এক শ বছরের লাইকা: যেভাবে বদলে দিল আলোকচিত্রের ইতিহাস

লাইকা ক্যামেরার নামটি প্রথম পড়েছিলাম সেই সুদূর কৈশোরে। যখন বই পড়ার নেশা ছিল একধরনের জীবনভর সঞ্চিত সম্পদ। নাটক-নভেল বাদ দিয়ে পড়ার বই বেশি বেশি করে পড়ো-জাতীয় উপদেশ দিতেন অনেক মুরব্বি। গল্পের বই মানেই 'অ-পাঠ্য', তাই চোখ রাঙানো চলত অহরহ। সৌভাগ্য, আমার আব্বা-আম্মাই এই 'অ-পাঠ্য' বই আমাদের হাতে তুলে দিতেন। তবে ডিটেকটিভ বইসংক্রান্ত একটা নিষেধাজ্ঞা ছিল। যা মানিনি। লুকিয়ে পড়েছি ওই জাতীয় বই।
সে কথা থাক, কাজী আনোয়ার হোসেনের সাড়া জাগানো কুয়াশা সিরিজে হঠাৎ চোখে পড়েছিল এই রহস্যময় শব্দ–'লাইকা'। নামটি কেমন যেন কানে বাজল, মনে গেঁথে রইল চিরদিনের মতো। কিন্তু সিরিজের কোন বইতে, কীভাবে এসেছিল নামটি–সেই প্রশ্ন দীর্ঘদিন অমীমাংসিত রয়ে গেল। অবশেষে মুশকিল আসান করলেন কাজী ভাইয়ের ছোট ছেলে, কাজী মায়মুর হোসেন। ধৈর্য ধরে বই ঘেঁটে খুঁজে বের করলেন যে কুয়াশা সিরিজের তৃতীয় খণ্ডেই 'লাইকা'র প্রথম উপস্থিতি। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৬৫-এর অক্টোবরে। তখন আমি ক্লাস সিক্সের ছাত্র। বইতে লাইকার প্রসঙ্গটি এসেছে এভাবে–
'...এইভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই একটা মানুষের মুখ তৈরি হয়ে গেল। খোদা বক্সই বলে দিল কোন অংশটা কেমন ছিল। কিন্তু মূর্তিটা যখন তৈরি হয়ে গেল, তখন ও পরম আশ্চর্য হয়ে বলল, "হুজুর, আজব কাণ্ড! আমি কসম খেয়ে বলতে পারি, এই লোকটাই কাল রাতে এসেছিল!" মি. সিম্পসন তার ইলেকট্রনিক ফ্ল্যাশ গান ফিট করা লাইকা ক্যামেরা দিয়ে মূর্তিটার দুটো স্ন্যাপ নিলেন, আবার মূর্তিটাকে খুলে বাক্সে ভরে ফেললেন। তারপর শহীদকে বললেন, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড থেকে এনেছি এটা। এই বাক্সটাকে কি বলে জানো? একে বলে... আইডেন্টি-কিট।'
ছোট্ট এই উদ্ধৃতির মধ্য দিয়েই যেন বোঝা যায়, লাইকা শুধু একটি যন্ত্র নয়, বরং গোয়েন্দা কাহিনির রহস্যময় আবহে ঢুকে পড়া এক চরিত্র, এক সহযাত্রী। আশ্চর্য এই যন্ত্র একসময় বাস্তব দুনিয়াতেও হয়ে উঠেছিল রহস্যভেদী হাতিয়ার। কেউ হাতে রাখলেই তার চোখের সামনে খুলে যেত ইতিহাসের অদেখা অধ্যায়।
স্মৃতির ভাঁজে আরেকটা ছবি ভেসে ওঠে, ব্রিটিশ হাইকমিশনের প্রকাশনা 'বৃটিশ দর্পণ'। সাদাকালো মনকাড়া ছবিতে ভরা সেই সাময়িকীতে ছবি পাঠানোর আহ্বান জানিয়ে বলা হতো, প্রকাশিত প্রতিটি ছবির জন্য দেওয়া হবে 'গিনি'। আজ আর মনে নেই কয় গিনি, কিন্তু সেই পুরস্কারের লোভে নয়, ছবিগুলোর অনন্য সৌন্দর্যেই চোখ আটকে যেত। সেখানে প্রকাশিত ছবির ক্যামেরার নাম লেখা থাকত কি না, মনে পড়ে না, তবে পরবর্তী সময়ে বিশ্বখ্যাত বহু আলোকচিত্রে যখন 'লাইকা' শব্দটি ভেসে উঠতে দেখলাম, তখনই বুঝলাম এ যেন নিছক ক্যামেরা নয়, বরং আলোকচিত্রের ইতিহাসে এক বিপ্লবের প্রতীক।
