তবু একটা গভীর অরণ্য

গ্রামের দৃশ্য আঁকতে গিয়ে আমরা ছোট্টবেলায় কুঁড়েঘর আঁকতাম, পাশে খড়ের গাদা আর কলাগাছ। ঘরের পেছনে ঘনিয়ে আছে সবুজ মেঘের মতো বনজ গাছগাছালি—জিয়লগাছের বেড়া। গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গেলেও দেখতাম, ঢেঁকিঘরের পেছন থেকে প্রায় পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ পার হলে দিগন্তবিস্তৃত খেত, এই পথটুকু ঘন জঙ্গল। শ্যাওড়া-রসুইন্যা-জাম্বুরা-আম-জাম-কাঁঠাল-ডুমুর কত গাছে জড়াজড়ি করে আছে, পায়ের কাছে পানিকচুর সারি—ঘেঁটুঝোপ আর কালো মাটিতে কেঁচোর উগড়ানো মাটির বহুতল ভবন। রোদ মাটি অবধি আসত না, মগডালে হাঁড়িচাচার দল চ্যাঁচ্যাঁ করে ঝগড়া করত—রাতে সেখানে হুতোম মস্ত ডানা খুলে ভয়াল আওয়াজ করত। সেই সবুজিয়া পথটুকু আমাকে দিয়েছিল প্রথম অরণ্যের স্বাদ। ভূগোল ক্লাসে বাংলাদেশের মানচিত্রে আঁকতাম বরেন্দ্রভূমির অরণ্য, শালবন, সুন্দরবন আর পার্বত্য চট্টগ্রামের বনভূমি, তখন বনভূমি ছিল মোট ভূখণ্ডের ১৬%, থাকা উচিত ২৫%। সাহিত্যের পাতায় আর সিনেমার পর্দায় সেই বিলীয়মান সর্বমঙ্গলা অরণ্যানীর কথা আর তার পলায়নপরা সন্তানদের কথা কোথায় আছে, সেই আলাপ করব আজ।
রবীন্দ্রনাথের কবিতা ছাড়া আমাদের কোনো রচনাই লেখা সম্ভব হতো না। অতএব শুরু করছি—
'আমারে ফিরায়ে লহ অয়ি বসুন্ধরে,
কোলের সন্তানে তব কোলের ভিতরে,
বিপুল অঞ্চল-তলে।'
তাঁর এ বসুন্ধরা মৃত্তিকাময়, যার কোলে ফিরবার আকুতি আরও ভণিতাহীন—'দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর'-এ। মন চলে গেছে তপোবনের নিরালায়, সেখানে নীবারধানের মুষ্টি-আহার, বল্কলের পোশাক, রাখালিয়া গোচারণ। 'পল্লীপ্রকৃতি' রচনাবলির 'অরণ্যদেবতা'তে তিনি লিখেছেন—
'মানুষ অমিতাচারী। যতদিন সে অরণ্যচর ছিল ততদিন অরণ্যের সঙ্গে পরিপূর্ণ ছিল তার আদানপ্রদান; ক্রমে সে যখন নগরবাসী হল তখন অরণ্যের প্রতি মমত্ববোধ সে হারাল; যে তার প্রথম সুহৃদ, দেবতার আতিথ্য যে তাকে প্রথম বহন করে এনে দিয়েছিল, সেই তরুলতাকে নির্মমভাবে নির্বিচারে আক্রমণ করলে ইটকাঠের বাসস্থান তৈরি করবার জন্য। আশীর্বাদ নিয়ে এসেছিলেন যে শ্যামলা বনলক্ষ্মী তাঁকে অবজ্ঞা করে মানুষ অভিসম্পাত বিস্তার করলে। মানুষ গৃধ্নুভাবে প্রকৃতির দানকে গ্রহণ করেছে; প্রকৃতির সহজ দানে কুলোয়নি, তাই সে নির্মমভাবে বনকে নির্মূল করেছে।'

স্কুলের দিনগুলোতে সত্যজিত রায়ের 'নকুড়বাবু ও এল ডোরাডো', ময়ূখ চৌধুরীর 'ভয়াবহ শিকার কাহিনী', বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'বাঘের মন্তর', পরে বুদ্ধদেব গুহর ধারাবাহিক 'রুআহা', জিম করবেট অমনিবাস... এই ছিল আমাদের মতো নাগরিক শিশুকিশোরদের কাছে বনজঙ্গলের পরিচায়ক। একটু বড় হবার পরে আমরা হাতে পেলাম বিভূতিভূষণের 'আরণ্যক'। করবেট কিংবা আরণ্যকের নায়ক—দুয়েরই জঙ্গলের সঙ্গে আত্মীয়তায় জড়িয়ে আছে রেলওয়ের প্রসঙ্গ। রেল চলে পাহাড় ডিনামাইটে উড়িয়ে, বনভূমি উজাড় করে। জঙ্গলে সে নিয়ে আসে লোকালয়কে। ব্রিটিশ রেলওয়ের কারণে ভারতবর্ষে ব্যাপক অরণ্য উচ্ছেদ ঘটে। রমাপদ চৌধুরীর 'অরণ্য আদিম'ও লাতেহারের নীলাভ অরণ্যানীতে যখন রেলওয়ে ছিল না তখনকার কথা—সেখানকার মানুষ খাজনা কাকে বলে জানত না, মালগুজারি বুঝত না, জঙ্গল সাফ করে ধান আর জনার চাষ করত কেবল। 