Skip to main content
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
The Business Standard বাংলা

Thursday
August 21, 2025

Sign In
Subscribe
  • মূলপাতা
  • অর্থনীতি
  • বাংলাদেশ
  • আন্তর্জাতিক
  • খেলা
  • বিনোদন
  • ফিচার
  • ইজেল
  • মতামত
  • অফবিট
  • সারাদেশ
  • কর্পোরেট
  • চাকরি
  • প্রবাস
  • English
THURSDAY, AUGUST 21, 2025
আসছে আবার নিজের দাঁত গজানোর যুগ!

ইজেল

সৈয়দ মূসা রেজা
20 August, 2025, 10:30 pm
Last modified: 21 August, 2025, 01:14 am

Related News

  • মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় লিবিয়ায় যাওয়া ১৭৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন
  • রাশিয়ান তেল আমদানিতে ভারতের বেলায় কঠোর ট্রাম্প, চীনের বেলায় নয় কেন?
  • বাণিজ্যে ট্রাম্পের আক্রমণের শিকার কোন দেশ কী করছে
  • ‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন
  • যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ সত্ত্বেও ভারতকে তেল বিক্রি চালিয়ে যাবে রাশিয়া

আসছে আবার নিজের দাঁত গজানোর যুগ!

এমন এক যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি আমরা, যেখানে ‘দাঁতের চিকিৎসা’ মানেই শুধু ফিলিং বা কৃত্রিম দাঁত বসানো নয়। বরং নিজের শরীরের ভেতর থেকেই নিজের দাঁত আবার গজিয়ে ওঠানো। তেমনি সম্ভাবনার দিগন্ত খুলছে।
সৈয়দ মূসা রেজা
20 August, 2025, 10:30 pm
Last modified: 21 August, 2025, 01:14 am

দাঁতের ফাঁকফোকরেই শুরু হয়েছিল সভ্যতা!

চমকে উঠলেন! অনেক বছর আগে, ২০১০ সালের এক শরৎকালীন দুপুরে বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী সায়েন্টিফিক আমেরিকানে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে দাঁতকে ঘিরে এই দারুণ কথা লেখা হয়েছিল: 'আমাদের দাঁত শুধু আমাদের খাওয়াতে সাহায্য করে না, দাঁতের ফাঁকফোকর দিয়ে এসেছে সভ্যতা।'

কেন এমন কথা? কারণ, দাঁতের জটিল গঠন এবং তার সীমাবদ্ধতার জন্যই মানুষকে বাধ্য হয়ে অস্ত্র বানাতে হয়েছিল। আগুন ধরাতে শিখেছিল। রান্নার পথ ধরেছিল। আধা কাঁচা গোশত চিবিয়ে খেতে গিয়ে যখন আমাদের দাঁতের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা দেখা গেল, তখনই আমরা আগুনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। রান্নার ফলে খাবার হলো নরম, আর সেই সঙ্গে বদলে গেল আমাদের হজমশক্তি, চেহারা, এমনকি ভাষা ব্যবহারের ধরনও। এক অর্থে দাঁতের অসুবিধাই আমাদের আজকের দিনের মানুষে পরিণত করেছে।

তবে দাঁতের এমন সীমাবদ্ধতা শুধু অতীতেই নয়, বর্তমানেও আছে। দাঁত পড়ে গেলে, ক্যারেজ বা পোকায় খাওয়া দাঁত দিয়ে আমরা কেবল অস্বস্তি পাই না; এটি স্বাস্থ্যের, আত্মবিশ্বাসের, এমনকি সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও গভীর প্রভাব ফেলে। তাই যুগ যুগ ধরে দাঁত নিয়ে কাজ করে চলেছেন চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা। আর এখন শোনা যাচ্ছে, দাঁতের সেই সীমাবদ্ধতাও বুঝি দূর হতে চলেছে!

দাঁতের বদলে দাঁত! এবার এ কথার মানেই বদলে যেতে পারে!

দাঁত পড়ে গেছে? দুর্ঘটনায় ভেঙে গেছে? চিন্তা নেই। এখন আর কৃত্রিম দাঁত বসাতে হবে না-না, ইমপ্ল্যান্ট নয়, ডেন্টারও নয়। বরং আপনার মুখেই আবার গজাবে আসল দাঁত! একেবারে প্রাকৃতিক, মজবুত, ঝকঝকে দাঁত। দাঁতের বদলে এমন দাঁত, যেটা আপনার শরীরই নতুন করে তৈরি করবে!

এমন এক যুগের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি আমরা, যেখানে 'দাঁতের চিকিৎসা' মানেই শুধু ফিলিং বা কৃত্রিম দাঁত বসানো নয়। বরং নিজের শরীরের ভেতর থেকেই নিজের দাঁত আবার গজিয়ে ওঠানো। তেমনি সম্ভাবনার দিগন্ত খুলছে।

যুক্তরাজ্যের ডেভনে বসবাসকারী বিজ্ঞান সাংবাদিক মাইকেল মার্শাল নিউ সায়েন্টিস্টের জন্য এমনই এক বৈপ্লবিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের খবর তুলে ধরেছেন। তার এ খবরে বলা হয়েছে, দাঁত পড়ে গেলেও আবার আসল দাঁত ফিরে পাওয়া যেতে পারে।

আজকের দিনে দাঁত পড়ে গেলে বিকল্প বলতে আমরা জানি ইমপ্ল্যান্ট, ডেন্টার বা নানা ধরনের কৃত্রিম দাঁতের ব্যবস্থা। এগুলো হাজার হাজার বছর ধরেই মানুষ ব্যবহার করছে।

কিন্তু বিজ্ঞান থেমে থাকেনি। আর এখন গবেষক পল শাপের হাত ধরে দাঁতের চিকিৎসায় আসতে চলেছে এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন। এতে ভবিষ্যতে ইমপ্ল্যান্ট বা ডেন্টারের প্রয়োজনই মুছে যেতে পারে। 