তারপর এল লাইফ সাময়িকীর দিন। মোটা কাগজে ছাপা, একের পর এক ছবিতে সাজানো একেকটি গল্প। বলা ভালো, লেখার চেয়ে ছবির ভাষাই ছিল সেখানে শক্তিশালী। আমি প্রথম ভালো ছবির স্বাদ পাই লাইফ ম্যাগাজিনের কল্যাণেই। সেখানেই প্রথম দেখি যুদ্ধ, শান্তি, আনন্দ ও বেদনার সম্মিলিত কাহিনি, আর এক অমর ফ্রেম 'নাপাম কন্যা'।

১৯৭২ সালের ৮ জুন, দক্ষিণ ভিয়েতনামের ট্রাং ব্যাং গ্রাম। মার্কিন বিমান থেকে ঝরে পড়ছিল নাপাম বোমা–জ্বলন্ত জেলি জাতীয় রাসায়নিক, যা স্পর্শ করলেই মাটি, গাছপালা, ঘরবাড়ি আর মানুষের শরীর পুড়ে গলে যায়। সেই আগুনের ভেতর এক আট বছরের কিশোরী দৌড়াচ্ছিল–সম্পূর্ণ নগ্ন, শরীর দগ্ধ, চোখ ভয়ে স্থির। তার নাম ফান থি কিম ফুক। এপির ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত ফটোসাংবাদিক নিক উট লেন্স তুললেন, আর ফ্রেমে বন্দী হলো বিশ শতকের সবচেয়ে বেদনাদায়ক যুদ্ধ-ছবিগুলোর একটি। সেই ছবিই জিতল পুলিৎজার, আর কিম ফুকের শরীরে রয়ে গেল ৬৫ শতাংশ পোড়া ক্ষত। বাকি জীবন তাকে লড়াই করতে হয়েছে যন্ত্রণার সঙ্গে, দুঃসহ স্মৃতির সঙ্গে। তবু তিনি একদিন বললেন, 'আমি চাই, আমার গল্প যেন আরেকটি শিশুকে বাঁচায়। আগুন যেন আর কারও গায়ে না পড়ে।' যে যন্ত্র দিয়ে সেই ছবি তোলা হয়েছিল, সেটি ছিল লাইকা।
আসলে লাইকার জন্মই হয়েছিল দুনিয়ার চোখকে নতুনভাবে দেখানোর জন্য। বিংশ শতকের শুরুতে ছবি মানেই ছিল বিশাল কাঠামোর ক্যামেরা, ভারী গ্লাস-প্লেট বা বড় নেগেটিভ ফিল্ম, আর একবার ছবি তুলতে লাগত সময়সাপেক্ষ প্রস্তুতি। সেই প্রেক্ষাপটে ১৯১৪ সালে জার্মান প্রকৌশলী অস্কার বার্নাক ভেৎসলারের ছোট্ট শহরে তৈরি করেছিলেন এক পরীক্ষামূলক যন্ত্র–হাতে ধরা যায়, পকেটে গুঁজে রাখা যায়, প্রয়োজনে লুকিয়েও নেওয়া যায়। যুদ্ধবিরতির পর যখন ১৯২৫ সালে সেই যন্ত্র বাজারে আসে 'খবরপধ ও' নামে, আলোকচিত্র এক ধাক্কায় বদলে গেল। এটি হয়ে উঠল রাস্তার ফটোগ্রাফির অবলম্বন। সংবাদ-ছবির ভরসা। আর শৈল্পিক ফটোগ্রাফির নতুন জানালা।
সেই মুহূর্ত থেকেই লাইকা শুধু প্রযুক্তি নয়, একধরনের দর্শন। 'ধীরে ছবি তোলা'। ভাবনাচিন্তা করে মুহূর্তকে ধারণ করার এক শিল্প হয়ে দাঁড়াল এটি। হেনরি কার্টিয়ে-ব্রেসোঁ যেমন তার লাইকা দিয়ে খুঁজে পেয়েছিলেন 'নির্ণায়ক মুহূর্ত'। জলাশয়ের ওপর দিয়ে লাফানো এক মানুষের ছবি আজও সেই দর্শনের প্রতীক হয়ে আছে। আবার স্প্যানিশ গৃহযুদ্ধের রবার্ট কাপার 'মৃতপ্রায় রিপাবলিকান সৈনিক', দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে চুম্বনরত নাবিক আর তরুণী, কিংবা আলবের্তো কর্দার কিংবদন্তি চে গুয়েভারার প্রতিকৃতি, সব কটিই লাইকার লেন্সে ধরা।
এভাবেই লাইকা হয়ে উঠল শুধু ক্যামেরা নয়, এক অদৃশ্য সুতো, যা বেঁধে রাখে বিংশ শতকের অশান্ত রাজনীতি, যুদ্ধ, বিপ্লব, প্রেম আর মানবিকতার গল্প। আর আজ, এক শ বছর পর আমরা ফিরে দেখি সেই ক্লিকের জন্মকে, যে ক্লিক সত্যিই বদলে দিয়েছিল আলোকচিত্রের ইতিহাস।