'শত শত ক্রোশ শুধু পাহাড়ের ঢেউ, মাঝে মাঝে কয়েক বিঘে সবুজ উপত্যকা, কোথাও বা হঠাৎ-পাওয়া জল-ছলছল নদী, আর সবকিছু ঢেকে ঘন অরণ্যের বিভীষিকা। ঘন বনের বীভৎস অন্ধকারে কখনো হয়তো দপদপ করে আলেয়া জ্বলে ওঠে, নদীর কিনারে বাঘের থাবা ছাপ রেখে যায়, মহুয়ার গুঁড়িতে ভালুকের লোম, আর ঝর্ণার স্রোতে বিশালকায় কোনো পাহাড়ী সাপের খোলস ভেসে আসে...ক্ষিপ্ত গোঁয়ারের ক্ষুরের শব্দে ভয়ে মুখ লুকোয় বুনো খরগোস, ঝাঁক ঝাঁক শঙ্খ তিতির আকাশে উড়ে পালায়। শহুরে মানুষ কল্পনার চোখে এ প্রাগৈতিহাসিক অরণ্যের ছবি দেখে, কখনো বা সন্দেহ খেলে যায় তার মনে। ভাবে, সত্যিই কি এমন কোনো যুগ ছিল এই ভারতবর্ষে?'
মনোজ বসুর 'বনমর্মর' গল্পের শঙ্করও আরণ্যকের নায়কের মতো বনভূমিতে কাজ নিয়ে এসেছে—
'জরিপ শেষ হইয়া একজনের দখল দিয়া গেলে বন কাটিয়া লোকে এখানে টাকা ফলাইবে। এত নগর-গ্রাম মাঠ-ঘাটেও মানুষের জায়গায় কুলায় না—তাহারা প্রতিজ্ঞা করিয়া বসিয়াছে, পৃথিবীতে বন জঙ্গল এক কাঠা পড়িয়া থাকিতে দিবে না। তাই শঙ্করকে সেনাপতি করিয়া আমিনের দলবল যন্ত্রপাতি নকশা কাগজপত্র দিয়া ইহাদের এই শত শত বৎসরের শান্ত নিরিবিলি বাসভূমি আক্রমণ করিতে পাঠাইয়া দিয়াছে।...কিন্তু মাথার উপরে প্রাচীন বনষ্পতিরা ভ্রুকুটি করিয়া যেন কহিতে লাগিল, তাই পারিবে নাকি কোনো দিন? আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করিয়া তাল ঠুকিয়া জঙ্গল কাটিতে কাটিতে সামনে তো আগাইতেছে আদিকাল হইতে, পিছনে পিছনে আমরাও তেমনি তোমাদের তাড়াইয়া চলিয়াছি। বন-কাটা রাজ্যে নূতন ঘর তোমরা বাঁধিতে থাক, পুরোনো ঘরবাড়ি আমরা ততক্ষণে দখল করিয়া বসিব।...হা-হা হা-হা-হা তাহাদেরই হাসির মতো আকাশে পাখা ঝাপটাইতে ঝাপটাইতে কালো এক ঝাঁক বাদুড় বনের উপর দিয়া মাঠের উপর দিয়া উড়িতে উড়িতে গ্রামের দিকে চলিয়া গেল...'

সত্যিই তো হানাবাড়ি কিংবা লোকের চলাচল কম এমন পথকে দখল করে নিতে ব্যগ্র মস-শৈবাল-লিচেন-গাছপালার অভাব হয় না। আমরা যেমন অরণ্য অধিকার করে নিতে চাই, অরণ্য আর তার জীবজন্তুরাও তেমনি দখল করে নিতে চায় লোকালয়—জগতে লেনাদেনার একান্ত খেলায় তারা কেন কম পাবে? তাই হাতি নামে ধানখেতে, তরাইয়ের বা সুন্দরবনের বাঘ চলে আসে গ্রামে, চিতা কিংবা হায়েনা চলে আসে বস্তিতে। রবীন্দ্রনাথ লিখে গেছেন—'ধরণীর অন্নভাণ্ডারে কেবল যে আমাদের ক্ষুধানিবৃত্তির আশা তা নয়, সেখানে আছে সৌন্দর্যের অমৃত। গাছের ফল আমাদেরকে ডাক দেয় শুধু পুষ্টিকর শস্যপিণ্ড দিয়ে নয়, রূপ রস বর্ণ গন্ধ দিয়ে। ছিনিয়ে নেবার হিংস্রতার ডাক এতে নেই, এতে আছে একত্র-নিমন্ত্রণের সৌহার্দ্যের ডাক। পৃথিবীর অন্ন যেমন সুন্দর, মানুষের সৌর্হাদ্য তেমনি সুন্দর। একলা যে অন্ন খাই, তাতে আছে পেট ভরানো, পাঁচজনে মিলে যে অন্ন খাই, তাতে আছে আত্মীয়তা।' মনে মনে ভাবি, অরণ্যের প্রাণীর সঙ্গে ভাগ করে খাওয়ার আত্মীয়তা কিংবা সৌহার্দ্য আমরা কবে ভুলে গেছি!
