লতিফ সিদ্দিকীসহ ১৬ জনকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত যারা নিয়েছেন, তারা সরকার কিংবা দেশের স্বার্থে কাজ করেননি: বার্গম্যান

এটি স্পষ্ট নয় যে বাংলাদেশের সরকারের/পুলিশের মধ্যে কে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে 'মঞ্চ ১৯৭১'-এর বৈঠকে বাধা মোকাবিলার সেরা উপায় হলো আয়োজনকারী এবং অংশগ্রহণকারী, যার মধ্যে সাবেক আওয়ামী লীগ রাজনীতিবিদ লতিফ সিদ্দিকীও রয়েছেন, তাদের গ্রেপ্তার করা। কিন্তু যারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তারা যে সরকার কিংবা দেশের স্বার্থে কাজ করেননি, তা নিশ্চিত।
বৈঠকে কী বলা হয়েছে বা হতে পারে, তা নিয়ে আপনার দ্বিমত থাকতে পারে। নিঃসন্দেহে কিছু বক্তব্য কিছু মানুষের বা কিছু রাজনৈতিক দলের কাছে উস্কানিমূলক মনে হতে পারত। তবু এটি স্পষ্ট যে, বৈঠকে অংশ নেওয়ার সময় গ্রেপ্তার হওয়া ১৬ জন কোনো অপরাধ করেননি।
এই সরকার ও পুলিশ যদি সত্যিই দেশকে নতুন পথে নিয়ে যেতে চায়, তবে বুঝতে হবে রাজনৈতিক সুবিধার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা বা তার মানবাধিকার কেড়ে নেওয়া কখনোই ন্যায়সঙ্গত নয়। আওয়ামী লীগের শাসনামলে বহু অনিয়মের পেছনে এই মনোভাবই কাজ করেছে। আজকের বাংলাদেশে নতুন রাজনৈতিক শক্তির মাঝেও এই মানসিকতা দেখা যাচ্ছে, যার ফলস্বরূপ এই ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এই গ্রেপ্তার শুধু আইনি প্রক্রিয়ার দিক থেকেই ভুল নয়, বরং এটি বৈঠকে বাধা দেওয়া 'মব'-কেও সবুজ সংকেত দেয়, যা ভবিষ্যতে তাদের এ ধরনের কাজ চালিয়ে যেতে উৎসাহিত করবে।
পাশাপাশি, এ ধরনের পদক্ষেপ এমন ধারণা তৈরি করে যে বর্তমান সরকার "১৯৭১-এর বিরোধী"। যদিও আমি মনে করি না সরকারের বেশিরভাগের এমন কোনো উদ্দেশ্য আছে। এই গ্রেপ্তার আওয়ামী লীগের সেই কৌশলকে আরও জোরালো করে, যা তাদের বর্তমান সরকারকে "মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী" হিসেবে তুলে ধরতে সাহায্য করে।
ঘটনার পরদিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে ফৌজদারি মামলা করেছে এবং আদালত জামিন নাকচ করেছে। অথচ অভিযোগে কী বলা হয়েছে? একেবারেই অযৌক্তিক। জানা গেছে, এফআইআরে উল্লেখ করা হয়েছে যে লতিফ সিদ্দিকী "সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে এবং বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উৎখাত করার জন্য অন্যদের উসকানি দিচ্ছিলেন।"
এটি স্পষ্টতই রাষ্ট্রের সরাসরি মিথ্যা বয়ান। আওয়ামী লীগ আমলে বিরোধী সভা ভাঙতে গিয়েও পুলিশের মুখে একই ধরনের মিথ্যা বিবৃতি শোনা গেছে।
কেউ কি আমাকে বলতে পারেন যে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পুলিশের করা মিথ্যা মামলা এবং এই মামলার মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য আছে? এবং এই ধরনের রাষ্ট্রীয় প্রতারণার বিরুদ্ধে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারার চরম ব্যর্থতা এখনো একই রয়ে গেছে।
কোনো সন্দেহ নেই যে কিছু রাজনৈতিক শক্তি সরকারকে অস্থিতিশীল করতে চায় এবং নির্বাচন পেছানোর পথ খুঁজছে। কিন্তু সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ কেবল আরও বেশি বিভাজন ও অসন্তোষ বাড়াবে এবং এর মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা আরও একবার প্রশ্ন তোলে যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগের আওয়ামী লীগ সরকারের থেকে কতটা আলাদা।
ডেভিড বার্গম্যান ব্রিটিশ সাংবাদিক। লেখাটি তার ফেসবুক থেকে নেওয়া।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: নিবন্ধের বিশ্লেষণটি লেখকের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও পর্যবেক্ষণের প্রতিফলন। অবধারিতভাবে তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর অবস্থান বা সম্পাদকীয় নীতির প্রতিফলন নয়।