ছোট্ট, কমপ্যাক্ট, বিপ্লবী যন্ত্র লাইকা, যার ছিল ৩৫ মিলিমিটার ফিল্ম। এটি ২৪*৩৬ ফ্রেম সাইজ নামেও পরিচিত। ১৯২৫ সালের ১ মার্চ, জার্মান ব্যবসায়ী আর্নস্ট লাইৎস দ্বিতীয় এটি প্রথমবার প্রদর্শন করেন লেইপজিগ ট্রেড ফেয়ারে। সেকালে নতুন নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবনের প্রদর্শনী কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত ছিল লেইপজিগ ট্রেড ফেয়ার। লাইকা প্রদর্শনের দিন থেকেই শুরু হয় নতুন এক যুগ। আকারে ছোট, অপটিক্যাল গুণমানের সেরা, এ কারণে ক্যামেরাটি মুহূর্তেই জয় করে নেয় পেশাদার ও অপেশাদার উভয়ের মন। সেই থেকে লাইকা ক্যামেরাই বন্দী করে চলেছে পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো। লাইকা নামেও ভাষার কেরামতি রয়েছে। লাইৎস নামাংশ থেকে লাই এবং ক্যামেরার ক্যা এই দুই মিলিয়ে করা হয়েছে লাইকা। লাইকা সাধারণ কোনো জার্মান শব্দ নয় বরং ব্র্যান্ড নাম।

লাইকার জন্মশতবর্ষ উদযাপন
২০২৫ সালের ২৫ থেকে ২৭ জুন, জার্মানির ছোট্ট শহর ভেৎসলার। শহরটিতে মাত্র ৫০ হাজারের কিছু বেশি মানুষ বাস করে। এখানেই আয়োজন করা হয় লাইকার জন্মশতবার্ষিকীর উৎসব। এ শহরের কেন্দ্রেই দাঁড়িয়ে আছে লাইটজ পার্ক, ব্র্যান্ডের ভক্তদের কাছে এ এক 'ডিজনিল্যান্ড'। প্রায় ২০ বছর আগে পার্কটির নির্মাণ শুরু হয়, ২০১৮ সালে সমাপ্ত হয়। শুধু গত বছরই এখানে ভিড় জমিয়েছিলেন ৬০ হাজার দর্শক।
সেই উৎসব ছিল আলোকচিত্রী, পর্যটক, লাইকা কর্মী, ব্যবসায়ী আর সাংবাদিকদের ভিড়ে মুখর। প্রায় ৮০০ অতিথির সমাগম ঘটে, যাদের বড় অংশই এসেছিলেন এশিয়া থেকে, বিশেষত জাপান থেকে। কারণ 'উদীয়মান সূর্যের দেশ' লাইকার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। এখানেই বিক্রি হয় তাদের একমাত্র স্মার্টফোন। তৃতীয় বিশ্বের বাজার তো দূরের কথা, যা এখনো ইউরোপেই আসেনি।
অতিথিদের হাতে ঝুলছিল ক্যামেরা। অনেকের কাছে এ যেন এরমেস ব্যাগের মতোই ফ্যাশনের প্রতীক। কেউ কেউ আবার ক্যামেরাটিকে প্রায় 'ফেটিশ' স্তরে নিয়ে গেছেন। আসলে লাক্সারি ব্র্যান্ড এরমেসও আগে লাইকার পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছে।
প্রদর্শনী, কনসার্ট আর ডকুমেন্টারি
শতবর্ষ উদ্যাপনের কর্মসূচি ছিল ভরপুর নানা আয়োজন নিয়ে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল রঙের জাদুকর বলে খ্যাত আলোকচিত্রী জোয়েল মেয়ারোভিৎসের প্রদর্শনী। সদা হাস্যময় ৮৭ বছর বয়সী এই নিউইয়র্কবাসী ভক্তদের জন্য বইয়ে স্বাক্ষর দিলেন। আবার সানন্দে ছবি তুললেন সবার সঙ্গে।
সেখানে আরও ছিল ছোট্ট এক সংগ্রহশালা। তাতে ছিল ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী জেমি কালামের তোলা ছবি। তিনি নিজেও লাইকা অনুরাগী। শুধু তা-ই নয়, ২৬ জুন বৃহস্পতিবারের মহাভোজ বা গালা ডিনারে তিনি সরাসরি গান পরিবেশন করেন।