যদিও বুদ্ধদেব গুহ আজীবন শিকারের গল্প শুনিয়েছেন, তিনিই আমাদের দিয়েছিলেন বনজঙ্গলকে ভালোবাসবার আশ্চর্য পাঠ। তাঁর 'জঙ্গলের জার্নাল'-এ তিনি লিখেছিলেন অরণ্যচারী মানুষের কথা। 'ওরা জঙ্গলের লোক। বাঘ কাকে বলে জানে। চিড়িয়াখানার খাঁচার সামনে বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে শালীর কাছে বীরত্ব দেখাবার জন্যে খাঁচার মধ্যের বাঘকে ওরা ঢিল ছুঁড়ে মারেনি কখনও।...বাঘের রাজত্বে জন্মাবধি বাস করে, বড় বাঘের ক্ষমতার পরিচয় জেনে, ওরা বাঘকে ভয় করে; সমীহ করে।' যদ্দিনে বুদ্ধদেব গুহর 'কোয়েলের কাছে' পড়েছি, জেনেছি এমন সংরক্ত কলমে জঙ্গলের কথা বাংলায় আর কেউ লিখতে পারতেন না। হেমিংওয়ের যে কবিতায় তিনি পৈতৃকসূত্রে চাঁদ আর সূর্য পাবার কথা ঘোষণা করেছিলেন—সেই কবিতা দিয়ে উপন্যাসের শুরু। নায়ক যশোয়ন্ত সেই চাঁদ-সূর্যের উত্তরাধিকার নিয়ে জঙ্গলের পথে ঘুরে বেড়ায়, আদ্যোপান্ত স্বাধীন মানুষ, বলিষ্ঠ শিকারী অথচ অসহায় শিকারও। শিকারির চোখে দেখা জঙ্গলও কেমন প্রেমিকের চোখে দেখা যেন। শিকারি কেনেথ অ্যান্ডারসনও লিখে গেছেন তাঁর শিকারকাহিনি। রোমাঞ্চকর শিকারকাহিনি রচয়িতার তালিকা দীর্ঘ—মহারাজা নৃপেন্দ্রনারায়ণ ভূপবাহাদুর থেকে চণ্ডিকাপ্রসাদ ঘোষাল, হীরেন্দ্রকুমার বসু, এনায়েত মওলা, আব্দুর রহমান চৌধুরী, এরশাদউল্লাহ খান, মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নী, শরীফ খান, আলী ইমাম, খসরু চৌধুরী অবধি। ইংরেজ তো বটেই, তাদের তাঁবে মহারাজা, রাজবাহাদুর, খানবাহাদুর, দেওয়ানদের হাতে কত বন্য প্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে, কত বাস্তু ধ্বংসের মুখে পতিত হয়েছে। তবে মনে রাখতে হবে, গত শতাব্দীর কুড়ির দশক থেকে শিকারি জিম করবেট অরণ্য ও বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আন্দোলনের অগ্রগণ্য ছিলেন। অবশ্য সর্বোচ্চসংখ্যক বাঘশিকারি পচাব্দী গাজী কিংবা তাঁর পুত্র এমন করে বদলে গেছিলেন কি না, জানা যায় না।

রবীন্দ্রনাথের ভাগনে কুমুদনাথ চৌধুরীর 'ঝিলে জঙ্গলে শিকার' হাতে পেয়েছি বহুবছর পরে, পড়েছি কেমন করে তিনি শিকারের সমস্ত নিয়ম ভঙ্গ করে তাড়া করতেন আহত পশুকে, মারাও গেছিলেন মধ্যপ্রদেশের বনে বাঘের আক্রমণে। কী মনোরম ভাষায় লিখেছিলেন তাঁর জঙ্গলের চিঠি—'বসুন্ধরা তার প্রকৃতির যে সুন্দর বইখানি আমাদের চোখের সম্মুখে দিন-রাত খুলে রেখে দিয়েছেন, এর চেয়ে ভালো পড়বার বই আর খুঁজে পাওয়া যায় না—পড়ে শেষও করা যায় না।...ঋতু পর্যায়ের সঙ্গে সঙ্গে পশু-পাখির গায়ের স্বাভাবিক রঙ আবার বদলাতেও দেখা যায়। যে-দেশে শত্রু-সংখ্যা কম, সেখানে তাদের সাজ-পোশাকের জাঁক-জমক বেড়ে ওঠে। যেমন আজকাল যুদ্ধের দিনে খাকি পরা হয়েছে, কিন্তু শান্তির দিনে সেপাইরা রক্তের মতো রাঙা পোশাক পরে বেড়াত। দেশভেদে আর বিয়ের মতলবেও পশু-পাখিরা রঙ বদলায়। যেমন বুড়ো বর গোঁফে চুলে কলপ দিয়ে কাঁচা ছেলে সেজে মন ভোলাতে চায়, তেমনি আর কি।' সঞ্জীবচন্দ্রের 'পালামৌ'র কপি তখন নিউমার্কেটে জুটত না, পরে পড়েছি, বাঘ তার থাবাটাকে হাত-আয়নার মতো দেখবার ভঙ্গিতে রেখে ঘুমোচ্ছে...ক্যামেরার দরকার নেই এমন বিবরণ থাকলে।