আমাদের জীবনে কোনো না কোনো সময়ে একটা করে দাঁত হারানো যেন অবধারিত। কখনো রোগে, কখনো দুর্ঘটনায়। হয়তো মার খেয়েছেন, হয়তো বিয়ে বাড়িতে হলুদের অনুষ্ঠানে রং খেলতে গিয়ে পিছলে দাঁত নিকেশ হয়েছে। কারণ যেটাই হোক, আপনি তখন দাঁতের এক ফাঁকা জায়গা নিয়ে ঘুরে বেড়ান আর যুক্তরাষ্ট্রের সেই ১৭ কোটি ৮০ লাখ প্রাপ্তবয়স্কের দলে নাম লেখান, যারা অন্তত একটা করে দাঁত হারিয়েছেন।

বাংলাদেশে এ সংখ্যা কত? খ্যাতনামা দন্তচিকিৎসকও বলতে পারেননি। দেশটা গরিব। সবচেয়ে গরিবি দশা হলো চিকিৎসা-সংক্রান্ত সমীক্ষা এবং পরিসংখ্যানের খাতে। বারবার সে কথা মনে করে মন খারাপ করার মানে হয় না।  

হ্যাঁ, এই হারানো দাঁত প্রতিস্থাপনের জন্য মানুষ প্রাচীনকাল থেকেই চেষ্টা করে আসছে। বহু শতাব্দী আগে ইতালির ত্রুসকান সভ্যতার মানুষ গরুর হাড় দিয়ে কৃত্রিম দাঁত বানাত। সেই জায়গা থেকে আজ আমরা এসেছি ধাতব ইমপ্ল্যান্টের যুগে। কিন্তু এই আধুনিক ধাতব দাঁতও চিরস্থায়ী নয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা ভেঙে পড়ে। প্রচণ্ড ব্যথা আর ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

তাহলে উপায় কী?

ধরুন, ইমপ্ল্যান্ট বা ডেন্টার নয়, আপনার নিজের শরীর থেকেই আবার দাঁত গজিয়ে উঠল? এমন প্রশ্ন শুনেই আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে বিস্মিত হয়ে গিয়েছিলেন লন্ডনের কিংস কলেজের মাথা ও মুখের হাড়গঠনের কোষবিদ, ক্রেনিওফেসিয়াল বায়োলজিস্ট পল শার্প। এক সাংবাদিক তাকে এমন প্রশ্ন করেছিলেন, 'আমরা যদি নতুন করে একটি দাঁত গজাতে চাই, তাহলে কী করতে হবে?' এই একটি প্রশ্নই শার্পের গবেষণার পথই বদলে দিল।

শার্প এবং তার সহকর্মীরা তখন দীর্ঘদিন ধরে দাঁতের কোষগুলোর বিকাশ নিয়ে কাজ করছিলেন। কীভাবে কয়েকটি কোষ থেকে মুখভর্তি পূর্ণাঙ্গ দাঁত গড়ে ওঠে, তার রহস্যভেদে ছিলেন বদ্ধপরিকর। তখনই কোষপ্রযুক্তি বা টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিং নামে এক গবেষণাধারা অনেকটাই গড়ে উঠছিল, যদিও তখনো তা পরীক্ষাগারেই সীমাবদ্ধ।

তাই শার্প ভাবলেন, যদি কোষ দিয়ে কৃত্রিম অঙ্গ তৈরি করা যায়, তাহলে দাঁত কেন নয়? দাঁত তো শরীরেরই অঙ্গ। এই ভাবনা থেকেই শুরু হয় তার নতুন গবেষণা। প্রায় দুই দশক ধরে তিনি আর তার দল একটা কার্যকর উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের টাফটস ইউনিভার্সিটিতেও আরেকটি দল ভিন্ন পদ্ধতিতে দাঁত গজানোর চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

দুই দলই ল্যাবরেটরিতে দারুণ ফল পেয়েছে।

আর এখন?

এই মুহূর্তে জাপানে চলছে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল-মানুষের শরীরে ওষুধ প্রয়োগ করে দাঁত গজিয়ে তোলার পরীক্ষামূলক প্রয়াস। শরীরের ভেতরে দাঁত যেন একেবারে নতুন করে জন্ম নিচ্ছে!

টাইটানিয়াম নয়, আবার গজানো নিজের দাঁতের দিন কি আসছে?

ভাবুন তো, দাঁতের চিকিৎসায় এমন এক ভবিষ্যৎ এসে গেছে, যেখানে প্রাণহীন ধাতব ইমপ্ল্যান্ট নয়-গজিয়ে উঠছে একেবারে নতুন, জীবন্ত দাঁত। পুরোনো দাঁতের মতোই শক্ত, কার্যকর আর অনুভূতিসম্পন্ন। এমনটা কেবল স্বপ্ন নয়; বিজ্ঞানীদের মতে, প্রযুক্তিগতভাবে এটা একেবারেই সম্ভব।

তাহলে প্রশ্ন হলো, এখনো তা বাস্তব হয়নি কেন?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, পৃথিবীজুড়ে ২০ বছর বয়স পেরোনো মানুষের মধ্যে প্রায় ৭ শতাংশ সবগুলো দাঁতই হারিয়েছেন। আর বয়স যদি ৬০ ছাড়িয়ে যায়, তখন সেই হার বেড়ে দাঁড়ায় ২৩ শতাংশে।

যুক্তরাজ্যে ১৬ বছর বা তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে অন্তত ৫ শতাংশের মুখে নিজস্ব কোনো দাঁত নেই, সবগুলোই কৃত্রিম।

অবশ্য দাঁত হারানোর ঘটনা সব সময় ভয়ঙ্কর দুর্ঘটনার মতো হয় না। বেশির ভাগ সময়ই এর পেছনে থাকে ধীরে ধীরে ঘটে যাওয়া এক সাধারণ রোগ, ডেন্টাল ক্যাভিটি বা দাঁতের পচন।