সেই রাতেই ডিজার্ট পরিবেশনের আগমুহূর্তে অতিথিদের সামনে প্রদর্শিত হয় প্রায় সমাপ্ত অবস্থার এক তথ্যচিত্র, 'লাইকা: এক শতাব্দীর সাক্ষী', পরিচালক রেইনার হোলৎসেমারের নির্মাণ। এতে খ্যাতনামা আলোকচিত্রীরা তুলে ধরেছেন তাদের লাইকা-অভিজ্ঞতা। মেয়ারোভিৎস ছাড়াও ছিলেন স্টিভ ম্যাককারি ও সদ্যপ্রয়াত সেবাস্তিয়াও সালগাদো। ছবিটিতে ছিল অনেক চমক। যেমন প্রকাশ পেয়েছে, দ্য পুলিশ ব্যান্ডের সাবেক গিটারিস্ট অ্যান্ডি সামার্স-ও আসলে লাইকা-পাগল। শিগগির এ ছবি মুক্তি পাবে সিনেমা হলে। স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে।

লাইকা–শুধু ক্যামেরা নয়, আবেগের নাম
কারিন রেন-কাউফম্যান যেভাবে বলেন, 'লাইকা কমিউনিটি'র সদস্যদের ক্যামেরার প্রতি এই প্রবল ভালোবাসার পেছনে একাধিক কারণ রয়েছে। লেন্সের গুণগত মান তো বটেই, তার সঙ্গে আছে সেই অনন্য সুন্দর নকশা। মনে রাখা দরকার, ২০১০ সালে যখন স্টিভ জবস বিশ্বকে আইফোন ৪ উপহার দিয়েছিলেন, তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন: 'সামনে ও পেছনে কাচ, চারপাশে স্টিল। একেবারে পুরোনো দিনের সুন্দর লাইকা ক্যামেরার মতো।' রেন-কাউফম্যানের ভাষায়, এখনকার মডেলগুলোতেও পুরোনো ক্যামেরার নকশার উপাদান এখনো বেঁচে আছে।
কেন লাইকা আলাদা?
পেশাদার আলোকচিত্রীদের কাছে লাইকার কেন এত বিশেষ কদর? শুধু আগে যাদের নাম বলা হয়েছে, শুধু তারাই নয়, আরও রয়েছেন, আন্দ্রে কেরতেজ, রবার্ট ফ্র্যাঙ্ক, ব্রুস ডেভিডসন, এলিয়ট এর্ভিট এ তালিকায়। তারা সবাইই লাইকা ব্যবহার করেছেন।
স্পেনের বিখ্যাত ফটোগ্রাফি স্টোর ফোটোকাসিওনের মালিক, ক্যামেরা সংগ্রাহক হোসে লুইস মুর বলেন, লাইকা বাজারে আসার পর সবাই সেটাকে নকল করতে লেগে গিয়েছিল। ৩০০-এরও বেশি অনুকরণ বেরিয়েছিল। কিন্তু তারপরও লাইকাতে তোলা ছবির ফরম্যাটই হয়ে দাঁড়াল 'সর্বজনীন মানদণ্ড'।
মুর আরও যোগ করেন, আজকের দিনে অন্যান্য ব্র্যান্ডেও প্রায় সমান মান পাওয়া যায়। তার মতে, লাইকা এখনো 'অভিজাতদের কাছে একধরনের পূজনীয় হয়ে উঠেছে।' পেশাদাররা হয়তো অন্য ব্র্যান্ড ব্যবহার করেন, আর লাইকা থাকে আনন্দের জন্য। 'আগে হাতে লাইকা থাকলে মনে হতো, এবার নিশ্চয়ই ভালো ছবি হবে।'
আর্কাইভ আর প্রথম ছবি
তিন বছর ধরে লাইকার নিজস্ব কমপ্লেক্সে রয়েছে এক বিশেষ আর্কাইভ, যেখানে ঢুকতে হবে গাইডেড ট্যুরের মাধ্যমে। প্রদর্শনীতে সাজানো আছে ব্র্যান্ডের ইতিহাসের নিদর্শন–যেমন ১৯১৪ সালে ভেৎসলারে তোলা প্রথম কমপ্যাক্ট ক্যামেরার ছবি। সেটি তুলেছিলেন লাইকার প্রকৌশলী, ক্যামেরার জনক অস্কার বার্নাক।

এখানেই দেখা যায় আলোকচিত্র-বিষয়ক পত্রিকায় প্রকাশিত ব্র্যান্ডের প্রথম বিজ্ঞাপন। রয়েছে বিশের দশকের নির্দেশিকা বই, যার প্রচ্ছদে এক নারীর ছবি–বার্তা স্পষ্ট: এই ক্যামেরা শুধু পেশাদার নয়, সবার জন্য। শুধু লেন্স দিয়ে তাকাও, আর ক্লিক করো।