শ্রী সুবোধকুমার চক্রবর্তীর 'রম্যাণি বীক্ষ্য'র 'অরণ্যপর্ব' মনে পড়ছে, উটি থেকে অরণ্যের ভেতর দিয়ে লেখক চলেছেন মাইসোরের দিকে, রবীন্দ্রনাথের মতো তাঁরও মন চলে গেছে সুদূর অতীতে—যখন মানুষ বনের বাঘকে ভয় পেত না, বনের রাক্ষসকে ভয় পেত। ঋগ্বেদে আছে—'অরণ্যানীর সৌরভ মৃগনাভিতূল্য, এতে কৃষক নেই অথচ আহার আছে।' সত্যযুগের মুনিঋষিরা তপস্যা করতেন অরণ্যে, হিংস্র পশুরা নাকি তাদের আশ্রমের আশপাশে শান্তস্বভাব হয়ে যেত। মুনিঋষিরা অনার্য আর রাক্ষসদের উপদ্রবের কথা বলেছেন কিন্তু হিংস্র পশুর উৎপাতের কথা বলেননি। তবে কি মানুষই শত্রুতা করে প্রাণীদের হিংস্র করেছে? অরণ্যের সমাজে শত্রুতার চর্চা শুরু করল কে? না, ব্যাধ। হরিণ শিকার করতে এল। রাজা এল মৃগয়ায়। গৃহস্থরা বাণপ্রস্থে যেতেন—সে-ও অরণ্যে বাস। ত্রেতাযুগে পিতার সত্যরক্ষায় সস্ত্রীক বনে গেলেন রাম। রামায়ণে দণ্ডকারণ্যের শুরু যমুনা পেরোলেই, গোদাবরী তীর অবধি সেই বন বিস্তৃত। যখন সুবোধকুমার এ লেখা লিখছেন, তখন ওডিশা, অন্ধ্র প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র—এই চারটি রাজ্যের দুই লক্ষের বেশি বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে এ বিশাল অরণ্য। দণ্ডকারণ্যের কথায় আবার পরে আসব। মুদুমালাই আর বাঁদীপুর অরণ্যের সামান্য বিবরণ ছিল এ পর্বে, আকাশ দেখা যায় না বর্ষাশেষের জঙ্গলে, কেমন পাতায়-ঘাসে ফুলেফেঁপে উঠেছে—বাঘ লুকিয়ে থাকা কিছু বিচিত্র নয়। কিন্তু ওঁর কলম বনবিলাসী লেখকদের মতো সরস বিবরণধর্মী নয়।

বিবরণের কথাই যখন উঠল, তখন বলি। পাবলো নেরুদার আত্মজীবনীর প্রথমেই অসামান্য কাব্যময় গদ্যে চিলির জঙ্গলের একটি স্বপ্নিল বিবরণ রয়েছে। পায়ের তলায় ঝরতি-পড়তি পাতার পুরু গালিচা, প্রতি পদক্ষেপে ভঙ্গুর ডালের মচমচিয়ে ভাঙবার শব্দ হয় তাতে—রোদহীন শাখায় বসে আত্মহারা হয়ে গান গায় পাখি—তার কাকলি ওবো-যন্ত্রের মতো মর্মভেদী। চিরহরিতের জংলি গন্ধ—বোলদো পাতার ভেষজ ঘ্রাণ কবির নাকের ভিতর দিয়ে মরমে পশে... দীঘল সাইপ্রাস পথ আগলে ধরে তাঁর, লাল রোমে আচ্ছন্ন মাকড়সা স্থির তাকিয়ে রয় গর্ত থেকে, বদবুদার কাঁচপোকা ঝিলমিল করে উড়ে যায়—ফার্নপাতার পক্ষ থেকে তার গালে ঝরে পড়ে ষাটটি অশ্রুদানা। এ জগৎ দৈর্ঘ্যের—এ জমানা পাখিদের—এ প্রাচুর্য পত্রালীর। আর এ কলম ক্যামেরা।
