রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে সংযুক্ত করতে ‘পুতিন–ট্রাম্প টানেল’ নির্মাণের প্রস্তাব দিলেন ক্রেমলিনের দূত

রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে বেরিং প্রণালীর নিচে 'পুতিন–ট্রাম্প রেল টানেল' নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছেন ক্রেমলিনের একজন দূত। তার দাবি, এই প্রকল্প দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগের নতুন পথ তৈরি করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক সম্পদের যৌথ অনুসন্ধান ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনা উন্মোচনে সহায়তা করবে।
রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ তহবিল আরডিআইএফ–এর প্রধান ও প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিনিয়োগবিষয়ক দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভ এই প্রস্তাব দেন।
তার পরিকল্পনা অনুযায়ী, মস্কো ও 'আন্তর্জাতিক অংশীদারদের' অর্থায়নে প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে ৭০ মাইল (প্রায় ১১২ কিলোমিটার) দীর্ঘ রেল ও পণ্য পরিবহন লাইন নির্মাণ করা হবে, যা আট বছরের মধ্যেই সম্পন্ন করা সম্ভব বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
রাশিয়া–যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত মস্কোর বিশেষ কূটনীতির অন্যতম পরিচিত মুখ কিরিল দিমিত্রিয়েভ বৃহস্পতিবার রাতে এই ধারণা তুলে ধরেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের উপায় খুঁজতে বুদাপেস্টে বৈঠকে বসার বিষয়ে সম্মত হন।
শুক্রবার ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে এক বৈঠকে সাংবাদিকেরা ট্রাম্পকে এই প্রস্তাব নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, "বিষয়টি বেশ মজার।" এরপর তিনি জেলেনস্কিকে জিজ্ঞেস করেন, এ বিষয়ে তার মত কী। জবাবে জেলেনস্কি বলেন, "এই ধারণা নিয়ে আমি খুশি নই।" তার মন্তব্যে উপস্থিত মার্কিন কর্মকর্তারা হেসে ওঠেন।
ইলন মাস্কের কোম্পানিকে ঠিকাদার হিসেবে নিয়োগের প্রস্তাব
দিমিত্রিয়েভ এক্স–এ (সাবেক টুইটার) লিখেছেন, 'বেরিং প্রণালী দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া সংযোগের স্বপ্ন দীর্ঘদিনের—১৯০৪ সালের সাইবেরিয়া–আলাস্কা রেলপথ পরিকল্পনা থেকে শুরু করে রাশিয়ার ২০০৭ সালের প্রকল্প পর্যন্ত। আরডিআইএফ বিদ্যমান প্রস্তাবগুলো, যেমন যুক্তরাষ্ট্র–কানাডা–রাশিয়া–চীন রেলপথ পরিকল্পনা, পর্যালোচনা করেছে এবং সবচেয়ে কার্যকর প্রকল্পে সহায়তা দেবে।'
বেরিং প্রণালীর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশের প্রস্থ ৫১ মাইল (প্রায় ৮২ কিলোমিটার)। এটি রাশিয়ার জনবিরল চুকোটকা অঞ্চলকে আলাস্কা থেকে পৃথক করেছে। দুই অঞ্চলকে সংযুক্ত করার চিন্তা অন্তত ১৫০ বছরের। প্রণালীর মাঝখানে রয়েছে ছোট দুটি দ্বীপ—একটি রাশিয়ার, অন্যটি যুক্তরাষ্ট্রের। দুই দ্বীপের মধ্যে দূরত্ব মাত্র ২.৪ মাইল (প্রায় ৪ কিলোমিটার)।
দিমিত্রিয়েভ—যিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন—প্রস্তাব দেন, মার্কিন জ্বালানি কোম্পানিগুলো রাশিয়ার আর্কটিক অঞ্চলের প্রকল্পে অংশ নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, টানেলটি নির্মাণ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের বিলিয়নিয়ার উদ্যোক্তা ও ট্রাম্পের একসময়ের সহযোগী ইলন মাস্কের মালিকানাধীন টানেল নির্মাণ প্রতিষ্ঠান 'দ্য বোরিং কোম্পানি'।

দিমিত্রিয়েভ এক্স–এ (পূর্বের টুইটার) মাস্ককে উদ্দেশ করে লেখেন, 'ভাবুন তো, "পুতিন–ট্রাম্প টানেল" দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া, আমেরিকা ও আফ্রো-ইউরেশিয়াকে যুক্ত করা হচ্ছে—৭০ মাইল দীর্ঘ এই সংযোগ হবে ঐক্যের প্রতীক। প্রচলিত খরচ যেখানে ৬৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি, সেখানে @boringcompany–এর প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটি ৮ বিলিয়নের কম ব্যয়ে সম্পন্ন করা সম্ভব। আসুন, আমরা একসঙ্গে ভবিষ্যৎ গড়ি।'
যদিও মাস্ক তাৎক্ষণিক এই প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, টানেল নির্মাণের পাশাপাশি প্রণালীর দুই তীরে অবকাঠামো উন্নয়নে বিপুল অর্থ ব্যয় হবে। রাশিয়ার চুকোটকা অঞ্চলে বর্তমানে সড়ক ও রেল যোগাযোগ খুবই সীমিত।
দিমিত্রিয়েভ বলেন, স্নায়ু যুদ্ধের সময় একসময় বেরিং প্রণালীর ওপর দিয়ে 'কেনেডি–খ্রুশ্চেভ বিশ্ব শান্তি সেতু' নির্মাণের প্রস্তাব উঠেছিল। তিনি সেই সময়কার একটি নকশা শেয়ার করেন, যেখানে সেতুর সম্ভাব্য রুট দেখানো হয়েছে; পাশাপাশি নতুন টানেলের সম্ভাব্য রুটেরও চিত্র শেয়ার করেন।
দিমিত্রিয়েভ আরও বলেন, "আরডিআইএফ ইতোমধ্যে ইতিহাসের প্রথম রাশিয়া–চীন রেল সেতুতে বিনিয়োগ করেছে এবং তা নির্মাণ করেছে। এখন সময় এসেছে আরও বড় কিছু করার—মানব ইতিহাসে প্রথমবারের মতো মহাদেশগুলোকে যুক্ত করার। সময় এসেছে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে সংযুক্ত করার।"