এই সহজলভ্যতাই ১৯২৫ সালে উদ্বোধনের পর লাইকাকে রূপ দেয় বিপ্লবে। ফটোগ্রাফাররা আর ভারী কাঠের যন্ত্র বয়ে বেড়াতে বাধ্য হলেন না। ছোট ক্যামেরা পকেটে ঢুকলেই চলত, আর তা গোপনে ব্যবহারও করা যেত। মাত্র এক বছরে প্রায় এক হাজার বিক্রি হলো। ১৯২৯ সাল নাগাদ উৎপাদন পৌঁছাল ১৬,০০০।
লাইকার জন্মকথা
আগেই বলেছি, 'লাইকা' নামটি এসেছে দুটি শব্দের মিশ্রণে–'লাইটজ' (কোম্পানির নাম) আর 'ক্যামেরা' (জার্মান কামেরা)। ভেৎসলারে এই ক্যামেরা তৈরি হওয়ার বিশেষ কারণও ছিল। ১৮৪৯ সাল থেকে এখানেই ছিল এক লেন্স কারখানা, লাহন নদীর তীরে। সেখানকার পানি লেন্স ঘষে মসৃণ করার কাজে বিশেষভাবে উপযুক্ত ছিল। কুড়ি বছর পর মালিকের নামানুসারে কোম্পানির নাম হয় আর্নস্ট লাইটজ। তখন তারা মাইক্রোস্কোপ বানাত, ১৯০৭ সাল থেকে দুরবিনও।
এই ধারায় এলেন অস্কার বার্নাক নামের এক টেকনিশিয়ান। তিনি ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিলেন। অস্কার বার্নাক ছিলেন প্রবল আলোকচিত্রপ্রেমী। হাঁপানির রোগের বাড়বাড়ন্তের কারণে বড় বড় কাঠের ক্যামেরা বইতে পারতেন না। তিনি ঠিক করলেন ছোট একটি ক্যামেরা বানাবেন। এতে ব্যবহার করা হবে চলচিত্রের ফিল্ম। কৌশল ছিল একটা, ফিল্মের গতি লম্বালম্বি হবে না। হবে আড়াআড়ি।
প্রথম পরীক্ষা তিনি করলেন ভেৎসলারের বন্যার সময়ে। কাজ সফল হলেন। তবে যুদ্ধ, জার্মানির পরাজয় আর সেই দুঃসময়ের কারণে পণ্যের বাজারজাত করতে বেশ দেরি হয়। তখন কোম্পানির কর্ণধার আর্নস্ট লাইটজ দ্বিতীয় ঘোষণা দিলেন, 'আমরা ঝুঁকি নেব।' যেমন কথা তেমন কাজ। সত্যিই তাই হলো, লেইপজিগ মেলায় নতুন ক্যামেরা উন্মোচিত হলো।
আলো-অন্ধকার অধ্যায়
হিটলার ক্ষমতায় আসার শুরুর দিকে লাইটজ প্রায় ২০০ ইহুদিকে হলোকাস্ট থেকে রক্ষা করেছিলেন। তাদের টাকা ও বিদেশে যাওয়ার টিকিট দিয়েছিলেন, সঙ্গে দিয়েছিলেন একটি করে ক্যামেরা। কিন্তু নাৎসিরাও লাইকার মতো প্রতিষ্ঠানের পণ্য চাইত। ১৯৪২ সালে লাইটজ নাৎসি দলে যোগ দেন এবং তৃতীয় রাইখের অস্ত্র প্রকল্পেও অবদান রাখেন। তবুও তার মানবিক কাজের জন্য ২০০৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রে স্বীকৃতি পান। লাইটজ আজ বেঁচে থাকলে গাজায় চলমান নির্মম হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে নীরব থাকতেন না। তার মানবিক কর্মতৎপরতা দেখে এ কথা বলা যায়।

ডিজিটাল ঝড় আর টিকে থাকা
রেন-কাউফম্যান স্বীকার করেন, 'নব্বইয়ের দশকে ডিজিটাল ফটোগ্রাফির ঢেউ এলে কোম্পানি ভীষণ চাপে পড়ে। তখন আমরা এর গুরুত্বই বিশ্বাস করিনি।' ২০০৪ সালে যখন নতুন মালিকেরা দায়িত্ব নেন, তারা লাইকার আসল আর্থিক সংকট সম্পর্কে জানতেনই না। তারপর এল, ২০০৮-এর অর্থনৈতিক মন্দা। 'সবকিছু আরও কঠিন হলো, কিন্তু দেখুন–আমরা এখনো টিকে আছি!'