জঙ্গল আর জলাভূমির বিভোর-মেদুর বিবরণ আছে—আর্থার কোনান ডয়েলের 'দ্য হাউন্ড অব দ্য বাস্কারভিলস'-এ, ঘোড়ার গাড়িতে করে ডেভনশায়ারে বাস্কারভিলের ভদ্রাসনে চলেছেন সবাই মিলে, চারদিকে ইটের বাড়ির বদলে এসেছে কালো গ্রানাইট, কাদায় চাকার দাগে খড়খড়ে পথের দুই ধারে মস আর ফার্ন, ব্র্যাকেন আর ব্র্যাম্বলের দুর্ভেদ্য কাঁটাঝোপের ওপর পড়েছে রাঙা আলো, বনপথে ছোট্ট ঝোরা, তারপর ওক আর ফারে সবুজ উপত্যকা পার হলে বাদাজমিন—মুরল্যান্ডের জলপাই সবুজ আর লালচে বাদামি ঢাল।
'হে অরণ্য কথা কও'-এর শুরুতে বিভূতিভূষণ বলছেন, সিংভূনের রুক্ষ অনুর্বর বৃক্ষবিরল মরুদেশে অনেক দিন কাটাবার পরে ফিরে এসে বাংলার বন-ঝোপের কোমল শ্যামলতায়, তৃণভূমির সবুজত্বে, পাখির অজস্র কলরোলে তার চোখ কেমন জুড়িয়ে গেল, যেন আনন্দতীর্থের পুণ্য বাতাস লাগল তার গায়ে। যশোরের ক্ষুদ্র পল্লির মাঠে আসশ্যাওড়া-ষাঁড়া-কেঁয়োঝাঁকাগাছের বনে কোকিলের ডাক, বড় বকুলগাছটায় জোনাকির নাচন, মাঠের পাড়ে সোঁদালি ফুল আর পাকা বৈচির ঝোপ। বাতাস ভরা তুঁতফুলের সুবাস। আউশের খেতে কচি ধান, বাবলার বেড়া দেওয়া ঝিঙের খেতে হলুদ ফুল, নদীতীরে ঝিনুকের দুর্গন্ধ স্তূপ, শাদা বক চরছে কচুরির দামে—বিভূতিভূষণ ভাবছেন—'এ জগতে যেন যুদ্ধ নেই, অশান্তি নেই, চালের দোকানের দীর্ঘ শ্রেণী নেই, উড়ন্ত এরোপ্লেন থেকে বোমাবর্ষণ নেই।' হায়, তখনো এ বাংলায় শ্যামলিমার কমতি নেই। কিছুকাল আগেই তিনি নাকটিটাঁড়ের বনে কালোপাথর আর আদিম মানুষের চিহ্নযুক্ত গুহায় ঘুরে বেরিয়েছেন—বন্য বরমকোচা গ্রামের এক মুন্ডা যুবতী তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিল—'তুই কি করচিস এ বনে আমাদের? ভালো ভালো জায়গা দেখে বেড়াচ্ছিস বুঝি?' বনের মানুষের কাছে আদিমানবীর কাছে জঙ্গল যে ভারী সুষমাময়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের 'অরণ্যের দিনরাত্রি' উপন্যাসে ধলভূমগড়ে এসে নেমেছে চার যুবক, আদিবাসী যুবতীদের কাছ থেকে ডিম-টিম কিনবে, সব্বার সামনের ঝুড়ি খালি, সব সদাইপাতি বিক্রি হয়ে গেছে? আসলে এরা জন খাটে, রাজমিস্ত্রির কাজে জোগান দেয়—ইট বয় ওসব ঝুড়িতে। হতচকিত শহরের সঙ্গে ক্ষয়িষ্ণু জঙ্গলের সেই প্রথম সংঘর্ষ, প্রথম পরিচয়। লাল মাটির পথ দিয়ে গেলে শালবন—কয়েকটি জারুল আর ইউক্যালিপটাসের ভেজাল বাদে, তরুণ শালগাছে বল্লরী ধরেছে, ঢুকলেই অন্য পরিচিত জগৎ। 'কিচকিচে পাখির ডাক, হাওয়ার শোঁ শোঁ, লুকানো কাঠবিড়ালির চিড়িক চিড়িক, ঝিঁঝির কোরাস, শুকনো পাতার খরখর, দূরে কোথাও কাঠ কাটার একঘেয়ে শব্দ...তবু মনে হয় অরণ্য নিস্তব্ধ। ওসব শব্দ নিস্তব্ধতারই অলঙ্কার।'