দাঁতের ওপর জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া যখন অ্যাসিড তৈরি করে, তখন সেটি ধীরে ধীরে দাঁতের শক্ত আবরণ গলিয়ে দেয়। এর ফলেই দাঁত পড়ে যায়। এখনো প্রাপ্তবয়স্ক কারও দাঁত পড়ে গেলে শরীর আবার নতুন করে দাঁত গজাতে পারে না।

এ অবস্থায় চিকিৎসকদের সবচেয়ে প্রচলিত সমাধান হলো টাইটানিয়াম ইমপ্ল্যান্ট বসানো। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের টাফটস ইউনিভার্সিটির দাঁতের কাঠামোগত বিশেষজ্ঞ বা অর্থোডনটিস্ট পামেলা ইয়েলিক বলছেন, এটাই এখন সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা।

এই টাইটানিয়াম ব্যবহার কিন্তু একদমই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আবিষ্কৃত হয়নি। আবিষ্কৃত হয়েছে ঘটনাক্রমে, বা 'শিব্রাম' চক্রবর্তীর ভাষায় 'দুর্ঘটনাক্রমে'।

১৯৫০-এর দশকে সুইডিশ শারীরবিদ পার-ইংভার ব্রনেমার্ক খরগোশের পায়ের হাড়ে একটি টাইটানিয়ামের চেম্বার বসিয়েছিলেন রক্তপ্রবাহ পর্যবেক্ষণের জন্য। কয়েক মাস পরে সেটা খুলতে গিয়ে দেখলেন, সেটা আর বের করা যাচ্ছে না। কারণ, হাড়ের টিস্যু ওই ধাতব বস্তুটিকে একেবারে জোড়া লাগিয়ে নিয়েছে।

এই আকস্মিক আবিষ্কার থেকে বোঝা গেল, টাইটানিয়াম হাড়ের সঙ্গে জুড়ে যেতে পারে। দাঁতের ইমপ্ল্যান্টের জন্য এই বৈশিষ্ট্য একে আদর্শ করে তোলে; কারণ, দাঁতের শেকড় বসে থাকে চোয়ালের হাড়ের ভেতরেই।

এই প্রযুক্তিই এখন দাঁত প্রতিস্থাপনে বিশ্বব্যাপী মানদণ্ড হয়ে উঠেছে।

তবে এরও আছে কিছু স্পষ্ট সমস্যা। যেহেতু এটা একটা ধাতব বস্তু, তাই এতে কোনো অনুভূতি থাকে না। পামেলা ইয়েলিক বলছেন, 'আপনি যখন এই দাঁত দিয়ে কিছু চিবোন, তখন সেটা টেরই পান না।'

এটাই স্বাভাবিক। কারণ, প্রকৃত দাঁতের সঙ্গে হাড়ের মাঝখানে থাকে কিছু লিগামেন্ট বা তন্তু, যেগুলো চিবানোর ধাক্কা একটু কমিয়ে দেয়। এতে চোয়ালে অতিরিক্ত চাপ পড়ে না।

কিন্তু টাইটানিয়াম ইমপ্ল্যান্টে সেই বাফার বা তন্তু থাকে না। ফলে চোয়ালে সব ধাক্কা সরাসরি লাগে।

পামেলা ইয়েলিক বলছেন, 'যখন আপনার ইমপ্ল্যান্ট দাঁত থাকে, তখন ওই চিবানোর ধাক্কাগুলো নরম করার জন্য শরীরে কোনো কুশনের মতো ব্যবস্থা থাকে না।' ফলে প্রতিদিনের খাওয়া-চিবোনোর ধাক্কায় ইমপ্ল্যান্টের চারপাশের হাড় ভেঙে যেতে পারে। এর ফলে জ্বালা, প্রদাহ আর ব্যথা দেখা দেয়।

জীবন্ত দাঁত, যা অনুভব করাবে সত্যিকারের দাঁতের মতোই।

একটা জীবন্ত দাঁত, যেটা শরীর নিজে বানিয়েছে, তা কেবল অনেক দিন টিকেই থাকবে না, বরং তা হবে আরও শক্তপোক্তও হবে। এতে থাকবে স্নায়ু, থাকবে অনুভূতি, আপনার নিজের দাঁতের মতোই। আর সবচেয়ে বড় কথা, এতে সংক্রমণ বা শরীরের 'না মেনে নেওয়া'র বা নাকচ কিংবা রিজেকশন হওয়ার আশঙ্কাও কম।

কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষক পল শার্প বলেন, 'আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে এমন একটি দাঁত তৈরি করা, যা হারানো দাঁতের জায়গায় গজিয়ে উঠবে, আর পুরোপুরি স্বাভাবিকভাবেই হবে। একদম নিজের দাঁতের মতোই।'

তবে এই জাদুকরী দাঁত গজানোর আগে একটা বিষয় বুঝতে হবে, আমাদের প্রাকৃতিক দাঁত আসলে কীভাবে গজায়?