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রসঙ্গ
ভেৎসলারের উৎসবে আলোচনার বড় বিষয় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ফটোগ্রাফিতে কী প্রভাব ফেলবে। লাইকার প্রধান নির্বাহী মাথিয়াস হার্শ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ছবির আসল স্বকীয়তাই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাই সর্বশেষ মডেলগুলোতে প্রতিটি ছবির সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে একটি প্রমাণপত্র। 'কনটেন্ট অথেন্টিসিটি ইনিশিয়েটিভ।' এই প্রমাণপত্র নিশ্চিত করে, ছবি মানুষ তুলেছে, যন্ত্র বানায়নি।
রেন-কাউফম্যানের কথায়, আমি বিশ্বাস করি না, মানুষ তাদের পরিবারের ছবি বা বিয়ের মুহূর্ত এআই দিয়ে তৈরি করবে। বরং এআইয়েরই দরকার আসল ছবি, আর সেগুলো আমাদের কাছেই আছে।
১০০ বছরের লাইকা: ছবির ক্লিকে বদলে যাওয়া পৃথিবী
ক্যামেরার ভবিষ্যৎ কি শুধু পেশাদারদের হাতেই সীমাবদ্ধ?
রেন-কাউফমান আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, 'অবশ্যই নয়। ফটোগ্রাফির প্রথম পাঠ তো শুরু হয় মোবাইল ফোনে ছবি তোলা দিয়ে। কিন্তু কেউ যখন সত্যিই ছবি ভালোবাসে, তখনই বুঝতে পারে স্মার্টফোনের সীমাবদ্ধতা। সেখানেই লাইকার মতো ক্যামেরার জাদু।'
অর্থাৎ ভবিষ্যতেও ছবি তোলা চলবে নানা যন্ত্র দিয়ে, আর আমরা ক্লিক করে যা ধরে ফেলব, তা দেখার উত্তেজনা অটুট থাকবে। শতবর্ষ উপলক্ষে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে এক ফটোগ্রাফার সেই অনুভূতিকে এভাবে বলেছেন, 'কিছু প্রত্যাশা কোরো না, কিন্তু সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থেকো।'

১০০ বছরের গল্প, এক বইয়ে
জুনের শেষে জার্মানির ভেৎসলার শহরে লাইকার শতবর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে প্রকাশিত হলো 'হানড্রেড লাইকা স্টোরিজ' নামের বই। ৩২২ পৃষ্ঠার এই অমূল্য সংকলনে আছে ১৭০টির বেশি ছবি, আর সঙ্গে সেই সব ছবির আড়ালের কাহিনি। পাঠক সেখানে পাবেন কোম্পানির ইতিহাস, বিভিন্ন মডেলের বিবরণ, আর লাইকার অপটিক্যাল সাফল্যের গল্প।
জার্মান এই প্রতিষ্ঠান উদ্যাপন করছে ক্ষুদ্র এক যন্ত্রের শত বছর, যা বদলে দিয়েছে পেশাদার আর অপেশাদার দুপক্ষেরই ছবি তোলার ধারা।
ইতিহাসের লাইকায় ধরা মুহূর্ত
বিশ শতকের ফটোগ্রাফির যেসব প্রতীকী ছবি বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে আছে, সেগুলোর পেছনে লাইকার ছাপ স্পষ্ট, স্পেনের গৃহযুদ্ধে রবার্ট কাপার গুলিবিদ্ধ রিপাবলিকান সৈনিকের শেষ মুহূর্ত, কার্তিয়ের-ব্রেসোঁর 'লাফিয়ে পড়া মানুষ', দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষে টাইমস স্কয়ারে নাবিক আর তরুণীর উচ্ছ্বসিত চুম্বন, নেপামের দগদগে ক্ষত নিয়ে দৌড়ে পালানো ভিয়েতনামের ছোট্ট মেয়ে, কিংবা আলবার্তো কর্দার চিরচেনা 'চে গুয়েভারা'।