নারায়ণ সান্যাল বনজ ও খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ দণ্ডকারণ্যের উর্বর কুমারীভূমিতে বাস করেছেন দুই বছর, দুটো উপন্যাস লিখেছিলেন তখন, একটি আদিবাসীদের জীবন নিয়ে—'দন্ডকশবরী', দ্বিতীয়টি 'নৈমিষারণ্য'। তবে ওঁর 'না-মানুষের পাঁচালি' আমার ভীষণ প্রিয়, একেবারে উৎসর্গপত্র থেকে সেই ভালো লাগার শুরু। বইটিতে 'পেটুক' গল্পটি আর ডি লরেন্সের অবিস্মরণীয় 'প্যাডি: আ ন্যাচারালিস্টস স্টোরি অভ অ্যান অরফ্যান বিভার' থেকে নেওয়া অপরূপ গল্প, শেষটা খানিকটা 'বর্ন ফ্রি' চলচ্চিত্রটির কথা মনে পড়িয়ে দেয়, প্রকৃতির পুত্রকন্যা পোষ মানে আবার মানে না, সে বাঁধনহারা কিন্তু ভালোবাসার বাঁধন ভোলে না।
জঙ্গল ও আদিবাসী সম্পর্কে মহাশ্বেতা দেবীর অবাধ্য জিজ্ঞাসার শুরু 'অরণ্যের অধিকার' দিয়ে। বন বিভাগের লোকদের হাতেই কেমন করে অরণ্য-নিধন আর অরণ্যজীবীদের উচ্ছেদ সংঘটিত হয়, তার একটি দীর্ঘ ভূমিকা লিখেছিলেন তিনি। তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নদী মাটি অরণ্য' উপন্যাসে আছে গরম জঙ্গলের কথা, অর্থাৎ সেখানে মানুষখেকোরা রাতে তো বটেই, বিহানবেলায়ও মানুষের রক্ত দিয়ে কুলকুচি করে; জোড়া তালগাছতলায় বনবিবির ঠাঁই—সেখান থেকেই সুন্দরবনের শুরু। রানি ভিক্টোরিয়ার আমল, এক যুবক চলেছে সুন্দরবনের দিকে, সেখানে জঙ্গল কাটলেই জমিন, বাঁধ দিয়ে নদীর নোনতা জল সেখানে রুখতে হয়। বন বিভাগে চাকরির সুবাদে 'বনের স্মৃতি' লিখেছিলেন আলী আকবর কোরেশী। এককালের প্রখ্যাত শিকারি সরওয়ার পাঠান বাংলাদেশের অন্যতম প্রাণীরক্ষাকর্মী, এ বিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ক্যাটালিস্ট ছিল এলসা নামের একটি মাদি বনবিড়াল। লরেন্সের 'প্যাডি' বা নারায়ণ সান্যালের 'পেটুক'-এর মতোই এলসা ছানা অবস্থায় এসেছিল সরওয়ারের হাতে। বড় হয়ে উঠবার সঙ্গে সঙ্গে এলসার আদিম স্বভাব জেগে ওঠে, আশপাশের বাড়ির হাঁস-মুরগি শিকার করতে শুরু করে সে। চোখের জলে ভাসতে ভাসতে সরওয়ার এলসাকে জঙ্গলে ছেড়ে আসেন। কে জানে, 'বর্ন ফ্রি'র ওই সিংহশাবকদের মতো এলসাও তাঁকে আরেকবার দর্শন দিতে আসবে কি না।
শৈশবে আমরা জনি ওয়াইজমুলারকে 'টারজান' হিসেবে পেয়েছি, বনের গাছে অঢেল ধনেশপাখি আর বাঁদর, ডাকলেই ছুটে আসে হাতি, বিস্মিত চোখে দেখেছি জলপ্রপাতের দিকে ছোট্ট ভেলাকে অমোঘ টানে টেনে নিয়ে যায় নদী, কুমির আর বাঘ কেমন যুদ্ধ করে বনবালক টারজানের সঙ্গে, মানুষখেকো জংলিরা ধরতে পেলে আর উপায় নেই—হয় জ্যান্ত পুড়িয়ে খাবে, নয় দুই পা দুটো লাঠিতে বেঁধে দুদিকে টেনে ছিঁড়ে ফেলবে...