একটা দাঁত তৈরির জন্য দরকার হয় দুই ধরনের কোষ, ডেন্টাল ইপিথিলিয়াল কোষ দাঁতের সবচেয়ে বাইরের শক্ত আবরণ এনামেল তৈরি করে। ডেন্টাল মেসেনকাইমাল কোষ, দাঁতের ভেতরের অংশ, এনামেলের নিচে থাকা ডেনটিন এবং দাঁতের কেন্দ্রের নরম পাল্প গঠনের দায়িত্বে থাকে।

সুখবর হলো, প্রাপ্তবয়স্কদের দাঁতের পাল্প থেকেই ডেন্টাল মেসেনকাইমাল কোষ সংগ্রহ করা সম্ভব। উদাহরণ, ফেলে দেওয়া আক্কেল দাঁতের ভেতর থেকেই এই কোষ পাওয়া যায়। কিন্তু সমস্যাটা হয় অন্য জায়গায়, ডেন্টাল ইপিথিলিয়াল কোষ পাওয়া যায় শুধু শিশুদের দুধদাঁত থাকার সময়ে।

পামেলা ইয়েলিক বলছেন, 'আপনার প্রাপ্তবয়স্ক দাঁত গজানোর পর এসব কোষ প্রায় পুরোপুরি উধাও হয়ে যায়।'

আরও একটা সমস্যা রয়েছে, কোনোভাবে যদি আপনি কোথাও থেকে ইপিথিলিয়াল কোষ জোগাড় করতে পারেন, তাহলেও তা দাঁতের মতো কিছুতে পরিণত করার জন্য বিশেষ পরিবেশ লাগবে।

এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পামেলা ইয়েলিক এবং তার সহকর্মীরা টিস্যু ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ধারণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এক অভিনব পদ্ধতি প্রয়োগ করেন। তারা তৈরি করেন একধরনের স্ক্যাফোল্ড বা মাচা। মোটা তুলোর মতো দেখতে একগুচ্ছ তন্তু, যার ওপর কোষগুলো বসতে পারে, বাড়তে পারে, আর একসময় টিস্যুতে রূপ নিতে পারে।

ইয়েলিক বলছেন, 'আপনার হাতে একটা স্ক্যাফোল্ড আছে। আপনি সেখানে কোষ বসিয়ে দেন, তারপর প্রয়োজনীয় কোষ বৃদ্ধির উপাদান গ্রোথ ফ্যাক্টর দিতে থাকেন।'

এই পদ্ধতি কাজে দিয়েছে।

তারা শূকরের পেষণ বা মোলার দাঁত থেকে দুটি কোষের নমুনা সংগ্রহ করেন, তারপর তা পলিয়েস্টার দিয়ে তৈরি স্ক্যাফোল্ড বা মাচার ওপরে বসান। পরে সেগুলো ইঁদুরের মুখে ইমপ্ল্যান্ট বা প্রতিস্থাপন করেন।

২০ থেকে ৩০ সপ্তাহ পরে তারা দেখতে পান, দাঁত গজাচ্ছে।

একেবারে পূর্ণাঙ্গ দাঁত না হলেও গবেষকেরা পেয়েছেন এমন 'চেনা চেনা দাঁতের গঠন'। এ দাঁতের মধ্যে মধ্যে ছিল ডেনটিন এবং এনামেল। দাঁতের মূল উপাদান।

ইয়েলিক বলেন, 'তারা তৈরি করছিলেন ছোট ছোট, সুন্দর, মুকুটের মতো দাঁতের মাথা'-এক কথায় টুথ ক্রাউন।

দাঁতের স্ক্যাফোল্ড আর স্টেম সেলের লুকোচুরি

এটা ২০০২ সালের কথা। তখন টাফটস ইউনিভার্সিটির গবেষক পামেলা ইয়েলিক আর তার সহকর্মীরা প্রথমবার দাঁত গজানোর জন্য স্ক্যাফোল্ড তৈরি করেছিলেন। তার পর থেকে তারা সেই পদ্ধতি আরও নিখুঁত করার জন্য কাজ করে চলেছেন।

২০২৪ সালে প্রকাশিত তাদের সর্বশেষ গবেষণাপত্রে ইয়েলিক এবং ওয়েইবো ঝাং, যিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক, ব্যবহার করেছেন উন্নত স্ক্যাফোল্ড। এইবার তারা নিয়েছিলেন শূকরের দাঁতের কলি বা Tooth Buds। এ কলি থেকে দাঁত গজায়, আর সেগুলো থেকে সব কোষ বাদ দিয়ে একধরনের খালি খোলস বানিয়ে নেন গবেষকেরা।

তারপর সেই খোলসে তারা ভরে দেন দাঁতের কোষ। এর মধ্যে কিছু কোষ ছিল মানুষের, কিছু শূকরের। এই জৈবপ্রকৌশল খাটানো বা বায়োইঞ্জিনিয়ারড পদ্ধতি তারা আবার সেটি শূকরের মুখে বসিয়ে দেন। ২ থেকে ৪ মাসের মধ্যেই ওই গঠনগুলো ধীরে ধীরে রূপ নেয় দাঁতের মতো টিস্যুতে।

পামেলা ইয়েলিক বলছেন, 'এটা একটা আদল বা মডেল, আমরা ভবিষ্যতে হয়তো মানুষের জন্য এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারব।'

তবে এই পদ্ধতি নিয়ে কিছুটা সংশয় পোষণ করেন কিংস কলেজের পল শার্প। তার মতে, স্ক্যাফোল্ডের মাধ্যমে দাঁত গজানো সম্ভব হলেও প্রাকৃতিক দাঁতের জটিল, ত্রিমাত্রিক গঠন হুবহু নকল করা খুবই কঠিন।

তিনি বলেন, 'আপনার দাঁতে আছে দুটি ভিন্ন ধরনের কঠিন টিস্যু, যেগুলো শরীরের একমাত্র দাঁতেই পাওয়া যায়, এদের তৈরি করে দুই প্রকারের ভিন্ন কোষ।' তবে তিনি এটাও বলেন, 'আমি চাই ইয়েলিক তার কাজ চালিয়ে যান; কারণ, আমার ধারণা ভুলও হতে পারে।'

আরেক পথ: প্রাপ্তবয়স্ক কোষকে বিভ্রান্ত করে ভ্রূণজাতজাত কোষে রূপান্তর

যখন ইয়েলিক দাঁতের স্ক্যাফোল্ডিং পদ্ধতি আরও নিখুঁত করছেন, তখন অন্য একদল গবেষক চেষ্টা করছেন এক ভিন্ন পদ্ধতির-প্রাপ্তবয়স্ক কোষকে এমনভাবে প্ররোচিত করা, যেন তারা ভ্রূণজাত বা এম্ব্রায়োনিক স্টেম সেলের মতো আচরণ করে।

আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষের শুরু হয় বুনিয়াদি কোষ বা স্টেম সেল থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে সক্ষম বা 'ফ্লেক্সিবল' বা সর্বকাজের কোষগুলোকে বলা হয় প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল। এই কোষরাজি চাইলে শরীরের যেকোনো কোষের রূপ নিতে পারে।

২০০০-এর দশকে জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গবেষক শিনিয়া ইয়ামানাকা এবং তার দল প্রমাণ করেন, প্রাপ্তবয়স্ক কোষেও এমন কিছু ট্রান্সক্রিপশন জিন যোগ করলে সেগুলো আবার প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেলে পরিণত হতে পারে।

এই জিনগুলো এখন পরিচিত 'ইয়ামানাকা ফ্যাক্টর' নামে।

এ প্রক্রিয়ায় তৈরি হওয়া কোষকে বলা হয় ইনডিউসড প্লুরিপোটেন্ট স্টেম সেল বা সংক্ষেপে আইপিএসসি। এই আইপিএসসি ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা বহু বছর ধরেই চেষ্টা করে চলেছেন শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ গজানোর।

দাঁত গজানোর সম্ভাবনা, কিন্তু টাকার জন্য কাজ আটকে গেছে

তাত্ত্বিকভাবে নতুন দাঁত গজানোর জন্য আইপিএসসি এক অসাধারণ উপায় হতে পারে। অনেক ধরনের প্রাপ্তবয়স্ক দাঁতের কোষকে সফলভাবে আইপিএসসিতে রূপান্তর করা সম্ভব হয়েছে। ২০১৩ সালেই চীনের একদল গবেষক দেখিয়েছিলেন, আইপিএসসি দিয়ে দাঁতের মতো গঠন তৈরি করা যায়।

২০২৪ সালে প্রকাশিত এক পর্যালোচনা প্রবন্ধে বলা হয়েছে, আইপিএসসি দিয়ে এমনকি ক্ষতিগ্রস্ত এনামেলও মেরামত করা যেতে পারে। তবুও পল শার্প এক জায়গায় এসে থেমে যান।

তিনি বলেন, 'যতক্ষণ না আইপিএসসি তৈরি ও প্রয়োগের খরচ দাঁতের ইমপ্ল্যান্টের চেয়ে কমে আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আইপিএসসি দিয়ে দাঁত গজানোর সম্ভাবনা বাস্তবে রূপ নেবে না।' যুক্তরাজ্যে আইপিএসসি দিয়ে দাঁত গজানোর খরচ কয়েক হাজার পাউন্ড পর্যন্ত হতে পারে।

'বিজ্ঞান যত ভালোই হোক না কেন,' বলেন শার্প, 'যদি সেটা এত ব্যয়বহুল হয় যে বাজারে পৌঁছাতেই না পারে, তাহলে প্রথম থেকেই তার কোনো মানে নেই।'

শার্পের নিজস্ব পথ

তাই পল শার্প এবং তাঁর সহকর্মীরা বেছে নিয়েছেন আরেকটা পথ, প্রাপ্তবয়স্ক কোষকে এমনভাবে পরিচালিত করা, যেন তারা দাঁতের মতো কোষে রূপ নেয়। তিনি বলেন, 'এটা বিশাল এক কাজ। কারণ, আপনি এমন কিছু করাতে চাইছেন, যেটা ওই কোষের স্বাভাবিক কাজ নয়।'

দাঁতের ইপিথিলিয়াল কোষ আর মেসেনকাইমাল কোষ একসঙ্গে দাঁত তৈরি করতে গেলে তারা একে অপরের মধ্যে জটিল রাসায়নিক সংকেত পাঠায়।

এই প্রক্রিয়া ঠিকভাবে কাজ করতে হলে অন্তত এক ধরনের কোষের এম্ব্রায়োনিক বা ভ্রূণজাত কোষ হওয়া দরকার। কারণ, শুধু তারাই সঠিক সংকেত পাঠাতে পারে দাঁতের গঠন শুরু করার জন্য। শার্প বলেন, এটাই সবচেয়ে বড় ও জটিল বাধা।

দাঁত গজানোর সংকেত, জিনের খেলা আর এক নতুন সম্ভাবনার গল্প এই জটিলতা কাটিয়ে উঠতেই গবেষক পল শার্প ও তার দল দাঁত গঠনের সময় কোষগুলোর মধ্যে যেসব রাসায়নিক সংকেত চালাচালি হয়, তার পুরো মানচিত্র বানিয়ে ফেলেছেন।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে তারা দাঁত গঠনের বিভিন্ন ধাপে জড়িত কোষগুলোর এক বিশদ কোষ মানচিত্র বা 'সেল অ্যাটলাস' প্রকাশ করেন। যেখানে দেখা যায়-কীভাবে এবং কোন ধাপে কোষগুলো সংকেত পাঠায়। এর পাশাপাশি তারা সেই সংকেতগুলোর শক্তি আরও বাড়ানোর কৌশলও বের করেছেন।

শার্প বলেন, 'এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ হলো এই সংকেতগুলো এমনভাবে ব্যবহার করা, যাতে ডেন্টাল ইপিথিলিয়াল আর মেসেনকাইমালের মতো প্রাপ্তবয়স্ক কোষদ্বয় একে অপরকে এমন ভাবতে বাধ্য করে; যেন দাঁত তৈরি করার সময় হয়ে গেছে।'

এই পদ্ধতির মূল আকর্ষণ হলো-এটা একেবারে স্বাভাবিক দাঁত গঠনের পদ্ধতির মতো কাজ করে। শার্প বলেন, 'আমাদের শরীর জানে কীভাবে দাঁত বানাতে হয়।' তবে বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রাপ্তবয়স্ক কোষকে সেটা করাতে রাজি করানো।