এসব ছবির পেছনেই আছে লাইকা। ক্ষুদ্র, কমপ্যাক্ট, বিপ্লবী লাইকা, যার ৩৫ মিলিমিটার ফিল্ম (২৪*৩৬ ফ্রেম) প্রথম উপস্থাপন করেছিলেন জার্মান উদ্যোক্তা আর্নস্ট লেইটজ দ্বিতীয়, ১৯২৫ সালের ১ মার্চ লেইপজিগ ট্রেড ফেয়ারে। আকারে ছোট হলেও অসাধারণ অপটিক্যাল মানই তাকে করে তোলে যুগান্তকারী।
উদ্যাপনের শহর, লেইটজ পার্ক
২৫ থেকে ২৭ জুন, মাত্র ৫০ হাজার জনসংখ্যার ভেৎসলার শহরে অনুষ্ঠিত হলো শতবর্ষ উৎসব। লাইকার ডিজনিল্যান্ড নামে খ্যাত লেইটজ পার্ক। পার্কটির নিমার্ণ কাজ শেষ হয় ২০১৮ সালে। তিন দিন ভরে উঠেছিল ফটোগ্রাফার, সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, লাইকা ভক্ত আর পর্যটকে। প্রায় ৮০০ অতিথির মধ্যে অনেকেই এসেছিলেন জাপান থেকে। লাইকার স্মার্টফোন একমাত্র বাজারে পাওয়া যায়।
অধিকাংশ অতিথির গলায় বা কাঁধে ঝুলছিল ক্যামেরা–কেউ সেটি বহন করছিলেন এরমেস ব্যাগের মতো গর্বভরে। কারণ লাক্সারি ব্র্যান্ড এরমেসের পরামর্শও লাইকা একসময় নিয়েছিল।
প্রদর্শনী, কনসার্ট আর সিনেমা
শতবর্ষ উদ্যাপনে ছিলেন রঙের জাদুকর, ৮৭ বছরের জোয়েল মেয়ারোভিটজ। তিনি বইতে সই করলেন, ভক্তদের সঙ্গে ছবি তুললেন। ব্রিটিশ সংগীতশিল্পী জেমি কালামও তার লাইকায় তোলা ছবির প্রদর্শনী সাজালেন এবং ২৬ জুন গালা ডিনারে গান শোনালেন।
ডেজার্ট পরিবেশনের আগে অতিথিরা উপভোগ করলেন Leica: Witness to a Century নামের প্রামাণ্যচিত্রের প্রায় চূড়ান্ত সংস্করণ। পরিচালক রাইনার হোলৎসেমার এই ছবিতে উঠে এসেছে জোয়েল মেয়ারোভিটজ, স্টিভ ম্যাককারি আর সদ্যপ্রয়াত সেবাস্তিয়াঁও সালগাদোর মতো মহীরুহদের লাইকা-অভিজ্ঞতা। এমনকি সাবেক 'দ্য পুলিশ' গিটারিস্ট অ্যান্ডি সামার্সের লাইকাপ্রেমও চমক হিসেবে ফুটে উঠেছে এতে। খুব শিগগির সিনেমা হল ও স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মে মুক্তি পাবে ছবিটি।

ইতিহাসের ধন আর কোটি টাকার নিলাম
আকাশ থেকে দেখলে লাইকার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ভবনটা যেন ফিল্ম রিলের এক বিশাল ক্যান। ভেতরে আছে প্রদর্শনী–যেখানে কাচের আলমারিতে সাজানো লাইকার নানা মডেল আর বিখ্যাত ছবি। ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হয় বছরের অন্যতম নিলাম। নিলামের 'তারকা আকর্ষণ' ছিল ১৯২৩ সালের লাইকা ও প্রোটোটাইপ, যা এক অজ্ঞাত ক্রেতা ফোনে কিনে নিলেন ৮.৪ মিলিয়ন ডলারে।
কয়েক কদম দূরেই লাইকার স্টোর, যেখানে পাওয়া যায় সর্বাধুনিক মডেল, আবার অর্ধশতাব্দী পুরোনো ক্যামেরাও; যেমন ১৯৫৮ সালের একটি মডেল বিক্রি হচ্ছে ৪১ হাজার ডলারে। পাশাপাশি আছে ফটোগ্রাফি-অ্যাকসেসরিজ, হোম প্রজেক্টর, দুরবিন, এমনকি ঘড়িও। যার দাম উঠতে পারে ১৭,৫০০ ডলার পর্যন্ত।
মিউজিয়াম ও কমিউনিটির স্বপ্ন
