গাজীপুরে ৫ বছর ধরে দলিল লেখকদের সনদ প্রদান বন্ধ, দুর্ভোগে শিক্ষানবিশরা

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে দলিল লেখকদের লাইসেন্স (সনদ) প্রদান বন্ধ রয়েছে। ফলে শিক্ষানবিশ যে সমস্ত আগ্রহী যুবক বিভিন্ন দলিল লেখকের সঙ্গে সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন, তারা নতুন করে লাইসেন্স (সনদ) পাচ্ছেন না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কোনো সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে দলিল লেখক হতে হলে জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট থেকে লাইসেন্স (সনদ) নিতে হয়। এজন্য এসএসসি পাস করা আগ্রহী ব্যক্তিকে পূর্বে তালিকাভুক্ত কোনো দলিল লেখকের সঙ্গে দুই থেকে তিন বছর সহকারী হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। পরে উক্ত দলিল লেখকের প্রত্যয়নসহ একটি আবেদন সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়। জেলা রেজিস্ট্রার সেই আবেদন আইজিআর-এর (মহাপরিদর্শক-নিবন্ধন) কাছে পাঠান। সেখান থেকে অনুমতি সাপেক্ষে আবেদনকারীকে সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার দলিল লেখক হিসেবে সনদ প্রদান করেন। এরপর তিনি নিজে দলিল লেখক হিসেবে দলিল সম্পাদন করতে পারেন।
গাজীপুর জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গাজীপুর জেলার মহানগর এলাকায় তিনটি সাব-রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে। এছাড়া জেলার বাকি চারটি উপজেলায় একটি করে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস দলিল লেখার কাজ করছে। এসব অফিসে বর্তমানে প্রায় এক হাজার ২০০ জন দলিল লেখক রয়েছেন।
সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় দলিল লেখক আছেন ৫১৫ জন, টঙ্গীতে ২০৯ জন, কাপাসিয়া উপজেলায় ৯০ জন, শ্রীপুরে ২০৮ জন, কালিয়াকৈরে ১২০ জন, কালীগঞ্জে ৯৬ জন দলিল লেখক রয়েছেন।
সূত্র অনুযায়ী, এসব অফিস মিলিয়ে সারা জেলায় বছরে প্রায় ৯৬ হাজার দলিল লেখা হয়। সে অনুযায়ী প্রতিমাসে প্রায় ৮ হাজার দলিল লেখা হয়ে থাকে। দলিল লেখার হার অনুযায়ী এখানে দলিল লেখকের সংখ্যা খুবই অপ্রতুল।
দলিল লেখকগণ শুধু দলিল সম্পাদন করেন না, তারা দলিলের নকল উত্তোলনসহ বিভিন্ন ব্যক্তিগত পর্যায়ের চুক্তি এবং অন্যান্য রেজিস্ট্রি-হীন দলিল লেখার কাজও করে থাকেন। ফলে দলিল সম্পাদনের তুলনায় দলিল লেখকের সংখ্যা কম থাকায় কাজে দীর্ঘসূত্রতা বাড়ছে। একই সঙ্গে, যারা বছরের পর বছর ধরে সহকারী হিসেবে কাজ করছেন, তারাও স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারছেন না। এক অনিশ্চয়তার মধ্যে তাদের দিন কাটছে। নতুন দলিল লেখক হতে আগ্রহী শত শত বেকার যুবক দলিল লেখক হওয়ার পথে অগ্রসর হতে পারছেন না। ফলে বাড়ছে বেকারত্ব ও শিক্ষিত যুবকদের হতাশা। অপরদিকে, সরকারও রাজস্ব আয়ে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দলীয় বিবেচনায় দলিল লেখকদের লাইসেন্স প্রদান করা হতো। তখন অন্য কোনো রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজন দলিল লেখক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। তারপরও ২০২০ সাল থেকে নতুন দলিল লেখকদের সনদ প্রদান বন্ধ রয়েছে। গত ৫ আগস্ট পট পরিবর্তনের পরও দলিল লেখকদের লাইসেন্স প্রদান বন্ধ থাকায়, বিগত সময়ে সনদ নিতে না পারা যুবকেরা দলিল লেখক হিসেবে সনদ নিতে পারছেন না। এসব কারণে সংশ্লিষ্টদের দাবি, দ্রুত দলিল লেখকদের লাইসেন্স প্রদানের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হোক।
কাপাসিয়ায় দলিল লেখক হতে আগ্রহী শফিকুল আলম সবুজ বলেন, 'আমি প্রায় পাঁচ বছর ধরে সহকারী হিসেবে কাজ করছি। সব কাগজপত্র সংগ্রহ করা হলেও নিষেধাজ্ঞার কারণে আমি লাইসেন্স করতে পারছি না।'
এ বিষয়ে গাজীপুরের জেলা রেজিস্ট্রার মো. মিজানুর রহমান নতুন লেখকদের সনদ বন্ধ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, 'আমাদের আগের আইজিআর স্যারের সময় থেকে নতুন দলিল লেখকদের সনদ প্রদান বন্ধ রয়েছে। অনেকে সহকারী হিসেবে কাজ করছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে কোনো সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারেন। তাহলে নতুন আগ্রহীরা সনদ পেতে পারেন।'