ট মুখর উন্মুখ হৃদয়।
পর্দায় কোনো নাটক-সিনেমা আপনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করলে জানবেন- সেখানকার রঙের/সোয়াচ অভ কালারের ব্যবহার নিঃশব্দে আপনার ভিতর একটি মনস্তাত্ত্বিক প্রতিক্রিয়া জাগিয়ে তুলতে সমর্থ হয়েছে। যেমন 'ম্যাট্রিক্স' মুভিতে শ্যাওলাধরা দেয়ালের মতো রঙের ক্রমাগত ব্যবহার, 'দ্য গ্রান্ড বুদাপেস্ট হোটেল'-এ গোলাপি মনোক্রোমের ব্যবহার। রঙের ব্যবহারে চমৎকার অ্যাং লীর 'সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি' এবং জো রাইটের 'আনা কারেনিনা'র অ্যাডাপ্টেশন।
পিরিয়ড মুভিতে সেসময়কার রঙের চল খেয়াল করা হয়, অর্থাৎ তখন কোন রঙ জনপ্রিয় ছিল বা রঞ্জকরা কোন রঙ বানাতে জানতো। ষাটের দশক পপ আর্টের কনট্রাস্ট কালারে ভরা- সবুজ-মাস্টার্ড ইয়েলো-সোনালি-কমলা, সত্তুরের দশক মানে ইন্টিরিয়রে কমলা আর ব্রাউনের ছড়াছড়ি, আশির দশক নিয়ন আর প্যাস্টেলে পূর্ণ। এ তো আর আমির খানের 'লাগান' নয়, যে ১৮৯৩ এর সিনেমায় নায়িকার শাড়ি-ব্লাউজ হবে ১৯৯৩ মার্কা, তবুও সিনেমার গরু গাছে চড়ে বলে মাফ হয়ে যাবে!

রঙ্গিলা দালানের মাটি
রঙ নিয়ে কথা হবে আর ছোটদের বইয়ের প্রচ্ছদ আর অলঙ্করণে রঙের ব্যবহার নিয়ে কথা বলবো না তা কি হয়! মনে আছে আমাদের শৈশবে তেরঙা ছাপা ম্যাড়ম্যাড়ে বাংলা বই আর অপুর্ব রঙিন অলঙ্করণে ঠাসা ইংরেজি বইয়ের অসম যুদ্ধের কথা।
নার্সারি রাইমস বা ছড়ার বই থেকেই শুরু হয়ে যেত সেই যুদ্ধ। কিছু ব্যতিক্রম ছিল (শিশু সাহিত্য সংসদ থেকে প্রকাশিত 'ছড়ার ছবি'র সেই 'মাসীপিসী বনগাঁবাসী', 'ওখানে কে রে আমি খোকা', 'দাদাভাই চালভাজা খাই'- ছড়ার পাশে টোপা টোপা চেহারার অলংকরণগুলো ভারী সুন্দর ছিল; খুব চমৎকার ছিল চওড়া সবুজ বর্ডার দেয়া 'ক্ষীরের পুতুল'-এ আশিস সেনগুপ্তের আর্ট ন্যুভো অলঙ্করণ), আরো কিছু ব্যতিক্রম হতে পারতো। সন্দেশ-এ কোনো রঙিন ছবি ছিল না, অথচ শাদাকালোতে আঁকা বুথ সাহেবের বাচ্চাটার সেই আকাশ ফাটানো কান্নাটা- গোষ্ঠমামার ধামা এগিয়ে ধরাটা কে ভুলতে পারে!
ইংরেজি বই তখন শুধু নিউমার্কেটের গরবিনী দোকানগুলোয় পাওয়া যেত, দুর্মূল্য সেসব বই। সেসবেতে বাচ্চাদের কেমন ফোলা গাল, চোখের অশ্রুদানাটুকুও কেমন টুসটুসিয়ে পরতো, হাতে কেমন পুতুল আর পায়ে সিল্কের মোজা, মেরীর বাগানে 'সিলভার বেল অ্যান্ড ককল শেল' কী সুন্দর দুলছে! রুশভাষার গল্পগুলো অনূদিত হয়ে বাঙলায় আসতো ভাগ্যিস, রঙিন অলঙ্করণে তাদের জুড়ি মেলা ভার। কদিন আগে লন্ডন লাইব্রেরিতে আমি এক নবীনা রুশ লেখিকার সঙ্গে পরিচিত হই, আমার মুখে সিভকা বুর্কার নাম শুনে সে হতবাক। সত্তুর-আশির দশকের শিশুদের বুকে রুশী গল্পের রঙিন পুরিয়া ভরে দিয়ে সার্থক হয়েছে সেসব গল্প, সার্থক হয়েছে আমাদের শৈশব।

একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। রঙ নিয়ে প্যাটার্ন নিয়ে কত কিছু করা যায়, তার এক অসামান্য উদাহরণ অকালপ্রয়াত সত্য পালের শাড়িগুলো। আড়ং একটা সময় পর্যন্ত রঙের বেলায় রক্ষণশীল ছিল, দেশে ফিরে আড়ং-এ গেলে হাওয়াই মিঠাই গোলাপি- আয়োডিন ব্লু আর সত্তুরদশকীয় সবুজের গোলায় পড়ে যেতে যেতে আমার মনে পড়ে বাগধারা- 'যায় দিন ভালো, আসে দিন খারাপ'; কিন্তু ওসব আমি কাউকে বলি না। বর্ণিল পৃথিবীর কথা অনেক হলো, এই যে মানুষে মানুষে রঙের কারণে এত ভেদাভেদ- এত সহিংসতা…এই বর্ণবাদের কথা তো বলা হলো না। 'আমায় একজন সাদা মানুষ দাও, যার রক্ত সাদা'- কত সোহাগ ঢেলে গেয়েছিলেন ভূপেন হাজারিকা। রঙের ঝরনা এমনিতে আমার প্রিয়, উন্মত্ত অধীর- উড়ায়ে চঞ্চল পাখা… রঙের আবির এসে ভরে দিক আমাদের মন, চিরদিন। যৌবন ফেরারি হলে যেন কেউ ধূসর খামে বন্দী হয়ে না পড়ে। মনে পড়ে ছোট্টবেলায় 'এসো গান শিখি'-তে শেখা গান-
"সূর্য যেমন লাল তেমন সবুজ আমার মাটি,
লাল সবুজ নিশানটি ভাই আমার কাছে খাঁটি।"
ঐ দুটি কমপ্লিমেন্টারি কালার আমাদের জীবনের সবচেয়ে স্থায়ী রঙ থাকুক, সবচেয়ে প্রিয়।