দুই দশকের গবেষণাও এখনো চেয়ারে পৌঁছায়নি

বাস্তবতা হলো, দাঁত গজানোর এই দুই পদ্ধতির কোনোটাই এখনো মানুষের শরীরে পরীক্ষা করা তো দূরের কথা, কোনো ডেন্টাল চেয়ারে পৌঁছানোও হয়নি।

এর একটা বড় কারণ হলো, দাঁতের চিকিৎসা গবেষণা অন্যান্য চিকিৎসাক্ষেত্রের তুলনায় অনেক কম তহবিল পায়। পামেলা ইয়েলিক বলেন, 'আপনি দাঁত ছাড়া বেঁচে থাকতে পারেন, কিন্তু হৃদয় বা মস্তিষ্ক ছাড়া না।'

নতুন সম্ভাবনা: স্টেম সেল ছাড়াই দাঁত গজানো?

তবে হাল ছাড়েননি সবাই। কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষক মেরি ম্যাকডগাল গত ২০ বছর ধরেই দাঁতের কোষ ও গঠন গজানোর চেষ্টায় আছেন। হেসে বলেন, 'তখন সব ইন্টারভিউতেই বলতাম, আর পাঁচ-দশ বছরেই দাঁত গজাবে। এখন বুঝি, ওটা ছিল একেবারে অতিমাত্রায় আশাবাদী কথাবার্তা।' কিন্তু এখন তিনি আবার আশাবাদী। কারণ, গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, স্টেম সেল ছাড়াও দাঁত গজানো সম্ভব হতে পারে।

এক বিরল রোগ এবার নিরাময় হতে পারে 

ম্যাকডগাল এমন এক গবেষণায় যুক্ত ছিলেন, যেটা দাঁত গজানোর নতুন এক পদ্ধতির ভিত্তি তৈরি করে। ওই পদ্ধতির ভিত্তি হলো জিনঘটিত এক বিরল রোগ, ক্লাইডোক্রেনিয়াল ডিসপ্লেসিয়া।

এই রোগে আক্রান্তদের কলারবোন একেবারেই হয় না বা খুব দুর্বল হয়। অন্যদিকে অনেক সময় অতিরিক্ত দাঁত গজায়।

রোগটা হয় আরইউএনটু নামের এক জিনে মিউটেশন হলে। এই জিন শরীরের হাড় আর দাঁতের গঠন নিয়ন্ত্রণকারী এক প্রোটিন তৈরি করে।

২০১৬ সালে জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির গবেষক কাতসু তাকাহাশির নেতৃত্বে এক গবেষণায় দেখা যায়, আরইউএনটু আসলে আরেক জিন, ইউএসএজি-১-এর সঙ্গে মিলে দাঁত গজানোর মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়। আরইউএনটু তে সমস্যা হলে যে কারণে অতিরিক্ত দাঁত গজায়। আর যদি ইঁদুরের শরীরে ইউএসএজি-১ কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তারাও অতিরিক্ত দাঁত পায়।

এবার বাস্তব প্রয়োগের পথে

তাকাহাশি আর তার সহকর্মীরা এখান থেকে আরেক ধাপ এগিয়ে ভাবলেন, ইউএসএজি-১ বন্ধ করলেই যদি দাঁত গজায়, তাহলে তো দাঁত গজানোর চাবিকাঠি ওটাই!

২০২১ সালে তারা এমন জেনেটিক্যালি পরিবর্তিত ইঁদুরে পরীক্ষা চালান, যাদের দাঁত গজানো বন্ধ ছিল। দেখা গেল, ইউএসএজি-১ বন্ধ করে দেওয়ার পর আবার দাঁত গজানো শুরু হয়।

তারা দুইভাবে এটি করেন, একবার জিনে পরিবর্তন ঘটিয়ে। দ্বিতীয়টি হলো, আরেকবার ইউএসএজি-১ প্রোটিনের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি দিয়ে। একই ফলাফল পেয়েছেন আরএনএ-ভিত্তিক থেরাপি দিয়েও।

এই গবেষণার ভিত্তিতে তারা প্রতিষ্ঠা করেন এক বায়োফার্মা কোম্পানি। উদ্দেশ্য, এমন অ্যান্টিবডি তৈরি করা, যা মানুষের শরীরেও ইউএসএজি-১ কর্মতৎপরতা বন্ধ করে দিয়ে দাঁত গজাতে সাহায্য করবে।

২০২৪ সালে তাঁরা জানান, এমন অ্যান্টিবডি তৈরি করে সেটা ইঁদুরের ওপর সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে।

এরপর তারা শুরু করেন ফেজ-১ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল-স্বাস্থ্যবান প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ওপর এই অ্যান্টিবডি প্রয়োগ করে পরীক্ষা চালানো হয়। জিনিসটা কতটা নিরাপদ এবং কোন মাত্রা বা ডোজে এটি কাজ করে, তা বোঝার জন্য।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা: দাঁতহীন শিশুর জন্য চিকিৎসা

যদি পরীক্ষাগুলো সফল হয়, তাহলে পরের ধাপে তারা পরীক্ষা চালাবেন এমন শিশুদের ওপর, যাদের বয়স ২ থেকে ৭ বছরের মধ্যে এবং জন্মগতভাবে দাঁত গজায় না-এই জিনঘটিত সমস্যা পরিচিত কনজেনিটাল ইডেন্টুলিজম নামে। ম্যাকডগাল বলেন, 'এই শিশুদের জন্য এমন চিকিৎসা মহা মূল্যবান হতে পারে।' না হলে, তিনি বলেন, 'তারা সারা জীবন ডেন্টারই পরে কাটাবে।'

দাঁত গজানোর দিন কি ফিরে আসছে?

ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে দাঁত নতুন করে গজানো তুলনামূলকভাবে সহজ; কারণ, তাদের মুখে এখনো অবশিষ্ট থাকে সেই 'ডেন্টাল ইপিথেলিয়াল সেলস', যেগুলো দাঁতের গঠন ও বিকাশে প্রয়োজনীয়। এমনটাই জানালেন মার্কিন গবেষক ম্যাকডগাল। তবে জাপানের তাকাহাশি যে পদ্ধতিতে নতুন দাঁত গজানোর ওষুধ বানাচ্ছেন, সেটা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কতটা কাজ করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। কারণ, অধিকাংশ বড় মানুষের মুখে এই কোষগুলো আর থাকে না।

তবে আশার কথা, ম্যাকডগালের ধারণা অনুযায়ী, মানুষের চোয়ালে হয়তো এখনো সামান্য কিছু স্টেম সেল থেকে থাকতে পারে, যেগুলো নির্দিষ্ট ড্রাগের প্রতিক্রিয়ায় সক্রিয় হয়ে দাঁতের বিকাশ ঘটাতে পারে। যদিও এই বিষয়ে জোনাথন শার্পের মতো বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান। তার যুক্তি, নতুন দাঁত গজানো শুরু হলে সেটা কোথা থেকে শুরু হবে, তা নিয়ন্ত্রণ করাই সবচেয়ে কঠিন ব্যাপার। কারও যদি শুধু একটা দাঁত না থাকে, আর যদি ওষুধ খেয়ে হঠাৎ করে ছয়টা দাঁত গজাতে শুরু করে, তবে তো সেটি ভয়াবহ ঝুঁকির ব্যাপারই হয়ে দাঁড়াবে।

এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে আগামী কয়েক বছরের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্য দিয়েই। জাপানের টোরেগেম বায়োফার্মা জানিয়েছে, তারা ২০৩০ সালের মধ্যে এই দাঁত গজানোর ওষুধ বাজারে আনতে চায়।

কিন্তু এত সব গবেষণার শুরু হয়েছিল এক সাধারণ সাংবাদিকের প্রশ্ন দিয়ে। সেই প্রশ্নটাই ধাক্কা দিয়েছিল শার্পকে এক নতুন গবেষণার পথে হাঁটতে। এখন এসে দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তিগত বাধা আর নেই বললেই চলে, কিন্তু অর্থনৈতিক বাধাই সবচেয়ে বড়।

শার্প দুশ্চিন্তায় আছেন-এই প্রযুক্তি হয়তো বাস্তব রূপ পাবে না শুধু এই কারণে যে গবেষণার তহবিল জোগানদার প্রতিষ্ঠানগুলো, ওষুধ কোম্পানিগুলো বা ভেঞ্চার ক্যাপিটালিস্টরা এই ধরনের গবেষণায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। টোরেগেম হয়তো একটা ব্যতিক্রম, একরকম 'আশাবাদী ব্যতিক্রম-যারা এই অসম্ভবকে সম্ভব করার সাহস দেখাচ্ছেন।

শার্পের কণ্ঠে হাহাকার ধ্বনি, 'আমরা এমন সবকিছু নিয়ে বসে আছি, যেগুলো যে কাজ করবে, সেটা আমরা নিশ্চিত; কিন্তু মানুষের ওপরে পরীক্ষার জন্যই কোনো তহবিল পাওয়া যাচ্ছে না, আর বাজারজাত করা তো অনেক দূরের কথা।'

তবে সবাই এতটা হতাশ নন। যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ইয়েলিক বলেন, 'আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী ১০ বছরের মধ্যেই আমরা এমন জৈবিক দাঁতের বিকল্প পেয়ে যাব। এই দাঁত মানুষকে নতুন করে চিবোনোর স্বাধীনতা দেবে।'

দাঁত হবে কী নতুন ফ্যাশনের অঙ্গ!

মূল লেখার বৈজ্ঞানিক সুরের মাঝে একটু হাস্যরস এবং ভবিষ্যতের কল্পনার জায়গা তৈরি করে নেওয়া যায় যেমন, যদি সত্যিই দাঁত গজানোর এই চিকিৎসা একদিন সফল হয়, তাহলে এর প্রভাব শুধু চিকিৎসাজগতে সীমাবদ্ধ থাকবে না-পড়বে ফ্যাশনজগতেও! ভাবুন একবার, আপনার সামনের দাঁত দুটো যদি গরুর দাঁতের মতো বড় আর খাঁজকাটা হয়, আপনি কি সেটা রেখে দেবেন? নাকি ফেলে দিয়ে নতুন এক জোড়া ঝকঝকে দাঁত গজানোর চেষ্টা করবেন?

হয়তো একদিন দাঁতও হয়ে উঠবে সাজসজ্জার অঙ্গ-যেমন এখন নাকফুল বা চুলের রং। টাকাওয়ালা অনেকেই নিজের দাঁতের আকৃতি বা ছাঁদ নিয়ে নতুন নতুন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। দাঁতে কারুকাজ, অলংকার, এমনকি দাঁত বদলের ফ্যাশনও! অতীতে তো ছিলই-সোনার দাঁতের চল, যেটা নিয়ে গ্রামবাংলায় আজও অনেক চুটকি চালু আছে। 

সেই পুরোনো ঐতিহ্যই হয়তো ফিরে আসবে নতুন রূপে। কে জানে, দাঁত হয়তো একদিন হবে একান্ত ব্যক্তিগত স্টাইলের প্রকাশ-ঠিক যেমন জামাকাপড় বা ট্যাটু। 

দাঁত থাকতে দাঁতে মর্যাদা বুঝি না-যুগ যুগ ধরে চালু প্রবাদটি কি হঠাৎ বাতিল হয়ে যাবে? নাকি অতীত দিকের স্মৃতি হিসেবে চালুই থাকবে। কড়ির ব্যবহার উঠে গেছে কবেই, তারপর আজও বলি, ফেলো কড়ি মাখো তেল! দাঁত থাকতে দাঁতের মর্যাদা বোঝে না প্রবাদের অর্থে বলা হবে, এককালে মানুষের দাঁত একবার পড়ে গেলে আর গজাত না, সে সময় এই প্রবচন চালু হয়েছিল ইত্যাদি।

তাহলে বাংলাদেশিদের জন্য কি আশা আছে?