অরণ্যের সঙ্গে সে কি অন্ধকার পরিচয় আমাদের। টারজানের ডাকটা যদিও আজও আমার ভারি প্রিয়, এমজিএমর (মেট্রো-গোল্ডউইন-মায়ার) সেই সুদানি সিংহের বিরক্তমুখে ডাকটার মতো প্রিয়। তারপর 'ব্রিং দেম ব্যাক অ্যালাইভ' আর 'টেলস অব দ্য গোল্ডেন মাংকি' সিরিজে দেখেছি মালয় জঙ্গলের আর সাউথ প্যাসিফিকের 'হলিউডি' সুষমা। ইন্ডিয়ানা জোন্সকে তো দক্ষিণ আমেরিকা বা প্রশান্ত মহাসাগরীয় জঙ্গলের পথে যেতেই হতো (রেইডার্স অব দ্য লস্ট আর্ক, দ্য কিংডম অব দ্য ক্রিস্টাল স্কাল, দ্য জুয়েল অব দ্য ফরেস্ট), ক্রান্তীয় অরণ্যের বিকারসম আর্দ্রতায় পরতে হতো লেদার জ্যাকেট। কবির বেদিকে 'দ্য মিস্ট্রিজ অব দ্য ডার্ক জাঙ্গল'-এ দেখে আমার মনে হয়েছিল কখনো 'কপালকুণ্ডলা' সিনেমা করা হলে এই লোকটিকে কাপালিকের ভূমিকায় কি চমৎকার মানাত! 'দ্য জাঙ্গল বুক' সিনেমার পর্দায় যখন দেখলাম, তখন আমার পাশে আমার ছেলে, জুলজুল করে মুগলির নাচন দেখছে। সিনেমায় অরণ্যের মহিমা দেখেছি ক্যাথরিন হেপবার্ন আর হামফ্রি বোগার্টের 'দ্য আফ্রিকান কুইন'-এ, বেলজিয়ান কঙ্গোতে ভেসে চলেছে তাদের ছোট্ট স্টিমবোট। হার্তযগের 'অ্যাগিরে, দ্য রাথ অব গড' আমাজন অববাহিকায় হঠকারী লোভী মানুষের এল ডোরাডোর সোনার শহরের খোঁজের গল্প; লোকে দুর্গম এলাকায় বয়ে আনত ধর্মান্তরিত করার বাসনা, ওঁর 'ফিতসক্যারাল্ডো' বয়ে এনেছিলেন কারুবাসনা—দুর্দান্ত মুভি। ডেভিড লিনের 'দ্য ব্রিজ অন দ্য রিভার কওয়াই', বুনুয়েলের 'ডেথ ইন দ্য গার্ডেন', ফোর্ড কপোলার 'অ্যাপোক্যালিপ্স নাউ' অরণ্যের প্রেক্ষাপটে দুর্দান্ত কিছু মুভির নাম। আশির দশকে অরণ্যকে পটভূমি করে কিছু সিনেমা তৈরি হয়, 'দ্য মিশন', 'দ্য মসকিটো কোস্ট', 'দ্য এমারেল্ড ফরেস্ট' ইত্যাদি। 'আউট অব আফ্রিকা' আসলে সিনেমার নামে আফ্রিকার গহিন জটিল হৃদয়তন্ত্রীতে বাজানো এক আশ্চর্য প্রেমের বাজনার নাম। সিনেমায় অরণ্যবাসী-অরণ্যজীবী মানুষের সঙ্গে লীন হয়েছে রেডফোর্ডের ভূমিকায় নায়কটির অরণ্যচারী জন্তুর মতো স্বাধীনতাকামিতা। জন্তুর কথা যখন এলই, তখন 'বর্ন ফ্রি' মুভিটার কথা না স্মরণ করলে এ লেখা অসম্পূর্ণ রইবে, চোখের জলে ভাসতে ভাসতে দেখেছি। 'কিংকং', 'জুরাসিক পার্ক' বা 'অ্যানাকোন্ডা' জংলি জানোয়ারদের সম্পর্কে আমাদের ভয়কে উসকে দেবার মুভি। 'দ্য লর্ড অব দ্য রিংস' ট্রিলজির দ্বিতীয় পর্ব 'দ্য টু টাওয়ারস'-এ সরোমনের দুর্বৃত্ত সৈন্যদের হাতে প্রাচীন ফ্যানগর্ন অরণ্য বিনষ্ট হবার পর যখন গাছের আকারের হিউম্যানয়েড এন্টরা প্রতিশোধ নিয়েছিল, মনে আছে আনন্দে আমার প্রাণ নেচে উঠেছিল। গত দুই দশকের বিশ্বচলচ্চিত্রের এক বিস্ময়ের নাম আপিছাতপং উইরাসাথকুন, তাঁর 'ব্লিসফুলি ইয়োর্স', 'ট্রপিক্যাল ম্যালাডি', 'আঙ্কল বুনমি হু ক্যান রিকল হিজ পাস্ট লাইভস' ইত্যাদি মুভি অঘটনঘটনপটিয়সী অরণ্যের প্রগাঢ় তমসা এবং অস্বাভাবিকতাকে অন্বেষণ করেছে, বিশ্লেষণ করেছে।