বিশ্বজুড়ে আজ ছড়িয়ে আছে লাইকার ২৮টি গ্যালারি–বার্লিন, টোকিও, সিঙ্গাপুর থেকে লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত। প্রতিটি গ্যালারি শুধু প্রদর্শনী নয়, বরং একেকটি আলোকচিত্র-অভিজ্ঞতার কেন্দ্র। এগুলোয় নিয়মিত আয়োজিত হয় আলোচনা, কর্মশালা, নতুন প্রজন্মের আলোকচিত্রীর প্রদর্শনী। যেনো বিশ্ব মানচিত্রের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠেছে লাইকার ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিশ্ববিদ্যালয়, যেখানে শেখা যায় কীভাবে চোখ দিয়ে দেখা জিনিসকে হৃদয় দিয়ে ধরা যায়।
এই বৈশ্বিক নেটওয়ার্কের পাশাপাশি ভেৎসলারের আর্নস্ট লেইটজ মিউজিয়াম লাইকার জন্মকাহিনি সংরক্ষণ করে রেখেছে সময়ের দলিলে। তদারকি করছেন রেহন-কাউফমান, যিনি বিশ্বাস করেন, 'আমাদের লক্ষ্য হলো যে কেউ, বয়স দশ পার হলেই, এখানে এসে কিছু না কিছু আকর্ষণীয় খুঁজে পাক।' তাই এখানে শুধু পুরোনো ক্যামেরা আর কিংবদন্তি ফটোগ্রাফ নয়, আছে আধুনিক টাচস্ক্রিন ডিসপ্লে, যেখানে দেখা যায় ফটোগ্রাফির বিবর্তন, রঙের খেলা, কিংবা ডিজিটাল ডার্করুমে মোবাইল ছবির এডিটিং। শিশু থেকে প্রবীণ–সবার জন্য আলোকচিত্রকে ছুঁয়ে দেখার অভিজ্ঞতা তৈরি করেছে এই জাদুঘর।
তবে লাইকার বিশেষত্ব শুধু জাদুঘরে সীমাবদ্ধ নয়। শতবর্ষের প্রান্তে দাঁড়িয়ে ব্র্যান্ডটি যেন হয়ে উঠেছে ফটোগ্রাফির ইতিহাসের জীবন্ত দলিল। যে যন্ত্র একসময় যুদ্ধক্ষেত্রে, বিপ্লবের রাস্তায় কিংবা সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছে দিয়েছিল দৃশ্যমান সত্য, সেটিই আজ নতুন প্রজন্মকে শেখাচ্ছে–ছোট্ট ফ্রেমের মধ্যেও ধরা যেতে পারে সমগ্র মানবজগতের কাহিনি।
অস্কার বার্নাক যখন প্রথম পরীক্ষামূলক ক্যামেরাটি তৈরি করেছিলেন, হয়তো ভাবতেও পারেননি যে তার উদ্ভাবন একদিন হয়ে উঠবে শিল্প, সাংবাদিকতা, রাজনীতি, এমনকি মানবাধিকারের ভাষা। কিন্তু সেই ক্যামেরার চোখ দিয়েই আমরা দেখেছি কিম ফুকের আর্তনাদ, চে গুয়েভারার দৃঢ় দৃষ্টি, কিংবা ব্রেসোঁর নির্ণায়ক মুহূর্ত।
আজ এক শ বছর পর, লাইকা শুধু একটি ক্যামেরা নয়; এটি হয়ে উঠেছে মানুষের চোখের প্রতীক, যা সত্যকে ধারণ করে; হৃদয়ের প্রতীক, যা আবেগকে স্পর্শ করে; আর সৃষ্টিশীলতার প্রতীক, যা নতুন প্রজন্মকে শেখায় কীভাবে মুহূর্তকে চিরকালীন করে তুলতে হয়।
ফটোগ্রাফি আসলে একধরনের মানবিক আশ্রয়। লাইকা আমাদের শিখিয়েছে, অন্ধকার সময়েও একটি ছবি হয়ে উঠতে পারে আলোর উৎস। তাই শতবর্ষ পার করে লাইকা যেন নতুন করে প্রতিজ্ঞা জানায়–'এখনো অনেক গল্প বাকি আছে, অনেক চোখের দৃষ্টি ধরা বাকি আছে, অনেক মানবিক মুহূর্তকে অমর করে রাখার সময় বাকি আছে।'
অতএব, লাইকা শুধু একটি যন্ত্র নয়; এটি আসলে এক শতাব্দীর ইতিহাস, মানুষের সৃজনশীলতার যাত্রাপথ, আর আগামী দিনের প্রতিশ্রুতি।