এই প্রশ্নের উত্তরও এখন আর কল্পনাতেই আটকে নেই। টোরেগেম যদি তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারে, আর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলো সফল হয়, তাহলে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও একদিন এই ওষুধ পৌঁছাবে-হয়তো একটু দেরিতে। আর তখন দাঁত হারানো মানেই চিরদিনের কষ্ট, এই ধারণাটাই বদলে যাবে।

বাংলাদেশে দন্তচিকিৎসার অবস্থা বেশ বৈষম্যমূলক। শহুরে কিছু অংশ ছাড়া সিংহভাগ মানুষ এখনো দাঁতের চিকিৎসা বলতে বোঝেন দাঁত তোলা, আর সর্বোচ্চ ডেন্টাল ব্রিজ বা দন্তমালা। অথচ এক ২০২২ সালের এক জরিপে বাংলাদেশ ডেন্টাল সোসাইটি বলছে, দেশে প্রায় ২ কোটির মতো মানুষ বিভিন্ন মাত্রার দাঁতের ক্ষয়, দাঁত না থাকা কিংবা দন্তহীনতায় ভুগছেন। এদের মধ্যে অনেকেই বয়সে প্রবীণ। অর্থাভাবে কিংবা পর্যাপ্ত ডেন্টাল সুবিধার অভাবে কোনো সঠিক চিকিৎসা পান না।

তাই একটি ইনজেকশনের মাধ্যমে নিজের দাঁত ফেরত দিতে পারে এমন এক ওষুধ যদি সত্যি একদিন বাংলাদেশেও আসে, তবে সেটা শুধু চিকিৎসা নয়, অসংখ্য মানুষের কাছে একধরনের জীবন পরিবর্তনের সুযোগ হয়ে উঠবে। তার আগে ওষুধকে সাধারণ মানুষের ট্যাঁকসই হতে হবে। কেনার সাধ্যের মধ্যে থাকতে হবে। প্রথম দিকে ওষুধের দাম বেশি থাকলেও সময়ের সাথে সাথে দাম পড়ে যায়-অনেক ওষুধের বেলায় এ কথার প্রমাণ পাওয়া গেছে। দাঁত গজানোর ওষুধের দামও সেভাবেই সাধারণ মানুষের নাগালে এসে যাবে, হয়তো একটু সময় লাগবে। 
তাহলে কি এবার সত্যিই আবার দাঁত গজানোর যুগ এসে গেল?
সম্ভবত।
এইবার, সত্যিই সেটা হতে পারে। এখন শুধু অপেক্ষা...।
 

Related Topics

টপ নিউজ

ইজেল / দাঁত / বাংলাদেশি / যুক্তরাজ্য / মানুষ / বিজ্ঞান / চিকিৎসা / চিকিৎসক / বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা / যুক্তরাষ্ট্র

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.

MOST VIEWED

  • নতুন ৩ ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক
  • জুলাই হত্যাকাণ্ড: হাসিনাসহ ৪ জনের ফাঁসি চাইলেন নিউরো সায়েন্সেসের চিকিৎসক
  • সেই তন্বির সম্মানে ডাকসুতে গবেষণা সম্পাদক পদে প্রার্থী দিচ্ছে না ছাত্রদল ও বাগছাস
  • বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি
  • বাধ্যতামূলক ছুটিতেও অফিস করছেন বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুল
  • টিআর-কাবিখার ২,১৬২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে: ত্রাণ উপদেষ্টা

Related News

  • মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় লিবিয়ায় যাওয়া ১৭৫ বাংলাদেশি দেশে ফিরলেন
  • রাশিয়ান তেল আমদানিতে ভারতের বেলায় কঠোর ট্রাম্প, চীনের বেলায় নয় কেন?
  • বাণিজ্যে ট্রাম্পের আক্রমণের শিকার কোন দেশ কী করছে
  • ‘বিশ্বের সবচেয়ে দয়ালু বিচারক’ ফ্র্যাঙ্ক ক্যাপ্রিও মারা গেছেন
  • যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপ সত্ত্বেও ভারতকে তেল বিক্রি চালিয়ে যাবে রাশিয়া

Most Read

1
অর্থনীতি

নতুন ৩ ব্যাংকের সম্পদের মান যাচাই শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

2
বাংলাদেশ

জুলাই হত্যাকাণ্ড: হাসিনাসহ ৪ জনের ফাঁসি চাইলেন নিউরো সায়েন্সেসের চিকিৎসক

3
বাংলাদেশ

সেই তন্বির সম্মানে ডাকসুতে গবেষণা সম্পাদক পদে প্রার্থী দিচ্ছে না ছাত্রদল ও বাগছাস

4
বাংলাদেশ

বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের কমিটি

5
বাংলাদেশ

বাধ্যতামূলক ছুটিতেও অফিস করছেন বিএফআইইউ প্রধান শাহীনুল

6
বাংলাদেশ

টিআর-কাবিখার ২,১৬২ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে: ত্রাণ উপদেষ্টা

EMAIL US
contact@tbsnews.net
FOLLOW US
WHATSAPP
+880 1847416158
The Business Standard
  • About Us
  • Contact us
  • Sitemap
  • Privacy Policy
  • Comment Policy
Copyright © 2025
The Business Standard All rights reserved
Technical Partner: RSI Lab

Contact Us

The Business Standard

Main Office -4/A, Eskaton Garden, Dhaka- 1000

Phone: +8801847 416158 - 59

Send Opinion articles to - oped.tbs@gmail.com

For advertisement- sales@tbsnews.net