কিরণকুমারের 'জঙ্গল মে মঙ্গল' হয়ে সফেদবসনা কিমি কাতকারের 'টারজান মাই টারজান' কাতরসংগীত কিংবা রামগোপাল ভার্মা-অক্ষয়কুমার প্রমুখের অরণ্যচর্চা এ লেখা থেকে বাদ দিচ্ছি। ভাগ্যিস সত্যজিৎ রায় 'অরণ্যের দিনরাত্রি' সিনেমাটা করেছিলেন, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর উপন্যাসের চলচ্চিত্ররূপায়ণে যতই অসন্তুষ্ট হোন না কেন। যখন দেখেছি তখন বেশ কাঁচা ছিলাম, সিনেমায় দেখানো মেমোরি গেমটা আমরা প্রায়ই খেলতাম, আর মনে আছে—ভাই আর আমি একে অপরের পাত থেকে লোভনীয় কিছু চাইতে হলেই সিমি গাড়েওয়ালের মতো গুঙিয়ে বলতাম—'দ্যে না বাবু!' গৌতম ঘোষ পরে এর সিক্যুয়েল করেছিলেন—'আবার অরণ্যে'।
স্কুলজীবনে আমরা সুন্দরবনের গাছের নাম পড়েছিলাম অনেকগুলো—সুন্দরী, গরান, গেওয়া, ধুন্দল, বাইন, পশুর, কেওড়া, হেঁতাল আর গোলপাতা। কেমন আছে তারা? আমাদের ঘরের পেছনে ঘনিয়ে থাকা জঙ্গল আর সেখানকার জীবজন্তু আর তেমন নেই, জঙ্গলের জীব ভুলক্রমে লোকালয়ে দেখা দেওয়ামাত্র আমরা মোটরসাইকেলে করে তাড়া করি, লাঠিপেটা করে মারি, ঘাড় লটকে মৃতপ্রাণীর ভিডিও বানাই। একটি বনজ গাছের ঠাঁই নেই আমাদের অঙ্গনে, বড়জোর দু-একটি ফলদ গাছ। এমন কোনো লাভলি-ডার্ক-অ্যান্ড-ডিপ বনভূমি নেই যার সমীপে আমরা আপনমনে প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারি—অ্যান্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ। অচেনা ফুলফল দেখলে আমরা জিজ্ঞেস করি—'কী কাজে লাগে এইটা? খাওন যায়?' সর্বভুক এই আমাদের ম্যাপে আঁকার অরণ্যভূমি নেই, থাকার মধ্যে আছে শেষ সুন্দরবনটুকু—রাজনীতিতে ব্যবহৃত হতে হতে নিঃস্বপ্রায়, প্রতিবার ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব কমিয়ে আনলে আমরা যাকে মনে করি, তারপর তাকে আবার শোষণে উদ্যত হই। আর আমাদের আছে 'জন অরণ্য', যেখানে বাসের ভিড়ে গলার ভেতর কান্না চাপতে হয়, অবিরাম উৎপাদিত মানুষের খোরাকির জন্য নতুন ভূমি দরকার হয়। শংকরের 'জন অরণ্য' উপন্যাসের শুরুটা মনে পড়ল। নিজের জন্মদিন পয়লা আষাঢ়ে টেরিটি বাজারের কাছে একটা হতশ্রী ল্যাম্পপোস্টের তলায় দাঁড়িয়ে রয়েছে সোমনাথ ব্যানার্জি, সে কলগার্লের সন্ধানে বের হয়েছে, তাকিয়ে দেখছে ট্রামটা যেন কোনো প্রাগৈতিহাসিক গিরগিটির মতো কাতর আর্তনাদ করতে করতে এগিয়ে আসছে।
ডিফরেস্টেশন বা অরণ্যনিধনের কারণে ভূমির ক্রমিক ক্ষয়ে ডাঙার কঙ্কাল বেরিয়ে পড়েছে, তাপমাত্রা হয়েছে অসহনীয়। রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন—'এখানে ছিল অরণ্য—সে পৃথিবীকে রক্ষা করেছে ধ্বংসের হাত থেকে, তার ফলমূল খেয়ে মানুষ বেঁচেছে। সেই অরণ্য নষ্ট হওয়ায় এখন বিপদ আসন্ন। সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আবার আমাদের আহ্বান করতে হবে সেই বরদাত্রী বনলক্ষ্মীকে—বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে এখনো বহু পরিবেশবিদ-পক্ষীবিদ-আলোকচিত্রীসহ সাধারণ দেশবাসী অরণ্যকে ভালোবাসেন, বন্য প্রাণীর প্রতি দায়িত্ব পালন করেন আর জনসচেতনতা তৈরি করেন, সার্থক তাঁদের জন্ম, তাঁদের অভিবাদন জানাই।